মাননীয় এমামুযযামানের লেখা থেকে:
মনে কোরুন আপনি একটি বিশাল দেশের বাদশাহ এবং আপনি সর্বজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান (আল্লাহ)। অপর একটি বিরাট দেশের একজন বাদশাহ (এবলিস) আপনাকে চ্যালেঞ্জ দিলেন যে তিনি আপনার দেশের প্রজাদের (মানবজাতি) আপনার অবাধ্য কোরে দেশে বিশৃঙ্খলা, মারামারি, যুদ্ধ, রক্তপাত বাধাবেন, আপনার দেশের আইন-শৃঙ্খলা নষ্ট কোরে দেবেন। আপনি দেখতে চাইলেন যে আপনার দেশের প্রজারা আপনাকেই প্রভু বোলে স্বীকার ও গ্রহণ করে, নাকি ঐ অন্য দেশের বাদশাহর প্ররোচনায় আপনাকে অস্বীকার করে। আপনার বিরাট দেশটি অনেক প্রদেশে বিভক্ত, অনেক ভাষা, অনেক রংয়ের মানুষ। এমন একটি সময় এলো যখন দেখা গেলো যে ঐ অন্য বাদশাহর (এবলিসের) প্ররোচনায় পড়ে আপনার দেশের মানুষ নিজেদের এক জাতি বোলে বিশ্বাস করা ছেড়ে দিলো, বিভিন্ন প্রদেশের মানুষ নিজেদের সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা জাতি বোলে ঘোষণা করলো, ভৌগোলিক রাষ্ট্র (Nation State) গঠন কোরতে শুরু কোরল। শুধু তাই নয়, তারা আপনার দেয়া আইন-কানুন, দণ্ডবিধি প্রত্যাখ্যান কোরে প্রত্যেক প্রদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করলো, নিজেরা নিজেদের ইচ্ছামত সংবিধান (Constitution) তৈরি কোরে নিলো; আইন-কানুন, দণ্ডবিধি ইত্যাদি তৈরি কোরে সেই মোতাবেক চোলতে লাগলো। যেহেতু আপনার প্রজাদের জ্ঞান-বুদ্ধি সীমিত, কাজেই তাদের তৈরি সংবিধান ও আইন-কানুন, দণ্ডবিধি ইত্যাদির অবশ্যম্ভাবী ফল হলো, রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক অবিচার ও অন্যায়। তার চেয়েও বড় পরিণাম হলো ঐ বিভিন্ন প্রদেশগুলি নিজেদের মধ্যে স্বার্থ নিয়ে যুদ্ধ বাঁধিয়ে ত্র“মাগত হত্যা ও রক্তপাত ‘সাফাকুদ্দিমা’ চালাতে লাগলো।
আপনার রাজত্বে যখন এই অবস্থা হলো তখন আপনি আপনার সমস্ত সাম্রাজ্য খুঁজে আপনার প্রজাদের মধ্যে সবচেয়ে চরিত্রবান, সব চেয়ে নির্ভীক, সবচেয়ে কর্মঠ, সবচেয়ে কর্তব্যপরায়ন, এক কথায় সর্বগুণান্বিত মানুষটিকে (মোহাম্মদ দ:) ডেকে এনে তাকে আপনার সাম্রাজ্যের পরিস্থিতি বুঝিয়ে দিলেন। তারপর তার হাতে আপনার অসীম জ্ঞান থেকে রচিত এমন একটি সংবিধান (কোর’আন) দিয়ে তাকে বোললেন- আমি তোমাকে আমার সেনাপতি নিযুক্ত কোরলাম। এখন থেকে তোমাকে দায়িত্ব দিলাম সাম্রাজ্যের প্রদেশগুলি যে নিজেদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা কোরেছে সেগুলি নস্যাৎ কোরে আমার সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করার এবং এই সংবিধান কার্যকরী করার (কোর’আন- সুরা আত-তওবা, আল-ফাতাহ-২৮, সুরা আস-সফ ৯)। আপনার এই নতুন সেনাপতিকে আরও বোললেন- একটি নিখুঁত সংবিধান রচনা করাই যথেষ্ট নয়, সেটা যদি পূর্ণভাবে কার্যকরী না করা হয়, তবে তা ব্যর্থ- অর্থহীন। কাজেই একে পূর্ণভাবে অর্থাৎ জাতীয় ও ব্যক্তিগত উভয়ভাবে কার্যকরী কোরতে হবে (কোর’আন- সুরা আল-বাকারা ২০৮)।
