হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম:
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ শনিবার রাজধানীর খিলগাঁও জোড়পুকুর মাঠে আয়োজিত জনসভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে ভাষণ দান করেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। তাঁর ভাষণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ বজ্রশক্তির পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
‘আজ পৃথিবীর ৮০০ কোটি মানুষের মধ্যে একটি ভাগ আল্লাহকে বিশ্বাস করে, নবী-রসুলদের বিশ্বাস করে, ধর্মগ্রন্থকে বিশ্বাস করে অর্থাৎ ধর্মপ্রাণ মানুষ। আরেকটা ভাগ আল্লাহকে ও পরকালকে বিশ্বাস করে না, বস্তুবাদী দুনিয়াকেই সর্বশেষ ও চূড়ান্ত মনে করে। এই অবিশ্বাসীদের মোট সংখ্যা একশ’ কোটির বেশি হবে না। কিন্তু বিশ্বাসীর সংখ্যা আছে অন্তত সাতশ’ কোটির উপরে। এই ধর্মবিশ্বাসী মানুষ আজকে আল্লাহকে ঈশ্বরকে পাবার জন্য, পরকালে জান্নাতে যাবার জন্য কত কিছুই না করছে! আল্লাহকে পাবার জন্য কেউ মসজিদে যাচ্ছে, নামাজ পড়ছে, কেউ মন্দিরে যাচ্ছে, গীতাপাঠ করছে, কেউ গীর্জায় যাচ্ছে, বাইবেল পাঠ করছে, কেউ প্যাগোডায় যাচ্ছে, বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি পাঠ করছে। সবাই ভাবছেন একমাত্র তারাই জান্নাতে স্বর্গে বা হ্যাভেনে যাবে, অন্যরা সবাই নরকে যাবে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, জান্নাতে যাবার, স্বর্গে যাবার রাস্তা কি এতগুলো? এত জায়গায় যাওয়া হচ্ছে আল্লাহকে পাবার জন্য, আল্লাহকে পাবার রাস্তা কি এতগুলো? কখনই হতে পারে না। তাছাড়া যে মানুষ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে দুনিয়াকে বিনাশ করে দেওয়ার জন্য, তারা আল্লাহকে পাবার আশা করে কীভাবে? জান্নাতে যাবার আশা করে কীভাবে? না, তারা দুনিয়াতে তো শান্তি পাচ্ছেই না, জান্নাতেও যেতে পারবে না। একমাত্র জান্নাত মিলবে যদি সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, আমরা মানুষ, আমরা এক আদম হাওয়ার সন্তান, আমরা সবাই ভাই ভাই। আমরা সবাই মিলে এই সিদ্ধান্ত নিলাম যে, আমরা স্রষ্টার হুকুম ছাড়া কারো হুকুম মানব না।
এক আল্লাহ, এক রসুল, এক কিতাবের অনুসারী ছিলাম আমরা। আল্লাহর রসুল কঠোর পরিশ্রম করে, পেটে পাথর বেঁধে, গাছের লতাপাতা খেয়ে, নির্যাতিত নিপীড়িত হয়ে যে উম্মতে মোহাম্মদী তৈরি করলেন সেটা কয় খণ্ড ছিল? সেটা ছিল অখণ্ড জাতি। কোনো ভাগ ছিল না, ফেরকা ছিল না, মাজহাব ছিল না, মতভেদ ছিল না। কিন্তু আজ আমরা খণ্ড-বিখণ্ড হয়েছি হাজার হাজার দল, উপদল, ফেরকা, তরিকায়। শিয়া মানে না সুন্নিকে, সুন্নি মানে না শিয়াকে। এক পীর মানে না অন্য পীরকে। ধর্মের নামে রাজনৈতিক দল হাজার হাজার তৈরি করা হয়েছে। একেক দলের একেক কর্মসূচি, একেক আকীদা, একেক ইসতেহার। বামপন্থীরা যদি পঞ্চাশটি দল হয়ে থাকে, ইসলামের নামে আছে শতাধিক দল। আবার পাড়ায় পাড়ায়, জেলায় জেলায়, থানায় থানায় বিভিন্ন রকম মাদ্রাসা, মক্তব ইত্যাদি। একটার সাথে আরেকটার বনিবনা হয় না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, জান্নাতে যাবার কি এত পথ হতে পারে? আল্লাহর রসুল কি এতগুলো পথ নিয়ে এসেছেন? হেদায়াহ কি এতগুলো? কখনই না। জান্নাতের রাস্তা কেবল একটি। আল্লাহর রসুল একদিন বললেন, ইহুদিরা বাহাত্তর ভাগে বিভক্ত হয়েছিল, আমার উম্মাহ তিহাত্তর ভাগে বিভক্ত হবে। কিন্তু তারমধ্যে এক ভাগ ছাড়া বাকি সবাই জাহান্নামী হবে। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, সেই একমাত্র জান্নাতি ভাগ কোনটি? রসুল বললেন, ‘‘যার উপর আমি ও আমার সাহাবীরা আছি।’’ তাহলে জান্নাতের পথ কয়টি? অবশ্যই একটি। সেই পথ আমরা হারিয়ে ফেলেছি বলেই চারদিকে আজ এত মত, এত পথ, এত তরিকা। ইসলামের ব্যাখ্যা একেকজন একেকভাবে দিচ্ছে। একই আয়াত ব্যবহার করে একেকজন একেকদিকে টানছে। মানুষের বুকে বোমা মারা হচ্ছে, ভোটের রাজনীতি হচ্ছে। আল্লাহর আইন, কোর’আনের আইন, শরীয়তের আইন ইত্যাদি বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এখন সবাইকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে- ঐ ধর্মব্যবসায়ী, ঐ সাম্প্রদায়িক, ঐ স্বার্থবাজ, ঐ অপরাজনীতিকারী, ঐ জঙ্গিবাদীরা কে কী বলল সেটাকে বাদ দিয়ে দেখতে হবে আল্লাহ কী বলেছেন, এটাই তওহীদ- আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে হুকুমদাতা হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।
আজকে সারা বিশ্বে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে অজস্র প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে মুসলমানরা জঙ্গি, মুসলমানরা অসভ্য, বর্বর, সভ্য দেশে বসবাস করতে পারে না, বিশৃঙ্খল, আইন-আদালত মানে না ইত্যাদি। এই যে প্রোপাগান্ডা তারা চালু করল, এর ফল কী হলো? গতকালকের বিবিসির সংবাদ আপনারা নিশ্চয়ই শুনেছেন বা পড়েছেন। একটি প্রতিবেদনে বলা হলো- মিয়ানমারে মুসলমানদের উপরে অত্যাচারের কারণ সেখানে দীর্ঘদিন ধরে মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছিল। ফলে প্রত্যেকটি মুসলমানের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে বিদ্বেষ চালু হয়েছে। আজকে ইউরোপে, আমেরিকাতেও মুসলমানরা আক্রান্ত হচ্ছে কারণ মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক বিদ্বেষ প্রচার করা হয়েছে। হায়রে মুসলমান! এই অবস্থায় তোমরা ঘরের দরজা বন্ধ করে তসবিহ জপে জান্নাতে যাবার আশা কর? তোমাদের এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। তোমার