ইসলামের সোনালী অধ্যায়ের অনেক ইতিহাসই আজ বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে গেছে। বিশেষ করে যে ইতিহাসগুলো জাতিকে সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করবে সে ইতিহাসগুলো অন্তর্মুখী পণ্ডিতদের সচেতন প্রচেষ্টায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আজ ইতিহাসের পাতা থেকে আমরা এমন একটি মহাসত্যকে আপনাদের সামনে তুলে ধরব, যে ইতিহাসকে প্রচলিত ইসলামের বিশেষজ্ঞরা চিরকাল উপেক্ষা করে গেছেন। আমরা হেযবুত তওহীদ এই ইতিহাসকে পুনরায় দিনের আলোতে আনার চেষ্টা করছি। কারণ ইসলামের সুমহান সভ্যতার ভিত্তি নির্মিত হয়েছিল যাদের হাতে, এই ইতিহাস আপনাকে তাদের পারিবারিক জীবনকে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ করে দেবে।
হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে যাদের যৎসামান্য ধারণাও আছে তারাও জানেন যে, এ আন্দোলনের নারীরা আন্দোলনের সব রকম কাজে অংশগ্রহণ করে থাকেন। আমাদের নিজস্ব কোনো মতবাদ নেই, প্রকৃত ইসলামের চিত্রটা দলিল-প্রমাণ সহযোগে মানুষের কাছে প্রচার করাই আমাদের কাজ। এই কাজ করতে গিয়ে এ আন্দোলনের মেয়েরা পত্রিকা বিক্রি করেন, বই বিক্রি করেন, পত্রিকার অফিসে কাজ করেন, ভিডিও নির্মাণ করেন, লেখালেখি করেন, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, সভা-সেমিনারে বক্তব্য দেন, অনলাইন ভিত্তিক প্রচারকাজেও অংশ নেন।
হেযবুত তওহীদের মেয়েদের এই ভূমিকা দেখে দেশের ধর্মান্ধ ও ধর্মব্যবসায়ী একটি গোষ্ঠী আন্দোলনের বিরুদ্ধে সীমাহীন অপপ্রচারে নেমেছে। তারা মেয়েদের উপর নানাপ্রকার অপবাদ আরোপ করে যাচ্ছে। হেযবুত তওহীদ নাকি নারীদের সংসার ভেঙে দিচ্ছে, তাদেরকে দিয়ে পত্রিকা বিক্রি করাচ্ছে পত্রিকার কাটতি বাড়ানোর জন্য। হেযবুত তওহীদের দিকে মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য মেয়েদেরকে কাজে লাগানো হচ্ছে এমন নানারকম জঘন্য কথা তারা প্রচার করছে।
কিন্তু প্রকৃত সত্য তা নয়। হেযবুত তওহীদের নারী ও পুরুষ সবাই সত্যদীন প্রতিষ্ঠার কাজকে নিজেদের ঈমানী দায়িত্ব বলে বিশ্বাস করে। নারীরা যেমন আন্দোলনের কাজ করেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের পিতা, ভাই বা স্বামীরাও আন্দোলনের কাজ করেন। এই পৃথিবীতে নারী পুরুষ উভয়ই আল্লাহর প্রতিনিধি। পৃথিবীকে শান্তিময় করার জন্য উভয়েরই দায়িত্ব রয়েছে। তাই তো আল্লাহর রসুল তাঁর দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নারী-পুরুষ উভয়কেই সমানভাবে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করেছেন। আল্লাহও এমনই নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন মো’মেন নারী ও মো’মেন পুরুষ একে অপরের সহযোগী, বন্ধু। তারা সৎকাজের আদেশ করে ও অসৎ কাজে বাধা দেয়। (সুরা তওবা ৭২)।
রসুলাল্লাহ সকল অভিযানে ও যুদ্ধে তাঁর স্ত্রীদের কোনো একজনকে নিয়ে যেতেন। রসুলাল্লাহর নারী সাহাবিরা তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যুদ্ধে যেতেন, সামষ্টিক জাতীয় সকল কাজে অংশ নিতেন। এটা ইতিহাস। আজকে আমরা ইতিহাস থেকেই দেখাবো যে রসুলাল্লাহর নারী আসহাবগণ ও তাদের পিতা স্বামী সন্তানগণ কীভাবে একসঙ্গে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে একত্রে অংশগ্রহণ করতেন।
১. স্বামী ইয়াসির (রা.) ও স্ত্রী সুমাইয়া (রা.): নারীদেরকে পিছিয়ে রাখার যত চেষ্টাই করা হোক, ইতিহাস হচ্ছে ইসলামের জন্য প্রথম শহীদ হয়েছেন একজন নারী। তাঁর নাম সুমাইয়া বিনতে খুববাত (রা.)। আল্লাহর রসুল তওহীদের ডাক দেওয়া মাত্রই তিনি তাঁর স্বামী ইয়াসির (রা.) ও ছেলে আম্মার (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁদের মতো আরো বহু ক্রীতদাস ইসলাম গ্রহণ করেও সেটা প্রকাশ করতে সাহস করেন নি। কিন্তু সুমাইয়া ও ইয়াসীর তাদের ইসলাম গ্রহণের কথা গোপন করেন নি। ফলে তাদের উপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়।
দুপুরের প্রচণ্ড গরমের সময় উত্তপ্ত মরুভূমির উপর, উত্তপ্ত পাথরের উপর তাদেরকে চিৎ করে শুইয়ে দেওয়া হতো। জ্বলন্ত লোহা দিয়ে শরীর ঝলসে দেওয়া হতো। কিন্তু তাদের ঈমানী শক্তির কাছে মোশরেকদের সকল অত্যাচার ও উৎপীড়ন পরাজিত হলো। পাষন্ড আবু জাহেল সুমাইয়াকে (রা.) বর্শা ছুড়ে হত্যা করে এবং স্বামী ইয়াসিরকে (রা.) তীরবিদ্ধ করে শহীদ করে। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া- ৩/৫৯)
২. স্বামী যায়েদ (রা.) ও স্ত্রী বারাকা (রা.): কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসী উম্মে আয়মান বারাকা (রা.) ছিলেন রসুলাল্লাহর মায়ের মতো। তিনি রসুলাল্লাহর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়কালের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। ইসলামের প্রথম পর্বেই তিনি মুসলমান হন। তিনি রসুলাল্লাহর পালিত পুত্র এবং অতি প্রীতিভাজন যায়দ ইবনে হারিসকে (রা.) বিয়ে করেন। তিনি রসুলাল্লাহর সাথে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেন। তিনি যায়েদ ইবনে হারিসের (রা.) সাথে মদীনায় হেজরত করেন। উম্মে আয়মান ওহুদ, খায়বার, হুনায়ুনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ওহুদের যুদ্ধে সৈনিকদের পানি পান করানো ও আহতদের সেবার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
৩. স্বামী ইয়াজ (রা.) ও স্ত্রী রুবাইয়া (রা.): আর রুবাইয়া বিনতে মুআওবিয (রা.) রসুলাল্লাহর সঙ্গে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। আর-রুবাইয়ার পিতা মুআওবিয (রা.) বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জেহাদের সূচনা করেন, তিনি সেই যুদ্ধে শাহদাত বরণ করেন। মেয়েও ছিলেন পিতার মতোই দুঃসাহসী যোদ্ধা। তিনি বিখ্যাত মুহাজির সাহাবী ইয়াস ইবনে আল-বুকাইর আল-লায়ছী (রা.) কে বিয়ে করেন।
৪. স্বামী আব্দুল্লাহ (রা.) ও স্ত্রী যায়নাব (রা.): যায়নাব বিনতে আবী মুআবিয়া (রা.) বিখ্যাত সাকিফ গোত্রের কন্যা ছিলেন। তিনি প্রখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) স্ত্রী ছিলেন। স্ত্রী হিসেবে যায়নাব (রা.) মাসঊদ (রা.) নিকট থেকে ইসলামী বিধি-বিধান, জীবন-যাপন প্রণালীর বহু কিছু শিক্ষা লাভ করেন। তিনি খায়বার অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
৫. স্বামী উবাদাহ (রা.) ও স্ত্রী উম্মে হারাম (রা.): উম্মে হারাম বিনতে মিলহান (রা.) ছিলেন মদীনার খাযরাজ গোত্রের কন্যা। স্বামী প্রখ্যাত সাহাবী উবাদা ইবনে আস-সামিত (রা.)। রসুলাল্লাহ উম্মে হারামকে নৌ-যুদ্ধে অংশ গ্রহণের ভবিষ্যদ্বাণী করেন। ৩য় খলিফা উসমান (রা.) সময় সিরিয়ার আমির মুয়াবিয়া (রা.) নৌ-বাহিনী গঠন করে সাগর দ্বীপ সাইপ্রাস আক্রমণ করেছিলেন। উম্মে হারাম তাঁর স্বামী উবাদা ইবনে আস-সামিতের সঙ্গে সেই নৌ-অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। সেখানেই তিনি শাহদাত বরণ করেন।
