হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

১৫ শাবান মহামান্য এমামুযযামানের জন্মদিন

ঈদুল ফেতর, ঈদুল আযহা, শবে কদর ইত্যাদি বড় বড় কয়েকটি পর্ব এবং উৎসবের পরেই আরেকটি বড় আনুুষ্ঠানিকতা মোসলেম সমাজে পালন করতে দেখা যায়, তা হলো শব-এ-বরাত। যদিও হাদীস ও ইতিহাসে শবে বরাত সম্বন্ধে বিস্তারিত কিছু পাওয়া যায় না, তবে এটুকু জানা যায় যে, রসুলাল্লাহ এই রাতে জাগ্রত থেকে নফল এবাদত কোরতেন এবং দিনে সওম থাকার জন্য বোলেছেন (মোসলেম)। যাই হোক, এটা সত্য যে এই রজনীকে অধিকাংশ মোসলেমই সৌভাগ্যরজনী হিসাবে পালন কোরছে। যে যেই কারণেই কোরুক আমাদের কাছে এই রজনীর তাৎপর্য্য এবং গুরুত্ব, মাহাত্ম্য আরও মহিমান্বিত হোয়েছে এই জন্য যে, এই পবিত্র রজনীতে হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা মহামান্য এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী এই ধরণীতে আবির্ভূত হন। আমরা পথহারা ছিলাম, গোমরাহ ছিলাম। আমরা তাঁর মাধ্যমে সত্যপথের সন্ধান পেয়েছি, আলোর পথ পেয়েছি জান্নাতের পথ পেয়েছি। যাঁর আবির্ভাবে দুনিয়া আলোকিত হয়, অন্ধকার দূর হয়, মানুষ মুক্তির পথ পায় তাঁর আবির্ভাব যে রজনীতে সেটা তো কেবল মোসলেম জাতির ভাগ্যরজনী নয়, সেটা সমস্ত মানবজাতির জন্য ভাগ্যরজনী। আল্লাহ তাঁকে দান কোরেছেন সেই হারিয়ে যাওয়া এসলামের প্রকৃত জ্ঞান, যে এসলাম তিনি তাঁর প্রিয় হাবীবকে (দ:) দান কোরেছিলেন। আল্লাহ বিরাট মো’জেজা ঘোটিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন যে, মাননীয় এমামুযযামান মানবজাতির জন্য তাঁর মনোনীত এমাম। তিনি এসলামের যে রূপ মানবজাতির সামনে উপস্থাপন কোরেছেন সেটা সত্য, হক। এবং তাঁর গঠিত আন্দোলন হেযবুত তওহীদ দিয়ে সারা পৃথিবীতে আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠিত হবে। যে মহান ব্যক্তির মাধ্যমে আল্লাহ এবলিসের দেয়া চ্যালেঞ্জে বিজয়ী হবেন, সমগ্র মানবজাতির মধ্যকার অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন, মারামারি, কাটাকাটি অর্থাৎ ফাসাদ ও সাফাকুদ্দিমা সম্পূর্ণভাবে দূরীভূত হোয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে, যে মহামানবের শিক্ষা সমস্ত ভৌগলিক বিভক্তি, সমস্ত প্রকার ভেদাভেদ ভুলে সমগ্র মানব জাতি একটি মাত্র জাতিতে পরিণত কোরবে, সেই এমামুযযামানের জন্মগ্রহণের ক্ষণটি সত্যিই বরকতময়, সেই রাত সত্যিই ভাগ্যরজনী, সেই রাত প্রকৃতপক্ষেই উৎসবের রাত, এবাদতের রাত।

যামানার এমামের ব্যক্তিজীবন:

