হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

রামরাজত্ব এবং এসলামের স্বর্ণযুগ

রিয়াদুল হাসান:
বিষ্ণুর সপ্তম অবতার রাম প্রায় দশ হাজার বছর আগে ভারত শাসন কোরতেন বোলে শাস্ত্রজ্ঞরা মনে করেন। তাঁর জীবন, মহিমা এবং শিক্ষা আজও মানুষের হৃদয়ে জাগ্রত আছে এবং তাঁর সুকীর্তিগাঁথা নিত্য আলোচিত হোচ্ছে। অযোধ্যারাজ রাম ব্যতীত এত প্রাচীন কোনো নৃপতির জীবনকাহিনী খুব কমই কীর্তিত হয়। “রামরাজ্য” শব্দটির মধ্যে বর্তমানে অনেকে সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ খুঁজে পেলেও প্রকৃতপক্ষে শান্তিময় পৃথিবীর সমার্থক হিসাবেই ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বত্র এ শব্দটি বাগধারা হিসাবে মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়। বর্তমানে এ শব্দটি সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বক্তৃতায় এমন কি নির্বাচনী এশতেহারেও। তারা অনেকেই একবিংশ শতাব্দীতে ভারতকে রামরাজ্যে পরিণত কোরতে প্রতিশ্র“তি দিয়ে থাকেন। সনাতন ধর্মবিশ্বাসমতে কলিযুগের অন্ত্যে আরেকবার সত্যযুগের আবির্ভাব হওয়ার কথা। অনেক ভারতীয় জ্যোতিষ ভবিষ্যদ্বাণী কোরেছেন যে সে সময় অত্যাসন্ন। সে যাই হোক, মোদ্দা কথা হোচ্ছে ১০ হাজার বছর পরও রামরাজত্বের ন্যায় একটি শান্তিময় রাষ্ট্রব্যবস্থা মানুষের কাছে অতি আকাক্সিক্ষত বস্তু। রামায়ণের বর্ণনামতে, রামরাজ্যে বাঘ ও ছাগল একসঙ্গে জলপান কোরত। সমস্ত মানুষ কেউ কারও শত্র“ ছিল না। সবাই ধর্মের বিধান সম্পর্কে জানতো, ধর্ম কেবল পুরোহিতদের কুক্ষীগত ছিল না। ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে ধনী ও দরিদ্রের কোন পার্থক্য ছিল না। রাজ্যের নামই হোয়েছিল অযোদ্ধা অর্থাৎ যেখানে কোন যুদ্ধ নেই। শিক্ষকের মর্যাদা ছিলো সবার ঊর্ধ্বে শাস্ত্রের শিক্ষা হোচ্ছে, “রাজা যদি দরিদ্র ও অসহায় মানুষের কষ্টগুলির অভিজ্ঞতা লাভ না করে, তাহোলে সে কখনোই ভাল শাসক হোতে পারবে না।” এই জন্য রামচন্দ্র আর লক্ষণ অতি দূরবর্তী স্থানেও পায়ে হেঁটে চলাচল কোরেছেন, ঘোড়ায় বা রথে চোড়ে যান নি। কেবল মানুষ নয়, পশুও তার অধিকার ভোগ কোরত, তাদের প্রতি কেউ কোন অন্যায় কোরলে বা তারা কোন ক্ষতির আশঙ্কা কোরলে রাজার দরবারে গিয়ে হাজির হোত। শাস্ত্রে বলা ছিলো, রাজাই প্রজার দুঃখ-কষ্টের কারণ। তাই প্রতিটি মানুষ তাদের জীবনে যে কোন দুঃখ দুর্দশা আসলে তারা সরাসরি রাজার কাছে জবাব চাইতো। একজন মানুষও অপঘাতে মোরত না। প্রতিটি মানবশিশু হোত সুন্দর। প্রতিটি মানুষ দীর্ঘজীবন লাভ কোরত। মহামূল্যবান রতœ, মণি-মাণিক্যও দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত হোত, নারী-পুরুষ উভয়েই প্রচুর অলঙ্কার পরিধান কোরত। থালা বাসন তৈরি করার জন্য কেবল স্বর্ণই ব্যবহৃত হোত। এই শান্তি প্রকৃতির উপরও প্রভাব বিস্তার কোরেছিল। প্রকৃতি গাছপালা ফুলে ফলে পরিপূর্ণ ছিল। বছরের বারো মাসেই প্রচুর ফসল উৎপন্ন হোত। যখন যেখানে বৃষ্টি দরকার তখন সেখানে বৃষ্টিপাত হোত, যেখানে দরকার নেই সেখানে কখনও বৃষ্টিপাত হোত না। সূর্য কখনোই মানুষের জন্য কষ্টদায়ক অবস্থা সৃষ্টি কোরত না। সবসময় নির্মল বাতাস মৃদুমন্দবেগে প্রবাহিত হোত। এই ছিলো রামরাজ্য (দেখুন: স্বামী করপাত্রী মহারাজ এর ‘মার্কসবাদ ও রামরাজ্য’)।
“রামরাজ্য” শব্দটি আজ একটি সাম্প্রদায়িক শব্দে পরিণত হোয়েছে অথচ মহাত্মা গান্ধী বোলেছিলেন, “দেশ স্বাধীন হোলে রামরাজত্ব ফিরে আসবে।” তিনি বলেন, “Let no one commit the mistake of thinking that Ram Rajya means a rule of Hindus. My Ram is another name for Khuda or God. I want Khuda Raj which is the same thing as the Kingdom of God on Earth.” অর্থাৎ কেউ যেন ভুলেও না ভাবে যে রামরাজ্য মানে হিন্দুর শাসন। রাম খোদা বা ঈশ্বরের অপর নাম। আমি প্রকৃতপক্ষে চাই খোদারাজ যা পৃথিবীর বুকে ঐশ্বরিক রাজত্বের নামান্তর। (২৬ ফেব্র“য়ারি, ১৯৪৭ তারিখে প্রদত্ত ভাষণ)
দেশ স্বাধীন হোয়েছে কিন্তু রামরাজ্য আসে নি। উপরন্তু পশ্চিমা প্রভুরাষ্ট্রগুলির ইন্ধনে আমরা আজও ভাইয়ে ভাইয়ে দাঙ্গা কোরে যাচ্ছি, রাজনীতির নামে হানাহানি কোরে নিজেরাই নিজেদেরকে রক্তাক্ত কোরছি। তবুও শেষ আশ্রয় হিসাবে সেই ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রেরই বন্দনা কোরে যাচ্ছি। আর কত মানুষ মরলে, আর কত রক্ত ঝরলে আমাদের বোধদয় হবে যে, এটা শান্তির পথ নয়?
স্রষ্টা যুগে যুগে তাঁর বার্তাবাহকদেরকে পৃথিবীর প্রতিটি জনপদে প্রতিটি ভাষাভাষী মানুষের কাছে প্রেরণ কোরেছেন (সুরা এব্রাহীম-৫)। তাঁদের কাছে যে বিধান তিনি দিয়েছেন সেটা ঐ সময়ের ঐ এলাকার মানুষের জন্যই প্রযোজ্য। যেমন উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, বিধবাদেরকে সূর্যোদয়ের সময় øান কোরতে হয়। এই বিধান ভারতবর্ষের আবহাওয়ায় মেনে চলা গেলেও মরু বা মেরু অঞ্চলে কি মানা সম্ভব? সুতরাং সে অঞ্চলগুলিতে আল্লাহ অবশ্যই ভিন্ন বিধান দিয়েছেন। কিন্তু বিধানের মধ্যে স্থান-কাল-পাত্রভেদে কিছুটা তারতম্য হলেও ধর্ম কিন্তু আলাদা নয়। সকল নবী-রসুল-অবতারদের মূল কথা একটাই- একমেবাদ্বীতিয়ম, কেবলমাত্র একজনের বিধানই আমরা মানবো। নবীদের বিদায় নেওয়ার পর তাঁদের অনুসারীদের মধ্য হোতে অতি ভক্তিবাদী শয়তান প্রকৃতির মানুষ নিজেদের স্বার্থে ধর্মের বিধানকে বিকৃত কোরে ফেলেছে, আল্লাহর বিধানের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মনগড়া বিধানও প্রবেশ
