হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

হেযবুত তওহীদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সম্মেলন ’১৮ অনুষ্ঠিত

মানবতার কল্যাণে নিয়োজিত অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদ আন্দোলনের সারাদেশের জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে আজ শুক্রবার এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও কলেজ মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানটি শুরু হয় সকাল ১০টায়। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘আল্লাহতে যার পূর্ণ ঈমান, কোথা সে মুসলমান’ শীর্ষক দলীয় সংগীতটির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর ‘যামানার এমাম, এমামুযযামান, তোমায় জানাই মোরা হাজার সালাম’ সংগীতের মাধ্যমে আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীকে স্মরণ করা হয়। পরবর্তীতে মাননীয় এমামুযযামানের জীবনীর উপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্রও প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের সাধারণ সম্পাদক মো. মশিউর রহমান। উদ্বোধনী বক্তব্য শেষে আগত অতিথিদের সাথে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় এবং হেযবুত তওহীদ আন্দোলনের শহীদদের উপর একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
এক পর্যায়ে নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানার পোরকরা গ্রামে শাহাদাতবরণকারী শহীদ খোকনের পিতা ও মাদারীপুর জেলার কালকিনিতে শাহাদাতবরণকারী শহীদ সাইফুল্লাহর ভাই সানাউল্লাহ নূরী বক্তব্য প্রদান করেন। পরবর্তীতে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন মাননীয় এমামুযযামানের সহধর্মিনী শ্রদ্ধেয়া খাদিজা খাতুন। সকাল ১১টা ২০ মিনিটে বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। বক্তব্য শেষে মধ্যাহ্ন বিরতিতে দুপুরের খানা ও সালাত অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয়ার্ধে আবারো দায়িত্বশীলদের উদ্দেশে বক্তব্য দিতে মঞ্চে ওঠেন আন্দোলনটির প্রধান হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।

এ সময় হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম দায়িত্বশীলদের প্রতি দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। তিনি হেযবুত তওহীদ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত সদস্যদের অবস্থান ও মর্যাদা তুলে ধরেন এবং সেই অনুসারে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দায়িত্বশীলদের একটি কথা ভালোভাবে উপলব্ধি করতে হবে যে বিশ্বজুড়ে একটি আদর্শের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবী এখন ধ্বংসের প্রান্তে। যে কোনো সময় লেগে যেতে পারে ভয়াবহ যুদ্ধ। এই সংকট দূর করার জন্যই হেযবুত তওহীদকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। আর আগামী পৃথিবীকে নেতৃত্ব দিতে হবে এই আন্দোলনের নেতা-কর্মীদেরকেই। তাই তাদেরকে সেই যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। তিনি বলেন, দায়িত্বশীলদের জান-মালের উপরে আল্লাহর হক বেশি। তাই যেকোনো আহ্বানে দায়িত্বশীলগণ আগে সাড়া দিবে, অনুসারীরা তাঁদেরকে সে মোতাবেক অনুসরণ করবে।
তিনি বলেন, মোনাফেকরা যতই ঘাপটি মেরে থাকুক না কেন, তাদের চেহারা আল্লাহই প্রকাশ করে দেবেন। প্রকৃত মোমেন কখনও জাহান্নামে যাবে না। কাজেই এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। শুধু সতর্ক থাকবে হবে যেন মোনাফেকরা আন্দোলনের কোনো ক্ষতি করতে না পারে। অন্যদিকে এমামের হুকুম না মানলে কোনোদিন চরিত্র হবে না। হুকুম না মানার কারণেই ইবলিস বহিষ্কৃত হয়েছিল। দায়িত্বশীলগণ একদিকে হবেন লোহার মতো শক্ত, অন্যদিকে হবেন কুসুমের মতো কোমল। দায়িত্বশীলগণ হবেন অনুসারীদের জন্য ঢাল-স্বরূপ। সকল দায়িত্বশীলগণ তার এলাকায় ব্যাপকভাবে পরিচিতি অর্জন করবেন যেন একনামে এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সবাই তাঁকে চিনতে পারে। রসুলাল্লাহ কর্তৃক নিয়োজিত দায়িত্বশীলগণ সকল ক্ষেত্রে আগে ঝুঁকি নিয়েছেন- একথা স্মরণে রাখতে হবে। হাশরের দিন দায়িত্বশীলগণ আনুগত্য না করে কেউ জান্নাতে যাবে না। কানকাটা, নিগ্রো, ক্রীতদাস, ক্ষুদ্রমস্তিষ্ক ইত্যাদি হলেও দায়িত্বশীলদের আনুগত্য করতে হবে এ কথা বলার অর্থ হচ্ছে এমন কোনো অসিলা দাঁড় করানো যাবে না যা দিয়ে আনুগত্য থেকে বিরত থাকা যায়। দায়িত্বশীলগণের আনুগত্য করতে পারলে অনুসারীরা পূর্ণ প্রতিদান পেয়ে যাবেন। হুকুম ভুল কি শুদ্ধ সেটার জন্য সে দায়ী হবে না। এ বিষয়ে দায়িত্বশীলকে দায়ী করা হবে।

তিনি যোগ করেন, ঐক্য-শৃঙ্খলা-আনুগত্য এই তিনের সমন্বয়ে বজ্রশক্তি। বজ্রশক্তি সম্পন্ন জাতি ছাড়া কোনোদিন সত্যদীন প্রতিষ্ঠিত হবে না। আর আল্লাহর রাস্তায় দানের ব্যাপারে একজন দায়িত্বশীলগণকে হতে হবে আবু বকরের (রা.) মতো উদার, জাতির সম্পদ রক্ষার্থে ওমরের (রা.) ন্যায়নিষ্ঠ, খালেদের (রা.) মতো দুর্ধর্ষ যোদ্ধা, দীন প্রচারের ক্ষেত্রে আলীর (রা.) মতো সাহসী, আবু ওবায়দার (রা.) মতো নির্লোভ, মুগিরা বিন শোবার (রা.) মতো বুদ্ধিমান। রসুল নিজ হাতে সত্যদীন দিয়ে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম আমির তৈরি করে গিয়েছিলেন।
আন্দোলনটির নেতৃত্বদানকারীদেরকে সাবধান ও সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, কোনো নবী-রসুলের সময় দাজ্জালের অস্তিত্ব ছিল না। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শত্রুকে আমরা মোকাবেলা করছি। তাই সাধারণ ঈমান দিয়ে, সাধারণ কোরবানি দিয়ে এই কাজ করা সম্ভব নয়। যারা সালাতের ব্যাপারে গাফেল তারা কখনোই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারবে না। কারণ সালাহ ছাড়া চরিত্রই হবে না। সালাহ হচ্ছে চরিত্র গঠনের ছাঁচ, ডাইস। দাজ্জাল সমস্ত মানবজাতিকে আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর বানিয়েছে। তওহীদ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে শুধু মানবতার কল্যাণকামী বানায়। মানুষের মনের এতবড় পরিবর্তন সাধন চাট্টিখানি কথা নয়। এই কাজে যারা নিজেদেরকে ব্রতী করবে তাদের অবশ্যই স্টিলের তলোয়ারের মতো চরিত্র লাগবে। অস্ত্র ও ক্ষমতা মানুষের অহংকার জন্ম দেয়। এর অপব্যবহারই আজ দুনিয়া ধ্বংসের কারণ। ক্ষমতার অপব্যবহার মানুষকে অন্ধ কোরে দেয়। যখন মানুষ মনে করে সে জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে তখন সে অন্যায় করতে থাকে। একটা পর্যায়ে সে ধ্বংস হয়ে যায়।
ঐক্যের প্রতি জোর দিয়ে তিনি বলেন, মতভেদ কুফর। এতে জাতি ধ্বংস হয়, কাফেররা বিজয়ী হয়। ঐক্যবদ্ধ হতে হলে, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হলে বহু বিষয়ে ছাড় দিতে হয়, কোরবানি করতে হয়। স্বার্থপর, সংকীর্ণ, আত্মকেন্দ্রিক লোকদের দিয়ে তাই ক্ষুদ্র পরিসরেও ঐক্যবদ্ধ থাকা সম্ভব নয়, মহাজাতি গঠন তো দূরের কথা।
মো’মেনদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, ইচ্ছা করে দরিদ্রতা অবলম্বন করা দীনের নীতিবিরুদ্ধ। তবে মো’মেন সব সময় অল্পে তুষ্ট থাকে। এই অল্পে তুষ্টির অর্থ হলো সর্ব উপায়ে উপার্জনের চেষ্টা করা এবং নিজের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের পর বাকি সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দেওয়া। সক্ষমতা থাকা সত্তে¡ও অলসতা করে দারিদ্র্য অর্জন অল্পে তুষ্টি নয়। দায়িত্বশীলদের দায়িত্ব সাংঘাতিক। তাদেরকে সদস্যদের দুঃখ কষ্ট দেখতে হয়, খোঁজ খবর নিতে হয়। দায়িত্বশীলদেরকে অনুসারীরা সচেতন বা অবচেতনভাবে অনুকরণ করে। সুতরাং দায়িত্বশীলগণকে সেটা বুঝে নিজেদের জীবন পরিচালিত করতে হবে। দায়িত্বশীলগণ ঢিলা হলে মুজাহিদ ঢিলা হবে, দায়িত্বশীলগণ শক্ত হলে মুজাহিদ শক্ত হবে, আমির ভীতু হলে মুজাহিদ ভীতু হবে, দায়িত্বশীলগণ সাহসী হলে অনুসারীগণ সাহসী হবে, দায়িত্বশীলগণ দায়িত্ববান হলে অনুসারীরা দায়িত্ববান হবে, দায়িত্বশীলগণ যদি দায়িত্বজ্ঞানহীন হয়, অনুসারীগণও দায়িত্বজ্ঞানহীন হবে।
নারীদের ব্যাপারে তিনি বলেন, নারীদের সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে সে বিষয়ে কোনো মোল্লা পুরুত নয়, সমাজের চলমান পরম্পরাও নয়, রসুলাল্লাহর সুন্নাহই আমাদের পথ দেখাতে যথেষ্ট। রসুল সকল কাজে নারীদেরকে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছেন। তিনি কোনো অবস্থাতেই নারীদেরকে বাক্সবন্দী হতে দেন নি। প্রত্যেক দায়িত্বশীলের নারীদের সম্পর্কে এই দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, ধর্মব্যবসায়ীরা একটি গণ-অসন্ত্বোষ ও সহিংসতা সৃষ্টি করার জন্য মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নেয়। এ থেকে নিস্তার লাভের একটা মাত্র উপায়, সেটা হলো আমাদের বক্তব্য ব্যাপকভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
আন্দোলনের সার্বিক অবস্থা ও করণীয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা শেষে আগামী পৃথিবীর গতি প্রকৃতি অনুযায়ী নেতা-কর্মীদের কাক্সিক্ষত চরিত্র, যোগ্যতা, সুস্থ্যতা, ইত্যাদি বৃদ্ধির জন্য মহান আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে প্রার্থনা করে অনুষ্ঠানটির সম্পাপ্তি ঘটে।

অনুষ্ঠানের ভিডিও চিত্র


 
 

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...