তবে আমি আমার অসীম জ্ঞানে জানি যে আমার প্রজারা আমার শত্র“ বাদশাহর (এবলিসের) প্ররোচনায় এতখানি অভিভূত হোয়ে আছে যে তারা সহজে তোমার কথা শুনবে না। তারা তোমাকে বাধা দেবে, তোমাকে হত্যা করার চেষ্টা কোরবে, তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ বাধাবে। কাজেই তুমি প্রথমে একটি জাতি গঠন কর এবং জাতিটিকে এই সংবিধান অনুযায়ী পরিচালনা কর। এই সংবিধানেই আমি এমন ব্যবস্থা রেখেছি যে এই সংবিধান অনুযায়ী চোললে তারা অজেয়, দুর্ধর্ষ যোদ্ধায় পরিণত হবে, কারণ এই সংবিধানেই আমি তাদের শিক্ষার, ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা রেখেছি (নামাজ)। তার উপর যোদ্ধাদের জন্য রেখেছি এমন পুরস্কার যে, তারা তা কল্পনাও কোরতে পারে না। আমার সার্বভৌমত্ব ও এই সংবিধান প্রতিষ্ঠার যুদ্ধে যারা প্রাণ দেবে তাদের সমস্ত রকম ভুল-ত্র“টি, অপরাধ ক্ষমা করা ছাড়াও তাদের মৃত বলা পর্যন্তও আমি নিষিদ্ধ কোরে দিয়েছি (কোর’আন- সুরা আল-বাকারা ১৪৫, সুরা আলে ইমরান ১৬৯)। যাই হোক এরপরও তুমি তাদের নিজে প্রশিক্ষণ দাও এবং যুদ্ধে নেতৃত্ব দাও। প্রথমে তুমি আমার সাম্রাজ্যের বিপথগামী মানুষদের ডাকো, তাদের বলো- সাম্রাজ্য আমার, সার্বভৌমত্ব আমার, এর সংবিধান রচনা কোরেছি আমি। তারা যদি মেনে নেয়, ভালো। যদি না মানে তবে তাদের বলো তাদের রাষ্ট্রশক্তি তোমাদের হাতে ছেড়ে দিতে। তোমরা সেখানে জাতীয় জীবনে আমার সর্বভৌমত্ব ও সংবিধান প্রতিষ্ঠা কর। তাতেও যদি আমার বিদ্রোহী প্রজারা রাজী না হয়, তবে তাদের আক্রমণ কোরে পরাজিত কোরে আবার আমার সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা কর। আমার সাম্রাজ্যে (পৃথিবীতে) আমার সার্বভৌমত্ব ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার জন্যই তোমাকে সেনাপতি নিযুক্ত কোরলাম (কোর’আন- সুরা আল- ফাতাহ ২৮)।
সেনাপতি পদে নিযুক্ত হোয়ে আপনার সেনাপতি তীব্র বাধার মুখে, নির্মম অত্যাচারের মুখে বিরামহীন প্রচেষ্টা, অকল্পনীয় ত্যাগ, ও অপূর্ব চরিত্র বলে একটি সামরিক জাতি গড়ে তুললেন। সেনাপতির অতুলনীয় চরিত্রের ও প্রশিক্ষণের প্রভাবে এই জাতির প্রতিটি লোক যে শুধু দুর্ধর্ষ যোদ্ধাই হলো তাই নয়, তারা আপনার সার্বভৌমত্ব ও সংবিধান আপনার সাম্রাজ্যে প্রতিষ্ঠার দুর্জয় পণে আত্মোৎসর্গকারী হোয়ে গেলো। ব্যক্তিগত চরিত্রের পবিত্রতায়, তাকওয়ায় ইত্যাদি গুণে এই বাহিনীর প্রতিটি মানুষ বিস্ময়কর উন্নতি কোরলেও তাদের সর্বপ্রধান বৈশিষ্ট্য এই হোয়ে দাঁড়াল যে, তাদের প্রত্যেকটি মানুষ দুর্ধর্ষ যোদ্ধায় রূপান্তরিত হোয়ে গেলো। এরপর আপনার সেনাপতি আপনার আদেশে আপনার অবাধ্য প্রজাদের মুখোমুখি হোয়ে তাদের যা বোললেন তার মোটামুটি মর্মার্থ হোচ্ছে এই যে- হে আমার মহামহিম সম্রাটের প্রজাবৃন্দ! তোমরা তোমাদের সম্রাটের শত্র“র (এবলিসের) প্ররোচনায় তার বিদ্রোহী হোয়েছ, তাঁর সর্বভৌমত্ব অস্বীকার কোরে নিজেরা সার্বভৌম হোয়েছ, সম্রাটের সাম্রাজ্যের প্রদেশগুলিকে এক একটি স্বাধীন রাজ্যে (ভৌগোলিক রাষ্ট্রে) পরিণত কোরে নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ ও রক্তপাত করছো, সম্রাটের দেওয়া আইন-কানুন দণ্ডবিধি সব পরিত্যাগ কোরে নিজেরা আইন-কানুন তৈরি কোরে নিজেদের রাজ্যগুলি শাসন করছো, যার ফল হোয়েছে রাজ্যগুলির ভেতর রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক অত্যাচার, অবিচার ও সম্রাজ্যের প্রদেশগুলির মধ্যে সংঘর্ষ, যুদ্ধ আর রক্তপাত। মহা দয়ালু সম্রাট যথেষ্ট দেখেছেন, যথেষ্ট সহ্য কোরেছেন, আর নয়। মহামহিম সম্রাট আমাকে আর আমার এই বাহিনীকে পাঠিয়েছেন তোমাদের এই বার্তা দিতে যে তোমরা অন্য সব রকম সার্বভৌমত্ব ত্যাগ কোরে আবার একমাত্র সম্রাটের সার্বভৌমত্বকে (তওহীদ) স্বীকার কর, তার কাছে প্রত্যাবর্তন কর, তার কাছে আত্মসমর্পণ কর এবং তিনি যে নতুন সংবিধান তার অসীম জ্ঞান থেকে প্রণয়ন কোরেছেন (কোর’আন) এবং এই যে আমার সঙ্গে পাঠিয়েছেন তা গ্রহণ কর, এবং সংবিধান অনুযায়ী তোমাদের রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক জীবন পরিচালিত করো, এর মধ্যেই যে আইন-কানুন আছে সেই অনুযায়ী অপরাধের শাস্তি ও পুরস্কার দাও। আমাদের সম্রাট তোমাদের আরও বোলতে বোলেছেন যে তোমাদের মধ্যে যারা এখন আবার তাকে সার্বভৌম প্রভু বোলে স্বীকার কোরে তার দেয়া সংবিধানকে গ্রহণ করবে তাদের পেছনের সব অপরাধ তিনি ক্ষমা কোরে দিয়ে তাদের বিরাট পুরস্কার দেবেন। এমন কি এরপরেও তাদের ব্যক্তিগত জীবনের অপরাধ, পাপ, তা সে যত বড় অপরাধই হোক, অকপটচিত্তে তার কাছে মাফ চাইলে তা মাফ কোরে দেবেন। কিন্তু তার সার্বভৌমত্বকে স্বীকার না করলে, তাকে একমাত্র সম্রাট বোলে স্বীকার না কোরলে, ব্যক্তি জীবনে যে যতই ভালো কাজ করুক সম্রাট তা গ্রহণ কোরবেন না, এবং তাকে ভয়াবহ শাস্তি দেবেন।
আপনার সেনাপতির এই ঘোষণায় এই ফল হলো যে আপনার সার্বভৌমত্ব অস্ব^ীকারকারী আপনার প্রদেশের রাজ্যগুলি আপনার সেনাপতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান কোরে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হোয়ে দাঁড়ালো। তখন আপনার আদেশে আপনার সেনাপতি শত্র“র তুলনায় অনেক ছোট তার বাহিনী নিয়ে অনেক বড় শত্র“কে আত্র“মণ কোরলেন। আপনার সেনাপতি তার ঐ ছোট বাহিনীকে এমন প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, সম্রাটের জন্য তাদের প্রাণ উৎসর্গ করার এমন প্রেরণা সৃষ্টি কোরছিলেন যে ঐ ছোট বাহিনী আপনার বিদ্রোহী ঐ সব প্রদেশের শক্তিশালী সুশিক্ষিত ও কয়েক গুণ বড় সামরিক বাহিনীগুলিকে একের পর এক যুদ্ধে শোচনীয়ভাবে পরাস্ত কোরে আপনার সাম্রাজ্যে আবার আপনার সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা ও আপনার সংবিধান কার্যকরী কোরতে লাগলো। আপনি যখন আপনার সেনাপতিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তখন আপনার সাম্রাজ্যের সমস্ত প্রজারাই আপনার সার্বভৌমত্ব অস্ব^ীকার কোরে যার যার প্রদেশে তাদের নিজেদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা কোরেছিলো, কোথাও আপনার সংবিধান চালু ছিলো না। আপনার সেনাপতি তার তৈরি ঐ দুর্ধর্ষ বাহিনী নিয়ে সাম্রাজ্যের একটি ছোট অংশে (আরবে) আপনার সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা ও সংবিধান চালু করার পর আপনার প্রিয় সেনাপতির আয়ু শেষ হোয়ে গেলো। চলে যাবার আগে তিনি তার বাহিনীকে পরিষ্কার কোরে বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন যে তিনি ঐ বাহিনী কেন সৃষ্টি কোরেছিলেন। বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন যে ঐ বাহিনী সৃষ্টি করা, তাদের নিয়ম-শৃঙ্খলা, আনুগত্যের, ঐক্যের ও যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেয়া, তাদের যুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া ইত্যাদি সব কিছুর মূল উদ্দেশ্য হলো বিদ্রোহী সাম্রাজ্যময় (সমস্ত পৃথিবী) আবার আপনার সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা। সেনাপতি তার বাহিনীকে বোললেন- আমার প্রভু, সম্রাট আমাকে আদেশ দিয়েছেন নিরবচ্ছিন্ন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে যে পর্য্যন্ত না তার সাম্রাজ্যের প্রতিটি প্রজা একমাত্র তাকেই রাজাধিরাজ বোলে স্ব^ীকার করে এবং আমাকে তার প্রেরিত সেনাপতি বোলে মেনে নেয় (আব্দাল্লাহ বিন ওমর (রা:) থেকে বোখারী)। আমার উপর দেয়া দায়িত্ব আমি পূর্ণ কোরে যেতে পারলাম না, কারণ তা এক জীবনে সম্ভব নয়। এ দায়িত্ব আমি ছেড়ে যাচ্ছি তোমাদের উপর। মনে রেখো আমার উপর দেয়া আমার সম্রাটের এ দায়িত্ব যে ছেড়ে দেবে বা বন্ধ কোরবে সে আমার কেউ নয়, তাকে আমি অস্বীকার করবো, সে আমার বাহিনীর পলাতক সৈন্য (Deserter)। তাদের কোন সৎ কাজ আমার প্রভু মহামহিম সম্রাট গ্রহণ করবেন না।
আপনার সেনাপতি তার অতুলনীয় চরিত্রের প্রভাবে, অক্লান্ত পরিশ্রমে, কঠোর সাধনায় তার সৈন্য বাহিনীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এমন দুর্জয় যোদ্ধায় পরিণত কোরেছিলেন, তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে (আকীদা) এমন পরিষ্কারভাবে তাদের মনমগজে স্থাপন কোরেছিলেন, বাহিনীর মধ্যে এমন ইস্পাত কঠিন ঐক্য ও শৃঙ্খলা গড়ে দিয়েছিলেন যে, ঐ বাহিনী সর্বদিক দিয়ে বিদ্রোহীদের চেয়ে দুর্বল হোলেও প্রতিটি সংঘর্ষে, প্রতিটি যুদ্ধে আপনার সেনাপতির বাহিনী বিজয়ী হোতে লাগলো এবং আপনার সার্বভৌমত্ব ও সংবিধান প্রতিষ্ঠা কোরতে লাগলো। এই বাহিনী ৬০/৭০ বছরের মধ্যে নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রাম ও যুদ্ধ কোরে আপনার সাম্রাজ্যের প্রায় অর্ধেক পরিমাণ আবার আপনার সার্বভৌমত্বের অধীনে নিয়ে এসে তাতে আপনার তৈরি নিখুঁত সংবিধান চালু কোরে আপনার প্রজাদের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সামাজিক সুবিচার ও পূর্ণ নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করলো। অন্য যে বাদশাহ (ইবলিস) আপনাকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলো আপনার রাজ্যে অশান্তি আর রক্তপাত চালু রাখবে, সে ব্যর্থ হোয়ে গেলো।
কিন্তু আপনি দেখলেন যে আপনার সাম্রাজ্যের অর্ধেক পরিমাণে আপনার সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা ও আপনার তৈরি সংবিধান কার্যকরী করার পর আপনার সেনাপতির তৈরি বাহিনী হঠাৎ তাদের উদ্দেশ্য ভুলে গেলো। বিজিত অর্ধেক সাম্রাজ্যের ধন-দৌলত, শান-শওকত, শক্তি ও ক্ষমতা হাতে পেয়ে তারা তাদের আসল উদ্দেশ্য ভুলে মহাসমারোহে রাজত্ব কোরতে লাগল। অবশ্য তারা তাদের বিজিত এলাকায় তাদের উপর আপনার দেয়া দায়িত্ব পালন করলো, অর্থাৎ সেখানে আপনার সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা ও আপনার দেয়া সংবিধান চালু করলো। কিন্তু সাম্রাজ্যের বাকি অংশকেও যে আপনার সার্বভৌমত্বের অধীন এনে সেখানেও সংবিধান চালু করার দায়িত্ব ছিলো সেটা তারা ত্যাগ করলো। এতদিন আপনার সেনাপতির বাহিনীর সামনে একটিমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো, সেটা হলো আপনার সমস্ত রাজ্যে একমাত্র আপনার সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা ও আপনার সংবিধান চালু করা এবং সেই প্রচেষ্টায়, সেই সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ কোরে আপনার সন্তুষ্টি অর্জন করা ও আপনার প্রতিশ্র“ত অভাবিত পুুরষ্কার অর্জন করা। ঐ সংগ্রামে তারা দিনরাত এত ব্যস্ত থাকতো, এমন একাগ্র লক্ষ্যে (হানিফ) তারা সংগ্রাম কোরত যে তাদের অন্য কোন