পুণ্যের কাজ এই নয় যে তোমরা পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে। বরং পুণ্য হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর, কিয়ামত দিবসের উপর, মালায়েকদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসুলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতিম-মিসকিন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। (সুরা বাকারা ১৭৭)।
ইসলামের প্রতিটি কাজ জাগতিক ও পরকালীন কল্যাণের ভারসাম্যে পূর্ণ। তেমনি ঈদুল ফিতরেরও উদ্দেশ্য আমাদের জাগতিক কল্যাণ সাধন যা আমাদের পরকালের প্রাপ্তিকেও সমৃদ্ধ করে তুলবে। কীভাবে সেটা আলোচনা করার আগে ইসলামের স্বরূপ নিয়ে দুটি কথা।
ইসলাম সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের বাস্তব সমস্যার সমাধান প্রদান করে। সারা মাস বহু ধরনের দান- সদকা, যাকাত, ফেতরা, কাফফারা, ইফতার, ফিদিয়া, হাদিয়া প্রদানের পর ঈদের সবাই সবার সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়া, অতীতের সব গ্লানি, ক্লেদ আত্মার গভীর স্তর থেকে ধুয়ে ফেলে, বুকে বুক মিলিয়ে হৃদয়ে ভ্রাতৃত্বের অনুভূতিকে নিবীড় করার মধ্যেই ঈদের মূল তাৎপর্য নিহিত রয়েছে।
আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, ইসলাম অন্যান্য ধর্মের মত নিছক কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালনের ধর্ম নয়। সকল ধর্মেই ধর্মকর্মের জন্য উপাসনালয়ে যেতে হয়, ধর্মগ্রন্থ পাঠ করতে হয়, পরকালের মুক্তির জন্য কিছু আচার অনুষ্ঠান ও দিবস পালন করতে হয়, স্রষ্টার সন্তুষ্টির জন্য তাঁর উপাসনা করতে হয়। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে আজকে ইসলাম পালন বলতে অধিকাংশ মুসলমান তেমনটাই বুঝেন। কিন্তু ইসলাম তো কেবল পরকালের জন্য বা আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য আনুষ্ঠানিক উপাসনা ও ধর্মকর্মের নির্দেশ দেয় না। বরং ইসলাম বলে, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন মুক্তিলাভের পথ হচ্ছে পৃথিবীতে মানবজীবনে শৃঙ্খলা, ন্যায়, সুবিচার তথা শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য লাগবে একটি নিখুঁত জীবনব্যবস্থা দিয়ে সামগ্রিক জীবন অর্থাৎ ব্যক্তিগত, নৈতিক, আধ্যাত্মিক, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, বিচারিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত পরিচালনা করা। ইসলাম তাই একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা ও জীবনদর্শনের প্রস্তাব করে যেখানে জীবনের কোনো একটি ক্ষুদ্র বিষয়ও বাদ রাখা হয়নি।
একটি মানবসমাজের শান্তি অনেকাংশে নির্ভর করে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের উপর। একটি সমাজে যদি মানুষ তার প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর রাখে, বিপদে একে অপরের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় তাহলে প্রতিটি মানুষ সেখানে নিরাপদ বোধ করে। আল্লাহর রসুল (সা.) বিভিন্ন বর্ণনায় বলেছেন, “তোমাদের চতুর্দিকে চল্লিশ ঘর পর্যন্ত প্রতিবেশী। প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে যে নিজে পেট পুরে খায় সে মো’মেন নয়। যখন কোনো তরকারি রান্না করবে, তখন তাতে একটু বেশি পানি দিয়ে ঝোল বাড়াও, আর তোমার প্রতিবেশীকে পৌঁছে দাও। সেই ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদে থাকে না।”
