আল্লাহর রসুল (সা.) একদিন মরুভূমির বুকে একটি সরল-সোজা লাইন থেকে ডান দিকে কতকগুলি এবং বাম দিকে কতকগুলি লাইন টানলেন এবং বললেন- শয়তান এই রাস্তাগুলিতে ডাকতে থাকবে। এই বলে তিনি কোর’আন থেকে এই আয়াত পড়লেন- নিশ্চয়ই এই হচ্ছে আমার (আল্লাহর) সহজ-সরল পথ সেরাতুল মোস্তাকীম। সুতরাং এই পথেই চলো, অন্য পথে চলো না, (অন্যপথে) চললে তা তোমাদের তার (আল্লাহর) পথ থেকে (চতুর্দিকে) বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এইভাবে তিনি (আল্লাহ) নির্দেশ দিচ্ছেন যেন তোমরা সাবধানে পথ চলতে পার (সুরা আল-আনাম ১৫৪ এবং হাদিস- আব্দাল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) থেকে- আহমদ, নিসায়ী, মেশকাত)।
আল্লাহ ও তার রসুলের (সা.) সরাসরি আদেশকে অমান্য করে সেরাতুল মোস্তাকীমকে ত্যাগ করে এই জাতি আজ অতি মুসলিম হয়ে শতধাবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আজ দুনিয়াময় মুসলিম বলে যে জাতিটি পরিচিত সেটা বহু ভাগে বিভক্ত। এর প্রত্যেক ভাগ অর্থাৎ ফেরকা, মাযহাব, বিশ্বাস করে যে সেই ভাগটাই শুধু প্রকৃত ইসলামে আছে, বাকি সব মাযহাব, ফেরকা পথভ্রষ্ট, ঠিক যেমন অন্যান্য ধর্মের লোকেরা নিশ্চিত যে তাদের ধর্মই সঠিক, অন্য সব ধর্মের মানুষ নরকে যাবে। কিন্তু আসলে অন্যান্য সব ধর্ম যেমন তাদের নবীদের (সা.) দেখানো পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে, মুসলিম নামধারী এই জাতিও তার নবীর (সা.) প্রতিষ্ঠিত পথ থেকে তেমনি ভ্রষ্ট হয়ে গেছে যতখানি পথভ্রষ্টতা, বিকৃতি আসলে, পূর্বে আল্লাহ নতুন নবী পাঠিয়েছেন, এই জাতিতে ততখানি বিকৃতি বহু পূর্বেই এসে গেছে। নতুন নবী আসেন নি, কারণ, নবুওয়াত শেষ হয়ে গেছে এবং শেষ রসুলের (সা.) প্রতিষ্ঠিত পথে, প্রকৃত ইসলামে আবার ফিরে যাওয়ার জন্য অবিকৃত কোর’আন ও রসুলের হাদিস আছে যা অন্যান্য ধর্মে নেই।
শেষ ইসলামের বিভক্তিগুলির মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাগ হচ্ছে শিয়া মাযহাব। এই মাযহাবের পণ্ডিতরাও কোর’আন-হাদিসের চুলচেরা বিশ্লেষণে সুন্নী পÐিতদের চেয়ে পেছনে পড়ে নেই এবং তাদের পাণ্ডিত্যের ফলে শিয়া মাযহাবও অগণিত ফেরকায় বিভক্ত হয়ে গেছে সুন্নীদের মত। ফলে প্রকৃত ইসলামের উদ্দেশ্য থেকে শিয়া-সুন্নী উভয় মাযহাবই বহু দূরে। কে বেশি দূরে কে কম দূরে এ পরিমাপ করা আমাদের উদ্দেশ্যও নয়, আমাদের সাধ্যও নয়, আমরা শুধু এইটুকুই জানি যে মহানবীর (সা.) কথিত একটিমাত্র ফেরকা বাদে শিয়া-সুন্নীসহ আর সমস্ত ফেরকা, মাযহাব আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে, অর্থাৎ মহানবীর (সা.) ইসলামে নেই। সেই একমাত্র ফেরকা কোন্ ফেরকা তা একটু আগেই বলেছি।
সুন্নীরা যেমন বিশ্বনবীর (সা.) প্রকৃত সুন্নাত ত্যাগ করে আল্লাহ-রসুলের নিষিদ্ধ ‘চুলচেরা বিশ্লেষণ’ করে উম্মাহটাকে টুকরো টুকরো করে ভেঙ্গে দিলেন এবং হাত থেকে তলোয়ার ফেলে দিয়ে তসবিহ নিয়ে খানকায়, হুজরায় ঢুকে উম্মাহর বর্হিমুখী (Extrovert) গতিকে অন্তর্মুখী করে একে স্থবির করে দিলেন (Introvert), তেমনি শিয়ারাও তাদের মাযহাবকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বহু ভাগে ভাগ করে দিলেন এবং নবীর (সা.) প্রকৃত সুন্নাহ অর্থাৎ দীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বাদ দিয়ে বহু পূর্বের এক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাকে নিয়ে মাতম করাটাকেই সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম-কর্ম হিসাবে গ্রহণ করলেন। মাতম করা কোন জীবন্ত জাতির মুখ্য কাজ হতে পারে না, মৃত জাতির হতে পারে।
[সম্পাদনা: রিয়াদুল হাসান, সাহিত্য সম্পাদক, হেযবুত তওহীদ]।