আদর্শিক সংকট হলো মানবজাতির সবচেয়ে বড় সংকট। বর্তমান পৃথিবীতে যতগুলো আদর্শ রয়েছে প্রায় সবগুলোর মধ্যেই ভারসাম্যহীনতা লক্ষণীয়। মানুষ শুধু দেহ নয় তার আত্মাও রয়েছে। শুধু দেহের সমস্যা সমাধান হলে হবে না, আত্মার প্রশান্তিও দরকার। আবার দুনিয়াকে বাদ দিয়ে শুধু পরকাল নিয়ে পড়ে থাকলেও হবে না। এজন্যই মানবজাতির ইহকাল ও পরকালের শান্তি ও মুক্তির জন্য যুগে যুগে মহান আল্লাহ নবী রসুল পাঠিয়েছেন। নবী-রসুল পাঠানোর উদ্দেশ্য হলো, মানুষ যেন এ দুনিয়াতে একটি ত্রুটিহীন ভারসাম্যপূর্ণ দীন গ্রহণ করে সুখে ও সমৃদ্ধিতে থাকতে পারে। মানুষের পক্ষে এমন নিখুঁত ত্রুটিহীন ও ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা তৈরি করা অসম্ভব। কারণ-
(১) মানুষের মধ্যে ইবলিসের প্রভাব ও প্ররোচনা কাজ করে।
(২) মানুষ জানে না অতীত, ভবিষ্যৎ, বর্তমানে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে।
(৩) মানুষের রয়েছে মানবীয় দুর্বলতা। +েযমন, সন্তানের প্রতি ভালোবাসা, আত্মীয়দের প্রতি দুর্বলতা।
(৪) মানুষ যখন আইন বানায়, নিজের স্বার্থ ঠিক রেখেই আইন বানায়।
(৫) মহান আল্লাহ বলেন, আমি মানুষকে সামান্য জ্ঞানই দিয়েছি। (আল কোর’আন, সুরা আরাফ ৮৫)।
এতসব দুর্বলতার সাথে পৃথিবীর সমস্ত মানুষের ইহকাল ও পরকালের শান্তি ও মুক্তির জন্য যে জীবনব্যবস্থা দরকার তা একমাত্র মহান আল্লাহর কাছ থেকে ছাড়া সম্ভব নয়। পবিত্র কোর’আনের সুরা এখলাসে মহান আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, হে নবী আপনি বলুন তিনি আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি জন্ম দেন নি এবং তাঁকেও জন্ম দেওয়া হয়নি, এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।
সুরা আলে ইমরানের ৮৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ ইরশাদ করেন, “তোমরা কি আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা বাদ দিয়ে অন্য কোন জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করতে চাও? অথচ আসমানে যা আছে, জমিনে যা আছে, ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় আমার আনুগত্য করছে, অতঃপর আমার কাছেই তোমাদেরকে ফিরে আসা লাগবে।”
সুরা মূলক এর ১৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, “যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি জানেন না? অথচ তিনি অতি সূক্ষ্মদর্শী, পূর্ণ অবহিত।” দুনিয়া জোড়া মানবজাতির এই যে সংকট, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, সীমান্তে সীমান্তে সংঘাত, নিরাপত্তাহীনতা যুদ্ধ, রক্তপাত, সন্ত্রাসী কর্ম, নারীদের উপর নির্যাতন, ধর্মীয় বিভক্তি এ সমস্ত সঙ্কটের মূল কারণ হল একটি নিখুঁত, ত্রুটিহীন, ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থার অনুপস্থিতি। আর এমন নিখুত আদর্শ বা জীবনব্যবস্থা মানুষের পক্ষে তৈরি করা অসম্ভব। কিন্তু এই অসম্ভব কাজটিই মানুষ জেনে-বুঝে পরামর্শ করে, চিন্তা ভাবনা করে নির্ভয়ে করে যাচ্ছে। যার ফলে অশান্তি আরো বাড়ছে।
মানবজাতির মুক্তির একটি মাত্র পথ খোলা সেটা হচ্ছে মানব জাতি সম্মিলিতভাবে আল্লাহর দেওয়া দীনকে তাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক, সামষ্টিক, অর্থনৈতিক জীবনে পূর্ণভাবে প্রয়োগ করে তবে প্রকৃত অর্থে শান্তি, ন্যয় সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। কোথায় পাবে সেই সুমহান আদর্শ?
প্রথমত – সংকটের ভয়াবয়তা ও প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে হবে।
দ্বিতীয়ত – আল্লাহর দেওয়া দীনের সুমহান আদর্শ যেটা, ত্রুটিহীন, নিখুঁত ভারসাম্য যুক্তভাবে দুনিয়াতে আছে কিনা?
আল্লাহর রসুল (সা.) ও তাঁর সাহাবাদের ইন্তেকালের ১৩শত বছর পরে ২০২১ সালে এসে ইসলাম ধর্মের যে অবস্থা দেখছি তা কোন ভাবেই নিখুঁত, ত্রুটিহীন, শরিয়ত ও মারেফতের ভারসাম্য, দুনিয়া ও আখেরাতের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় নেই। ১৬০ কোটি মুসলমান বিভিন্ন ফেরকা, মাযহাব ও তরিকায় বিভক্ত, লক্ষ্য উদ্দেশ্যহীন, একক নেতৃত্বহীন, চরম বিশৃঙ্খলায় নিপতিত, সর্বত্র পরাজিত লাঞ্ছিত ও ঘৃণিত। বর্তমানে মুসলমানদের কাছে যে আদর্শ আছে তা দিয়ে দুনিয়ার কোনো সংকটেরই সমাধান করা সম্ভব নয়। যদি সম্ভব হত তবে মুসলমানদের এই দুরবস্থা হয় কী করে? পূর্বে দুনিয়াতে যখনই প্রকৃত আদর্শ বিলুপ্ত হয়েছে তখনই মহান আল্লাহ নতুন করে নবী, রসুল পাঠিয়ে মানুষের শান্তির জন্য ধর্মে সংস্কার এনেছেন। কিন্তু এখন তো আর কোনো নবী আসা সম্ভব নয়। কারণ শেষ নবী মোহাম্মদ (সা.) এসে গেছেন ১৪শ বছর আগেই।
এখন বর্তমানের এই সংকটের সমাধান কে করবে? এখন এই সংকটের সমাধান করতে হবে উম্মতে মোহাম্মদীকেই। হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী একজন উম্মতে মোহাম্মদী হিসাবে আল্লাহর দেওয়া প্রকৃত ইসলামের আকিদা আবার এই জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন। আমরা বলতে পারি, এই সেই ইসলাম যা দিয়ে সমগ্র পৃথিবীতে অনাবিল শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা সম্ভব, সার্বিক সমৃদ্ধি ও প্রগতি আনয়ন সম্ভব, চূড়ান্ত মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। সেই অনাবিল শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জান, মাল কোরবানি করে সর্বাত্মক সংগ্রাম করে যাচ্ছে মানবতার কল্যাণে নিবেদিত আন্দোলন হেযবুত তওহীদ।