বর্তমানে মধ্যযুগ কথাটি শুনলেই আমাদের চিন্তার জগতে ভেসে ওঠে মধ্যযুগীয় বর্বরতার সেই কলঙ্কজনক অধ্যায়ের কাল্পনিক দৃশ্য। বাস্তবের সাথে সেই কল্পনার মিল কতটুকু বা আদৌ কোনো মিল আছে কিনা তা এখন আলোচনা না করে আমি একটা মৌলিক প্রশ্ন তুলতে চাচ্ছি যে, এই বর্বরতা আসলে কোন জাতির বীভৎস অতীত এবং তা বর্তমানে কোন জাতির ইতিহাসের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। একথা অনস্বীকার্য যে, মধ্যযুগীয় বর্বরতা কথাটা ব্যবহৃত হয়ে থাকে মোসলেমদের অতীত বোঝাতে অর্থাৎ এসলামকে ঘায়েল করতে। পশ্চিমাদের হাজারো মিথ্যার ঝুড়িতে এই মিথ্যাটিও একটা উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। এই সভ্যতা যে সমস্ত পৃথিবীর মানুষের শরীর দখল করে আছে শুধু তাই নয় বর্তমান পৃথিবীর মানুষ নামের এই প্রাণীটির আত্মাও আজ এই সভ্যতার পূর্ণ দখলে এবং নিয়ন্ত্রণে। বস্তুবাদী এই সভ্যতা তার অনুগত মিডিয়া, শিক্ষা-ব্যবস্থা সর্বোপরি সামরিক শক্তিবলে এই গ্রহটির সার্বভৌমত্বের মালিক হয়ে আছে। মিডিয়া এবং শিক্ষা-ব্যবস্থার মাধ্যমে সে মানবজাতির মনকে নিয়ন্ত্রণ করছে আর সামরিক শক্তিবলে শরীরের উপর কর্তৃত্ব করছে। তার অবাধ্য হবার ক্ষমতা আজ কারো নেই। আর এই শক্তিবলেই সে তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এসলামের প্রকৃত অতীতকে আড়াল করে রেখে সেখানে স্থান করে দিয়েছে তার নিজের জন্মদাতা খ্রিস্টান ধর্মের বীভৎস অতীতকে। যে অতীত শুনলে আজকে হাজার বছর পরও মানুষের আত্মা পর্যন্ত কেঁপে উঠে। আসুন আমরা দাজ্জাল তথা ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতার জন্মের আগের সংঘটিত বর্বরতার চূড়ান্ত কিছু নমুনা জেনে নেই যে বর্বরতাটাই হলো প্রকৃত মধ্যযুগীয় বর্বরতা।
যুগে যুগে নবী-রসুল পাঠানোর ধারাবাহিকতায় আল্লাহ বনী এসরাইলীদের হেদায়াহর জন্য পাঠিয়েছিলেন হযরত ঈসা (আ:) কে। তাঁকে পাঠানো হয়েছিল শুধুমাত্র ইহুদিদের জন্যই। তাঁর আনীত শিক্ষা ছিল সম্পূর্ণই আধ্যাত্মিক। কারণ হযরত মুসা (আ:) এর আনীত দীনের আত্মিক ভাগটাকে ইহুদি ধর্মব্যবসায়ী রাব্বাই সাদ্দুসাইরা তাদের স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টায় বিকৃত করে ফেলেছিল কিন্তু দীনের শরিয়াহ অর্থাৎ তওরাত তখনো অবিকৃত ছিল। ঈসা (আ:) তওরাতকে স্বীকৃতি দিলেন এবং দীনের হারিয়ে যাওয়া আত্মিক ভাগটাকেই শুধুমাত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করলেন। অ-ইহুদির মাঝে তাঁর কোনো দায়িত্বই ছিল না বরং কঠোরভাবে নিষেধ ছিল। তিনি তাঁর নবুয়তি জীবনে এই নিষেধাজ্ঞা খুব কঠিন ভাবে মেনে চলেছেন। কিন্তু তাঁকে আল্লাহ যখন সশরীরে আসমানে উঠিয়ে নিলেন তখন পল নামে একজন ইহুদি তাঁর উপর ঈমান আনে, যদিও তার পরবর্তী কার্যকলাপগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে এর পেছনে তার উদ্দেশ্য ছিল যে ঈসা (আ:) এর শিক্ষাকে বিকৃত করে পার্থিব স্বার্থলাভ করা। হাস্যকর ব্যাপার হচ্ছে- ‘যে পল ঈসা (আ:) এর কোনো সাহচার্য পায়নি, তাঁর শিক্ষার কোনো মর্মবাণী বুঝে নি সেই পল’ই পরবর্তীতে খ্রিস্টধর্মের অন্যতম একজন প্রবক্তায় পরিণত হয়। এই পলের পরামর্শেই ঈসা (আ:) এর নিষেধ অগ্রাহ্য কোরে তাঁর অনুসারীরা অ-ইহুদিদের মাঝে তথা ইউরোপে তাঁর আনীত আত্মিক শিক্ষাকে সামগ্রিক দীনে রূপ দেওয়ার এবং তাকে ইউরোপে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে লাগলো।
আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে ইউরোপে এই শরিয়াহহীন বিকৃত দীনটাই সাদরে গৃহীত হলো। তার কারণ হচ্ছে ইউরোপ তখন ছিল বিভিন্ন ভূত-পেতিœর পূজারী। তারা ঈসা (আ:) এর আত্মিক শিক্ষাকে (যদিও বিকৃত) তাদের ঐ ধর্মের চেয়ে অনেক ভালো বলে মনে করলো এবং দলে দলে সেটাতে প্রবেশ করলো। খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের আগে যে তাদের অবস্থা কতটা অসভ্য এবং বর্বর ছিল তার একটা উদাহরণ দিচ্ছি।
তৎকালীন রোমের নেতৃস্থানীয়রা অসহায়দেরকে ক্ষুধার্ত বাঘ বা সিংহের খাঁচায় ছুড়ে ফেলে দেখতো কীভাবে সিংহ মানুষ ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়। এমনকি এই বিষয়টা রোম সাম্রাজ্যের জাতীয় সংস্কৃতি ও সভ্যতার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। রোম সাম্রাজ্যের সম্রাট পরিবারের লোক এবং উচ্চপর্যায়ের ও সম্ভ্রান্ত বংশের লোকেরা প্রায় এই ধরণের আনন্দ মেলার আয়োজন করতো। রোমের বড় বড় স্টেডিয়ামগুলোতে প্রদর্শিত হত এ ধরণের সভ্যতার প্রদর্শনী। কোনো হৃষ্টপুষ্ট বন্দীকে সিংহের খেলার ও আহার্যের বস্তু হিসেবে খাঁচায় ঢুকিয়ে দেয়া হতো। এরপর গ্যালারিতে বসে জনতা উৎফুল্ল হয়ে উপভোগ করত কী কোরে অসহায় এক মানুষ আত্মরক্ষার চেষ্টা করে, কীভাবে সিংহ তার মাথার খুলি ছিঁড়ে নিয়ে চিবিয়ে খায়, আর কীভাবেই বা তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো ছিন্ন-ভিন্ন করে। তারা এসব অবলোকন করতো আর চিৎকারধ্বনি ও আনন্দ করতালিতে আকাশ বাতাস মুখরিত করে ফেটে পড়ত। এই যাদের অবস্থা ছিল তারা যে নতুন এই শিক্ষাটাকে (খ্রিস্টধর্ম) দলে দলে গ্রহণ করে নেবে সেটাই স্বাভাবিক। এভাবেই রোম সাম্রাজ্যে মানুষ যখন চূড়ান্ত অধঃপতনে নিমজ্জিত হয়ে মানবতা ও সভ্যতা বিবর্জিত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত, তখন তারা তাদের সেই অনিবার্য ধ্বংস থেকে রক্ষা পেতে পলের মাধ্যমে পাওয়া সেই শিক্ষাটাকে মুক্তির আশায় গ্রহণ করতে শুরু করলো। কিন্তু তাতে দেখা গেল আরেক বিপদ, কারণ রোম সাম্রাজ্য প্রথম দিকে মোটেও এই বিষয়টাকে ভালোভাবে নিল না।
শুরু হয় ভেজাল (পরিবর্তিত) ধর্মবিশ্বাসের সাথে রোম সাম্রাজ্যের বিরোধ যা এক সময় চরম ও অনিবার্য সংঘাতের আকার ধারণ করে। সম্রাট হাইদারান ও তিরজানের শাসনামলে খ্রিস্টানদের নির্বিচারে হত্যা করা হতে থাকে। এমনকি যেখানেই খ্রিস্টানদের খুঁজে পাওয়া যেত, সেখানেই হত্যা করা হতো। বিষয়টি কিন্তু এভাবেই শেষ হয়ে গেল না। হত্যা ও নির্যাতনের মাধ্যমে রোম সাম্রাজ্য থেকে খ্রিস্টধর্মকে মোটেও উৎখাত করা সম্ভব হলো না। বরং তা ধীরে ধীরে শক্তিশালী ও প্রবল হয়ে উঠতে লাগল। ফলে সাম্রাজ্য খণ্ডিত এবং হারানোর ভয় থেকে রোম সম্রাট কনস্টানটাইন দ্য গ্রেট বাধ্য হয়ে ৩১৬ খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করার ফলে রোম সম্রাটের শাসনব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। বলা যায় যে, পুরো শাসনব্যবস্থাটাই পাল্টে যায়। সম্রাটকেন্দ্রিক শাসন মুহূর্তের মধ্যেই পর্যবসিত হয়ে পড়ে গির্জাকেন্দ্রিক শাসনে যা পরিচালনা করতো খ্রিস্টান পুরোহিত সমাজ। সম্রাট ছিল পুতুলের ভূমিকায়। এক সময়ের রাজা-বাদশাহরা সাধারণ মানুষের সাথে যে নির্মম অত্যাচার এবং জুলুম করতো পলের শিক্ষায় শিক্ষিত এই পুরোহীতরা তার চেয়ে কোন অংশেই কম ছিল না। কালক্রমে গির্জা হয়ে উঠল জুলুম-অত্যাচারের প্রতিকে। এ ছিল ধর্মের ব্যানারে মানব সভ্যতার প্রতি এক মারাত্মক প্রহসন। গির্জায় ধর্মীয় কার্যাবলীর সর্বময় হর্তাকর্তা ছিল পাদ্রীরা। যারা নিজেদের সুযোগ সুবিধা ও ইচ্ছা-আকাক্সক্ষা অনুযায়ী রচনা করতো ধর্মীয় বিধান। এদের তত্ত্বাবধান করতেন রোমের বিশপ। এরা নিজেদেরকে পোপ উপাধিতে ভূষিত করতেন। এক কথায় তারা ছিল সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তারা নিজেদের ইচ্ছামত তাদের কল্পনা প্রসূত বিধি বিধান একের পর এক আমজনতার উপর চাপাতে থাকে এবং সেখান থেকে ফায়দা লুটতে থাকে। এ সকল পুরোহিতরা এক পর্যায়ে দুনিয়াতে বসে অতি উচ্চমূল্যে জনগণের নিকট জান্নাতের প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রি করা শুরু করে। তারা মানুষকে শিক্ষা দিত যে, মানুষ জন্মগতভাবেই পাপী। আত্মার (ঝড়ঁষ) বড় শত্র“ দেহ (ইড়ফু)। আত্মার মুক্তির জন্য তাই দেহের উপর অত্যাচার করা ছাড়া উপায় নেই। আর তাই তারা সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার করে তাদের আত্মার মুক্তির ব্যবস্থা করতো। এভাবেই ধর্মীয় উম্মাদনায়, ধর্মের আলখেল্লা পরে, ধর্মীয় আমেজে সেদিন পাদ্রী-রাহেবরা যেভাবে মানবতার উপর হিংস্র পাশবিকতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তা ইতিহাসের এক সংকটময় কলঙ্কিত অধ্যায়। ঈসা (আ:) এর সহজ সরল শিক্ষাকে পশ্চাতে ফেলে গির্জার সর্বময় কর্তৃত্বের একচ্ছত্র অধিকারী পাদ্রীরা এ দীনকে তাদেও পৈত্রিক উত্তরাধিকার হিসেবে গ্রহণ কোরে তাতে ইচ্ছামত বিকৃতি সাধন ও তাদের