ঐতিহ্যবাহী পন্নী জমিদার পরিবারের সন্তান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী। তাঁর পরিবারের স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাস ইতিহাসের পাঠকমাত্রই জানেন। সুলতানী যুগে এবং মোগল আমলে এ পরিবারের পূর্বপুরুষগণ ছিলেন অত্র এলাকার শাসক। এমন কি তারা দীর্ঘকাল বৃহত্তর বাংলার (তদানীন্তন গৌড়) স্বাধীন সুলতান ছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাস, শিক্ষা, সংস্কৃতির সঙ্গে এই পরিবারের কীর্তি এক সূত্রে গাঁথা। প্রাচ্যের আলীগড় ‘সা’দাত কলেজের’ প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ওয়াজেদ আলী খান পন্নী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্যোক্তা নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী ছিলেন এমামুযযামানের মায়ের দিকের পূর্বপুরুষ। এমামুযযামানের নিজেরও রোয়েছে এক কর্মময় বর্ণাঢ্য জীবন-ইতিহাস। তিনি ছিলেন সত্যের মূর্ত প্রতীক যিনি তাঁর সমগ্র জীবন সত্য সন্ধান এবং সত্যের জন্য লড়াই কোরে গেছেন। তাঁর ৮৬ বছরের জীবনে একবারের জন্যও আইনভঙ্গের কোন রেকর্ড নেই, নৈতিক স্খলনের কোন নজির নেই। আধ্যাত্মিক ও মানবিক চরিত্রে বলীয়ান এ মহামানব সারাজীবনে একটিও মিথ্যা শব্দ উচ্চারণ করেন নাই।
মাননীয় এমামুযযামান ১৫ শাবান ১৩৪৩ হেজরী মোতাবেক ১৯২৫ সনের ১১ মার্চ শেষ রাতে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব কাটে করটিয়ার নিজ গ্রামে। ১৯৪২ সনে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। কোলকাতার ইসলামিয়া কলেজে তাঁর শিক্ষালাভের সময় পুরো ভারত উপমহাদেশ ছিলো ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে উত্তাল আর কোলকাতা ছিলো এই বিপ্লবের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। আন্দোলনের এই চরম মুহূর্তে তরুণ এমামুযযামান আল্লামা এনায়েত উল্লাহ খান আল মাশরেকীর প্রতিষ্ঠিত ‘তেহরীক এ খাকসার’ নামক আন্দোলনে যোগ দিয়ে ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েন। সেই সুবাদে তিনি এই সংগ্রামের কিংবদন্তীতুল্য নেতৃবৃন্দের সাহচর্য লাভ করেন যাদের মধ্যে মহাত্মা গান্ধী, কায়েদে আযম মোহম্মদ আলী জিন্নাহ্, অরবিন্দু বোস, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি, সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদী অন্যতম। ছোট বেলা থেকেই তাঁর ছিল শিকারের শখ। শিকারের লোমহর্ষক সব অভিজ্ঞতা নিয়ে তাঁর লেখা ‘বাঘ-বন-বন্দুক’ (১৯৬৪) নামক বইটি খ্যাতনামা সাহিত্যিক ও সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত হয়। ক্রীড়াঙ্গনেও তিনি ছিলেন একজন অগ্রপথিক। ১৯৫৪ সনে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণের জন্য পাকিস্তান দলের অন্যতম রায়ফেল শুটার হিসাবে নির্বাচিত হন।
১৯৬৩ সনে এমামুযযামান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের সদস্য অর্থাৎ এম.পি. নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক। বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান আবু সাঈদ চৌধুরী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান খান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল এসলামসহ অনেক বরেণ্য ব্যক্তি তাঁর রোগীদের অন্তুর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ নজরুল একাডেমির একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তিনি ভারতীয় ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতের একজন বিশেষজ্ঞ ছিলেন। ১৯৬৩ সনে তিনি করটিয়ায় হায়দার আলী রেডক্রস ম্যাটার্নিটি এ্যান্ড চাইল্ড ওয়েলফেয়ার হসপিটাল প্রতিষ্ঠা করেন যার দ্বারা এখনও উক্ত এলাকার বহু মানুষ উপকৃত হোচ্ছেন। পরবর্তীতে তিনি সা’দাত ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন নামে প্রতিবন্ধী শিশুদের উন্নয়নের জন্য একটি দাতব্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।
ছোটবেলায় যখন তিনি মোসলেম জাতির পূর্ব ইতিহাসগুলি পাঠ করেন তখনই তাঁর মনে একটি প্রশ্ন সৃষ্টি হয়। তিনি মোসলেম জাতির অতীতের সাথে বর্তমান অবস্থার এই বিরাট পার্থক্য দেখে তিনি ভাবতে থাকেন যে কিসের পরশে এই জাতি ১৪০০ বছর পূর্বে শিক্ষায়, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, সামরিক শক্তিতে, ধনবলে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিমান, জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি অঙ্গনে অগ্রণী জাতিতে পরিণত হোয়েছিল, আর কিসের অভাবে আজকে তারা দুনিয়ার সবচেয়ে হতদরিদ্র ও অশিক্ষা-কুশিক্ষায় জর্জরিত, সব জাতির দ্বারা লাঞ্ছিত এবং অপমানিত? মহান আল্লাহ ধীরে ধীরে তাঁকে এই প্রশ্নের জবাব দান কোরলেন। ষাটের দশকে এসে তাঁর কাছে বিষয়টি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হোয়ে ধরা দিলো। মানবজাতির সামনে এই মহাসত্য তুলে ধরার জন্য বই লিখেন এবং ১৯৯৫ সনে হেযবুত তওহীদ আন্দোলনের সূচনা করেন। ১৬ জানুয়ারী ২০১২ ঈসায়ী এই মহামানব প্রত্যক্ষ দুনিয়া থেকে পর্দাগ্রহণ করেন।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...