জাতি আজ সবচাইতে বড় বিপদে পড়েছে, তোমার জাতি নিয়ে ভাবো, কীভাবে তোমার পরিবার বাঁচবে, তোমার জনগণ বাঁচবে, তোমার মাটি রক্ষা হবে সেটা নিয়ে চিন্তা কর, নইলে কিছুই থাকবে না। হে মুসলমান, তোমাদের দুনিয়ার জীবনকে দাজ্জালের হাতে তুলে দিয়ে, মা বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠন করার সুযোগ করে দিয়ে, তোমরা কোন জান্নাতে যাবে? যেতে পারবে না।
আমি যখন বিভিন্ন জনসভায় কথা বলি, অনেকে বলেন ভাই আপনি নির্বাচনের অধিকার, ভোটের অধিকার, চাল ডালের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কথা বলুন, এখন তো জঙ্গিবাদ, সাম্রাজ্যবাদের সঙ্কট এক নম্বর সঙ্কট নয়। আমরা বলতে চাই, সুধীবৃন্দ! হয় আপনারা মূল সঙ্কট চিনতে ভুল করেছেন, নয়তবা সমাধান করতে পারবেন না বলে বাদ এড়িয়ে যেতে চাইছেন। না, চালডালের সঙ্কট নয়, ভোটের সঙ্কট নয়, অস্তিত্বের সঙ্কট এখন এক নম্বর সঙ্কট। ভোটের অধিকার দিয়ে দেশ রক্ষা করতে পারবেন? পারবেন না। দ্রব্যমূলের নিয়ন্ত্রণ করে দেশ রক্ষা করতে পারবেন? পারবেন না। যদি একদল মানুষ যাবতীয় স্বার্থচিন্তা ছেড়ে যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ না হয় তাহলে পারবেন না। আপনাদেরকে এই সঙ্কট বুঝতে দেওয়া হয় নাই। অনেক ছোটখাটো সঙ্কটকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয়, কিন্তু আসল সঙ্কটকে আড়াল করে রাখা হয়।
মানুষের সামনে ইসলামের প্রকৃত আকীদা তুলে ধরতে হবে। কারণ আকীদা ভুল হলে ঈমান ভুল খাতে প্রবাহিত হয়। আর ঈমান ভুল হলে আমলের কোনো মূল্য থাকে না। আজকে সারা দুনিয়ায় আমরা আমল করে যাচ্ছি। পাড়ায় পাড়ায় কত মসজিদ বানাচ্ছি। টাইলসের মসজিদ, এসি মসজিদ। কোনো কোনো মসজিদ আছে দুনিয়াতে সোনার গম্বুজ বসানো, সোনার দরজা, ইমামের বসার চেয়ার সোনায় মোড়ানো। মাদ্রাসা ভর্তি লক্ষ লক্ষ মানুষ ধর্ম শিখছে। কোর’আন যেন শুদ্ধভাবে পড়া যায়, তার জন্য অনেক আয়োজন হচ্ছে। কোর’আন হেফজ করা হচ্ছে, ব্যাখ্যা করা হচ্ছে, তাফসির করা হচ্ছে। আমলের কোনো অভাব নাই। যাকাত দেওয়া হচ্ছে, জায়গা জমি বিক্রি করে হজ্ব করা হচ্ছে। রোজা রাখা হচ্ছে, সেহরি ও ইফতার খাওয়া হচ্ছে। ওজু, গোসল, পোশাক, লেবাসে ভুল ধরে কার সাধ্য? কারো সাধ্য নাই। আমি বলতে চাই- আমল করেন, যত ইচ্ছা করেন আপত্তি নাই। কিন্তু আমলের আগে তো ঈমান। ঈমান ঠিক আছে কিনা, জায়গামত আছে কিনা, আল্লাহ-রসুলের ঘোষণামত আছে কিনা সেটা কি খেয়াল করছেন? সুরা বাকারার শুরুর দিকে আল্লাহ একদল মানুষের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে যে, ‘‘আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ আদৌ তারা ঈমানদার নয়।’’ কাজেই আপনার মনমত ঈমান আনলে হবে না। বর্তমানে অনেকেই নিজেকে ঈমানদার বলে দাবি করেন, কারণ তারা আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন। আল্লাহ খাওয়াচ্ছেন, পরাচ্ছেন, খালেক, মালেক, জব্বার ইত্যাদি। এই বিশ্বাস অনেকের মধ্যেই আছে, কিন্তু এই বিশ্বাসই কি ঈমান? দেখুন, আপনি আপনার বাবাকে বিশ্বাস করেন। বিশ্বাস করেন যে, তিনি আপনার জন্মদাতা পিতা। বাবাকে দেখলে সালামও দেন। কিন্তু বাবার আদেশ-নিষেধ মানেন না। শুনুন, বাবাকে বিশ্বাস করা এক জিনিস, আর বাবার হুকুম মানা অন্য জিনিস। বাবা বললেন, গভীর রাত্রে পর্যন্ত হাটে বাজারে অহেতুক ঘুরে বেড়াবে না। আপনি মানলেন না। আপনি বললেন, বাবা বুড়ো মানুষ, কী বোঝেন তিনি? আমি গভীর রাতেই ঘুরে বেড়াব, এতে কোনো ক্ষতি হবে না। বাবা বললেন, মদ খাবে না, আত্মা নষ্ট হয়ে যাবে। আপনি বললেন- মদ হলো আধুনিকতা, আমি খাব। বাবা বললেন, সন্ত্রাস করবে না। আপনি ভাবলেন, বাবা কিছুই বোঝে না, সন্ত্রাস না করলে কেউ কি আমায় ভয় পাবে? এভাবে বাবার সমস্ত আদেশ-নিষেধকে একে একে অমান্য করলেন, ফলে আপনি হয়ে গেলেন পুলিশের দৃষ্টিতে অপরাধী। আপনাকে এখন পালিয়ে বেড়াতে হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি কি বাবাকে বিশ্বাস করতেন না? সালাম দিতেন না? তাহলে ভুলটা কোথায় হলো? ভুলটা এই যে, বাবাকে বাবা বলে বিশ্বাস করলেও বাবার হুকুম অমান্য করেছেন। আমরা মুসলমানরা এই সর্বনাশা কাজটাই করেছি। আল্লাহকে বিশ্বাস করছি, হাজারো রকম নিখুঁত আমল করে যাচ্ছি, কিন্তু আমরা সম্মিলিতভাবে সমগ্র জাতি আল্লাহর হুকুমকে অমান্য করেছি। ফলে কলেমার চুক্তি- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহর হুকুম ছাড়া কারো হুকুম মানব না, এই চুক্তি থেকে বহির্গত হয়ে গেছি। ঈমান থেকেই আউট হয়ে গেছি। এবার বলুন, ঈমান না থাকলে আমলের কি কোনো মূল্য আছে?
আপনি লিখুন- ১। তারপর একটি শূন্য দিন, কত হলো? ১০। এরপর আরও একটি শূন্য দিন, কত হলো? ১০০। কিন্তু যদি বামের ১ না থাকে তাহলে ঐ শূন্যগুলোর কোনো দাম আছে? আমার মুসলমান ভাইয়েরা, আপনারা আমল করে যাচ্ছেন, যে ঈমান দিয়ে আরবের জাহেলিয়াতের মানুষগুলোকে ‘রাদিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া রাদু আন্হু’ করেছিলেন, সমাজকে পাল্টে দিয়েছিলেন, পেটে ভাত ছিল না ঘরে ঘরে সমৃদ্ধি এনে দিয়েছিলেন, গায়ে পোশাক ছিল না ঘরে ঘরে পোশাক দিয়েছিলেন, মানুষের অধিকার ছিল না মানবাধিকার কায়েম করেছিলেন, ন্যায়বিচার ছিল না ন্যায়বিচার দিয়েছিলেন, দাঙ্গা-হাঙ্গামায় লিপ্ত আরব জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, আজ আপনাদের কাছে সেই ঈমান কোথায়? আমরা লক্ষ লক্ষ বার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ছি, কিন্তু যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আমাকে দুনিয়াতে সমৃদ্ধি এনে দিবে, যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আমাকে দুনিয়াতে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন করবে, আমরা কি সেই লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তে আছি? নেই।
