[মাহবুব আলী]
ব্রিটিশ খ্রিস্টানরা পুরো ভারতবর্ষের উপরে নিরঙ্কুশ শাসনক্ষমতার অধিকারী হয়েছিল প্রায় দুইশত বছর। তখন তাদের নিজেদের দেশে ছিল রাজতন্ত্র আর আমরা, তাদের দখলকৃত এলাকার অধিবাসীরা ছিলাম তাদের পদানত দাস। একটি জাতি যখন দুইশত বছর অন্যের দাস থাকে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাদের চিন্তা চেতনায় এই দাসত্ব স্থায়ী আসন গেঁড়ে বসে। তারা স্বাধীন চিন্তা করার শক্তি হারিয়ে ফেলে, প্রভুর হুকুমের জন্য সদা তটস্থ থাকে। এ জাতিটিরও সেটাই হয়েছে। তাদেরকে যখন সাম্রাজ্যবাদীরা ‘নামকাওয়াস্তে’ স্বাধীনতা ভিক্ষা দিয়ে গেল তখন তাদের মনে এ প্রশ্নও জাগলো না যে, প্রভুরা যে তাদেরকে গণতন্ত্র মেনে চলার জন্য উপায় বাতলে দিয়ে গেলো, তারা নিজেরা কি এতবছর এই গণতন্ত্র মেনে শাসন করেছিল? তারা কি এই দু’শ বছরে জনগণের একটি মতামতেরও পরোয়া করেছে? করে নি। তাদের কোন বড়লাট দূরের কথা, কোন এলাকার ক্ষুদ্র জমিদারও কি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন? যদি তারা কেউ জনগণের মতামতের জন্য নির্বাচন করতেন, পোস্টার ছাপাতেন, জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতারোহণ করার পদ্ধতি অবলম্বন করতেন তবে এক বছরের বেশি ব্রিটিশ শাসকেরা এদেশে থাকতে পারতো কি না সন্দেহ। অথচ তারা ভারতবর্ষ থেকে চলে যাওয়ার সময় গণতন্ত্র নামে একটি অসংলগ্ন, অসামঞ্জস্যপূর্ণ, উদ্ভট জীবন ব্যবস্থা যার তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দিক সম্পূর্ণ বিপরীত, তা এই জাতির উপরে চাপিয়ে দিয়ে গেছে। আমরা ভাবলাম, আমরা বুঝি তাদের ভারত থেকে তাড়িয়েছি। আসলে তখন তারা এটুকু নিশ্চিন্ত হয়েছে যে এখন আর তাদের এদেশে স্বশরীরে থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শাসন-প্রশাসন চালানোর প্রয়োজন নেই। তারা তখনই এদেশ থেকে গেছে যখন তারা পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হয়েছে যে, এদেশের শিক্ষিত মানুষগুলি যাদের হাতে তারা ক্ষমতার রশি ধোরিয়ে দিয়ে গেলো তারা এতটাই গোলাম যে তাদেরকে স্বাধীনতা দিয়ে গেলেও তারা সাদা চামড়ার প্রভুদের অবাধ্য হবে না, সাত সমুদ্দুরের পার থেকেও প্রভুর হুকুমে ওঠ্-বস করবে। বাস্তবেও তাই হলো। বিদেশিরা চলে যাওয়ার পর থেকে এ জাতির জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শুরু হলো ক্রমাবনতি। ব্রিটিশ আমলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যা ছিল এখন তার চেয়ে বহুগুণ খারাপ, তখন এ জাতি যতটা দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল এখন তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অসৎ। যে কোন পরিসংখ্যান দেখলেই আমার কথার সত্যতা মিলবে। প্রশ্ন হলো, আমাদের এই এলাকায় গণতন্ত্র এমন নিদারুণভাবে ব্যর্থ হলো কেন?
এর কারণ এই ব্যবস্থাটি এদেশের মানুষের চিন্তা-চেতনা, বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক, সামাজিক কাঠামো ইত্যাদির সঙ্গে মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়, শুধুমাত্র গায়ের জোরে গত ৭৩ বছর ধরে এটা এতদ অঞ্চলের মানুষকে গেলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এই চেষ্টা চালানো হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাবাধীন মিডিয়া এবং তাদের তৈরি শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে। তারা সর্ব উপায়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে যে গণতন্ত্রই সেরা জীবনব্যবস্থা। প্রচারে প্রসার, তাই পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত গোলামি মানসিকতাবিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও সাধারণ মানুষ আজ প্রভুদের চাপিয়ে দেওয়া জীবনপদ্ধতি তাদেরকে শান্তি ও নিরাপত্তা দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হলেও এর বাইরে তাদের চিন্তা করার সামর্থ্য নেই। পশ্চিম থেকে শ্লোগান তোলা হয়, গণতন্ত্রেই মুক্তি আর তাদের এদেশীয় তল্পীবাহকের দল দিনরাত টক-শো, বিবৃতি, বক্তৃতায় সেই শ্লোগানে গলা মেলায়। তারা গোলামি করার ব্যাপারে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করে, দেশের মানুষের ভালোমন্দ তাদের বিবেচ্য নয়, যেটুকু দেশপ্রেম তারা দেখায় সেটুকু শুধু ভোট পাওয়া জন্য।
আমাদের একটি নিজস্ব জীবনব্যবস্থা না থাকলে না হয় কথা ছিল যে, আমরা নিরুপায় হয়ে আইন-বিধানের জন্য অন্যের দ্বারস্থ হচ্ছি। কিন্তু তা তো নয়। মহান আল্লাহ আমাদেরকে অনুপম ভারসাম্যযুক্ত, একটি নিখুঁত পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা আখেরী নবী মোহাম্মদ (দ:) এর মাধ্যমে পাঠিয়েছেন। আল্লাহর দেওয়া ঐ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে আজও পশ্চিমা প্রভুদের শেখানো, পড়ানো, দেখানো, গেলানো অকার্যকর জীবনব্যবস্থাটিকে বেদবাক্যের মত মেনে চলার চেষ্টা করছি। সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় একটি মহাজাতি হওয়ার জন্য একটি কর্মসূচিও আল্লাহ দিয়েছেন। গত ৭৩ বছরের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব থেকে মুক্তির পথ আমরা আল্লাহর রহমে পেয়েছি এবং সেটা আপনাদের সামনে তুলেও ধরছি। এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা।