হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের সাক্ষাৎকার:
বজ্রশক্তি: আপনাদের ব্যাপারে জনগণের মধ্যে একটি কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।
হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম: হ্যাঁ কৌতূহল থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ আমাদের বিরুদ্ধে বিগত তেইশ বছরে ব্যাপক অপপ্রচার করেছে প্রধানত দুটো শ্রেণি। একটি হচ্ছে ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণি। তারা জনগণের মধ্যে প্রচার করেছে যে আমরা নাকি খ্রিষ্টান। এজন্য সাধারণ মানুষের অনেকেই বিভ্রান্ত হয়েছেন। আরেকটি শ্রেণি হচ্ছে ইসলামবিদ্বেষী কিছু গণমাধ্যম। তাদের অপপ্রচারের প্রথম কারণ হচ্ছে, আমাদের নাম “হেযবুত তওহীদ”। এই যে নামটা- আরবি নাম। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে যারাই ইসলাম নিয়ে কাজ করছে তাদের সবাইকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে। তাছাড়াও আমাদের দলের নামের সঙ্গে আংশিক মিল আছে এমন কিছু দল বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ হয়েছে। অনেকেই নামের এই আংশিক মিলের কারণে আমাদের সঙ্গে সেসব দলকে গুলিয়ে ফেলেন। আর বর্তমানে ইসলামের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী একটি প্রচারণা চলছে, জঙ্গিবাদের ট্যাগ জুড়ে দিয়ে ইসলামভীতির সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি জঙ্গিবাদের প্রকোপে পড়ছে একটির পর একটি দেশ। এর ফলে মনে করা হচ্ছে যারাই ইসলাম নিয়ে কাজ করে তারা সবাই একটা সময়ে জঙ্গিবাদের দিকেই ধাবিত হবে। এটা একদম অন্যায়, অন্যায্য কথা। তাহলে ভালোমন্দের কোনো পার্থক্য পৃথিবীতে থাকতো না। বরং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে যেভাবে সোচ্চার ভূমিকা রাখছি আমাদের জানামতে এমন আন্দোলন পৃথিবীতে আর নেই। অথচ অনর্থক সন্দেহের বশবর্তী হয়ে এক শ্রেণির হলুদ সাংবাদিক আমাদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার বানোয়াট রিপোর্ট পত্রিকায় প্রকাশ করেছে। সকল শ্রেণির মানুষ সেসব পড়ে বিভ্রান্ত হয়েছে। অনেকে বসে আছে কবে হেযবুত তওহীদ নীতিভ্রষ্ট হবে আর অমনি তাকে রশি দিয়ে কষে ধরবে। কিন্তু তাদের এই আশা দিন দিন দুরাশায় পরিণত হবে। ইনশাল্লাহ তারা অচিরেই অন্য দৃশ্য দেখতে পাবে। সেটা হচ্ছে হেযবুত তওহীদ জাতিকে আলোর পথে ধাবিত করছে। এ জন্য আমরা ধৈর্যের সাথে তাদের সকল অপপ্রচার আর অপবাদের বোঝাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে মাঠে আছি, থাকবো। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের বই যারা পড়বেন, বক্তব্য শুনবেন যারা আমাদের সংস্পর্শে আসবেন তারা সকল ভুল ধারণা থেকে মুক্ত হবেন। এখন ফেসবুক খুব জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম। সেখানে অগণিত মানুষ আমাকে প্রতিদিন প্রশ্ন করছেন এবং সরাসরি আমার থেকেই হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে জেনে নিচ্ছেন, আমার বক্তব্য শুনছেন। কাজেই কৌতূহল আর বেশিদিন থাকবে না। হাজার হাজার মানুষ সত্যকে আলিঙ্গন করছে, আরো করবে।
বজ্রশক্তি: আমরা দেখতে পাই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আপনাদের কার্যক্রম অনেকটাই বিস্তৃত হয়েছে। সরকারি দলের নেতাকর্মীকে আপনাদের মঞ্চে বারবার দেখা গেছে। ফলে জনগণের মধ্যে একটি ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, বর্তমান সরকারের সাথে আপনাদের হয়ত কোন বোঝাপড়া হয়েছে। আসলে বিষয়টি কী?
হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম: জ্বী, অনেকেই আমাদের কার্যক্রম থেকে এমনটিই ধারণা করেন। কিন্তু পবিত্র কোর’আনে মহান আল্লাহ অধিক ধারণা করতে নিষেধ করেছেন কারণ অধিকাংশ ধারণাই মিথ্যা হয়। আপনি যদি বিশ্ব্বব্যবস্থার দিকে একটু দৃষ্টিপাত করেন তবে দেখবেন যে সারা বিশ্বে বর্তমানে যে সভ্যতা চালু রয়েছে সে সভ্যতাটি প্রচণ্ডরকম ইসলামবিদ্বেষী। এ সভ্যতাটি হচ্ছে রসুলাল্লাহর ভবিষ্যদ্বাণীর সেই দানব দাজ্জাল। এই সময়ে যখন আপনি মানুষের বর্তমান বস্তুবাদী জীবনধারার বিপরীতে একটি ভারসাম্যযুক্ত জীবনব্যবস্থা অর্থাৎ ইসলামকে তুলে ধরবেন তখন আপনি ব্যাপক বিরোধিতার সম্মুখীন হবেন, এটাই স্বাভাবিক। বামপন্থীরা আজও তাদের আদর্শ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করছে কিন্তু তাদেরকে এ ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে না। কারণ তারাও বস্তুবাদী সভ্যতারই একটি শাখা। আমরা অযথা হেনস্থার শিকার হয়েছি, বিনা কারণেই আমাদের হাজার হাজার সদস্য-সদস্যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, শত শত সদস্য-সদস্যাকে মিথ্যা-মামলার মাধ্যমে হয়রানীর শিকার হতে হয়েছে। এ কারণে আমরা নীতি নিয়েছি প্রথমে আমরা সরকারকে আমাদের সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান করবো, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমাদের বক্তব্য ও কার্যক্রম সম্পর্কে পূর্ণরূপে অবগত করবো, আমরা সরকারি দলের অন্তত মাঠপর্যায়ের নেতা-নেত্রীদের অবগত করবো। কারণ আমাদের কাজ জাতিকে নিয়ে, আর জাতির সঙ্গে কাজ করতে হলে যারা জনপ্রতিনিধি তাদেরকে সঙ্গে না নিয়ে উপায় নেই, তাদেরকে অন্ধকারে রেখে কাজ করার তো প্রশ্নই আসে না। রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত থাকেন, তারা যদি আমাদের সম্পর্কে সঠিক ও সুস্পষ্ট জ্ঞান না রাখেন তাহলে ষড়যন্ত্রকারীরা তাদেরকে ব্যবহার করে ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করতে পারে। আমরা মানবতার কল্যাণে নিবেদিত একটি অরাজনৈতিক আন্দোলন। বিগত ২৩ বছরে আমরা দেশের একটিও আইন অমান্য করি নি, কোন মানুষের ক্ষতি হয় এমন কোন কাজও করি নি। আমাদের প্রতিটি কর্মী মানবতার কল্যাণে ন্যায় প্রতিষ্ঠার কাজে অঙ্গিকারাবদ্ধ। আমরা সরকারকে এ বিষয়টিই বোঝানোর চেষ্টা করেছি। এ কারণেই সরকারি কর্মকর্তা এবং নেতাকর্মীদের আমাদের সভা, সেমিনার ইত্যাদি অনুষ্ঠানে দাওয়াত করি। যদিও তাদের মধ্যে অনেকেই আমাদের অনুষ্ঠানে আসেন না। এজন্য নির্দিষ্ট করে কোনো চুক্তি বা সমঝোতার প্রয়োজন হয় না। আমরা তো রাজনীতি করি না যে ক্ষমতার অংশীদারিত্ব নিয়ে দরকষাকষি করতে হবে।
বজ্রশক্তি: প্রগতিবাদী ও মুক্তচিন্তাশীল মানুষেরা প্রশ্ন করে থাকেন যে, ১৪শ’ বছর আগের একটি জীবনব্যবস্থা বর্তমানের এই অগ্রসর যুগের জীবনযাত্রা ও মনমানসিকতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো সম্ভব নয়। এর জবাবে আপনারা কী বলবেন?
হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম: দেখুন, তারা বর্তমানে ধর্মের যে রূপটি দেখতে পাচ্ছেন সে অনুযায়ী চিন্তা করলে তাদের ধারণা করাটাই স্বাভাবিক। যখন ইউরোপে রেনেসাঁ হলো, মানুষ যখন মুক্তির নতুন দিগন্তে পাখা মেলার প্রচেষ্টা করছিল, তখন ধর্মগুলোই ছিল তাদের জন্য বড় বাধা। নির্যাতিত, নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের পাশে সেদিন কোনো ধর্মই এসে দাঁড়ায় নি। ধর্ম কেবল চোখ রাঙিয়েছে, ফতোয়াবাজি করেছে। শ্রমিকশ্রেণীর অধিকার আদায়ের জন্য কমিউনিস্ট আন্দোলন যখন সোচ্চার হলো, ধর্মের ধারকবাহকেরা তখনও কোনো ভূমিকা রাখেন নি। আমেরিকার জনগণ যখন দাসত্ব ব্যবস্থার কারণে চরমভাবে নিষ্পেষিত হচ্ছিলো তখন ধর্ম এগিয়ে আসে নি তাদেরকে উদ্ধার করতে। উদ্ধার করতে আইন করেছিলেন আব্রাহাম লিঙ্কন। উল্টো ধর্মগুলো নানা রকম ফতোয়ার বেড়াজালে মানুষকে আবদ্ধ করে জনগণের কঠিন ও বাস্তব সমস্যাগুলোকে এড়িয়ে গিয়েছে। পরকালের সওয়াবের কথা বলে তারা মানুষেকে ইচ্ছেমতো পরিচালিত করার চেষ্টা করেছে এবং ধর্মগুরুরা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছে। কিন্তু মানুষের জীবন শুধু পরকাল নিয়ে নয়, প্রথমে তাকে ইহকাল নিয়ে চিন্তা করতেই হবে। প্রকৃত ইসলাম মোটেও এরকম ছিল না। ইসলাম একটি প্রাকৃতিক, যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত জীবনব্যবস্থা। মহান আল্লাহ একদিনে কোর’আন নাযিল করেন নি। আরবের সেই জাতির মধ্যে যখন রেনেসাঁ সৃষ্টি হলো, যখন তারা সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ন্যায়ের পথে ঐক্যবদ্ধ হলো তখন তাদের জাতীয়, সামাজিক, ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন বাস্তব ও জটিল সমস্যার সমাধানরূপে ধীরে ধীরে ২৩ বছর ধরে কোর’আন নযিল হলো। এর ফলে প্রতিষ্ঠিত হলো অকল্পনীয় শান্তিময়, স্বচ্ছল, শক্তিশালী, সুশিক্ষিত, সুসভ্য, পরিতৃপ্ত মানুষে পূর্ণ একটি নিরাপদ সমাজ।
সেই প্রকৃত ইসলাম যখন হারিয়ে গেল তখন ইসলমের অনুসারী অর্থাৎ মুসলিমদের দশাও হলো অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের মতোই। ধর্ম সীমাবদ্ধ হলো পরকালকেন্দ্রিক ব্যক্তিগত ধর্মকর্ম আর মসজিদ, মাদ্রাসা আর খানকায়। ধর্ম হয়ে গেল আনুষ্ঠানিক ও দিবসকেন্দ্রিক। তখন স্বাভাবিকভাবেই চিন্তাশীল মানুষগুলো ভাবতে লাগলো বিশ্বের মানুষকে সামাজিক সমস্যা, অর্থনৈতিক সমস্যা ও রাজনৈতিক সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে রক্ষার জন্য ধর্ম কোনো কাজে লাগবে না। কিন্তু আমাদের বক্তব্য হচ্ছে প্রকৃত ইসলাম অত্যন্ত যৌক্তিক এবং প্রাকৃতিক