হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

আল্লাহ ও রসুল কার পক্ষে?

Untitled-2মো. মোশাহিদ আলী

(পূর্ব প্রকাশের পর)
বর্তমানে যারাই আল্লাহর বিধানের কথা বলে তাদেরকেই একচেটিয়াভাবে মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদী বলে আটকানোর চেষ্টা চলে। আল্লাহ বলেছেন, যারা এই কেতাব (কোর’আন) দ্বারা বিচার ফয়সালা (শাসন পরিচালনা) করে না তারা কাফের, যালেম, ফাসেক (সুরা মায়িদাহ – ৪৪, ৪৫, ৪৭)। বর্তমানে দেশব্যাপী সারা বছরই মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকাহ, জলসা, ইসলামী সম্মেলন ও তাফসীরুল কোর’আন মাহফিলের মাধ্যমে ওয়াজ নসিহত হচ্ছে কিন্তু সেগুলোতে সামষ্টিক জীবনকেন্দ্রিক আদেশমূলক আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ আলেমরা এড়িয়ে যান। কারণ বর্তমানে আল্লাহকে হুকুমদাতা হিসাবে অস্বীকার করে জনগণের প্রতিনিধিদেরকে হুকুমদাতা, আইনদাতা বলে গ্রহণ করে নেওয়া হয়েছে। তাই আইন কানুন নিয়ে কথা বললে প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলতে হয় এবং সেটা বললে তাদের ধর্মব্যবসার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। তাই তাদের ওয়াজ নসিহতের উদ্দেশ্য সত্যদীন বা শান্তি প্রতিষ্ঠা নয়।
যারা ওয়াজের আয়োজন করবেন তারা মসজিদ বা মাদ্রাসার উন্নয়নের জন্য ওয়াজ করাবেন এবং যে আলেম ওয়াজ করতে আসবেন তাকেও বলে দিবেন আমাদের এত টাকা উঠানো টার্গেট, একটু ফজিলত বাড়িয়ে ও সুন্দর করে ওয়াজ করবেন। যদি টাকা বেশি উঠাতে পারেন আমরাও সাধ্যমত আপনাকে খুশি করব। আর কোন বক্তা তো এমনও আছেন যে, দশ হাজার, বিশ হাজার টাকাসহ বিমানের টিকেট না দিলে আসবেনই না, তারা চুক্তি করেই আসেন। পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ বলেছেন- যারা আল্লাহর নাযিল করা (তাঁর) কিতাবের অংশ বিশেষ গোপন করে রাখে এবং সামান্য (বৈষয়িক) মূল্যে তা বিক্রি করে দেয়, তারা এটা দিয়ে যা হাসিল করে এবং যা দিয়ে তারা নিজেদের পেট ভর্তি করে রাখে তা আগুন ছাড়া আর কিছুই নয়, (শেষ বিচারের দিনে) আল্লাহ তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, তিনি তাদের পবিত্রও করবেন না, ভয়াবহ আযাব এদের জন্যেই নির্দিষ্ট। (সুরা বাকারা- ১৭৪, ১৫৯, আল ইমরান-৭৭)।
“আল্লাহর কী ভয়ানক কথা”! আল্লাহ তো ওয়াদা করেছেন মুমিনদেরকে দুনিয়ায় কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব দান করবেন (এই নেতৃত্বও অনেক আলেম চান না, তারা মনে করেন নেতৃত্ব মানেই দুনিয়াদারী হওয়া, অথচ তারা দুনিয়ার অর্থ ও ঠিকমত বুঝেন না, তারা যে দুনিয়াদারীতেই আপাদমস্তক ডুবে আছেন) আল্লাহর ওয়াদা কি তিনি পূরণ করেন নি, না আমরা মুুমিনের সংজ্ঞা পূরণ করি নি? কোনটা ঠিক! মহানবী (সা.) ও তাঁর আসহাবরা চরম দরিদ্র, সামরিকভাবে (অস্ত্রেশস্ত্রে) দুর্বল, সংখ্যায় কাফেরদের তুলনায় একেবারে নগণ্য হয়েও তখনকার সময় পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী পরাশক্তি (Super Power) রোম ও পারস্যকে সামরিকভাবে পরাজিত করে অর্ধ পৃথিবীর কর্তৃত্ব করেছিলেন। আর বর্তমানে ১৬০ কোটিরও বেশি মুসলমান, ভৌগোলিকভাবে ৫০টিরও বেশি রাষ্ট্রের মালিক হয়েও, সম্পদে পরিপূর্ণ হয়েও কেন ইহুদি খ্রিষ্টানদের গোলামে পরিণত ও লাঞ্ছনার শিকার। বর্তমান মুসলিম নামক জাতিটি কি মুমিনের সংজ্ঞায় আছেন? আল্লাহর ওয়াদা কখনও মিথ্যা হয় না ও হতে পারে না। আল্লাহ কোর’আনে বলেছেন; তোমরা যদি (কোনো অভিযানে) বের না হও তাহলে (এ অবাধ্যতার জন্য) তিনি তোমাদের কঠিন শাস্তি দেবেন এবং তোমাদের উপরে অন্য জাতিকে কর্তৃত্ব দান করবেন, তোমরা কিন্তু তাঁর কোনোই অনিষ্ট সাধন করতে পারবে না, (কারণ) আল্লাহ সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান। (সুরা তওবা: ৩৯)। বর্তমানে মুসলিম জাতি বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে, বিভিন্ন মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে, নতুন নতুন দল সৃষ্টি করে সবাই জান্নাতি দল দাবি করছেন। ভেবে দেখুন আল্লাহ আপনাকে বান্দা ও রসুল (সা.) আপনাকে উম্মাহ হিসাবে গ্রহণ করবেন কি না!
রমজান মাসে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে দেশে কোর’আন প্রশিক্ষণ হচ্ছে সহীহ শুদ্ধভাবে পড়ার জন্য, নামাজে (তারাবির নামাজে) ও কোর’আন খতম হচ্ছে, বিপদে আপদে ও কোর’আন খতম, বোখারী খতম আর ও বিভিন্ন ধরনের খতম নিয়মিতই হচ্ছে, কিন্তু আল্লাহ কি মহানবী (সা.) ও পবিত্র কোর’আনকে এই সমস্ত করার জন্য প্রেরণ করেছেন? আল্লাহ ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য যে প্রক্রিয়া দিলেন সেই প্রক্রিয়াকেই আজকে লক্ষ্য উদ্দেশ্যহীন ও নিষ্প্রাণ করে ফেলা হয়েছে। ছোট্ট একটি উদাহরণ দিয়ে লেখাটি শেষ করছি- যে কোন রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটি সংবিধান থাকে। এই সংবিধান কি মন্ত্রী, এম পি ও প্রশাসনের লোকজন পাঠ করার জন্য, না রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য? যদি সরকারের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী প্রতিদিন অফিসে গিয়ে সংবিধান পাঠ করেন, কাজে বাস্তবায়ন না করেন, রাষ্ট্র বা সরকারের কী হবে? সরকার কি টিকে থাকতে পারবে? অবশ্যই বলবেন – ‘না’। তাহলে সরকারকে টিকে থাকতে হলে এবং রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই রাষ্ট্রের যে সংবিধান আছে তা কার্যকরী করতে হবে। অন্যথায় রাষ্ট্র ও সরকার ব্যর্থ হবে। বর্তমানে ইসলামের অবস্থাও তেমন হয়েছে। আল্লাহ সমস্ত মানবজাতির মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রসুল পাঠিয়ে জীবনব্যবস্থা হিসাবে যে কোর’আনকে দিলেন সেই কোর’আন বাস্তবায়ন না করে আজ শুধু অক্ষর গুণে ফজিলত ও নেকী হাসিলের উদ্দেশ্যে পাঠ করা হচ্ছে। কিন্তু আল্লাহ ও রসুলকে নিজের মনে করলে বা পেতে হলে এবং জান্নাতে যেতে হলে, যে উদ্দেশ্যে কোর’আন নাযিল হয়েছে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। যদি প্রকৃত মুমিন হওয়া যায় তবেই আল্লাহর সাহায্য আসবে।
প্রকৃত মুমিনের পরিচয় আল্লাহ কোর’আনে বলে দিয়েছেন- তাহারাই মুমিন যাহারা আল্লাহ ও তাঁহার রসুলের প্রতি ঈমান আনে, পরে (কোনো) সন্দেহ পোষণ করে না এবং জীবন ও সম্পদ দ্বারা আল্লাহর পথে জেহাদ করে, তাহারাই সত্যনিষ্ঠ (সুরা হুজুরাত- ১৫)। আল্লাহর সংজ্ঞায় যারা মুমিন তাঁর সাহায্য ও ওয়াদা তাদের জন্যই অবধারিত।
তাহলে আল্লাহকে যতই নিজের পক্ষে টানা হোক না কেন আল্লাহ কোন দলে বা পক্ষে তা তো আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন। আর রসুল (সা.) কার পক্ষে তাও তাঁর হাদিস থেকে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি (সা.) বলেছেন- যে আমার সুন্নাহ ত্যাগ করবে সে বা তারা আমার কেউ নয়। এখানে বুঝে নেওয়া দরকার মহানবী (সা.) এর প্রকৃত সুন্নাহ কী, তিনি কী করে গেছেন, তিনি কোন সুন্নাহর কথা বলেছেন যে সুন্নাহ ত্যাগ করলে তাঁর উম্মতই নয়! সেই সুন্নাহ কি দাঁড়ি, টুপি, জোব্বা, খাওয়া-দাওয়া, মিছওয়াক করা ঐগুলো? তাঁর ব্যক্তি জীবনের ঐ অভ্যাসগুলো যদি সমস্ত পৃথিবীর মুসলিম দাবীদাররা আপাদমস্তক পালন করেন তাহলে কি তাঁর (রসুলের) উপর আল্লাহর দেওয়া দায়িত্ব পূর্ণ হবে? আল্লাহর দীন তথা শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে?
আল্লাহ আদম (আ.) থেকে শুরু করে প্রত্যেক নবী- রসুল (আ.) কে পাঠিয়েছেন একটি মাত্র উদ্দেশ্য দিয়ে, তা হলো যার যার জাতির মধ্যে আল্লাহর তওহীদ ও তাঁর দেওয়া জীবন ব্যবস্থা (দীন) প্রতিষ্ঠা করা। শেষ নবী মহানবী (সা.) কে পাঠালেন সমস্ত মানব জাতির ওপর এই দীন প্রতিষ্ঠা করার জন্য। তাই মহানবী (সা.) এমন একটি জাতি সৃষ্টি করলেন, পৃথিবী থেকে তাঁর চলে যাওয়ার পরও, যে জাতি তাঁর ওপর আল্লাহর দেওয়া দায়িত্ব পূর্ণ করার জন্য- তারই মতো সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। এই জাতি হলো তাঁর উম্মাহ, উম্মতে মোহাম্মদী, মোহাম্মদের (সা.) জাতি। বিশ্বনবী (সা.) তাঁর উম্মহকে বুঝিয়েছিলেন যে, তাঁর চলে যাবার পর তিনি যেমন করে সংগ্রাম করে সমস্ত আরবে দীন প্রতিষ্ঠা করলেন, ঠিক তেমনি করে বাকি দুনিয়ায় ঐ দীন প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পিত হবে। এটাকে মহানবী (সা.) বললেন আমার “প্রকৃত সুন্নাহ”, অর্থাৎ আমি সারা জীবন যা করে গেলাম এবং এ ও বললেন যে, যে আমার এই সুন্নাহ ত্যাগ করবে সে বা তারা আমার কেউ নয়; অর্থাৎ আমার উম্মত নয়।