এভাবে ইসলাম সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলার উপর জোর দিয়েছে। বর্তমানে আমরা যে বস্তুবাদী সভ্যতায় বাস করি, সেখানে মৌলিক চাহিদা পুরনের যাবতীয় দায় রাষ্ট্রের উপর চাপিয়ে দিয়ে প্রতিটি মানুষ তার পরিবার নিয়ে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বাস করে। এখানে মানুষ যত বেশি শিক্ষিত হয়, তত সে স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক হতে থাকে। শহুরে পরিবেশে অধিকাংশ মানুষ জানেই না তার পাশের ফ্লাটে কে থাকে। তার ঘরে ভাত আছে কিনা, সে খোঁজ নেওয়া তো দূরের কথা। এমন একটি ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ সমাজে মানুষ নিরাপদ থাকতে পারে না, ভালো থাকতে পারে না।
মানুষের অভাব দারিদ্র্য দূর করার জন্য সম্পদের সুষম বণ্টন খুব জরুরি। পুঁজিবাদী সমাজে একটি দেশের সমস্ত সম্পদ গুটিকয় ধনকুবেরের হাতে জমা হয় আর অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। সাম্প্রতিক খবর হচ্ছে, আমাদের দেশে নতুন ও পুরনো মিলিয়ে জনসংখ্যার ৪৩ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। কোভিডের আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। কিন্তু কেবল দরিদ্রই বাড়ছে না, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কোটিপতিও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে মোট ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১৫.৩৫ কোটি। এসব অ্যাকাউন্টে মোট আমানতের পরিমাণ ১৭.৪৯ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টি অ্যাকাউন্টে ১ কোটি টাকার বেশি জমা রয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে দেশে কোটিপতি অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা বেড়েছে ৬ হাজার ৯৬২টি। [সূত্র: দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ১৪ মার্চ ২০২৪]। অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘দেশে আয়বৈষম্য বাড়ছে। ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে। তবে গরিবদের কেউ কেউ ধনী হচ্ছে। সেই তুলনায় ধনীদের দ্রুততম সময়ে আরও ধনী হওয়ার প্রবণতা বেশি। এ পরিস্থিতি দূর করতে হবে।’
কিন্তু এই পরিস্থিতি দূর করা যাবে না, কারণ এটাই পুঁজিবাদী সমাজের ধর্ম। এই আয়বৈষম্য দূর করতে প্রয়োজন আল্লাহর দেওয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। এই অর্থনৈতিক অবিচার ও বৈষম্য যেন না হয়, তাই ইসলাম সুদী অর্থনীতি তথা পুঁজিবাদকে হারাম করেছে। ইসলামের অর্থনীতি দানভিত্তিক। আল্লাহ বলছেন, ধনীর সম্পদে অবশ্যই দরিদ্র ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সুরা আল-যারিআত ১৯)। এই অধিকার আদায় করে দেওয়ার মাধ্যমেই ইসলাম দারিদ্র্য নিরসন ও অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিয়ে আনে। ধনীর অতিরিক্ত সম্পদ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হাতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আল্লাহর দেওয়া দীনে বহুবিধ উপায় নির্দেশ করা হয়েছে। পবিত্র কোর’আনে ইসলামি রাষ্ট্রের নাগরিক ও মো’মেনদেরকে অন্তত ২২ টি খাতে অর্থব্যয়ের কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে কিছু আছে বাধ্যতামূলক যা রাষ্ট্র আদায় করবে। আর কিছু আত্মিক প্রেরণা থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে করতে বলা হয়েছে। যেমন যাকাত, উশর, ফাই, খুমস, খারাজ, জিজিয়া, কিসাস ইত্যাদি খাতে রাষ্ট্রকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করা বাধ্যতামূলক। আর ব্যক্তিগত ভাবে সমাজের