প্রতিটি সরকারেই পক্ষে-বিপক্ষে মতামত থাকবে এটা স্বাভাবিক। তথাপি আমরা অন্ততপক্ষে এটা বিশ্বাস করতে চাই যে, প্রতিটি সরকার অবশ্যই মানুষের শান্তি চায়। অন্ধভাবে কারো সমালোচনা করা আমাদের নীতি নয়, আমরা মনে করি, যে কোনো সরকারই স্বীয় জনপ্রিয়তা ও ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে হলেও দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা কায়েম রাখতে চায়। এ প্রসঙ্গে আমরা বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের, সুশীল এবং সচেতন মানুষদের এই কথাটিই বলতে চাচ্ছি যে, আপনারা যদি মানুষকে প্রকৃতই শান্তি দিতে চান তাহলে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নেই কাক্সিক্ষত শান্তি আসবে না। বরঞ্চ ষোলো কোটি মানুষকে একটি আদর্শভিত্তিক জাতিতে পরিণত করতে হবে। তাদেরকে এমন শিক্ষায় সুশিক্ষিত করতে হবে যাতে করে প্রতিটি মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হবে মানবতাবোধ, সহমর্মিতা, দেশপ্রেম, তারা হবে নৈতিক চরিত্রে বলিয়ান, সামাজিক কর্তব্যের প্রতি ন্যায়নিষ্ঠ, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যশীল, জাতীয় স্বার্থে আত্মবিসর্জনে সদাপ্রস্তুত। সেই শিক্ষা আমাদের সাধারণ বা মাদ্রাসা উভয় শিক্ষা ব্যবস্থায়ই অনুপস্থিত।
মাদ্রাসা থেকে লক্ষ লক্ষ আলেম বের হয়ে আসছেন আরবি ভাষা শিখে কিন্তু তারা প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা সেখান থেকে পান নি, তারা ইসলামের সাম্যের, ত্যাগের, পরমতসহিষ্ণুতার, ঐক্যের, মানবতার জন্য, দেশ ও সমাজের জন্য জীবন সম্পদ উজাড় করে দেয়ার শিক্ষা মাদ্রাসা থেকে পান নি। তারা কেবলই ব্রিটিশদের তৈরি করা সিলেবাসের উপর পড়াশুনা করে একটি বিকৃত ইসলাম শিখে সার্টিফিকেট হাসিল করছেন এবং স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক মোল্লা-পুরোহিত হয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন।
আর সাধারণ শিক্ষার মাধ্যমে বড় বড় সার্টিফিকেটধারী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজ্ঞ ইত্যাদি বের হয়ে আসছেন, কিন্তু সেখান থেকে দেশপ্রেমিক বের হচ্ছেন কতজন? ঐ শিক্ষায় শিক্ষিতদের মধ্যে দেশের কল্যাণে নিজের সর্বস্ব বিলীন করার মতো লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, বরঞ্চ দেশকে বিক্রি করে দিয়ে নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ উদ্ধার এবং বিদেশে গাড়ি বাড়ি করার প্রবণতা সম্পন্ন লোকেরাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তৈরি হচ্ছে। অপরের ধন শোষণ করে, জমিজমা দখল করে, প্রয়োজনে হত্যা করে, ষড়যন্ত্র করে, চূড়ান্ত দুর্নীতি করে, খাদ্যে বিষ, পণ্যে-ওষুধে ভেজাল মিশিয়ে ইত্যাদি যাবতীয় অপকর্মের মাধ্যমে কী করে আমি নিজে সমৃদ্ধ হবো, টাকা-পয়সা বা বৈষয়িক সম্পত্তিতে অন্য সকলকে টেক্কা দেব এই হলো অধিকাংশ শিক্ষিতদের একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান।