জীবনবিধান। যেমন আগুন প্রাকৃতিক। পৃথিবীর সর্বত্রই আগুনের ব্যবহার সমানভাবে প্রযোজ্য। তেমনি ইসলামও প্রাকৃতিক দীন যা দুনিয়ার প্রতিটি অঞ্চলে শান্তি সাম্য ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় সক্ষম। সেটা এখন কার্যকর নেই তাই এ ধরনের মন্তব্য করা হচ্ছে। আমাদের কাছে সেই প্রকৃত ইসলাম আছে। আমরা সেটার রূপরেখা বিস্তারিতভাবে বইপত্রে তুলে ধরেছি। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, এইবার ইনশাল্লাহ ইসলাম সম্পর্কে ঐসব মানুষের ধারণা পাল্টে যাবে।
বজ্রশক্তি: অনেকেই আপনাদেরকে ইসলামী দল হিসেবে মেনে নিতে চান না কারণ আপনাদের কর্মকাণ্ড এবং বেশভূষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে ইসলামের নামে চলা অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে কোনো মিল নেই। এই বাধাটি মোকাবেলা করে হেযবুত তওহীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে বা সমগ্রবিশ্বে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম: দেখুন, বর্তমানে মানুষের সামনে ইসলামের একটি নির্দিষ্ট ডাইমেনশান বা আকৃতি দাঁড়িয়ে গিয়েছে। ইসলাম মানেই পুরুষের মুখে দাড়ি, মাথায় টুপি ও গায়ে জোব্বা থাকবে এবং পড়াশোনা অবশ্যই মাদ্রাসাভিত্তিক, আরবিভিত্তিক হতে হবে। আর নারীদের ব্যাপারে তাদের চাওয়া হচ্ছে নারীদের কালো কাপড়ে বন্দী করে ঘরে বসিয়ে রাখতে হবে। নারীরা পুুরুষদের মতো সকল আর্থ-সামাজিক, সামরিক, জাতীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। বাসায় বসে নামাজ রোজা, কোর’আন পাঠ করবে, তসবিহ জপবে, সম্ভব হলে হজ্ব করবে। ব্যাস, ইসলামের কাজ শেষ। বর্তমানে ইসলামের চেহারা এমনই। রসুলে করিম (স.) সম্পর্কেও এদের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই এমন। আল্লাহর রসুলের কথা চিন্তা করলেই মনে ভেসে ওঠে একজন বয়স্ক মানুষের অবয়ব যাঁর হাতে লাঠি ও তসবিহ। গায়ে আরবি বেশভূষা। তিনি ঘুরে ঘুরে মানুষদের সদুপদেশ দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি যে দুর্দান্ত, দুর্বিনীত, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী প্রচণ্ড গতিশীল একটি জাতি সৃষ্টি করে ঝড়ের গতিতে যার নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেই বীরপুরুষের রুদ্রমূর্তি ভেসে আসে না।
কিন্তু এই যে একটি বিকৃত ধ্যানধারণা তাদের মাথায় জমাট হয়ে আছে, ইসলামের রূপ কিন্তু মোটেও এরকম ছিল না। আমরা হেযবুত তওহীদ, এটাই প্রমাণের চেষ্টা করছি যে শুধু মাদ্রাসায় পড়লে এবং নির্দিষ্ট লেবাস গ্রহণ করলেই একজন মানুষ ইসলামের কথা বলতে পারবেন এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। যে কোন সত্যনিষ্ঠ মানুষ এ সত্যকে তুলে ধরে পারেন। তারা যেভাবে ইসলামিক দলের একটি নির্দিষ্ট রূপ ও চেহারা ভেবে নিয়েছে তেমন কোন রূপ কোর’আন বা হাদিসে পাওয়া যায় না। বরং ইসলামের যে মৌলিক কনসেপ্ট তা হলো- আমরা কোন রকম অন্যায় করবো না, ধর্মের নামে ব্যবসা করবো না, ওয়াদার বরখেলাপ করবো না, আমানতের খেয়ানত করবো না, মানুষের জন্য, বিশ্বের মঙ্গলের নিজেকে উৎসর্গ করবো। ইসলামের এই মৌলিক শিক্ষা হেযবুত তওহীদ বাস্তবায়ন করছে। ইসলাম হচ্ছে এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে সকল ধর্মের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হবে। জীবনের মূলকে উপলব্ধি করতে পারবে। আমরা হেযবুত তওহীদ সেই দর্শনটিই মানুষের সামনে তুলে ধরছি। ইসলাম সেই প্লাটফর্ম যেখানে নারী পুরুষ সবাই সমানভাবে সকল কাজে অংশগ্রহণ করতে পারবে, যেখান সঙ্গীতচর্চার সুযোগ রয়েছে, যেখানে প্রতিটি মানুষের সুকুমার বৃত্তির বিকাশ হবে, যেখানে মানুষের প্রতিভার মূল্যায়ন হবে, মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা করতে পারবে, মুক্তচিন্তা করতে পারবে, প্রশ্ন করতে পারবে।
বর্তমানের কূপমণ্ডূক ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণির বিকৃত সংজ্ঞা ও চেহারাকে আমরা ভুল প্রমাণিত করেছি এবং প্রমাণ করে দিয়েছি যে এটা ইসলাম নয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লক্ষ লক্ষ মানুষ আমাদের এ কাজের সাধুবাদ জানাচ্ছে, আমাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। বিকৃত ধর্মের প্রভাব ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে আমাদের সমাজ থেকে। আমাদের সবচেয়ে বড় বিজয় হচ্ছে আমরা জনগণের ভালোবাসা পাচ্ছি। আমাদের বিরুদ্ধে বর্তমান ইসলামের ধ্বজাধারী ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণি অনেক অপপ্রচার চালিয়েছে এবং অতীতে সরকারগুলোও তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমাদের উপর নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়েছে। নয়তো আমরা এতদিনে আরো বেশি পরিমাণে অগ্রসর হতে পারতাম। অচিরেই দেখতে পাবেন, আমরা ইসলামের যে রূপ তুলে ধরছি সেটাই ইসলামের প্রকৃত রূপ।
বজ্রশক্তি: প্রায় প্রতিটি ইসলামী দল এবং আপনারাও বলে থাকেন যে রাষ্ট্রক্ষমতা ছাড়া ইসলাম প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়, আমার প্রশ্ন হচ্ছে বর্তমানে যে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রশক্তি রয়েছে তার প্রতি এ বিষয় আপনারা কী বার্তা দিতে চান?
হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম: হ্যাঁ, আমাদের এমামুয্যামান বলেছেন যে রাষ্ট্রশক্তি ছাড়া ইসলাম ইসলামই নয়। রাষ্ট্রক্ষমতা না থাকলে কোনো ব্যক্তি, সংগঠন বড়জোর উপদেশ দিতে পারে, অনুনয় বিনয় করতে পারে কিন্তু সেটা দিয়ে কখনই অন্যায়, অশান্তি, রক্তপাত দূর করা সম্ভব হয় না, কারণ ওসব দিয়ে অপশক্তির দমন করা সম্ভব হয় না। এর জন্য প্রয়োজন হলো আদর্শ এবং শক্তি। আদর্শ আমাদের কাছে রয়েছে এবং শক্তি রাষ্ট্রের থাকে। এখানে যদি কোন রাষ্ট্রব্যবস্থাই না থাকতো তবে আমাদের প্রয়োজন পড়তো একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করার। কিন্তু এখন তো তা নয়। এখানে একটি কাঠামো রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে, সরকার, আইন-আদালত রয়েছে। এখানে আমাদের কথা হচ্ছে, এই ব্যবস্থা এতদিন থেকে চলে এসেছে তা দিয়ে মানুষ শান্তি পায় নি। এখন বিকল্প চিন্তা করার সময় এসেছে, কারণ ভ্রান্ত জীবনবিধান দিয়ে, ভুল ব্যবস্থা দিয়ে শান্তি আসে না। আমরা এই ব্যবস্থার যারা নিয়ন্ত্রক তাদেরকে বলছি যে, আপনাদের কাছে শক্তি রয়েছে, কিন্তু শুধু শক্তি দিয়ে আপনারা সমস্যা সমাধান করতে পারছেন না। এর জন্য সঠিক আদর্শেরও প্রয়োজন রয়েছে। মানুষ শুধু দেহধারী নয়, তার আত্মাও রয়েছে। তাই মানুষকে এ শিক্ষা দিতে হবে যে সে কোনটা করবে এবং কোনটা থেকে বিরত থাকবে। আপনারা এ জীবনব্যবস্থা এতদিন ধরে অনুশীলন করছেন, মানুষকে সেটা দিয়ে পরিচালনা করছেন। কিন্তু জেনে রাখুন, এ ব্যবস্থা আপনাদেরকে শান্তি দিতে পারবে না। বরং প্রতিদিন নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হবে, মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বৃদ্ধি পাবে। কাজেই এ ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করুন। রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারা রয়েছেন তারা সেখান থেকেই এ ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চত করতে পারেন। আমরা তাদেরকে বলব কী উপায়ে শান্তি আসবে।
হ্যাঁ, আপনি এ কথা বলতে পারেন, যদি রাষ্ট্র আমাদের আদর্শ গ্রহণ না করে তখন কী করবেন? কিন্তু তখনও আমরা রাষ্ট্রের সাথে সংঘাত করতে পারি না। আমার দ্বিতীয় কর্তব্য হচ্ছে জনগণকে বোঝানো। কারণ জনগণের সম্মতিতেই রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে। আমরা জনগণের কাছে যাবো। জনগণ যদি বুঝতে পারে আমাদের বক্তব্য ন্যায়সঙ্গত, তাদের জন্য কল্যাণকর, তাহলে জনগণই চলমান এই ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটাবে, আল্লাহ দীনকে নিজেদের জীবনব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করবে। মনে রাখবেন, আর সবার মতো সন্ত্রাস সৃষ্টি করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য নয়, আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর সত্য দীন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে শান্তি, ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা যাতে সমাজের মানুষ সুখে জীবনধারণ করতে পারে। আমাদের কাজ হচ্ছে, মানুষের সামনে ন্যায়-অন্যায় স্পষ্টভাবে তুলে ধরা, মানুষকে এই কথা বোঝানো যে, মানুষ যদি তার স্রষ্টাপ্রদত্ত জীবনবিধান দিয়ে তাদের সামগ্রিক জীবন পরিচালনা করে তবেই তারা শান্তি পাবে। এই বক্তব্য মানুষ যতক্ষণ না বুঝবে ততক্ষণ জোর করে জবরদস্তি, হুমকি, ষড়যন্ত্র, অন্য কোনো হেকমত, কলাকৌশল কোনো কিছু দিয়ে লাভ হবে না। কারণ সমাজ, সভ্যতা মানুষেরই জন্য। কাজেই মানুষের চিন্তার জগতে আগে পরিবর্তন আনতে হবে। আর এই আদর্শিক লড়াইয়ের কাজটাই আমরা করে যাচ্ছি।
[সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন দৈনিক বজ্রশক্তির সম্পাদক এসএম সামসুল হুদা]