অর্থনৈতিক বৈষম্য ও দারিদ্র্য দূর করার জন্য ইসলাম সদকা, কাফফারা, কর্জে হাসানা, ফেতরা, ফিদিয়া, মানত, ওয়াকফ, হাদিয়া, হারানো বস্তু জনকল্যাণ তহবিল, রক্তীয় সম্পর্কে যারা হকদার তাদের জন্য, কোরবানীর গোশত বিতরণ, গাছের ফল, কুপের পানি, চারণভূমির ঘাস দান, সওমের সময় ইফতার করানো ইত্যাদি বহুবিধ খাতে দানের জন্য অনুপ্রাণিত করেছে। উচুঁ জায়গায় পানি ঢাললে যেমন তা প্রথমে খানাখন্দে প্রবেশ করে এবং সর্বত্র সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তেমনি ধনীদের সম্পদ প্রথমে সমাজের সবচেয়ে দরিদ্রদের দারিদ্র্য দূর করে এবং পর্যায়ক্রমে সমাজের সবার দারিদ্র্য নিরসন করে সামগ্রিক সমৃদ্ধি নিয়ে আসে।
আল্লাহ কোর’আনে যে সকল খাতে ব্যয়ের কথা বলেছেন তার মধ্যে সবার আগে আসে দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ব্যয়। মো’মেন হবার শর্তের মধ্যেই তিনি জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রামের কথা বলেছেন (সুরা হুজরাত ১৫)। আবার আল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয় আল্লাহ মো’মেনদের থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে।” (সুরা তওবা- ১১১)।
পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ জান্নাতে যাবার শর্ত দিয়েছেন প্রধানত দু’টো- প্রথমটি হলো আল্লাহর সার্বভৌমত্বে, তওহীদে সন্দেহাতীত বিশ্বাস ও স্বীকৃতি এবং দ্বিতীয়টি হলো আল্লাহর রাস্তায় জীবন ও সম্পদ দিয়ে সংগ্রাম করা। তওহীদ ও জেহাদের পর দান সংক্রান্ত আয়াতই কোর’আনে সর্বাধিক এসেছে। কৃপণতাকে বহু আয়াতে জাহান্নামের কারণ বলে ঘোষণা করা হয়েছে (সুরা তওবা ৩৪) এবং তাদেরকে দীন থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হবে বলেছেন (সুরা মোহাম্মদ ৩৮)।
মাহে রমজানের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য হল কৃচ্ছ্রতা সাধনের শিক্ষা। কৃচ্ছ্রতা মানে কৃপণতা নয়, বরং মিতব্যয়িতা। এর উদ্দেশ্য ব্যয় সংকোচন করে যার আছে তাকে দেওয়া নয় বরং যার নেই তাকে দান করা। রমজান মাসে মো’মেন সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকার কারণে তার অর্থব্যয় কম হবে, সেই অর্থ সে অভাবীদেরকে দান করবে, আল্লাহর পথে দান করবে। সওম রাখার ফলে একজন ধনী মানুষ ক্ষুধার যন্ত্রণা উপলব্ধি করতে পারবে যা তাকে অভাবী মানুষের অভাব মেটাতে উৎসাহী করবে। এভাবে জাতির অর্থনৈতিক সংকট দূরীভূত হবে। রমজান মাসে দান করার জন্য আল্লাহর রসুল তাঁর অনুসারীদেরকে উৎসাহিত করেছেন। এই মাসে দান করলে অন্য মাসের তুলনায় সত্তর গুণ সওয়াব বেশি হবে, অনেকটা স্পেশাল অফারের মত। আরবিতে সত্তর গুণ বলতে বোঝায় অগণিত, অসংখ্য। হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কল্যাণকামী ও শ্রেষ্ঠ দাতা ছিলেন, আর রমজান এলে তিনি সবচেয়ে বেশি দান করতেন; জিবরাইল (আ.) এর আগমন হলে তিনি প্রবাহিত বাতাসের মতো দান-খয়রাত করতেন।’ (মুসলিম: ২৩০৮)। দানের ক্ষেত্রে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীকে অগ্রাধিকার দিতে হয়। তিনি রমজান মাসে অভাবীদের ইফতার করাতে বলেছেন এবং প্রতিবেশীদেরকেও ইফতার দিতে উৎসাহিত করেছেন। কারণ এতে অভাবী প্রতিবেশী উপকৃত হবে এবং সবার মাঝে সম্প্রীতি-সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পাবে যা শান্তিপূর্ণ সমাজের পূর্বশর্ত। রসুলাল্লাহ বলেছেন, কোনো রোজাদারকে ইফতার করালে তার রোজার সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া যাবে। (তিরমিজি)। ঈদের জন্য নতুন জামাকাপড়, পোশাক-আশাক, জায়নামাজ, টুপি, তসবিহ, আতর ইত্যাদি কেনা জরুরি নয়। বরং কর্মহীন, আয়রোজগারহীন, অভাবী গরিবদের সাহায্য-সহযোগিতা ও দান-খয়রাত করা এর চেয়ে অনেক বেশি উত্তম।