কোরিয়ে দিয়েছে। এ নিয়ে সৃষ্টি হোয়েছে দলাদলি, মতভেদ। এভাবে ধর্ম দূষিত হোয়ে সাধারণ মানুষের জন্য নিপীড়নের কলে পরিণত হোয়েছে। এ থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্যই আল্লাহ তাঁর রসুলগণকে কেতাব ও ন্যায়নীতিসহ প্রেরণ কোরেছে যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে (সুরা হাদিদ ২৫)।” সনাতন ধর্মমতে এটাই হোচ্ছে অবতার আগমনের উদ্দেশ্য। পবিত্র গীতায় শ্রীকৃষ্ণ তাঁর সখা অর্জুনকে বোলছেন:
হে ভারত! যখনই ধর্মের অধঃপতন হয় এবং অধর্মের অভ্যুত্থান হয়, তখন আমি নিজে শরীর ধারণ কোরে অবতীর্ণ হই। আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হোয়ে সাধুদিগের পরিত্রাণ, দু®কৃতকারীদের বিনাশ এবং ধর্ম সংস্থাপন কোরি। শ্রীগীতা ৪:৭/৮।
কিন্তু যখনই কোন নতুন অবতার আল্লাহ পাঠিয়েছেন, পুরাতন ধর্মের পুরোহিতরা তাদের বিরোধিতায় অবতীর্ণ হোয়েছেন। তাদের কারণে অনেক মানুষ নতুন অবতারদের চিনতে পারে নি, তারা তাদের বাপ-দাদার বিকৃত ধর্মকেই ধারণ কোরে থেকেছে। ফলে সৃষ্টি হোয়েছে নতুন একটি ধর্ম। বিষ্ণুর অবতার বুদ্ধ এসে যখন সনাতন ধর্মের সংস্কার সাধনে ব্রতী হোলেন, তখন ব্রাহ্মণরা তাঁর প্রচণ্ড বিরোধিতা করেন। ফলে বৌদ্ধ ধর্মের সৃষ্টি হয়। বুদ্ধ তাঁর সকল শিক্ষাকে চূড়ান্ত বা চিরকালীন বোলে মানতেন না, তিনি তার শিক্ষার অনিত্যতা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। তিনি বোলেছিলেন, ‘আমার উপদেশিত ধর্ম নৌকার মত, পারে পৌঁছানোর জন্য, ঘাড়ে করে বয়ে চলার জন্য নয়’ (মজ্ঝিম নিকায়)। স্বামী বিবেকানন্দ বলেন, “যীশুখ্রিস্ট ইহুদি ছিলেন ও বুদ্ধদেব হিন্দু ছিলেন। বুদ্ধদেব নতুন কিছু প্রচার করিতে আসেন নাই। যীশুর মতো তিনিও পূর্ব ধর্মমতকে পূর্ণ করিতে আসিয়াছিলেন, ধ্বংস করিতে আসেন নাই।” [১৮৯৩ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর শিকাগোতে অনুষ্ঠিত বিশ্বধর্ম মহাসভায় প্রদত্ত বক্তৃতা]।
এভাবেই মানবসভ্যতা হাজারো বিবর্তনের মধ্যে চোলতে চোলতে এমন একটি যুগসন্ধিক্ষণ উপস্থিত হোল যখন পৃথিবীর জনপদগুলির মধ্যে মোটামুটি একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টি হোল, তাদের মানসিক অগ্রগতি এমন একটি পর্যায়ে এসে পৌঁছালো যে তাদেরকে এক জাতিতে পরিণত করা সম্ভব, তখন আল্লাহ শেষ অবতার হিসাবে পাঠালেন মোহাম্মদকে (দ:)। তাঁর সঙ্গে আল্লাহ দিলেন এমন একটি প্রাকৃতিক জীবনব্যবস্থা যা পৃথিবীর সকল অঞ্চলের মানুষের জন্য সমানভাবে প্রয়োগযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য। আল্লাহ তাঁকে দায়িত্ব দিলেন সমগ্র পৃথিবীর মানবজাতিকে শেষ জীবনব্যবস্থার অধীনে নিয়ে আসতে। এ জন্য তাঁকে অনেক যুদ্ধ কোরতে হোয়েছে। তিনিই হোচ্ছেন কলিযুগে বিষ্ণুর সর্বশেষ অবতার কল্কি অবতার। সনাতন ধর্মগ্রন্থে তাকে ‘মায়াপ্রবর্তিনম’ বা ধর্ম সংস্কারক, মরুস্থল নিবাসিনম, নরাশংস, কীরি, মামহ ঋষি, অন্তিম ঋষি, মহাজন, জগ˜গুরু ইত্যাদি গুণবাচক নামে অভিহিত করা হোয়েছে। কল্কি পুরাণে তাঁর সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা পাওয়া যায়। ভবিষ্যপুরাণের একটি শ্লোকে তাঁর পবিত্র নাম ‘মোহাম্মদ’ পর্যন্ত উল্লেখ আছে।
