গত ১২ অক্টোবর ২০১৪ দৈনিক দেশেরপত্র ও বজ্রশক্তির উদ্যোগে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় “সকল ধর্মের মর্মকথা: সবার ঊর্ধ্বে মানবতা” শীর্ষক একটি সর্বধর্মীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কালিয়াকৈর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সকিনা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চতুর্থ তলায় আয়োজিত উক্ত অনুষ্ঠানে সকল প্রকার ধর্মব্যবসা, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, ধর্মীয় উন্মাদনা ও অনৈক্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাসেল। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, “দৈনিক দেশেরপত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট যারা মানবতার কল্যাণে নিজেদেরকে নিঃস্বার্থভাবে নিয়োজিত করেছে তাদেরকে আমি সাধুবাদ জানাই। আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও আত্মনিয়োগ কোরেছিলেন মানবতার কল্যাণে। একই আদর্শের ধারক হিসেবে ধর্ম নিয়ে যারা অপরাজনীতি করে, জঙ্গিবাদ করে আমরা তাদের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছি। দৈনিক দেশেরপত্র যে ঐক্যের স্লোগান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তার সাথে আমি এবং আমার এলাকাবাসী সকলেই একমত পোষণ করছি এবং আপনাদেরকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছি। আমি সর্বদাই আপনাদের পাশে থাকব।”সভাপতির বক্তব্যে দেশেরপত্রের ঢাকা বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান মাহাবুব আলম বলেন, “মানুষের ধর্ম কী? মানুষের ধর্ম হল মানবতা, মনুষ্যত্ব,সহানুভূতি, ভালোবাসা, দয়া-মায়া ইত্যাদি। এটা যদি মানুষ হারিয়ে ফেলে, তবে সে ধর্মহীন হয়ে যায়। তখন মানুষ আর মানুষ থাকবে না। এই দুনিয়ায় সমস্ত মানুষ একই জাতি, মানবজাতি। উত্তর প্রান্তে, দক্ষিণ প্রান্তে, পূর্ব প্রান্তে, পশ্চিম প্রান্তে যে মানুষটা না খেয়ে মারা যাচ্ছে তার ক্ষুধার যন্ত্রণা যদি আমার হৃদয়ে না আঘাত লাগে, বোমার আঘাতে মানুষের দেহ লন্ড-ভন্ড হয়ে যাবার দৃশ্য যদি আমার হৃদয় প্রকম্পিত না করে, অসহায় নারীর ক্রন্দনে-চিৎকারে যদি আমি ব্যথিত না হই, এবং আমি যদি এই যন্ত্রণাকে নিবারনে চেষ্টা না করি তাহলে বুঝতে হবে আমি আমার ধর্ম হারিয়ে ফেলেছি। আমি আমার অভ্যন্তরস্থ শক্তি হারিয়েছি, গুণ হারিয়েছি। আমি ধর্মহীন তথা অধার্মিক হয়ে গেছি। আর ধর্ম হারানো মানেই আমি আর মানুষ নই।”
তিনি বলেন, ‘অধার্মিক মানুষ কার্যত মানুষ থাকে না। দেহের গঠনে তাকে মানুষ মনে হলেও তার অবস্থান তখন পশুর কাতারে নেমে যায়। সে খায়, ঘুমায়, প্রসাব-পায়খানা করে, বংশ বিস্তার করে, এক পর্যায়ে মরে যায়, মাটির সাথে মিশে যায়। জগত-সংসারে কার কী সমস্যা, কে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, কে অনাহারে কষ্ট পাচ্ছে সেসবে সে বিচলিত হয় না। পশুও এরূপ জৈবিক চাহিদা পূরণেই সারাটা জীবন অতিবাহিত করে। কাজেই পশু আর অধার্মিক মানুষের মধ্যে কোনো তফাৎ নেই।’
এছাড়া কালিয়াকৈর উপজেলার হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট এর সভাপতি বাবু অজিত কুমার সাহা বলেন, “আমাদের মূল সমস্যা হলো আমরা স্রষ্টা মানি, নবী বা অবতার মানি, কিন্তু তাঁদের হুকুম মানি না। যার কারণে আজকে আমাদের সমাজে অশান্তি বিরাজ করছে। যদি আমরা স্রষ্টার দেওয়া বিধান প্রয়োগ করি তবে আমাদের সমাজে শান্তি অবধারিত।”
এছাড়া গাজিপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনাব অ্যাডভোকেট বেলায়েত হোসেন বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, দৈনিক দেশেরপত্র সকল ধর্মের অনুসারীদেরকে যেভাবে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে সে জন্য আমি তাদেরকে আন্তরিক সাধুবাদ জানাই। তিনি আরও বলেন, আমার জীবনে এই প্রথম আমি একটি ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠান দেখলাম যা আমাকে মানবতার কল্যাণে কাজ করার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আমি আপনাদের উত্থাপিত বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণ একমত। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে ‘সকল ধর্মের মর্মকথা: সবার ঊর্ধ্বে মানবতা’ শীর্ষক একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন দেশেরপত্রের ঢাকা বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান মাহাবুব আলম এবং সঞ্চালন করেন দেশেরপত্রের বিশেষ প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম।