রিয়াদুল হাসান:
মানুষের জন্য পানাহার যেমন প্রকৃতির চাহিদা, তেমনি আনন্দ উৎসব, হাসি-আনন্দ-উল্লাস করা, খেলাধুলা করা ইত্যাদিও তার প্রকৃতিগত ভাবধারা। শরীরচর্চামূলক খেলাধূলায় উপকার আছে বলেই ইসলাম একে উৎসাহিত করে। অলস, অকর্মণ্য ব্যক্তিদের ইসলাম সমর্থন করে না। আল্লাহ পছন্দ করেন কর্মচঞ্চল, সজীব, প্রাণবন্ত ও বলিষ্ঠ মো’মেনকে (হাদিস)।
তাই আল্লাহর রসুলও শরীরচর্চামূলক খেলাধূলার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। তিনি মূলত সেসব খেলাধূলার উপর জোর দিয়েছিলেন যেগুলো শারীরিকভাবে সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এর ফলে মো’মেন নারী ও পুরুষগণ সংগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত হতে পারেন। যে কোনো বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে তাঁর অনুসারীরা নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হন।
যে ধরনের খেলাগুলো উম্মতে মোহাম্মদীর সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সঙ্গে বিপরীতধর্মী সেগুলোকে তিনি খেলতে নিষেধ করেছেন। উম্মতে মোহাম্মদী জাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যই হচ্ছে নিজেদের জীবন ও সম্পদকে আল্লাহর রাস্তায় কোরবান করে সর্বাত্মক সংগ্রাম করা এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর সত্যদীন সমগ্র মানবজাতির জীবনে কার্যকর করে যাবতীয় অন্যায়, অশান্তি, জুলুম, রক্তপাত নির্মূল করে ন্যায় শান্তি সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা। জাতির এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সহায়ক যে ধরনের খেলা আছে সেগুলো ইসলামে বৈধ করা হয়েছে। আল্লাহর রসুল (সা.) সেগুলো খেলতে উৎসাহিত করেছেন। যেমন দৌড় প্রতিযোগিতা, কুস্তি করা, তীর নিক্ষেপ, বল্লম চালানো, ঘোড় দৌড়, শিকার করা ইত্যাদি।
কিন্তু যে খেলাগুলো এই লক্ষ্যের বিপরীত সেগুলো ইসলামে অবৈধ করা হয়েছে। লক্ষ্য যখন বহির্মুখী তখন অন্তর্মুখী কোনো কিছুই ইসলাম উৎসাহিত করতে পারে না। যেমন পাশা খেলা, দাবা খেলা, লুডো খেলা, ভিডিও গেমস ইত্যাদিও মানুষকে অলস করে, অন্তর্মুখী করে। তাই এগুলোও ইসলামে অবৈধ খেলা। আর যে খেলায় জুয়া অর্থাৎ আর্থিক লাভ বা লোকসান রয়েছে তা সবই হারাম। এবার আমরা ইতিহাস থেকে দেখাবো রসুলাল্লাহ কীভাবে খেলাধুলার মাধ্যমে জাতির মধ্যে প্রাণশক্তি সঞ্চার করেছিলেন।
দৌড় প্রতিযোগিতা:
রসুলাল্লাহর সাহাবিরা দৌড় প্রতিযোগিতা করতেন। আলী (রা.) হালকা পাতলা গড়নের মানুষ ছিলেন এবং তিনি দৌড়ের ক্ষেত্রে খুব দ্রুত গতিসম্পন্ন ছিলেন বলে ইতহাসে পাওয়া যায়। স্বয়ং নবী করীম (সা.) তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী আয়েশার (রা.) সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতেন।
আয়েশা (রা.) নিজেই বলেছেন: “নবী করীম (সা.) দৌড়ে আমার সাথে প্রতিযোগিতা করলেন। তখন আমি আগে বেরিয়ে গেলাম। পরে যখন আমার শরীর ভারী হয়ে গেল তখনও আমার সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করে আমাকে হারিয়ে দিলেন এবং বললেন: এবার সেবারের বদলা নিলাম (আহমদ, আবু দাউদ)।
রসুলাল্লাহ আম্মা আয়েশার (রা.) সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন কেবল স্ত্রীকে আনন্দ দেওয়ার জন্য নয়, তিনি চাইতেন উম্মতে মোহাম্মদীর নারীরা পরিশ্রমী হোক, যোদ্ধা চরিত্রের হোক। এটা ছিল খেলার ছলে সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রকার প্রশিক্ষণ। রসুলাল্লাহ তাঁর প্রতিটি যুদ্ধে কোনো না কোনো স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। তারা আহত যোদ্ধাদের সেবা করতেন, পানি পান করাতেন এমন কি শহীদদের দেহ মোবারক দাফন করতেন।
রসুলাল্লাহর এই পবিত্র সুন্নাহ অনুসারে হেযবুত তওহীদের সদস্য-সদস্যারাও দৌড়ানোর অনুশীলন করেন। বিভিন্ন উপলক্ষে বহুবার দৌড় প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়েছে। ফুটবল এমন একটি খেলা যেখানে খেলোয়াড়দেরকে দেড়ঘণ্টা ধরে বল নিয়ে ছুটতে হয়। এজন্য মাননীয় এমামুয্যামান ব্যক্তিগতভাবে ফুটবল খেলাকে পছন্দ করতেন। তিনি নিজেও তরুণ বয়সে দুর্দান্ত ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। মাননীয় এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম ২০১৭ সনে তওহীদ ফুটবল ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তিনি পিনাকল স্পোর্টস নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন যার অধীনে সারাদেশে ফুটবল ছাড়াও বিভিন্ন প্রকার খেলার আয়োজন করা হয়।
কুস্তি করা
বুজুর্গ বা পরহেজগার মানুষ বলতেই আমাদের সামনে তসবিহ হাতে একজন দুর্বল জুবুথুবু, নতমস্তকে অন্যায় মেনে নেওয়া বৃদ্ধ মানুষের প্রতিমূর্তি ভেসে ওঠে। অথচ আল্লাহর রসুল (সা.) ছিলেন ঠিক এর উল্টো। তিনি অত্যন্ত শক্তসমর্থ দেহের অধিকারী ছিলেন। রুকানাহ ছিলেন মক্কার একজন প্রসিদ্ধ বীর যাকে কেউ কখনো কুস্তিতে হারাতে পারত না। একদিন মক্কার কোন গলিপথে নিরিবিলি সা¶াৎ হলে রসুলাল্লাহ তাকে তওহীদের দিকে আহ্বান করেন এবং বলেন, আমি যদি তোমাকে হারাতে পারি, তাহলে কি তুমি ঈমান আনবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। তারা কুস্তি লড়লেন এবং রসুলাল্লাহ রুকানাহকে পরপর তিনবার হারিয়ে দেন।
আজ আমাদের সামনে রসুলাল্লাহর যে জুবুথুবু চিত্র তুলে ধরা হয় তিনি ছিলেন তার ঠিক বিপরীত। যারা কেবল ঈমানের জোশে জয়ী হওয়ার চিন্তা করেন তাদেরকে কোনো একজন কুস্তিগীরের সাথে লড়তে দেওয়া দরকার, তাহলেই তাদের ভুল ভাঙতে সময় লাগবে না।
দৌড়ে প্রতিযোগিতা ও কুস্তি করলে ভাব-গাম্ভীর্যের হ্রাস পায় বা বয়সের সঙ্গে মানায় না এমন ধারণা রসুলাল্লাহ ভুল প্রমাণ করলেন। কেননা নবী করীম (সা.) যখন আয়েশা (রা.) এর সাথে দৌড়ে প্রতিযোগিতা করেছিলেন, তখন তাঁর বয়স পঞ্চাশোর্ধ হয়েছিল।
বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডিও এমন একটি খেলা যা কুস্তির মতোই খেলোয়াড়দের মধ্যে একাধারে গতিশীলতা, দম, ক্ষিপ্রতা ও সাহসের সঞ্চার করে। এতে একসঙ্গে অনেক খেলোয়াড় যোগ দিতে পারেন। জাতীয় খেলা হিসাবে স্বীকৃতি থাকা সত্ত্বেও গ্রাম বাংলায় প্রায় বিলুপ্তির পথে চলে যাওয়া কাবাডি খেলাকে আবারও জনপ্রিয় করে তোলার জন্য মাননীয় এমামুয্যামান উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি তওহীদ কাবাডি দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সারা দেশে এই দল বহু টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে। অংশগ্রহণ করেছে জাতীয় পর্যায়ের টুর্নামেন্টেও।
উশু, কুশু, কারাতে ইত্যাদি খেলা বাংলাদেশে জনপ্রিয় খেলা হিসেবে অনেক আগেই আত্মপ্রকাশ করেছে। এই খেলাগুলো শরীর গঠন ও সুস্বাস্থ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। হেযবুত তওহীদের কিছু সদস্য বাংলাদেশ কুশু ফেডারেশনের অধীনে দক্ষ খেলোয়াড় হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। হেযবুত তওহীদের বিভিন্ন আয়োজনে তারা কুশুর কৌশল প্রদর্শনী করে থাকেন।
তীর নিক্ষেপ
তীরন্দাজী ও বল্লম মারার খেলাকেও ইসলাম উৎসাহিত করে। রসুলাল্লাহ যখন সাহাবিদেরকে তীরন্দাজীর প্রতিযোগিতা করতে দেখতেন তখন তাদের সর্বোতভাবে উৎসাহিত করতেন। বলতেন: তোমরা তীর মারো, আমি তোমাদের সঙ্গে রয়েছি।
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত: রসুলাল্লাহ একদল লোকের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন যারা তীরন্দাজী করছিল। তিনি বলেন, হে ইসমাঈলের বংশধর! তোমরা তীরন্দাজী করো। কেননা তোমাদের পিতা ছিলেন তীরন্দাজ। (আহমাদ শরীফ ৩৪৩৪, গায়াতুল মারাম ৩৭৯)।
বস্তুত তাঁর দৃষ্টিতে তীর নিক্ষেপণ কেবল একটা খেলা ও হাস্য কৌতুকের ব্যাপারই ছিল না। তা ছিল একটি শক্তি- শক্তি অর্জন ও শক্তির প্রকাশ। আল্লাহই পবিত্র কোর’আনে এমন নির্দেশ প্রদান করেছেন যে, তোমরা শত্রুদের মোকাবেলার জন্য সাধ্যমত শক্তি অর্জন ও সংগ্রহ কর (সুরা আনফাল ৬০)। এই আয়াতটি উল্লেখ করে রসুলাল্লাহ সাহাবীদেরকে বলেছিলেন, জেনে রাখো, তীরন্দাজী একটা শক্তি। তীরন্দাজী একটা শক্তি, তীরন্দাজী একটা শক্তি (মুসলিম ৪৮৪০)।
অন্য হাদিসে এসেছে, নবীজি (সা.) বলেন ‘তোমাদের জন্য তীর নিক্ষেপ শিক্ষা করা কর্তব্য। কেননা এটা তোমাদের জন্য একটি উত্তম খেলা।’ (ফিকহুস সুন্নাহ : ২/৬০)
তবে তিনি পালিত জন্তুকে তার লক্ষ্য বানাতে নিষেধ করেছেন। জাহিলিয়াতের যুগে আরবেরা তাই করত। ইবনে উমর (রা.) কতিপয় লোককে তাই করতে দেখে বলেছিলেন: “নবী করীম (সা.) কোন জীবিত প্রাণীকে তীরন্দাজী খেলায় তীর নিক্ষেপণের লক্ষ্যরূপে গ্রহণকারীর ওপর অভিশাপ করেছেন।”
তিনি আরও বলেন ‘যে ব্যক্তি তীর চালনা শেখার পর তা ছেড়ে দেয়, সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৬৬৮)।
নবী করীম (সা.) জন্তুগুলোকে উত্তেজিত করে দিয়ে পারস্পরিক লড়াইয়ে লিপ্ত করতে স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করেছেন (আবু দাউদ, তিরমিযী)। আমাদের দেশে মোরগের লড়াই, ষাঁড়ের লড়াই ইত্যাদি প্রচলিত আছে। জাহেলিয়াতের যুগে আরবেও লোকেরা দুটো যেকোনো চতুষ্পদ জানোয়ারকে পারস্পরিক লড়াইতে এমনভাবে লিপ্ত করে দিত যে, সে দুটো লড়াই করে ধ্বংস ও মৃত্যমুখে পতিত হয়ে যেত। আর তা দেখে তারা উল্লাসিত হত, অট্টোহাসিতে ফেটে পড়ত। প্রকৃতপক্ষে এই খেলাগুলোর দ্বারা বিনা কারণে নির্বোধ প্রাণীর রক্তক্ষরণ হয় এমন কি প্রাণও যায় যা একপ্রকার নিষ্ঠুরতা ও অমানবিকতা।
সময়ের বিবর্তনে তীর নিক্ষেপের জায়গা দখল করে নিয়েছে রাইফেল শ্যুটিং। মাননীয় এমামুয্যামান একজন বিশ্বমানের রাইফেল শ্যুটার ছিলেন। ১৯৫৬ সনে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ব অলিম্পিক আয়োজনে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের একজন প্রতিযোগী হিসাবে মনোনীত হয়েছিলেন।
বল্লম চালানো
তীর নিক্ষেপণের ন্যায় বল্লম চালানোও এক প্রকারের বৈধ খেলা। সে সময় হাবশি কৃষ্ণাঙ্গরা বল্লম চালনায় বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। রসুলাল্লাহ এমন হাবশি সাহাবীদেরকে মসজিদের আঙিনায় ঢাল ও বল্লম চালানোর কৌশল প্রদর্শনের প্রচলন করেছিলেন। ঈদের দিন বিকেলে তিনি তাঁর স্ত্রী উম্মুল মোমেনিন আয়েশা (রা.) কে সঙ্গে নিয়ে এই খেলা উপভোগ করেছিলেন। তিনি খেলোয়াড়দের উৎসাহ দানের জন্য বলেছিলেন: “হে বনি আরফিদা, মারো, জোরে মারো, তোমার কাছেই রয়েছে তোমার প্রতিপ¶।” (আয়েশা রা. থেকে বুখারী পর্ব ১৩ : /২ হাঃ ৯৪৯, ৯৫০, মুসলিম ৮/৪, হাঃ ৮৯২)
আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেনঃ হাবশিরা নবী করিম (স.) এর উপস্থিতিতে বল্লম দিয়ে খেলছিল। এ সময় উমর উপস্থিত হলেন। তিনি এ খেলা থেকে ওদের বিরত রাখার ও নিষেধ করার উদ্দেশ্যে পাথর কুচি নি¶েপ করলেন। নবী করীম (স) বললেন: ওদের খেলতে দাও হে উমর!
মসজিদের প্রাঙ্গণের মধ্যে খেলাধুলার এই আয়োজন আজকে চিন্তারও বাইরে। কিন্তু মসজিদের দ্বারাই মুসলিম সমাজে দীন ও দুনিয়া উভয়ের যথার্থ সম্মিলন ঘটানো হয়েছিল। সামাজিকীকরণ বা সোশ্যালাইজেশান শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল। মসজিদ ছিল মুসলিম সমাজের যাবতীয় কাজের কেন্দ্রস্থল। কাজেই যে যে কাজে দীনের কল্যাণ ও মানুষের কল্যাণ যুক্ত থাকে তা ইসলামেরই আমল।
এ প্রে¶িতে আমাদের হতদুর্বল পক্ষাঘাতগ্রস্ত মুসলিম জনগোষ্ঠীর ভেবে দেখা উচিত, উম্মতে মোহাম্মদী তাদের মসজিদকে কীভাবে জীবন ও শক্তির আধারে পরিণত করেছিল। আর বর্তমানের মসজিদগুলো সমাজের প্রাণকেন্দ্র নয়, নিছক উপাসনাকেন্দ্র।
ঘোড় দৌড়
আল্লাহ বলেন, আমি তোমাদের বাহন হিসাবে ঘোড়া, খচ্চর, গাধা ইত্যাদি বানিয়েছি এবং তা তোমাদের জন্য সৌন্দর্য বর্ধনকারীও বটে (সুরা নাহলঃ ৮)।
আর রসুলাল্লাহ বলেছেন, ঘোড়াগুলোর ললাট কল্যাণে আবদ্ধ। (আবু হোরায়রা রা. থেকে বুখারী, নেসায়ী)।
সেই যুগে ঘোড়া ছিল যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ বাহন বা সওয়ারি। যেহেতু রসুলাল্লাহকে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করতে হয়েছে তাই ঘোড়া চালানোর প্রশিক্ষণ হিসাবে প্রতিযোগিতার ব্যবস্থাও তিনি করেছেন। তিনি বলেছেন, “তীর চালাও, ঘোড়ায় চড়ো।”