উদ্ভট মস্তিষ্কের কল্পনা প্রসূত ধ্যান-ধারণাকে ঐশ্বরিকসূত্রে প্রাপ্ত ধর্মীয় বিধান হিসেবে চালিয়ে দেয়। বিভ্রান্ত ও অজ্ঞ জনগণ সেসবই মেনে নেয় অকাট্য সত্য হিসেবে। মানুষের পরকালীন মুক্তির দোহাই দিয়ে এই খ্রিস্টান পাদ্রীরা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বন্য শকুনীর হিংস্রতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমজনতার উপর। রোমান শাসকরা রাষ্ট্রীয় শত্র“ ও গুপ্তচরদের সাথে যে আচরণ করত, এরা তেমনই আচরণ করতে লাগল অ-খ্রিস্টান কিংবা ভিন্ন মতাবলম্বীদের সাথে। ষষ্ঠ শতকের শেষ দিকে এসে খ্রিস্টধর্ম প্রায় ৯০টি উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এদের মধ্যে শক্তিশালী ছিল পূর্ব অর্থডক্স ও পশ্চিমে রোমান ক্যাথলিকরা। তাদের নিজেদের মধ্যে চলছিল তখন কঠিন সংঘাত। একদলের চিন্তাধারা ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের সাথে অন্য দলের আচার অনুষ্ঠান ও বিধিবিধানের ছিল আকাশ-জমিন ব্যবধান। মানসিকতা ছিল চরম প্রতিহিংসাপরায়ণ। প্রতিপক্ষের সাথে নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ করতে তারা কোনরূপ দ্বিধা করত না।
সবকিছুকে ছাপিয়ে ছিল তাদের ধর্মান্তকরণ প্রক্রিয়া। অ-খ্রিস্টানদেরকে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিতকরণ ও কথিত অবিশ্বাসীদেরকে পাপমুক্ত করতে, যে নির্মম নৃশংস অত্যাচার করা হতে লাগল, তা ছিল ইতিহাসের নজিরবিহীন বর্বরতা। এ ছিল এমনই এক বর্বরতা ইউরোপের বুকে মধ্যযুগে যার অসহায় শিকারে পরিণত হয়েছিল লাখ লাখ নিরীহ জনতা। তার গাণিতিক সংখ্যা কোনো ঐতিহাসিকের কলম প্রকাশ করতে পারে?
রাষ্ট্রীয় আইন-কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন কোরে পাদ্রীরা এমন সব আইন রচনা করে, যার নৃশংসতার অনলে ভিন্নমতাবলম্বীরা জ্বলে পুড়ে ছাই হতে থাকে। এ সময় গির্জার পক্ষ থেকে ঘোষিত হয়- ‘ঞড় ইবপড়সব ঈযৎরংঃরধহং, ঞড় ইব গবংংধবৎবফ ড়ৎ ঞড় ইব খবধাব’ ‘হয়ত খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ কর নতুবা গণহত্যার শিকার হও অথবা দেশ ছেড়ে চলে যাও।’ কুসংস্কারে বিশ্বাসী জনগণ অন্ধ বিশ্বাসে, বঞ্চিত মানুষ সচ্ছলতা লাভের আশায় এবং পাপীরা পাপ মুক্তির আশায় প্রবেশ করত এসব গির্জায়। কিন্তু এখানে এসে ওরা এমনসব লোকের সাক্ষাৎ লাভ করত যারা মানবতার হাঁড়গোড়ের উপর গির্জা প্রতিষ্ঠা করেছিল। ধর্মীয় উন্মাদনায় পুরো খ্রিস্ট সমাজ সে যুগে কি জঘন্য কুসংস্কারে নিমজ্জিত ছিল তার রাশি রাশি উপমা ইতিহাসে ভরপুর হয়ে আছে। গির্জাবাদের আদি ‘ওহয়ঁরংরঃরড়হ’ পর্বে পাদ্রী-পুরোহিতরা মানবতার প্রতি যে নির্মম সভ্যতার উপহার প্রদান করে, তা ধর্মকে চিহ্নিত করেও কেবল জুলুম আর শোষণের হাতিয়ার হিসেবে। ধর্মীয় প্রশিক্ষণের নামে শোষণ আর নিপীড়নের যে ইতিবৃত্ত তারা রচনা করে, তা শ্রবণে সুস্থ বিবেক শিউরে উঠে।