কিছুতেই মন দেবার সময় থাকতো না। এইবার সংগ্রাম ত্যাগ করার পর তারা হাতে সময় পেলো। এই সময় তারা কেমন কোরে ব্যয় কোরবে? উপায়ও তারা বের কোরে ফেললো। যে সংবিধান চালু করার দায়িত্ব আপনি ও আপনার সেনাপতি ঐ বাহিনীকে দিয়েছিলেন- সেই সংবিধানের আইন, নিয়ম-কানুন, আদেশ-নিষেধগুলিকে তারা ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ কোরতে আরম্ভ করলো; ঠিক যে কাজটা আপনি ও আপনার সেনাপতি বার বার নিষেধ কোরেছিলেন, কারণ আপানারা জানতেন যে ঐ বিশ্লেষণের অবশ্যাম্ভাবী পরিণতি হোচ্ছে মতভেদ, বাহিনীর ঐক্য ধ্বংস ও বিদ্রোহীদের হাতে পরাজয়। পরিণাম এত ভয়াবহ বোলেই আপনার সংবিধানেই আপনি ঐ কাজ করাকে নিষিদ্ধ কোরে দিয়েছিলেন (কোর’আন- সুরা আলে-ইমরান ১০৫)। আপনার সেনাপতিও এর গুরুত্ব উপলব্ধি কোরে সংবিধানের কোন ধারা-উপধারার অর্থ নিয়ে মতভেদ ও তর্ক করাকে, স্বয়ং সম্রাটকে অস্ব^ীকার (কুফর) করার সমান অপরাধ বোলে তার বাহিনীর মধ্যে ঘোষণা কোরে দিয়েছিলেন। কিন্তু সংগ্রাম ত্যাগ করার পর যে সময় পাওয়া গেলো তখন আর কারও ঐ সব আদেশ ও সাবধানবাণী মনে রোইল না। আপনার সেনাপতি তার অপরিসীম অধ্যবসায়ে তার সৈন্য বাহিনীর মধ্যে যে প্রচণ্ড বর্হিমুর্খী কার্যক্ষমতা সৃষ্টি কোরেছিলেন, তা ব্যয় হোতে লাগলো সংবিধানের ধারা-উপধারার ব্যাখ্যায়, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণে ও ঐগুলি প্রচারে। অতি শীঘ্রই ঐ বাহিনী ঐ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের উপর নানা দলে-উপদলে (মাযহাবে, ফেরকায়) বিভক্ত হোয়ে গেলো, বাহিনীর ঐক্য ভেঙ্গে চুরমার হোয়ে গেলো। শুধু তাই নয়-যে বাহিনীকে আপনার সেনাপতি গঠন কোরেছিলেন আপনার বিদ্রোহী প্রজাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কোরে তাদের আবার আপনার শাসনে ফিরিয়ে আনতে, তারা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বদলে নিজেদের দল-উপদলের মধ্যেই যুদ্ধ ও রক্তপাত শুরু কোরে দিলো। যে সংবিধান প্রতিষ্ঠার জন্য ঐ বাহিনী সৃষ্টি করা হোয়েছিলো, সে সংবিধানকে প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ বাদ দিয়ে ঐ সংবিধানেরই আইন-কানুনের অর্থ নিয়ে ঐ বাহিনী ঐক্য নষ্ট কোরে নিজেদের মধ্যে রক্তপাত শুরু কোরে দিলো। আপনার ও আপনার সেনাপতির আসল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হোয়ে গেলো।
উদ্দেশ্যের ব্যর্থতার এইখানেই শেষ নয়। আপনার সেনাপতির বাহিনী যখন সংবিধানের চুলচেরা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও তাই নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারিতে ব্যস্ত, শাসক ও নেতারা যখন মহা শান-শওকতের সঙ্গে বাদশাহীতে ব্যস্ত, তখন আপনার ঐ বাহিনীর মধ্য থেকে আরেক দল লোক গজালো- যারা এই প্রচার কোরতে আরম্ভ করলো যে আপনার সাম্রজ্যে আপনার বিদ্রোহী প্রজাদের দমন কোরে আপনার সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম-টংগ্রাম ওসব কিছু নয়, ব্যক্তিগতভাবে নিজের আত্মার ধোয়া-মোছা, ঘষা-মাজা কোরে আত্মার উন্নতি কোরে নানা রকম কেরামতের শক্তি অর্জন করাই হোচ্ছে প্রকৃত কাজ। এর নাম তারা দিলো আপনার (আল্লাহর) নৈকট্য লাভ। কেমন কোরে ধোয়া-মোছা, ঘষা-মাজা কোরলে আত্মার শক্তি বৃদ্ধি পাবে, কেরামতের শক্তি জন্মাবে, সে জন্য তারা নানা রকম প্রত্রি“য়া (তরীকা) উদ্ভাবন