তিনি ঘোড়া এতটাই ভালোবাসতেন যে আনাস (রা.) বলেছেন, রসুলাল্লাহর নিকট নারীর পর ঘোড়া অপে¶া আর কোন বস্তু প্রিয় ছিল না (সুনানে নাসাঈ)।
ওমরও (রা.) বলেছেন, তোমাদের সন্তানদের সাঁতার কাটা ও তীর নি¶েপের শি¶া দাও। ঘোড়ার পিঠে লাফ দিয়ে উঠে বসতেও তাদেরকে অভ্যস্ত কর।
ইবনে উমর (রা.) বলেছেন: রাসুল (সা.) হাফইয়া থেকে সানিয়াতুল বিদা পর্যন্ত সীমানার মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়াসমূহের দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান করেছেন। স্থান দুটির দূরত্ব ছিল ছয় মাইল। (বুখারি, হাদিস : ৩৬৫৭)
অপর এক বর্ণনা ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রসুলাল্লাহ (সা.) একদিন একটি ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন এবং বিজয়ীর জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করেন। Ibn HibbÉn, MuÍammad, ØaÍÊÍ Ibn HibbÉn, 2nd ed. (Beirut: Muassasah al-RisÉlah, 1993), 10/543
আনাস (রা.) কে জিজ্ঞেস করা হল, আপনারা কী রাসুলের সময়ে বাজি ধরতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি নিজে ‘সারাহ’ নামক ঘোড়ার উপর বাজি ধরেছিলেন। সেটি সবার আগে চলে গিয়েছিল এবং তা দেখে তিনি খুবই আনন্দিত ও উৎসাহিত হয়েছিলেন।
হেযবুত তওহীদ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মাননীয় এমামুয্যামানও একজন দক্ষ ঘোড়সওয়ার ছিলেন। পাশাপাশি তিনি মোটর সাইকেল চালনার বিপজ্জনক কলাকৌশলে বিশেষ দক্ষ ছিলেন।
শিকার করা
বড় উপকারী ও কল্যাণময় খেলা (Sport) হচ্ছে শিকার করা। বস্তুত এ কাজে যেমন খাদ্যলাভ হয়, উপার্জন হয়, শরীরচর্চা হয়, তেমনি ক্ষিপ্রতা ও সাহসিকতা বৃদ্ধি পায়। আমাদের এমামুয্যামানও একজন দুঃসাহসী শিকারী তথা বিগ গেইম হান্টার ছিলেন। বালক বয়সে দাদা মোহাম্মদ হায়দার আলী খান পন্নীর কাছে তাঁর শিকারের হাতেখড়ি। সেই থেকে সত্তর দশকের গোড়া পর্যন্ত- তিনি দেশের বিভিন্ন পাহাড়ে ও বনে-জঙ্গলে ঘুরে অজগর, চিতাবাঘ, কুমির, শুকরসহ বহু হিংস্র জন্তু শিকার করেছেন। ১৯৬৪ সনে প্রকাশিত বাংলাদেশে শিকারের সত্য ঘটনা অবলম্বনে প্রথম গ্রন্থ “বাঘ-বন-বন্দুক” যা রচনা করেন মাননীয় এমামুযযামান। শিক্ষাবোর্ড বইটিকে দশম শ্রেণির সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করে। শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনির চৌধুরী, সৈয়দ আব্দুল মান্নান, অধ্যাপিকা আনোয়ারা খাতুনসহ আরো অনেক বরেণ্য লেখক, ব্যক্তিবর্গ ও পত্র-পত্রিকা বইটি সম্পর্কে তাদের সপ্রশংস অভিমত ব্যক্ত করেন।
একটি জাতির প্রাণশক্তি হলো তার যুব সমাজ। যুবসমাজ যখন জীবনীশক্তিহীন অর্ধমৃত হয়ে যায় তখন সেই জাতি মুখ থুবড়ে পড়ে। যে কোনো জাতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মূল সূত্রই হলো যুবসমাজকে গতিশীল, আদর্শবান, সুস্থ দেহ ও মনের অধিকারী করে গড়ে তোলা। এই বাস্তবতাকে উপলব্ধি করেই সারাদেশে শরীরগঠনমূলক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ।
লেখক: সাহিত্য সম্পাদক, হেযবুত তওহীদ।