শিক্ষিতদের সম্পর্কে আমার এই মন্তব্যে ক্ষুদ্ধ হওয়ার কিছু নেই। কেননা, এটা হলো নেট রেজাল্ট, যেমন, “বৃক্ষ তোমার নাম কি? ফলেই পরিচয়।” ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে ব্রিটিশরা যে বৃক্ষ রোপন করেছিল, সে বৃক্ষ থেকেই এই ফল আমরা লাভ করছি। সুতরাং সেটা যে বিষবৃক্ষ তা আর ব্যাখ্যা করে বোঝাবার দরকার করে না। তারপরেও আমরা সেই বিষবৃক্ষকেই সার দিয়ে, পানি দিয়ে লালনপালন করে চলেছি, প্রতিবছর তার কাছেই সুমিষ্ট আমের আশা করছি। কারণ আমাদের বদ্ধমূল ধারণা হয়ে গেছে যে, এই বৃক্ষই অমৃত ফল দেবে, বর্তমানের বিষফলের জন্য দায়ী আমাদের পরিচর্যার ত্রুটি। অর্থাৎ আমাদের শিক্ষার হার আরো বাড়াতে হবে। আসলে এর বাইরে কোনো বিকল্পও এ সময়ে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। এদিকে পৈশাচিক, নিষ্ঠুর, নির্মম ঘটনাবলী দৈনিক ঘটে চলেছে। একটি ঘটনার রেশ কেটে যাওয়ার আগেই তার চেয়ে আরো নিষ্ঠুর আরেকটি ঘটনা ঘটছে। যেন নিষ্ঠুরতার প্রতিযোগিতায় নেমেছে মানবজাতি। দৈনিক পত্রিকার পাতায় এই সব খবরই মুখ্য। সমাজের চিন্তাশীল মানুষ আজ দিশেহারা, চোখে অন্ধকার দেখছে, কিন্তু পরিত্রাণের পথ খুঁজে পাচ্ছে না। সেই পথটি মানুষের সামনে তুলে ধরছে হেযবুত তওহীদ।
আমরা যে কথাটি বলতে চাই সেটা হলো, আপনারা যারা শাসন ব্যবস্থার উচ্চ পর্যায়ে আছেন, তাদের অনেকেই নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন, ধর্ম-কর্ম পালন করেন। আমরা অন্ধ সমালোচনাকারীদের মতো বলতে রাজি নই যে, আপনাদের এই সমস্ত উপাসনা-ইবাদত লোকদেখানো। আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে আপনারা সত্যিই ধর্মবিশ্বাস (ঈমান) ধারণ করেন, আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করেন। যেহেতু আপনারা আল্লাহতে বিশ্বাস করেন, সেহেতু অবশ্যই স্বীকার করবেন যে আল্লাহ এখানে এই ধর্মবিশ্বাসী জনগোষ্ঠির জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। আল্লাহ অতীতে যুগে যুগে কোন সমাজকে অন্যায়, অশান্তি, অর্থনৈতিক ও সর্বপ্রকার অবিচার থেকে রক্ষা করার জন্য মহামানব পাঠিয়েছেন এবং তাদের সাথে তাঁর পক্ষ থেকে সঠিক পথনির্দেশ (হেদায়াহ, Right direction) পাঠিয়েছেন, জ্ঞান (Knowledge) পাঠিয়েছেন। আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের উপর ভিত্তি করেই আজকের ধর্মগুলি দাড়িয়ে আছে, যদিও সেগুলোর শিক্ষার অনেকটাই বিকৃত হয়ে গেছে। সেই শাশ্বত অমোঘ সত্য বিধান, সেই দিকদর্শন, সেই প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা হেযবুত তওহীদের হাতে আছে, আল্লাহই তা দান করেছেন। হেযবুত তওহীদ জাতিকে সেই প্রকৃত শিক্ষা দ্বারা উদ্বুদ্ধ করতে চায়, ঐক্যবদ্ধ করতে চায় এই লক্ষ্যে যেন এদেশের মানুষের মধ্য থেকে সকল অনৈক্য, হানাহানি, অশান্তি, বৈষম্য দূর হয়। আল্লাহ যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর মাধ্যমে যে মহাসত্য জ্ঞান আমাদেরকে দান করেছেন সেটা আমরা নিঃস্বার্থভাবে জাতির খেদমতে কাজে লাগাতে চাই। আমরা কথা দিতে পারি, এই আদর্শ ও সত্য এ জাতিকে সকল অন্যায়, অবিচার থেকে মুক্তি দিয়ে ষোলো কোটি মানুষকে সোনার মানুষে পরিণত করতে সক্ষম হবে ইনশাল্লাহ।