৬. স্বামী ইকরামা (রা.) ও স্ত্রী উম্মে হাকীম (রা.): উম্মে হাকীম বিনতে আল হারিছ (রা.) বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ও তাঁর স্বামী ইকরামা (রা.) একত্রে ইয়ারমুকের যুদ্ধে রোমানদের সাথে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেন। সেই যুদ্ধে ইকরিমা (রা.) শাহদাত বরণ করেন। পরবর্তীতে তিনি খালিদ ইবনে সাইদ (রা.) কে বিয়ে করেন। উম্মে হাকীমের “আকদ” সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথেই মারজ আস-সাফার যুদ্ধ শুরু হয়। সেই যুদ্ধে তিনি তাবুর খুঁটি দিয়ে রোমান সৈনিকদের সাথে যুদ্ধ করেন। এই যুদ্ধেই তাঁর স্বামী খালিদ (রা.) শাহীদ হন।
৭. স্বামী সাঈদ (রা.) ও স্ত্রী আসমা (রা.): ইসলামের ইতিহাসের বীরাঙ্গণা নারীদের মধ্যে আসমা বিনতে ইয়াযিদ (রা.) অন্যতম। তিনি এমন এক পরিবারের সন্তান যাদের সকলে আল্লাহর রাস্তায় জীবন কুরবানী করেছিলেন। ওহুদের যুদ্ধে আসমার (রা.) ভাই আম্মারা ও আমির, পিতা ইয়াযীদ এবং চাচা যিয়াদ ইবনে আস-সাকান (রা.) সকলেই শাহদাত বরণ করেন। আসমা (রা.) রসুলাল্লাহর সাথে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বাইয়াতে রিদওয়ান, মক্কা বিজয় ও খাইবার আভিযান তার মধ্যে অন্যতম। তিনি ইয়ারমুকের যুদ্ধে তাঁবুর খুঁটি দিয়ে পিটিয়ে একাই নয়জন রোমান সৈন্যকে হত্যা করেন। (নিসা’মিন ‘আসর আন-নুবুওয়াহ-৮০) (সিয়ারু আলাম আন-নুবালা-২/২৯৭)
৮. স্বামী মুসআব (রা.) ও স্ত্রী হামনা (রা.): হামনা বিনতে জাহাশ (রা.) রসুলাল্লাহর ফুফাতো বোন ও অন্যদিকে শ্যালিকাও ছিলেন। তিনি প্রখ্যাত সাহাবী মুসআব ইবনে উমাইর (রা.) এর স্ত্রী। তিনি রসুলাল্লাহর সাথে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। ওহুদের যুদ্ধে হামনা (রা.) তৃষ্ণার্তদের পানি পান করানো এবং আহতদের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। সেই যুদ্ধে তাঁর স্বামী মুসআব (রা.) ও মামা হামযা (রা.) শাহদাত বরণ করেন। (আল-ওয়াকিদী, আল-মাগাযী-১/২৪৯, ২৫০, সীরাতে ইবনে হিশাম-২/৯৮)
৯. স্বামী গাযিয়্যা (রা.) ও স্ত্রী উম্মে আম্মারা (রা.): উম্মে আম্মারা বিনতে কাআব (রা.) ছিলেন একজন বীরাঙ্গনা যোদ্ধা। তাঁর বীরত্ব ও সাহসিকতার বিস্ময়কর বাস্তবতা বিভিন্ন রণাঙ্গনে দেখা যায়। তিনি ছিলেন গাযিয়্যা ইবনে আমর (রা.)- এর স্ত্রী। ওহুদের যুদ্ধে যে ক’জন মোজাহেদ নিজেদের জীবনের বাজি রেখে রসুলাল্লাহর নিরাপত্তা বিধান করেন তাদের মধ্যে উম্মে আম্মারা, তাঁর স্বামী গাযিয়্যা ও দুই ছেলে আব্দুল্লাহ ও হাবীবও ছিলেন। সেদিন উম্মে আম্মারার (রা.) শরীরের ১২ জায়গায় মারাত্মক জখম হয়েছিল এবং যুদ্ধের শেষে তাঁর দেহ থেকে অঝোর ধারায় রক্ত ঝরছিল। আল্লাহর রসুল তাঁর নিজে উম্মে আম্মারার (রা.) ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ বেঁধে দেন। অনেক পুরুষ মুসলিম বীরদের নাম নিয়ে তিনি বলেন, “আল্লাহর কসম! আজ উম্মে আম্মারা সাহসিকতার দিক দিয়ে তাদের সবাইকে পিছনে ফেলে দিয়েছে।” আল্লাহর রসুল বলতেন, “ওহুদের ময়দানের যেদিকেই আমি তাকিয়েছি আমি শুধু উম্মে আম্মারাকেই যুদ্ধ করতে দেখেছি।”
এছাড়াও তিনি হুদায়বিয়া, খায়বার, কাজা উমরা আদায়, হুনাইন, ইয়ামামাসহ বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ইয়ামামার যুদ্ধে তিনি ভণ্ড নবী মুসায়লামাকে হত্যার জন্য দুঃসাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন। (সিয়ারু আলাম আন-নুবালা-২/২৭৮)