নিজ পরিবারের সদস্যদের বাইরে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের মধ্যে প্রথম যিনি মহানবী (সা.) কে আল্লাহর প্রেরিত বলে শিকার করে এই দীন তথা ইসলামে প্রবেশ করলেন অর্থাৎ আবুবকর (রা.) মুসলিম হয়েই রসুল্লুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞেস করলেন- ‘হে আল্লহর রসুল! এখন আমার কাজ কি? কর্তব্য কি? আল্লাহর রসুল (সা.) উত্তর দিয়ে বললেন, “এখন থেকে আমার যে কাজ তোমার ও সেই কাজ”। ইতিহাসে পাচ্ছি, ইসলামকে গ্রহণ করার দিনটি থেকে শুরু করে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আবুবকর (রা.) এর কাজ একটাই হয়ে গিয়েছিল, সেটা ছিল মহানবী (সা.) এর সংগ্রামে তাঁর সাথে থেকে তাকে সাহায্য করা। শুধু আবু বকর (রা.) নয়, যে বা যারা নবীজী (সা.) কে বিশ্বাস করে মুসলিম হয়েছেন সেই মুহূর্ত থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি বা তারা বিশ্বনবীকে (সা.)তাঁর ঐ সংগ্রামে সাহায্য করে গেছেন, তাঁর প্রকৃত সুন্নাহ পালন করে গেছেন। আর কেমন সে সাহায্য! স্ত্রী-সন্তান পরিবার ত্যাগ করে, বাড়ি-ঘর, সহায়-সম্পত্তি, ব্যবসা- বাণিজ্য ত্যাগ করে, অর্ধাহারে-অনাহারে থেকে, নির্মম অত্যাচার সহ্য করে, অভিযানে বের হয়ে (ক্ষুধার তাড়নায়) গাছের পাতা খেয়ে জীবন ধারণ করে এবং শেষ পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্রে জীবন বিসর্জন দিয়ে, এই হলো তাঁর উম্মাহ, উম্মতি মোহাম্মদী, তাঁর প্রকৃত সুন্নাহ পালনকারী জাতি।
বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন- আমার উপর নবুয়তের দায়িত্ব না থাকলে আমি জেহাদের ময়দানে শহীদ হয়ে যেতাম, বলেছেন আমি কেমন আকুল ভাবে চাই যে কত ভালো হতো, যদি আমি শহীদ হতাম, আমাকে জীবিত করা হতো, আমি আবার শহীদ হতাম, আমাকে আবার জীবিত করা হতো- আবার শহীদ হতাম, আবার জীবিত করা হতো, আবার শহীদ হতাম (হাদিস- আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বুখারী, মুসলিম, মিশকাত) যে জাতির স্রষ্টা যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুর জন্য বার বার আকুল আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, যে জাতির অবিশ্বাস্য সামরিক বিজয়ের কারণ হিসেবে পাশ্চাত্য ইতিহাসবেত্তারা লিখেছেনUtter Contempt for death মৃত্যুর প্রতি চরম অবজ্ঞা (পি.কে. হিট্টি দ্যা অ্যারাবস)।
সেই জাতি মৃত্যু ভয়ে ভীত হয়ে যাবার কারণ-ই হলো সশস্ত্র সংগ্রামকে ছেড়ে বিকল্প হিসাবে নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে গ্রহণ করা (মানে- নিরাপদ জেহাদ, যে জেহাদে শরীরে একটি ফুলের আঘাত ও লাগবে না) এবং নেতার প্রকৃত সুন্নাহ সশস্ত্র সংগ্রামকে ছেড়ে তাঁর জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পর্কহীন ব্যক্তিগত পছন্দ- অপছন্দ, অভ্যাস ইত্যাদির অনুকরণ করা।