এতস্মিন্নন্তিরে ম্লেচ্ছ আচার্যেন সমন্বিতঃ।
মহামদ ইতিখ্যাতঃ শিষ্যশাখা সমন্বিত।।
নৃপশ্চৈব মহাদেবং মরুস্থল নিবাসিনম।
চন্দনদিভির ভ্যর্চ্য তুষ্টাব মনসা হরম।।
Ñ(৩ ঃ ৩ ঃ ৩, ৫-৮ শ্লোক)
যেখানে বলা হোয়েছে যে, যথাসময়ে ‘মহমদ’ নামে একজন মহাপুরুষ আবির্ভূত হবেন, যাঁর জন্ম হবে আচার্য পরিবারে, যাঁর নিবাস ‘মরুস্থলে’, সাথে স্বীয় সহচরবৃন্দও থাকবেন। হে মরুর প্রভু! হে জগতগুরু। আপনার প্রতি আমাদের স্তুতিবাদ।” শেষ রসুল মোহাম্মদ (দ:) মরুভূমির দেশ আরবেই এসেছেন এবং তাঁর পিতৃবংশ কোরায়েশ ছিল আরবের আচার্য অর্থাৎ পুরোহিত বংশ। সামবেদে রসুলাল্লাহর ‘আহমদ’ নামটি সরাসরি আছে।
অহমিদ্ধি পিতু¯পরি মেধামৃতস্য জগ্রহ।
অহং সূর্য ইবাজনি॥
সামবেদ: ঐন্দ্রকাণ্ড, মন্ত্রঃ (১৫২)
বলা হোয়েছে, আহমদ প্রভুর নিকট হোতে জ্ঞানপূর্ণ ঐশীগ্রন্থ (মেধামৃত) লাভ কোরেছেন। বিশ্বজগত যেমন সূর্যের নিকট হোতে আলোক লাভ করে, তেমনি বিশ্বমানব তাঁর নিকট থেকে জ্যোতি লাভ কোরেছে।” অর্থাৎ তিনি কোন আঞ্চলিক নবী নন, সমস্ত মানবজাতির নবী (সুরা সাবা ২৮), সমগ্র বিশ্বমানবকে আলো দেওয়ার জন্য যিনি এসেছেন। এজন্য আল্লাহ তাঁকে সিরাজুম মুনিরা বা উজ্জ্বল আলোকময় প্রদীপ বোলে আখ্যায়িত কোরেছেন (সুরা আহযাব ৪৬)। পুরাণে এও বলা আছে,
আশ্বমাশু গারুহ্য দেবদত্তং জগৎ পতিঃ।
অসিনাসাধু দমন মষ্টৈশ্বার্য গুণান্বিতঃ।
(ভাগবত পুরাণ-১২:২:১৯)
কল্কি অবতার দেবতা প্রদত্ত অশ্বে আরোহণ করিবেন এবং তরবারি দ্বারা দুষ্টের দমন করিবেন। এসব বর্ণনা অবলম্বনে ভারতের বিভিন্ন মন্দিরে কল্কি অবতারের মূর্তি চিত্রিত বা ক্ষুদিত আছে যাতে কল্কী অবতারকে বীর বেশে একটি সাদা ঘোড়ায় আরোহিত অবস্থায় দেখানো হোয়েছে। আল্লাহর শেষ রসুল দেবতাদের সর্দার জিব্রাঈল এর আনীত একটি সুন্দর সাদা ঘোড়ায় মেরাজ ভ্রমণ কোরেছিলেন। এছাড়াও তাঁর প্রিয় প্রাণী ছিল ঘোড়া। তাঁর সাতটি ঘোড়া এবং নয়টি তরবারি ছিল।
আল্লাহর শেষ রসুল এবং তাঁর জাতি কঠোর সংগ্রাম কোরে ৬০/৭০ বছরের মধ্যে অর্ধ পৃথিবীতে ধর্মের শাসন প্রতিষ্ঠা কোরতে সক্ষম হোয়েছিলেন। তারপরে আবারও ঘোটলো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। তাঁর জাতির মধ্যেও প্রবেশ কোরল বিকৃতি। ফলে তারা সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ত্যাগ কোরে রাজা বাদশাহ হোয়ে ভোগবিলাসপূর্ণ জীবনযাপন কোরতে লাগলেন। কিন্তু জীবনব্যবস্থা অর্থাৎ আইন, কানুন, অর্থনীতি, দণ্ডবিধি আল্লাহরটাই মোটামুটি চালু রাখলেন। আল্লাহর দেওয়া এই জীবনব্যবস্থার নিশ্চিত ফলাফল হোচ্ছে অনাবিল শান্তি, সুখ, সমৃদ্ধি, প্রগতি, জীবনের প্রতি অঙ্গনের ন্যায় ও সুবিচার। আল্লাহর রসুল যে সনাতন ধর্মেরই প্রবর্তক ছিলেন এবং তিনি যে সত্যযুগ প্রতিষ্ঠা কোরেছিলেন তার প্রমাণ আমরা পাই কল্কি পুরাণে, যেখানে বলা হোচ্ছে,
শশ্বৎ সৈন্ধববাহনো দ্বিজজনিঃ কল্কিঃ পরাত্মা হরিঃ
পায়াৎ সত্যযুগাদিকৃৎ স ভগবান্ ধর্ম্মপ্রবৃত্তিপ্রিয়ঃ
কল্কিপুরাণ (১:৩)
“যিনি উচ্চবংশে জন্ম পরিগ্রহ করিয়া সিন্ধুজাত অশ্বে আরোহণপূর্বক সেনানী হইয়া সত্যযুগের সৃষ্টি করিবেন, সেই সনাতন ধর্মপ্রবর্তক পরমাত্মা ভগবান্ কল্কিরূপী হরি সকলকে রক্ষা করুন।”
সত্যিই তখন অর্ধপৃথিবীতে কোনো লোক এমন কি একটি কুকুরও না খেয়ে থাকতো না। স¤পদের এমন প্রাচুর্য তৈরি হোয়েছিলো যে, দান গ্রহণ করার মত লোক খুঁজে পাওয়া যেতো না। সেই পরিবেশ সম্পর্কে অথর্ববেদের ভবিষ্যদ্বাণী হোচ্ছে:
(পরিচ্ছিন্নঃ ক্ষেমমকরেনৎ তম আসনমাচরন্।
কুলায়ন্ কৃন্ব কৌরব্যঃ পতির্বদতি জায়য়া।
কতরৎ ত আ হরাণি দধি মন্থাং পরিশ্র“তম্।
জাযাঃ পতিং বি পৃচ্ছাতি রাষ্ট্রে রাজ্ঞ পরিক্ষিতঃ।)
(অথর্ববেদ, কুন্তাপ সুক্তানি)
“সেই রাজর্ষির রাজত্বে এমন শান্তি বিরাজ কোরবে যে, একজন কুলবধূও বাজার থেকে দিবারাত্রি যে কোন সময়ে দধি ক্রয় কোরে আসতে সক্ষম হবে। জনমানব ও পশু সকলের উন্নতি ও সমৃদ্ধি ঘটবে।”
বাস্তবেও তাই হোয়েছিল। একজন যুবতী মেয়ে সমস্ত গায়ে অলংকার পরিহিত অবস্থায় শত শত মাইল পথ অতিক্রম কোরতে পারতো, তার মনে কোন ক্ষতির আশঙ্কাও জাগ্রত হোত না। ঘুমানোর সময় মানুষ ঘরের দরজা বন্ধ করার প্রয়োজন বোধ কোরত না। আদালতে মাসের পর মাস ‘অপরাধ সংক্রান্ত’ কোন অভিযোগ আসত না। নামাজের সময় মানুষ স্বর্ণের দোকান খোলা রেখে মসজিদে চোলে যেত, কেউ সেগুলো চুরি কোরত না। মক্কা ও মদিনায় এই অবস্থা আজও মোটামুটি আছে বোলে অনেকেই তাদের আত্মজীবনীতে লিখেছেন।
[ড. বেদপ্রকাশ উপাধ্যায় রচিত বেদ-পুরাণে আল্লাহ ও মোহাম্মদ (দ:), ড. সিরাজুল ইসলাম এর স্মৃতির পাতা থেকে]
আল্লাহর দেওয়া সত্য জীবনব্যবস্থার প্রভাবে সত্যবাদিতা, আমানতদারী, পরোপকার, মেহমানদারী, উদারতা, ত্যাগ, দানশীলতা, ওয়াদারক্ষা ইত্যাদি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে মানুষের চরিত্র পূর্ণ হোয়ে গিয়েছিল। প্রকৃত এসলাম আইয়ামে জাহেলিয়াতের বর্বর, কলহবিবাদে লিপ্ত, অশ্লীল জীবনাচারে অভ্যস্ত জাতিটিকেই এমন সুসভ্য জাতিতে পরিণত করেছিল যে তারা অতি অল্প সময়ে পৃথিবীর সকল জাতির শ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত হোয়েছিল। এটাই হোচ্ছে পৃথিবীর বুকে সর্বশেষ শাস্ত্রের শাসন ও সত্যযুগ।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...