১০. স্বামী আওয়াম (রা.) ও স্ত্রী সাফিয়া (রা.): সাফিয়া বিনতে আবদুল মুত্তালিব (রা.) হচ্ছেন রসুলাল্লাহ (সা) এর ফুফু এবং ওহুদের যুদ্ধে শহীদ হামযার (রা.) বোন। সাফিয়া (রা.) এবং তাঁর স্বামী আওয়াম (রা.) মক্কা থেকে মদীনায় হেজরত করেন। উহুদের যুদ্ধে বিশৃঙ্খলাজনিত কারণে যখন মুসলিম যোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছাতে শুরু করলো তখন মদিনা থেকে সাফিয়া (রা.) এগিয়ে এসেছিলেন এবং লাঠি হাতে দৌড়ে দৌড়ে পলায়নপর যোদ্ধাদের তীব্র ভাষায় তিরস্কার ও ভর্ৎসনা করছিলেন, এমন কি আঘাতও করছিলেন যেন তারা আবার যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরে যান।
খন্দকের যুদ্ধের সময় আল্লাহর রসুল নারী ও শিশুদেরকে একটি নিরাপদ অবস্থানে রেখে গিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে পুরুষ সাহাবি ছিলেন কেবল হাসান বিন সাবিত (রা.)। একজন ইহুদি শত্রু এসে দূর্গের চারদিকে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে লাগল। সাফিয়া (রা.) হাসান বিন সাবিত (রা.)-কে বললেন যেন তিনি তাকে গিয়ে খতম করে দেন। তখন হাসান বললেন, “আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন, তুমি ভালো করেই জানো আমার দ্বারা এসব কাজ হয় না। আর আমি যদি এই কাজ করতে পারতাম তাহলে কি আমাকে তোমাদের সঙ্গে রেখে যেত?” এ কথা শুনে সাফিয়া (রা.) নিজেই একটি লাঠি নিয়ে দূর্গের নিচে নেমে গেলেন এবং লাঠি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে হত্যা করলেন। দূর্গে ফিরে হাসানকে বললেন, “নিচে গিয়ে তার পোশাক, বর্ম ইত্যাদি খুলে নিয়ে এসো। যেহেতু সে পুরুষ তাই এই কাজটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।” হাসান (রা.) বললেন, “ওর পোশাক খোলার কোনো প্রয়োজন আমার নেই”। তখন সাফিয়া (রা.) নিজে গিয়েই কার্য সমাধা করেন। এ ঘটনায় তার অসম সাহসিকতার দৃষ্টান্ত ফুটে উঠে।
এমন আরো বহু সাহাবিদের ইতিহাস পাওয়া যাবে যারা সপরিবারে সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু বর্তমানে জাতীয় কাজে নারীদের অংশগ্রহণকে এমনভাবে কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে যে, কোথাও তাদেরকে দেখতে পাওয়া যাবে না। কেউ সামষ্টিক কাজে অংশ নিলেই তার ধার্মিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে। নারীর উপস্থিতি মানেই না-জায়েজ, নারীকে দেখাই পাপ। ওলামায়ে কেরামগণ নানা ইস্যুতে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন, একজন নারীকেও সেখানে দেখা যায় না।
আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কোন ইসলামের অনুসারী? রসুলাল্লাহ যে ইসলাম চর্চা করে গেছেন সেখানে জীবনের একটা ক্ষেত্র দেখাতে পারবেন যেখানে নারীর অংশগ্রহণ ছিল না? সে সময় হাসপাতাল পরিচালনা করেছেন নারীরা, বাজার ব্যবস্থা তদারক করেছেন নারীরা, মসজিদে ঈদগাহে এমন কি বিপদসংকুল জেহাদের মাঠে – সর্বত্র ছিল নারীর স্বাধীন অংশগ্রহণ। তাদের উপর কেউ এই কড়াকড়ি, বাড়াবাড়ি চাপিয়ে দেয় নি। কারণ ইসলামের নীতিই হচ্ছে, “এই দীনে কোনো জবরদস্তি নেই।” এ আদেশ সর্বক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই।
আমরা হেযবুত তওহীদও তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করছি। কারণ তাঁদের মতো আমরাও চাই অশান্তি অবিচারে পূর্ণ এই পৃথিবীতে আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ন্যায়, সুবিচার তথা শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে। যারা আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে বেড়াচ্ছেন তারা মিথ্যা কথা বলছেন। সত্যের মোকাবেলায় মিথ্যা দুর্বল, মিথ্যা যত বড়ই হোক তার পরাজয় নিশ্চিত।