এভাবেই অন্যায়, অবিচার আর বর্বরতার লীলাখেলা চলতে থাকে দীর্ঘ সহস্রাধিক বছর। এই দীর্ঘ সময় ইউরোপ ছিল পৃথিবীর মাঝে সবচেয়ে বর্বর, সবচেয়ে অবজ্ঞাত, উপেক্ষিত এবং অসভ্য একটা অভিশপ্ত ভূ-খণ্ড। তাদের এই অসভ্যতা প্রকাশের হাতিয়ারই ছিল ধর্ম। মুক্তির আশায় যে ধর্মকে তারা দলে দলে গ্রহণ করেছিল সেই ধর্মই ছিল তাদের জাতীয় অভিশাপ। এই অভিশপ্ত জীবনের চূড়ান্ত পরিণতি তারা ভোগ করে ষোড়শ শতাব্দীতে। এবারে ইউরোপের অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, তাদের অস্তিত্ব রক্ষার্থেই একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ইউরোপের রাজা-বাদশাহরা দেখল যে তাদের সামনে মাত্র দুইটি পথ। হয় এই খ্রিস্টধর্মকে পুরোপুরি ত্যাগ করতে হবে নইলে তাকে নির্বাসন দিতে হবে ব্যক্তিজীবনের ক্ষুদ্র গণ্ডির ভিতরে। যেহেতু সমস্ত ইউরোপের মানুষকে নাস্তিক বানানো সম্ভব নয় কাজেই তারা দ্বিতীয় মতটাকেই গ্রহণ করলো। জন্ম হল ধর্মহীন মানবসৃষ্ট রাষ্ট্রব্যবস্থার তথা ধর্মনিরপেক্ষতার। এই হলো ইউরোপের খ্রিস্টধর্মের অতীত। এই সেই বর্বরতা। এই সেই মধ্যযুগের অভিশাপ। আর ইউরোপের এই অভিশপ্ত যুগের সমান্তরালে মোসলেমদের চলছিল স্বর্ণযুগ। কেমন সেই স্বর্ণযুগ? যে যুগে একজন মোসলেম তাঁর নিজের চেয়ে তার অপর এক মোসলেম ভাইকে বেশি ভালোবাসত। মানুষ যাকাতের অর্থ নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াত কিন্তু নেয়ার মত লোক পাওয়া যেত না। সমস্ত রকমের চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, হত্যা, ধর্ষণ, অত্যাচার, অবিচার ইত্যাদি সমাজ থেকে নির্মূল হয়ে গিয়েছিল। কেউ রিপুুর বশবর্তী হয়ে অপরাধ যদি করেও ফেলে তাহোলে নিজে এসে তার নেতার কাছে নিজের শাস্তির দাবি করতো।
মাসের পর মাস আদালতে অপরাধ সংক্রান্ত মামলা আসত না অর্থাৎ অপরাধই হোতনা। এমন সমাজ কেউ কল্পনা করতে পারে? এই ছিল মোসলেমদের মধ্যযুগ। অর্ধপৃথিবীর শাসনকর্তা এবং একক পরাশক্তি মানবজাতির মুক্তির দূত উম্মতে মোহাম্মদীদের স্বর্ণযুুগ। কিন্তু আজকের এই পশ্চিমা সভ্যতা মানবজাতিকে শেখাচ্ছে পশ্চিমারাই হল সভ্য জাতি, উন্নত জাতি। সমস্ত পৃথিবীর মডেল। আর মোসলেমরা হচ্ছে বর্বর। তাদের শাসনব্যবস্থা হচ্ছে বর্বর। তারা অসভ্য, তারা অনুন্নত। আধুনিক যুগে জীবন ব্যবস্থা হিসেবে এসলাম অচল। আর তার চেয়েও বড় বিষয় হলো ইতিহাসের এই বিকৃতির কোন প্রতিবাদ মোসলেম নামধারী এই জাতি করে নি। বরং তারা এই প্রতারক মিথ্যাবাদী সভ্যতার প্রতারণাকেই মেনে নিয়েছে এবং নিজেরা হীনমন্যতায় আপ্লুত হয়ে তাদের যাবতীয় অপপ্রচারের সামনে করজোড়ে প্রণত হয়ে আছে। কি নিষ্ঠুর পরিহাস!
[তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট]