রুহুল আমীন :
এই কথা অনস্বীকার্য যে, আল্লাহর রসুল মোহাম্মদ (দ:) তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব (সমস্ত পৃথিবীতে এই শেষ দীন প্রতিষ্ঠা) পূরণ করার জন্য যে জাতিটি তৈরি করেছিলেন সেই জাতির ইসলাম সম্পর্কে আকিদা আর বর্তমানের পৃথিবীজুড়ে মৃত দেহের মতো পড়ে থাকা লাঞ্ছিত এই জাতির আকিদার মাঝে আকাশ পাতালের ফারাক বিদ্যমান। ধর্মজীবী তথাকথিত পুরোহিত শ্রেণির খপ্পরে পড়ে দীন আজ বিকৃত এবং বিপরীতমুখী আকার ধারণ করেছে। সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম এমন কোন বিষয় নেই যেখানে এই বিকৃতি পৌঁছায়নি। আর এরই ধারাবাহিকতায় দীন আজ অন্ধ বিশ্বাসের অলীক ধ্যান- ধারণায় পরিণত হয়েছে। বাস্তবে ইসলাম কোনো অন্ধভাবে বিশ্বাসের যোগ্য দীন নয়, প্রকৃত ইসলাম হচ্ছে যুক্তির উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। আর তাই যুক্তি দিয়েই ইসলামকে নিরীক্ষণ করতে হয়। আল্লাহর কোর’আন যিনি ভাসাভাসাভাবেও একবার পড়ে গেছেন তিনিও লক্ষ্য না কোরে পারবেন না যে, চিন্তা-ভাবনা, যুক্তির উপর আল্লাহ কত গুরুত্ব দিয়েছেন। “তোমরা কি দেখ না? তোমরা কি চিন্তা করো না?” এমন কথা কোর’আনে এতবার আছে যে সেগুলোর উদ্ধৃতির কোন প্রয়োজন পড়ে না। এখানে শুধু দু’একটি কথা বলছি এর গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য। চিন্তা-ভাবনা, কারণ ও যুক্তির উপর আল্লাহর অতখানি গুরুত্ব দেওয়া থেকেই প্রমাণ হয়ে যায় যে এই দীনে অন্ধ বিশ্বাসের কোনও স্থান নেই। তারপরও তিনি সরাসরি বলছেন-“যে বিষয়ে তোমাদের জ্ঞান নেই (অর্থাৎ বোঝ না) তা গ্রহণ ও অনুসরণ কোরো না। নিশ্চয়ই তোমাদের শোনার, দেখার ও উপলব্ধির প্রত্যেকটিকে প্রশ্ন করা হবে (সুরা বনি ঈসরাইল ৩৬)।” কোর’আনের এ আয়াতের কোন ব্যাখ্যা প্রয়োজন পড়ে না। অতি সহজ ভাষায় আল্লাহ বলছেন জ্ঞান, যুক্তি-বিচার না কোরে কোন কিছুই গ্রহণ না করতে। অন্য বিষয় তো কথাই নেই, সেই মহান স্রষ্টা তাঁর নিজের অস্তিত্ব সম্বন্ধেও কোর’আনে বহুবার বহু যুক্তি দেখিয়েছেন। তারপর তাঁর একত্ব, তিনি যে এক, তাঁর কোন অংশীদার, সমকক্ষ নেই, অর্থাৎ একেবারে তাঁর ওয়াহদানিয়াত সম্পর্কেই যুক্তি তুলে ধরেছেন। বলছেন- “বল (হে মোহাম্মদ), মুশরিকরা যেমন বলে তেমনি যদি (তিনি ছাড়া) আরও উপাস্য (এলাহ) থাকতো তবে তারা তাঁর সিংহাসনে (আরশে) পৌঁছতে চেষ্টা করতো (সুরা বনি ইসরাইল ৪২)। আবার বলছেন- “আল্লাহ কোন সন্তান জন্ম দেন নি; এবং তাঁর সাথে আর অন্য কোনও উপাস্য (এলাহ) নেই, যদি থাকতো তবে প্রত্যেকে যে যেটুকু সৃষ্টি করছে সে সেইটুকুর পৃষ্ঠপোষকতা করতো এবং অবশ্যই কতগুলি (উপাস্য) অন্য কতকগুলির (উপাস্য) উপর প্রাধান্য বিস্তার করতো (সুরা আল-মো’মেনুন ৯১)।” এমনি আরও বহু আয়াত উল্লেখ করা যায় যেগুলিতে