কোরে ফেললো। বাহিনীর বহু লোক ঐ মতবাদ বিশ্বাস কোরে তাদের অনুসারী হোয়ে গেলো। তারা এ কথা বুঝতে ব্যর্থ হলো যে ‘আপনি ও আপনার সেনাপতি যে উদ্দেশ্যে এই বাহিনী গঠন কোরেছিলেন তাদের ঐ মতবাদ তার ঠিক বিপরীত। অর্থাৎ আপনার বাহিনীকে সৃষ্টি করা হোয়েছিলো বহির্মুখী সংগ্রামের জন্য, আর ঐ মতবাদ হোচ্ছে সংগ্রাম ত্যাগ কোরে অন্তর্মুখী হোয়ে শুধু আত্মার ধোয়া-মোছার জন্য। আপনার সাম্রাজ্যে আপনার সার্বভৌমত্ব অস্ব^ীকারকারী বিদ্রোহীদের দমন কোরে তাদের আবার আপনার সার্বভৌমত্বে ফিরিয়ে এনে আপনার সংবিধান চালু করার সংগ্রাম ত্যাগ কোরে অন্য কোনভাবেই যে আপনার সন্তুষ্টি অর্জন করা অসম্ভব তাও তারা বুঝতে অক্ষম হলো। কোন কর্মকর্তার অধীনস্ত কর্মচারীরা তাদের কর্তব্য কাজ বাদ দিয়ে সারাদিন যদি কর্মকর্তার পায়ে সাজদায় পড়ে থাকে বা তার পদসেবা কোরতে থাকে তবে সেই কর্মকর্তা কখনও খুশী হোতে পারেন কি? কখনই নয়। বিশেষ কোরে যদি সে কর্মকর্তা পৃথিবীর কোন কিছুর মুখাপেক্ষী না হন, বে-নেয়ায হন। কিন্তু করুণ ব্যাপার হলো এই যে, সংগ্রাম ত্যাগী আপনার সৈন্য দলের ঐক্য ধ্বংসকারী বিশ্লেষক দল ও আপনার সন্তুষ্টিকাংখী আত্মা ঘষা-মাজার দল এই উভয় দলই নিজেদের অতি উৎকৃষ্ট সৈনিক মনে কোরে মহা উৎসাহে দৈনিক পাঁচবার কুচ-কাওয়াজ, আপনাকে অভিবাদন ও সংবিধানের অন্যান্য ছোটখাট সব কাজ কর্ম দক্ষতার সাথে পালন কোরে যেতে লাগলো। এই হাস্যকর পরিস্থিতির প্রকৃত কারণ হলো আপনার সেনাপতির সৈন্য বাহিনী ও সেনাপতির আকীদার বিকৃতি, অর্থাৎ যে উদ্দেশ্য আপনি ও আপনার সেনাপতি তার বাহিনীর সম্মুখে স্থাপন কোরেছিলেন, তা পরিবর্তন কোরে বিভিন্ন উদ্দেশ্য স্থাপন ও তার ফলে সংগ্রাম ত্যাগ করা।
আকীদার বিকৃতির ফলে উদ্দেশ্য ব্যর্থ হোয়ে যাবার পর আপনার ঐ সৈন্যবাহিনীর আর কোন অর্থ রইল না। কিন্তু আকীদার বিকৃতির কারণেই অর্থহীন হোয়ে গেলেও ঐ বাহিনী অতি নিষ্ঠার সাথে সংবিধানের আইন-কানুন, কুচ-কাওয়াজ, ইউনিফরম, হেলমেট, বুট ইত্যাদি পরা ছাড়াও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র নিয়ম-কানুনও নিখুঁতভাবে পালন কোরে যেতে লাগলো। এইভাবে কিছুদিন চলার পর সংগ্রামহীন, যুদ্ধহীন অবস্থায় থাকার ফলে, আপনার বাহিনী আস্তে আস্তে যুদ্ধই ভুলে যেতে লাগলো এবং ক্রমে এমন একটা সময় এলো যখন আপনি দেখলেন যে আপনার সৈন্যরা যোদ্ধার বদলে অতি নিপুন আইনজ্ঞ ও অতি উৎকৃষ্ট সাধু-সন্তে রূপান্তরিত হোয়ে গেছে। আপনার সেনাপতি সারা জীবনের সাধনায় যে দুর্ধর্ষ যোদ্ধা সৃষ্টি কোরেছিলেন তারা আর এখন যুদ্ধের কথাই বলে না। তাদের একদল সংবিধানের আইন-কানুনের দণ্ড-বিধির ধারা-উপধারার অর্থ নিয়ে নিজেরা মারামারি করে, আরেক দল সর্ব রকম বিপদাপদ থেকে অতিসন্তর্পণে নিজেদের বাঁচিয়ে ঘরের কোণে বোসে আপনাকে স্মরণ (যিকর) করে।
আপনার সাম্রাজ্যের বাকি অর্ধেকের বিদ্রোহীরা কিন্তু বোসে ছিলো না। তারা সচেষ্ট ছিলো কেমন কোরে আবার আপনার সংবিধানকে (কোর’আন) বাদ দিয়ে নিজেদের তৈরি সংবিধান চালু করবে।
আপনার বাহিনীর যখন ঐ অবস্থা তখন আপনার সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশের বিদ্রোহীরা তাদের বিভিন্ন সৈন্যবাহিনী নিয়ে আপনার সাম্রাজ্যের যে অর্ধেকটাতে আপনার সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হোয়েছিলো তা আত্র“মণ করতে এসে আপনার বাহিনীর মুখোমুখি এসে দাঁড়াল।