এই ঈদের নাম ঈদুল ফিতর। ফিতর বা ফাতুর বলতে সকালের খাদ্যদ্রব্য বোঝানো হয় যা দ্বারা সওম পালনকারীগণ সওম ভঙ্গ করেন (আল মুজাম আল ওয়াসিত, পৃষ্ঠা ৬৯৪)। এর তাৎপর্য হচ্ছে, ঈদের দিন একটি খুশির দিন। এই দিন সকালে অন্তত যেন কেউ অভুক্ত না থাকে, সবাই যেন সকালে কিছু খেতে পায় সেটা নিশ্চিত করার জন্য ফেতরার ব্যবস্থা। একজন ব্যক্তির আহারের জন্য মোটামুটি কত টাকার খাদ্য প্রয়োজন পড়ে তা বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ একটি ন্যূনতম অর্থ ফেতরা হিসাবে ধার্য করবেন। তবে এর বেশি যে যত খুশি ফেতরা হিসাবে দান করতে পারে। বর্তমানে তো আমরা দেখি, ধনীরাও ঐ ন্যূনতম অর্থই ফেতরা দিয়ে থাকেন অর্থাৎ দেড় দুইশ টাকার মত। ওদিকে ঈদের শপিং ও খাওয়া দাওয়ার পেছনে তাদের খরচ আকাশছোঁয়া।
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, রসুলাল্লাহ স্বীয় উম্মতের ক্রীতদাস ও স্বাধীন, নারী ও পুরুষ, ছোট ও বড় সকলের উপর মাথা পিছু এক ছা’ পরিমাণ খেজুর বা যব জাকাতুল ফিৎর (ফেতরা) হিসাবে ওয়াজিব করেছেন এবং তা ঈদগাহের উদ্দেশে বের হওয়ার পূর্বেই আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন’। (বোখারি, মুসলিম, আহমদ)। সুতরাং মুসলিম উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত যে কোনো ব্যক্তির জন্য ফেতরা প্রদান করা বাধ্যতামূলক। ফকিহদের মতে, যার ঘরে ঈদের রাত ও দিনে একান্ত প্রয়োজনীয় এবং নিজের ও পরিবারের খাবারের অতিরিক্ত খাদ্য মজুদ থাকে, তাকেই ফেতরা প্রদান করতে হবে।
ফেতরা প্রদানের ক্ষেত্রে মুসলিম-অমুসলিম বিবেচনার সুযোগ নেই। সাহাবায়ে কেরাম রাসুল (সা.)-এর এ সুন্নাত অক্ষরে অক্ষরে পালন করে দেখিয়েছেন। আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রা.)-এর বাড়িতে একবার বকরি জবাই হলো। তিনি বাইরে থেকে এসেই জিজ্ঞেস করলেন, “আমার ইহুদি প্রতিবেশির ঘরে মাংস পাঠিয়েছ কি?”
এখানেই ইসলামের মাহাত্ম্য। ইসলাম সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের বাস্তব সমস্যার সমাধান প্রদান করে। সারা মাস বহু ধরনের দান- সদকা, যাকাত, ফেতরা, কাফফারা, ইফতার, ফিদিয়া, হাদিয়া প্রদানের পর ঈদের সবাই সবার সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়া, অতীতের সব গ্লানি, ক্লেদ আত্মার গভীর স্তর থেকে ধুয়ে ফেলে, বুকে বুক মিলিয়ে হৃদয়ে ভ্রাতৃত্বের অনুভূতিকে নিবীড় করার মধ্যেই ঈদের মূল তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। এই ঈদ একদিকে যেমন মো’মেনদের আত্মার সঙ্গে আত্মার বন্ধন গভীর করে, তেমনি ঈদ উপলক্ষে জাতীয় অর্থনীতিতে আনে সমৃদ্ধি ও সমতা। দান করার মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে দানকারীই উপকৃত হয়, তার আত্মিক পরিশুদ্ধি লাভ হয়, তার উপার্জনে বরকত আসে, পবিত্রতা আসে তার সম্পদে। তাই রমজান মাস আত্মিক পরিশুদ্ধি অর্জনের মাস আর ঈদুল ফিতর হচ্ছে দানের উৎসব। বর্তমানে ইসলামের আর সকল বিষয়ের মত ঈদুল ফিতরের উদ্দেশ্যও ওলটপালট হয়ে গেছে। ফলে বছর ঘুরে রমজান মাস আসছে, কিন্তু পরিশুদ্ধি আসছে না। শাওয়ালের চাঁদ উঠছে কিন্তু চাঁদের হাসি ম্লান হয়ে যাচ্ছে সংকটাপন্ন সমাজের আর্তচিৎকারে।
[লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক, যোগাযোগ: ০১৬৭০১৭৪৬৪৩, ০১৭১১০০৫০২৫, ০১৭১১৫৭১৫৮১]