মোহাম্মদ ইয়ামীন খান
মানুষ সৃষ্টির সময়কার কথা আল্লাহ কোর’আনে আমাদেরকে যতটুকু জানিয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম ঘটনা হচ্ছে মানুষ সৃষ্টির ইচ্ছা পোষণ করার পর আল্লাহ তাঁর মালায়েকদের ডেকে বলেছিলেন যে, ‘আমি পৃথিবীতে আমার খলিফা সৃষ্টি করতে চাই (সুরা বাকারা ৩০)।’ এখানে আল্লাহ মানুষ শব্দটির বদলে খলিফা অর্থাৎ প্রতিনিধি শব্দটি ব্যবহার করেছেন কেন তা নিয়ে ভাবার অবকাশ আছে। বস্তুত আমরা যদি চিন্তা করি তাহলে এই শব্দটি থেকেই মানুষ সৃষ্টির রহস্য ও পৃথিবীতে মানবজাতির মূল দায়িত্ব জানতে পারি।
খলিফা শব্দের অর্থ প্রতিনিধি। যে প্রতিনিধিত্ব করে সে-ই হলো খলিফা। ধরুন আপনি একটি কোম্পানীর মালিক। কোনো এলাকায় আপনার কোম্পানির একটি নতুন শাখা খোলা প্রয়োজন। এজন্য আপনার অফিসের একজনকে পাঠালেন সে নতুন এলাকায়। এই ব্যক্তিটি সেখানে গিয়ে আপনার পক্ষ হতে যে দায়িত্বগুলো পালন করবেন সেটাই হচ্ছে আপনার প্রতিনিধিত্ব করা। তিনি তখন আপনার খলিফা। তাকে না পাঠিয়ে সে স্থানে যদি আপনি নিজেই উপস্থিত থাকতেন তাহলে যে কাজগুলো আপনাকে করতে হত আপনার অবর্তমানে আপনার প্রতিনিধি সেই কাজগুলোই করবে, তাই নয় কি? আল্লাহ আদম (আ.) তথা বনী আদমকে তাঁর খলিফা হিসেবে পৃথিবীতে নিযুক্ত করলেন এবং এর মাধ্যমে মানুষের দায়িত্ব হয়ে গেল আল্লাহ যেমন সমস্ত সৃষ্টিজগতকে তার হুকুম মোতাবেক পরিচালনা করে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রেখেছেন সেইভাবে পৃথিবীকেও আল্লাহর হুকুম মোতাবেক পরিচালনা করে শান্তি স্থাপন করা। এটাই মানুষের এবাদত, কর্তব্য, যে এবাদতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আল্লাহ তাঁর কোর’আনে বলেছেন, এর বেশি তো আমি আদেশ করি নি (বাইয়্যিনাহ: ৫)।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য হচ্ছে, মানবজাতি আজ আল্লাহর এই দাবি অর্থাৎ খেলাফত থেকে সরে গেছে। মানবজাতি ইতোমধ্যেই আল্লাহর দাবিকে (আল্লাহর সার্বভৌমত্ব) প্রত্যাখ্যান করে দাজ্জালের দাবিকে (মানুষের সার্বভৌমত্ব) গ্রহণ করে নিয়েছে, এমনকি মুসলিম নামক জাতিটিও আল্লাহর হুকুম কয়েক শতাব্দী আগেই পরিত্যাগ করে দাজ্জালের তৈরি তন্ত্র, মন্ত্র, বাদ, মতবাদ গ্রহণ করে নিয়েছে।
আল্লাহর রসুল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, এক মহাপ্রতারক দাজ্জাল আসবে, যার হাতে থাকবে অসম্ভব ক্ষমতা। সেই ক্ষমতা ব্যবহার করে সে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে নিজেকে প্রভু বলে দাবি করবে এবং মানবজাতিকে বাধ্য করবে তাকে প্রভু বলে মেনে নিতে। সত্যনিষ্ঠ মানুষ রসুলের সেই ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতা ইতোমধ্যেই পেয়ে গেছে। হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী তাঁর ‘দাজ্জাল? ইহুদি খৃষ্টান সভ্যতা’ বইতে প্রমাণ করে দিয়েছেন- বর্তমানের ধর্মহীন আত্মাহীন বস্তুবাদী সভ্যতাই সেই রসুল বর্ণিত দানব দাজ্জাল, আর তার বাহন হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। সে মানবজাতিকে তার দাবির কথা প্রতিনিয়তই বলে যাচ্ছে, সারা পৃথিবীতে সে মানুষের তৈরি হুকুম, বিধান প্রতিষ্ঠা করবে। সে মানুষকে বুঝিয়েছে স্রষ্টার হুকুম বহু পুরোনো, অকেজো হয়ে গেছে। আধুনিক যুগে ওসব অচল। তবুও তোমরা যার যার ধর্ম পালন কর কোন সমস্যা নেই। মুসলমান মসজিদে যাও, হিন্দু মন্দিরে যাও, খ্রিস্টান গির্জায় বসে থাক, বৌদ্ধ তুমি গেড়–য়া বসন গায়ে দিয়ে যত খুশি ‘বুদ্ধং স্বরণং গচ্ছামী সঙ্ঘং শরণং গচ্ছামী’ গাও কোনো আপত্তি নেই। বরং এগুলো যত বেশি করে করবে, এগুলো নিয়ে যত ব্যস্ত থাকবে আমি তত নিরাপদ থাকব। কিন্তু সাবধান! সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলবে না, সমষ্টিগত জীবনের জীবনবিধান হিসেবে স্রষ্টার হুকুম প্রতিষ্ঠার কথা কল্পনাও করবে না।
দাজ্জালের এই হুকুম মানবজাতি বহু আগেই মেনে নিয়েছে এবং তার বিনিময়ে দাজ্জাল মানবজাতিকে তার তৈরি জান্নাতে স্থান দিয়েছে, যা আদতে জাহান্নামের অগ্নিবী নামক গ্রহটিই আজ ধ্বংসের মুখোমুখী এসে দাঁড়িয়েছে। এখনও যদি তারা অনুতপ্ত হয়ে তাদের প্রকৃত প্রভু, আকু-লী ব্যতীত কিছুই নয়। এই কথাই আল্লাহর রসুল বলেছিলেন, দাজ্জালের জান্নাত হবে জাহান্নাম আর জাহান্নাম হবে জান্নাত। এই মহাপ্রতারক দাজ্জালের ধোঁকায় পড়ে সমস্ত মানুষ, কেবল মানুষ নয় শুধু, সমস্ত পৃথিল্লাহর হুকুম মোতাবেক জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত না নেয় তাহলে নিশ্চিত ধ্বংসের দিকে ছুটে চলা মানবজাতির শেষ রক্ষা হয়ত আর হবে না।