বিদ্রোহী বাহিনী ও তার সেনাপতিরা লক্ষ্য কোরে দেখলো আপনার বাহিনীর সৈন্য-সেনাপতিরা যুদ্ধ ভুলে গেছে। আপনার সৈন্য বাহিনীর উদ্দেশ্য ও কর্তব্য নির্ধারণ কোরে এবং সেই উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য, প্রশিক্ষণের জন্য আপনি যে সংবিধান আপনার বিগত সেনাপতির মাধ্যমে তাদের জন্য দিয়েছিলেন, সেই সংবিধানের আদেশ-নিষেধ, নিয়ম-কানুন ইত্যাদির অর্থ ও ব্যাখ্যা নিয়ে মতভেদ হোয়ে আপনার বাহিনীর সেনাপতিও সৈন্যরা বহু ভাগে বিভক্ত, ঐ অর্থ ও ব্যাখ্যা নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি, রক্তপাত কোরছে। কতকগুলি সেনাপতি ও সৈন্য ঐ সব গোলমালে না যেয়ে সেনানিবাসে তাদের যার যার কামরায় বোসে বোসে সর্বক্ষণ আপনাকে মনে কোরছে (যিকির) ও নানা রকম ক্রিয়া-কর্মের মাধ্যমে তাদের আত্মার উৎকর্ষের জন্য কঠিন পরিশ্রম কোরছে। বিদ্রোহী সৈন্য-সেনাপতিরা আরও লক্ষ্য করলো যে আপনার বাহিনীর সৈন্য সেনাপতিরা যুদ্ধ ভুলে গেলেও সংবিধানে আপনি যুদ্ধের প্রশিক্ষণের জন্য যে দিনে পাঁচবার কুচকওয়াজের (নামাজ) ব্যবস্থা রেখেছিলেন তা অতি নিষ্ঠার সাথে পালন করে। শুধু এ পাঁচবার নয় বহু সৈন্য গভীর রাত্রে ঘুম থেকে উঠে উর্দী পড়ে একা একা কুচকাওয়াজ করে আপনাকে সন্তুষ্ট করার জন্য (তাহাজ্জুদ)। এ ছাড়াও ঐ সংবিধান মোতাবেক উর্দী, বুট ও বোতামের পালিশ, নিয়ম মাফিক চুল, দাড়ি, মোচ ইত্যাদি তুচ্ছতম ব্যাপারেও আপনার সৈন্য দল অতি দক্ষ, অতি নিখুঁত। কিন্তু যে কারণে ঐ কুচকাওয়াজ ঐ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আপনি এ সংবিধানে রেখেছিলেন তা ভুলে যাওয়ায় তারা যুদ্ধই ভুলে গেছে। যুদ্ধের প্রশিক্ষণকেই তারা উদ্দেশ্য মনে কোরে নিয়েছে। এরপর যখন বিদ্রোহী সেনাবাহিনী আপনার বাহিনীকে আত্র“মণ করলো, তখন আপনি দেখলেন যে স্থানে স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সৈন্য বিদ্রোহীদের বাধা দিলেও আপনার বাহিনীর সৈন্য-সেনাপতিরা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধ করলো না, তারা অতি নিষ্ঠার সাথে নিখুঁতভবে কুচকাওয়াজ কোরতে লাগলো, অতি দক্ষতার সাথে বন্দুক, কামান, মর্টার মারা শিখতে থাকলো। সংবিধানের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে তারা এতভাবে এত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে বিভক্ত যে ঐক্যবদ্ধভাবে কোন সেনাপতির অধীনে যুদ্ধ করাও তাদের পক্ষে অসম্ভব ছিলো। বিচ্ছিন্নভাবে যে সামান্য প্রতিরোধ করা হলো তাও প্রতি ক্ষেত্রে আপনার সৈন্য বাহিনী বিদ্রোহীদের কাছে পরাজিত হোয়ে গেলো, কারণ তারা আর আপনার বিগত সেনাপতির শিক্ষায় শিক্ষিত নেই, অজেয় যোদ্ধা নেই।
এই অবস্থায় আপনি আপনার সৈন্য-সেনাপতিদের কাছে দৌঁড়ে লোক পাঠালেন। তারা যেয়ে সৈন্য-সেনাপতিদের বললো-হায়! কী সর্বনাশ! সম্রাটের বিদ্রোহীরা আত্র“মণ কোরেছে তার রাজ্য দখল করার জন্য, আর তোমরা প্যারেড, কুচকাওয়াজ কোরে যাচ্ছ? যে কারণে তোমাদের এত কুচকাওয়াজ- সেই উদ্দেশ্যই ভুলে গেছো? তোমাদের বিগত সেনাপতি কি বোলে যান নি যে তোমাদের এই কুচকাওয়াজের (নামাজের) আসল উদ্দেশ্য যুদ্ধ (জেহাদ) (হাদীস- মুয়ায (রা:) থেকে- আহমদ, তিরমিযি, ইবনে মাজাহ)। এখন কুচকাওয়াজ ছেড়ে সম্রাটের বিদ্রোহীদের বাধা দাও, যুদ্ধ কর। এ কথা শুনে আপনার সৈন্য-সেনাপতিরা বললো- শোন আহাম্মক! এই দ্যাখো আমাদের প্রভু মহামহিম সম্রাটের দেয়া বই, সংবিধান। এতে যা যা করার আদেশ আছে তা আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন কোরে যাচ্ছি। এইগুলি পালন কোরে সম্রাটকে খুশী করাই, তার সান্নিধ্য লাভ করাই আমাদের জীবনের লক্ষ্য। দেখোনা দিনে পাঁচবার কুচকাওয়াজ করার হুকুম এই বইয়ে আশীবারের চেয়েও বেশী করা আছে। তোমার কথায় আমরা আশীবারের আদেশ অমান্য কোরে যুদ্ধ কোরতে যাব? আপনার লোক তাদের বোঝাতে চেষ্টা করলো দিনে পাঁচবার কুচকাওয়াজ ও ড্রিল করার কথা আশীবার যেমন আছে তেমনি সংবিধানের ছয় হাজারের বেশী আয়াতের মধ্যে দু’শ ষোলটিরও বেশী আয়াত যুদ্ধের ব্যাপারে আছে। কিন্তু আপনার সৈন্য-সামন্ত ও তাদের সেনাপতিদের আকীদা এত বিকৃত হোয়ে গিয়েছিলো এবং বহুদিন ঐ আকীদায় থাকার ফলে যুদ্ধ এমনভাবে ভুলে গিয়েছিলো যে তারা আপনার পাঠানো লোকের কথায় কোন কান দিলো না।
আপনার সৈন্য সামন্ত অতি দক্ষতার সাথে কুচকাওয়াজ ও প্রশিক্ষণ নিতে থাকলো, অতি নিষ্ঠার সাথে সংবিধানের অন্যান্য খুঁটিনাটি নিয়ম পালন কোরতে থাকলো, বিদ্রোহীরা এসে আপনার সেনাপতি ও তার দুর্ধর্ষ বাহিনী আপনার সাম্রাজ্যের যে অর্ধেক অংশে আপনার সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা কোরেছিলেন তা পুনরায় অধিকার কোরে তাদের নিজস্ব সার্বভৌমত্ব ও সংবিধান প্রতিষ্ঠা করলো। তারপর তারা বিদ্রুপের মুচকি হেসে আপনার কুচকাওয়াজরত বাহিনীকে বললো- বাবারা! তোমরা খুব কর্তব্যনিষ্ঠ! এমনিভাবেই তোমরা তোমাদের সম্রাটের সেবা কোরে যাও। তিনি তোমাদের যে বই দিয়েছেন তাতে যা সব লেখা আছে তা চুলচেরা বিশ্লেষণ কোরতে থাক, সেই সব বিশ্লেষণগুলি সভা-সমিতি কোরে, বই লিখে প্রচার কোরতে থাক, কোন আদেশ-নিষেধের গভীরে কী গুপ্ত অর্থ আছে তা নিয়ে গবেষণা ও বাহাস কোরতে থাক। তাতে যদি তোমাদের মধ্যে কিছু মতভেদ হয়, মারামারি হয় তাতে কুছ পরওয়া নেই, ওটুকু সত্য প্রকাশে হোয়েই থাকে। এই কাজগুলি করলে তোমাদের সম্রাট তোমাদের উপর খুব খুশী থাকবেন। কিন্তু খবরদার! আমাদের এই সরকার-এর নীতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, দণ্ডবিধি, শিক্ষা-ব্যবস্থা এসব ব্যাপারে তোমরা কখনও নাক গলাতে এসো না, এগুলো তোমাদের ব্যপার নয়, কর্তব্যও নয়। তাদের কথাশুনে আপনার বাহিনী খুব খুশী হোয়ে আরও উৎসাহে কুচকাওয়াজ কোরতে লাগলো, আপনার বই দেখে দেখে উর্দী পড়তে থাকলো, বোতাম চকচকে পালিশ কোরতে থাকলো, বই মোতাবেক চুল, দাড়ি, গোঁফ ছাটতে থাকলো আর দিনে পাঁচ বার লাইন কোরে দাঁড়িয়ে আপনাকে স্যালুট কোরতে থাকলো।
এখন আপনি বলুন, এই বাহিনীকে আপনি আপনার বাহিনী বোলে স্ব^ীকৃতি দেবেন, বা আপনার প্রিয় সেনাপতিই কি স্বীকৃতি দেবেন? নিঃসন্দেহে বলা যায়, অবশ্যই নয়। তা হোলে আল্লাহ ও তার শেষ নবী (দ:) বর্তমানের এই ‘মুসলিম’ জাতিকে তাদের জাতি বোলে স্বীকৃতি দেবেন না, একজন সম্রাট যেমন অমন উদ্দেশ্যবিহীন সেনাদলের অতি উৎকৃষ্ট কুচকাওয়াজের কোন দাম দেবেন না, তেমনি আল্লাহও অমন উদ্দেশ্যহীন জাতির নামায, রোযার কোন দাম দেবেন না। তাই তার সেনাপতি (দ:) ভবিষ্যতবাণী কোরে গেছেন যে, এমন একটা সময় আসবে যখন মানুষ রোযা রাখবে কিন্তু সেটা হবে না খেয়ে থাকা (রোযা হবে না), এবং রাত্রে তাহাজ্জদ পড়বে কিন্তু সেটা হবে শুধু ঘুম নষ্ট করা (তাহাজ্জুদ হবে না)। এখন সেই সময়।