আল্লাহ মানুষের জ্ঞান, বিবেক, যুক্তির, চিন্তার প্রাধান্য দিয়েছেন, সব কিছুতেই ঐগুলি ব্যবহার করতে বলেছেন, চোখ-কান বুঁজে কোন কিছুই অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ যেমন একেবারে তাঁর নিজের অস্তিত্ব ও একত্বের ব্যাপারেও যুক্তি উপস্থাপিত করেছেন, (একটু পেছনেই যা উল্লেখ কোরে এলাম) তেমনি তাঁর রসুল (দ:) তাঁর ঈমান অর্থাৎ বিশ্বাসের ব্যাপারেও বলছেন- ‘আমার ঈমানের ভিত্তি ও শেকড় হলো যুক্তি’। এরপর ইসলামে আর অন্ধ বিশ্বাসের কোন জায়গা রইল কোথায়? অন্ধ বিশ্বাসের তো দূরের কথা আল্লাহ ও রসুলের (দ:) প্রেমে ও শ্রদ্ধায় আপ্লুত হয়েও যে যুক্তিকে ত্যাগ করা যাবে না, তা তাঁর উম্মাহকে শিখিয়ে গেছেন মানব জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। একটি মাত্র শিক্ষা এখানে উপস্থাপন করছি। উহুদের যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় তাঁর তলোয়ার উঁচু কোরে ধরে বিশ্বনবী (দ:) বললেন- “যে এর হক আদায় করতে পারবে সে এটা নাও।” ওমর বিন খাত্তাব (রা:) লাফিয়ে সামনে এসে হাত বাড়িয়ে বললেন-“ইয়া রসুলাল্লাহ (দ:) ! আমাকে দিন, আমি এর হক আদায় করবো।” মহানবী (দ:) তাকে তলোয়ার না দিয়ে অন্যদিকে ঘুরে আবার বললেন- “যে এর হক আদায় করতে পারবে সে নাও।” এবার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহাবা যুবায়ের বিন আল আওয়াম (রা:) লাফিয়ে এসে হাত বাড়ালেন
– “আমি এর হক আদায় কোরব।” আল্লাহর রসুল (দ:) তাকেও তলোয়ার না দিয়ে অন্যদিকে ঘুরে আবার ঐ কথা বললেন, এবার আনসারদের মধ্যে থেকে আবু দুজানা (রা:) বিশ্বনবীর (দ:) সামনে এসে প্রশ্ন করলেন- “হে আল্লাহর রসুল! এই তলোয়ারের হক আদায়ের অর্থ কী?” রসুলাল্লাহ জবাব দিলেন- ‘এই তলোয়ারের হক হচ্ছে এই যে এটা দিয়ে শত্র“র সঙ্গে এমন প্রচণ্ডভাবে যুদ্ধ করা যে এটা দুমড়ে, ভেঙ্গে চুরে যাবে।” আবু দুজানা (রা:) বললেন- ‘আমায় দিন, আমি এর হক আদায় করবো।” বিশ্বনবী (দ:) আবু দুজানা (রা:) হাতে তাঁর তলোয়ার উঠিয়ে দিলেন (হাদিস ও সীরাতে রসুলাল্লাহ- মোহাম্মাদ বিন ইসহাক)। একটা অপূর্ব দৃষ্টান্ত, শিক্ষা যে, অন্ধবিশ্বাস ও আবেগের চেয়ে ধীর মস্তিষ্ক, যুক্তির স্থান কত ঊর্ধ্বে। ওমর (রা:) ও যুবায়ের (রা:) এসেছিলেন আবেগে, স্বয়ং নবীর (দ:) হাত থেকে তাঁরই তলোয়ার! কত বড় সম্মান, কত বড় বরকত ও সৌভাগ্য। ঠিক কথা, কিন্তু আবেগের চেয়ে বড় হলো যুক্তি, জ্ঞান। তারা আবেগে ও ভালোবাসায় জিজ্ঞাসা করতে ভুলে গেলেন যে, মহানবী (দ:) যে হক আদায় করার শর্ত দিচ্ছেন, সেই হকটা কী? আবু দুজানার (রা:) আবেগ ও ভালোবাসা কম ছিল না। কিন্তু তিনি আবেগে যুক্তিহীন হয়ে যান নি, প্রশ্ন করেছেন- কী ঐ তলোয়ারের হক? হকটা কী তা না জানলে কেমন কোরে তিনি তা আদায় করবেন? বিশ্বনবী (দ:) যা চাচ্ছিলেন আবু দুজানা (রা:) তাই করলেন। যুক্তিসঙ্গত প্রশ্ন করলেন এবং তাকেই তাঁর তলোয়ার দিয়ে সম্মানিত করলেন। এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে যুক্তিকে প্রাধান্য না দেওয়ায় মহানবী (দ:) প্রত্যাখ্যান করলেন কাদের? একজন তাঁর শ্বশুর এবং ভবিষ্যৎ খলিফা, অন্যজন শ্রেষ্ঠ সাহাবাদের অন্যতম এবং দু’জনেই আশআরা মোবাশশারার অন্তর্ভুক্ত, অন্যদিকে আবু দুজানা এসব কিছুই নন, একজন সাধারণ আনসার। তবু যুক্তিকে প্রাধান্য দেয়ায় ঐ মহা সম্মানিত সাহাবাদের বাদ দিয়ে তাকেই সম্মানিত করলেন। প্রশ্ন হচ্ছে- আবু দুজানার (রা:) আবেগ, বিশ্বনবীর (দ:) প্রতি তার ভালোবাসা কি ওমর (রা:) বা যুবায়েরের (রা:) চেয়ে কম ছিল? না, কম ছিল না, তার প্রমাণ বিশ্বনবীর (দ:) দেয়া তলোয়ারের হক তিনি কেমন কোরে আদায় করেছিলেন তা ইতিহাস থেকে পাওয়া যায়।
ইবনে ওমর (রা:) বর্ণনা করেছেন- আল্লাহর রসুল (দ:) বললেন- ‘কোনো মানুষ নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত, ওমরা (ইবনে ওমর (রা:) উল্লেখ করছেন যে ঐগুলি তিনি একে একে এমনভাবে বলতে লাগলেন যে, মনে হলো কোন সওয়াবের কথাই তিনি (দ:) বাদ রাখবেন না) ইত্যাদি সবই করল কিন্তু কেয়ামতের দিন তার আকলের বেশি তাকে পুরস্কার দেয়া হবে না (ইবনে ওমর (রা:) থেকে- আহমদ, মেশকাত)। রসুলাল্লাহ (দ:) শব্দ ব্যবহার করেছেন আকল, যে শব্দটাকে আমরা বাংলায় ব্যবহার করি ‘আক্কেল’ বলে, অর্থাৎ মানুষের বুদ্ধি, সাধারণজ্ঞান, যুক্তি ইত্যাদি, আবু দুজানা (রা:) যেটা ব্যবহার কোরে নবীকে (দ:) প্রশ্ন করেছিলেন তলোয়ারের কী হক? অর্থাৎ বিচারের দিনে মানুষের সওয়াবই শুধু আল্লাহ দেখবেন না, দেখবেন ঐ সব কাজ বুঝে করেছে, নাকি গরু-বকরীর মতো না বুঝে কোরে গেছে এবং সেই মতো পুরস্কার দেবেন, কিম্বা দেবেন না। অর্থাৎ কারণ ও উদ্দেশ্য না বুঝে বে-আক্কেলের মতো নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত, ইত্যাদি সব রকম সওয়াবের কাজ শুধু সওয়াব মনে কোরে কোরে গেলে কোন পুরস্কার দেওয়া হবে না। এই হাদিসটাকে সহজ বাংলায় উপস্থাপন করলে এই রকম দাঁড়ায়- ‘বিচারের দিনে পাক্কা নামাজীকে আল্লাহ প্রশ্ন করবেন- নামাজ কায়েম করেছিলে? মানুষটি জবাব দেবে-হ্যাঁ আল্লাহ! আমি সারা জীবন নামাজ পড়েছি। আল্লাহ বলবেন-ভালো! কেন পড়েছিলে? লোকটি জবাব দেবে- তুমি প্রভু। তোমার আদেশ, এই তো যথেষ্ট, তুমি হুকুম করেছ তাই পোড়েছি। আল্লাহ বলবেন- আমি হুকুম ঠিকই করেছি। কিন্তু কেন করেছি তা কি বুঝেছ? তোমার নামাজে আমার কি দরকার ছিল? আমি কি তোমার নামাজের মুখাপেক্ষী ছিলাম বা আছি? কী উদ্দেশ্যে তোমাকে নামাজ পড়তে হুকুম দিয়েছিলাম তা বুঝে কি নামাজ পড়েছিলে?” তখন যদি ঐ লোক জবাব দেয়- না। তাতো বুঝিনি, তবে মহানবীর (দ:) কথা মোতাবেক তার ভাগ্যে নামাজের কোন পুরস্কার জুটবে না। আর যে মানুষ আল্লাহর প্রশ্নের জবাবে বলবে- হ্যাঁ আল্লাহ, আমি বুঝেই নামাজ পড়েছি। তোমার রসুলকে (দ:) তুমি দুনিয়ায় পাঠিয়েছিলে সমস্ত মানব জাতির উপর তোমার দেয়া জীবন-ব্যবস্থা, দীনকে সর্বাত্মক সংগ্রামের মাধ্যমে জয়ী কোরে পৃথিবী থেকে সব রকম অন্যায়, শোষণ, অবিচার, যুদ্ধ ও রক্তপাত দূর কোরে শান্তি (ইসলাম) প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দিয়ে। তাঁর একার পক্ষে এবং এক জীবনে এ কাজ সম্ভব ছিল না। তাঁর প্রয়োজন ছিল একটা জাতির, একটা উম্মাহর, যে জাতির সাহায্যে এবং সহায়তায় তিনি তাঁর উপর দেয়া দায়িত্ব পালন করতে পারেন এবং তাঁর তোমার কাছে প্রত্যাবর্তনের পর যে উম্মাহ তার সংগ্রাম চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়, যে পর্যন্ত না তাঁর দায়িত্বপূর্ণ হয় এবং এবলিস তোমাকে যে দুনিয়ায় ফাসাদ আর রক্তপাতের চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল, তাতে তুমি জয়ী হও। সৌভাগ্যক্রমে, তোমার অসীম দয়ায়, আমি সেই উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। তোমার আদেশ নামাজের উদ্দেশ্য ছিল আমার সেই রকম চরিত্র সৃষ্টি করা, সেই রকম আনুগত্য, শৃঙ্খলা শিক্ষা করা যে চরিত্র ও শৃঙ্খলা হলে আমি তোমার নবীর (দ:) দায়িত্ব সম্পাদনে তাঁর সাহায্যকারী হয়ে সংগ্রাম করতে পারি। তাই আমি বুঝেই নামাজ পোড়েছি। এই লোক পাবে তার নামাজের পূর্ণ পুরস্কার।
এরপর প্রতিবছর হজ্ব করেছে এমন পাক্কা হাজীকে আল্লাহ প্রশ্ন করবেন, হজ্ব করেছিলে? সে বলবে- হ্যাঁ আল্লাহ, আমি প্রতি বছর বছর হজ্ব করেছি। এতে কোরে আমার লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে কিন্তু আমি তোমার ভালোবাসায় তা নির্দ্বিধায় মেনে নিয়েছি। তখন আল্লাহ তাকে প্রশ্ন করবেন কেন হজ্ব করেছিলে? হজ্বের আকিদা জেনে বুঝে কি হজ্ব করেছিলে? তখন সে ঐ নামাজীর মতই বলবে যে, ‘তুমি আদেশ করেছ এই তো যথেষ্ট আমি তোমার আদেশ পালন করার জন্য বছর বছর হজ্বে গিয়েছি তোমার কাছে হাজিরা দিতে, আত্মিক উন্নতির জন্য। তখন আল্লাহ তাকেও এই হজ্বের কোনো পুরস্কার দিবেন না।
আর যে বলবে যে- “হ্যাঁ আল্লাহ, আমি হজ্বের আকিদা বুঝেই হজ্ব করেছি। আমি প্রকৃত উম্মতে মেহাম্মদির সদস্য ছিলাম। আমি জানতাম হজ্বকে কেনো তুমি ফরজ করেছ এবং তা কোন অবস্থায় ফরজ। উম্মতে মোহাম্মদী হচ্ছে এক জাতি, এক উম্মাহ। সমস্ত পৃথিবীই হচ্ছে তাদের কর্মক্ষেত্র। তাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্যই হলো সমস্ত পৃথিবীতে তোমার পাঠানো দীনকে প্রতিষ্ঠা কোরে পৃথিবীতে শান্তি স্থাপন কর যাতে এবলিসের চ্যালেঞ্জে তুমি জিততে পারো। তাই স্বভাবতই তাদের বিভিন্ন এলাকায় পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে হয়। এই বিভিন্ন এলাকায় অবস্থানকারী তোমার বান্দাদের মধ্যে থেকে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে নিজ নিজ এলাকার সমস্যা, প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি নিয়ে তাদের নেতৃস্থানীয়রা বছরে একবার তোমার ঘরে হজ্ব উপলক্ষে একত্রিত হয়। এটা হয় কার্যতঃ বিশ্ব মুসলিমদের এক বার্ষিক মহাসম্মেলন। সেখানে তারা তাদের সমস্যাগুলো কেন্দ্রীয় এমাম বা খলিফার কাছে তুলে ধরেন, আলোচনা পরামর্শ করেন। সেই সাথে জাতির নির্ধারিত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে জাতি কতদূর এগুলো, সামনে কি কি পদক্ষেপ নেয়া উচিত এবং কিভাবে তা বাস্তবায়িত হবে তার নীতি নির্ধারণ। হজ্ব কোনো তীর্থস্থান নয়। তবে যারা হজ্বে যাবে তাদের আধ্যাত্মিক দিকেও যে উন্নতি হয় না তা নয়। হাজীরা এই সম্মেলনকে হাশরের ময়দানের সমতুল্য মনে করবে। মনে করবে যে, তাকে আজ আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। তার সমস্ত জীবন ধরে কোরে আসা কাজগুলোর হিসাব দিতে হবে। উম্মতে মোহাম্মদী হিসেবে সে কতদূর তার উপর অর্পিত দায়িত্বকে পালন করতে পেরেছে তার হিসাব তাকে আজ দিতে হবে। এভাবেই প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদীর হজ্ব তাদের পার্থিব এবং পরকালীন উভয়ই সমস্যার সমাধান দিতে সক্ষম। আমি এই হাজীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।” তখন আল্লাহ এই হাজীর হজ্ব কবুল করবেন এবং তাঁকে পুরস্কৃত করবেন।
একই ব্যাপার ঘোটবে রোজার ক্ষেত্রেও। যে রোজাদার রোজার অর্থ না বুঝে শুধুমাত্র না খেয়ে থাকাকেই রোজা বলে মনে করে, তারাও তাদের পুরস্কার পাবে না। পুরস্কার পাবেন সেই রোজাদার, যারা রোজার প্রকৃত আকিদা বুঝে রোজা রাখতো। অর্থাৎ আল্লাহর সত্যদীন সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার যে পাহাড়সম দায়িত্ব রসুলাল্লাহ এই জাতির উপর অর্পণ করেছেন সেই দায়িত্বকে পূরণ করার জন্য দরকার প্রচণ্ড আত্মিক শক্তি। এই আত্মিক শক্তি যোগায় রোজা। রোজা সাবের হওয়ার শিক্ষা দেয়, সংযমের শিক্ষা দেয়। শত বাধা বিঘœ উপেক্ষা কোরে শত্র“র আঘাতকে তুচ্ছ জ্ঞান করে টর্নেডোর মতো সামনে এগিয়ে চলার শিক্ষা দেয়। এই উত্তর যারা দিতে পারবেন তাদেরকে আল্লাহ রোজার পুরস্কার দিবেন এবং তা অবশ্যই আল্লাহর প্রতিশ্র“তি মোতাবেক তিনি তাঁর নিজ হাতে দিবেন। অন্যান্য এবাদতগুলোর ব্যাপারেও তাই। কাজেই আজকের মুসলিমরা যে দিন-রাত নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি হাজারো রকমের এবাদত-উপাসনা নিয়ে ব্যস্ত আছেন তাদের এই আকিদাহীন, উদ্দেশ্যহীন, সামগ্রিক ধারণাহীন (comprehensive concept) আমলের কতটুকু দাম তারা আল্লাহর কাছে থেকে পাবেন তা এখন ভাববার সময় এসেছে।