আদম (আ.) থেকে আজ পর্যন্ত মানবজাতির মধ্যে ছোট বড় যত নেতা জন্মেছেন, কোন নেতাকেই তার জাতি এমন অপমানকর অবমূল্যায়ন করেছে বলে আমার মনে হয় না, যেমন করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বিপ্লবী নেতাকে তাঁর বিপ্লবী চরিত্রকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত অভ্যাসগুলিকে আমরা নকল করে চলেছি। সর্বাত্মক সংগ্রাম ছেড়ে নফসের সঙ্গে সংগ্রামের আশ্রয় গ্রহণ করার ও তার প্রিয় নবীর অমন চরম অবমূল্যায়নের জন্য আল্লাহ এই জাতিকে চরম শাস্তি দিতে ও ছাড়েন নি। আল্লাহ এই জাতিকে বলেছিলেন- তোমরা যদি (পৃথিবীতে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার জন্য) সামরিক অভিযানে বের না হও তবে তিনি তোমাদের মর্মন্তুদ শাস্তি দিবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের উপরে চাপিয়ে দিবেন। (সুরা তওবা- ৩৯)। আরো বলেছিলেন- “তোমাদের প্রস্তুতি সামান্যই হোক আর বেশিই হোক” বাহির হয়ে পড় এবং তোমাদের প্রাণ ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জেহাদ কর। (সুরা তওবা ৪১)। আল্লহর ঐ সব সরাসরি দ্ব্যর্থহীন আদেশ গুলি (যেগুলি তাঁর নবীর প্রকৃত সুন্নাহ এবং যা ত্যাগ করলে তাঁর উম্মাহ হতে তিনি বহিষ্কার করে দিয়েছেন) পরিত্যাগ ও অমান্য করার ফলে আল্লাহ ঐ জাতির শত্রুদের, যারা এই উম্মাহর নাম শুনলেও ভয়ে কাঁপতো, সেই শত্রুর মন থেকে এদের সম্বন্ধে ভয় তুলে নিলেন এবং সে ভয় এই জাতির হৃদয়ে ঢুকিয়ে দিলেন। তারপর আল্লাহ তাঁর প্রতিশ্রুতি মোতাবেক এই মুসলিম জাতির হাত থেকে শাসন শক্তি ও কর্তৃত্ব ছিনিয়ে নিয়ে ইউরোপের খ্রিষ্টান জাতিগুলির হাতে সোপর্দ করলেন। প্রায় সমস্ত জাতিটাকেই কঠিন শাস্তি দিয়ে শত্রুর ক্রীতদাসে পরিণত করে দিলেন। এই শাস্তি শুধু যে এই দুনিয়াতেই নয়, আখেরাতেও তাও বলে দিলেন।
বর্তমানে পৃথিবীর কোনও দেশে এই উম্মাহর কর্তৃত্ব দেখা যায় না, তবুও আমরা মুসলিম থাকি। কারণ (আমাদের দেশে তো অবশ্যই) অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ও মসজিদ, মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে কোর’আন-হাদিস শিক্ষা, মসজিদে মসজিদে চিল্লা দেওয়াসহ নামায, রোজা, আদায় করতে তেমন কোন বাধার সম্মুখীন হতে হয় না, আর রুটি রুজির তো সুযোগ আছেই। কিন্তু কর্তৃত্ব যে আমাদের নেই, আমরা পশ্চিমাদের আদেশের গোলাম, তারা যা বলছে ও বলবে তা পালন করতেই হবে, তাদের গোলামের মতোই জীবন যাপন করতে হচ্ছে এই বোধটুকুও (অভিশাপ স্বরূপ) আমাদের মস্তিষ্ক থেকে আল্লাহ তুলে নিয়েছেন। আল্লাহ ও রসুল যদি আমাদের পক্ষেই আছেন তাহলে এই জাতির অবস্থা এমন কেন? আল্লাহর আদেশ ও রসুলের (সা.) সুন্নাহ দীন (আল্লাহর দেওয়া জীবন ব্যবস্থা) ইসলাম প্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা (জেহাদ) ত্যাগ করার ফলে আল্লাহ এবং রসুলও আমাদেরকে ত্যাগ করেছেন।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...