আজ আপনারা আলেম-ওলামারা বসে বসে আমার ভুল ধরেন, আমার আরবি উচ্চারণে ভুল হচ্ছে, আমার লেবাসে ভুল হচ্ছে, ফেসবুকে আমার বক্তব্য এখন সারা দুনিয়ার মানুষ দেখতে পাচ্ছেন, সেখানে এসে গালাগালি করে প্রশ্ন করছেন, আপনার মাথায় টুপি কই? আমার মাথায় টুপি নাই, আরে আপনার তো ঈমানই নাই। যে ঈমানে জান্নাতে নিবে, যে ঈমানে সেরা জাতি বানাবে, সেই ঈমান হারিয়েছে হাজার বছর আগেই। আপনি মাথায় হাজার টুপি লাগান, শত জোব্বা লাগান, ঐ জোব্বা টুপি আপনাকে জান্নাতে নিতে পারবে না। এটা আমার কথা নয়, আল্লাহর রসুল বলেছেন, এমন সময় আসবে ইসলাম শুধু নাম থাকবে। আজ ইসলাম কেবল নামেই আছে। কোর’আন শুধু অক্ষর থাকবে। আজ কোর’আনের কোনো হুকুম চলে না, কোর’আনের কোনো শিক্ষা চলে না, বিধান চলে না, সবাই কোর’আন মুখস্থ করে, তাফসির করে, ব্যাখ্যা করে টাকা কামাই করছে। আল্লাহর রসুলের কথা শতভাগ সত্য প্রমাণিত হচ্ছে। মসজিদগুলো হবে লোকে লোকারণ্য, সেখানে হেদায়াহ থাকবে না। এটা আমার কথা নাকি আখেরী নবীর কথা? আজকে আমাদের লক্ষ লক্ষ মসজিদ, কোটি কোটি মুসল্লি। জায়গা হয় না, মানুষকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে হয়। আল্লাহর রসুল বলেছিলেন, হেদায়াহ থাকবে না, ঠিক তা-ই হয়েছে।
হেদায়াহ মানে কী? সুরা ফাতেহায় আল্লাহ দুইটি পথের কথা বলেছেন, একটা সহজ-সরল পথ, সেরাতুল মোস্তাকীম। অন্যটা ভুল পথ। একটা আল্লাহর পথ, আরেকটা শয়তানের পথ। একটায় আল্লাহর হুকুম, অন্যটায় শয়তানের হুকুম। এই দুইটি রাস্তা মানুষের সামনে। পরকালেরও পরিণতি দুইটা- জান্নাত ও জাহান্নাম। গত কয়েক শতাব্দী ধরে এই জাতি আল্লাহর হুকুমকে প্রত্যাখ্যান করে, আল্লাহর দেওয়ার সেরাতুল মোস্তাকীম থেকে বর্হিগত হয়ে সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিক যুগের রাজনৈতিক দর্শন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে সমস্ত জীবন পরিচালনা করছে। এরপরও কি বলবেন এই জাতি হেদায়াতে আছে? যারা আমার ভুল ধরতে ব্যস্ত রয়েছেন তাদের কাছে আমি জানতে চাই, আল্লাহ ও রসুলের দেওয়া সংজ্ঞা মোতাবেক আমরা হেদায়াতে আছি কিনা? এখন করণীয় একটাই, সেই ঈমান লাগবে যে ঈমান আল্লাহর রসুল শিক্ষা দিয়েছিলেন, যে ঈমান শত্রুকে ভাই বানিয়েছিল, যে ঈমান মানুষের স্বার্থপরতা দূর করেছিল, যে ঈমান আমাদেরকে সেরা জাতি বানিয়েছিল, যে ঈমান দেশপ্রেমিক বানিয়েছিল। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন আমার কথা।’