হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

যে কারণে ঈমানের চেয়ে আকিদা বেশি গুরুত্বপূর্ণ (দ্বিতীয় পর্ব)

{এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর লেখা থেকে}
মোসলেম নামধারী এই উম্মাহর আকিদায় বিকৃতি এসেছে বহু আগে। বিশ্বনবী (দ:) তাঁর উম্মাহকে যে আকিদা শিক্ষা দিয়ে গিয়েছিলেন তা ছিলো এই যে-
ক) মানব জাতির মধ্যে বিদ্যমান সমস্ত রকমের রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক অন্যায়, অত্যাচার দূর করা সম্ভব মাত্র একটি উপায়ে এবং সেটি হোল আল্লাহর দেয়া সংবিধান অর্থাৎ কোর’আন মানবজাতির জাতীয় ও ব্যক্তি জীবনে প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োগ।
খ) ঐ প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োগের দায়িত্ব দিয়ে আল্লাহ তাঁর শেষ নবীকে (দ:) পৃথিবীতে প্রেরণ কোরেছেন এবং যেহেতু ঐ বিরাট কাজ এক জীবনে সম্ভব নয় তাই তার চলে যাবার পর সে দায়িত্ব অর্পিত হোয়েছে তাঁর সৃষ্ট উম্মাহর উপর।
গ) যেহেতু সবিনয়ে নিবেদন কোরলেই কাফের ও মোশরেক মানবজাতি তা গ্রহণ কোরবে না, অন্যায়ের মধ্যেই বাস কোরবে, তাই সর্বাত্মক সংগ্রাম কোরে সেটাকে জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠা কোরতে হবে যাতে তারা ঐ সংবিধানের সুফল ঘনিষ্টভাবে, প্রত্যক্ষভাবে দেখে সেটাকে স্ব-ইচ্ছায় গ্রহণ করে।
ঘ) ঐক্যবদ্ধ, সুশৃঙ্খল ও সুশিক্ষিত জাতি ছাড়া কোন সংগ্রাম সম্ভব নয় তাই ঐ ঐক্য ও শৃঙ্খলা শিক্ষার প্রক্রিয়া হোল সালাহ (নামাজ)। কিন্তু সালাহ উদ্দেশ্য নয়, প্রক্রিয়া মাত্র।
ঙ) অর্থাৎ বিশ্বনবীকে (দ:) প্রেরণ, সংবিধান কোর’আন অবতরণ, উম্মতে মোহাম্মদী নামে এক দুর্ধর্ষ অপরাজেয় যোদ্ধা জাতির সৃষ্টি সবই একটি মাত্র উদ্দেশ্য এবং সেটা হোল মানব জাতির মধ্য থেকে সমস্ত রকমের অন্যায় (জুলুম, ফাসাদ) ও রক্তপাত (সাফাকুদ্দিমা) শেষ কোরে সেখানে সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কোরে এবলিসের চ্যালেঞ্জে আল্লাহকে জয়ী করানো।
আকিদা শব্দটির মূল হোল আক্দ। আক্ষরিক অর্থ হোল গেরো, গিট, গ্রন্থি। আমরা এই শব্দটাই ব্যবহার কোরি বিয়ের ব্যাপারে। একটি পুরুষ ও একটি নারীকে আক্দ কোরিয়ে দেওয়া অর্থাৎ দুজনকে গেরো দিয়ে বেঁধে দেয়া, গ্রন্থিতে আবদ্ধ করা। আকিদার বেলাতেও ঐ একই অর্থে ব্যবহার করা হোয়েছে। যে ভাব, ধারণা ও অভিপ্রায়ে আকিদা শব্দ ঈমানের ব্যাপারে প্রয়োগ হোয়েছে তা এই রকমঃ আল্লাহ, রসুল, মালায়েক (ফেরেশতা), কেয়ামত, জান্নাত, জাহান্নাম, তকদীর ইত্যাদি যে সমস্ত ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস (ঈমান) মো’মেন ও মোসলেম হোতে গেলে অত্যাবশ্যক, সেগুলির প্রত্যেকটিকে এক একটি ফুল মনে কোরুন। এই বিভিন্ন ফুলগুলি দিয়ে একটি মালা গাঁথতে হবে। ঐ ফুলগুলির মধ্য দিয়ে সুতো পরিয়ে সুতোর দু’মাথায় একটি গেরো দিতে হবে। এই গেরো বা গ্রন্থিই আকিদা। এই গেরো না দিলে সব ফুল চারদিকে ছড়িয়ে ছিটকে পড়ে যাবে। ফুলগুলি যত সুন্দরই হোক, যত সুগন্ধীই থাকুক, আসল উদ্দেশ্য যে মালা, সেই মালা হবে না। মালা না গেঁথে শুধু ফুলগুলি কারো গলায় পরানো যাবে না। অর্থাৎ ঐ গেরো ছাড়া অতসব সুন্দর, সুগন্ধীযুক্ত ফুলগুলি অর্থহীন কারণ আসল উদ্দেশ্য হোল ঐ মালা। আলাদা আলাদা ফুলগুলি শুধু ফুল, তারপর ঐ গ্রন্থি, গিঁট দিলেই তখন আর ফুল রইল না, তখন সব ফুল মিলে নতুন আরেকটি জিনিস সৃষ্টি হোল, সেটা মালা। আল্লাহ ও রসুল (দ:) মো’মেনদের কাছে ঐ মালা চান। তাই বড় বড় ফকীহরা বোলেছেন- যথার্থ (মোকাম্মেল) ঈমান থাকা সত্ত্বেও আকিদার অভাবে বা বিকৃতিতে মানুষ মোশরেক ও কাফের হোয়ে যেতে পারে। এবং তাই হোয়েছে, পৃথিবীময় নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি ছাড়াও বহু নফল এবাদত হোচ্ছে, কিন্তু ঐ গিঁট, গ্রন্থির অভাবে সব ছড়িয়ে ছিটকিয়ে পড়ে আছে। মালা নেই এবং মালা নেই বোলেই ঐ সব সুন্দর ফুলগুলির কোন দাম নেই। এই কারণেই নবী করিমের (দ:) সেই বাণী- এমন সময় আসবে যখন মানুষের রোজা শুধু না খেয়ে থাকা হবে, তাহাজ্জুদ ঘুম নষ্ট করা হবে।
গ) ঐ মালা হোল উম্মতে মোহাম্মদী এবং তাদের চরিত্র, এবং উম্মতে মোহাম্মদীর এবং তাদের চরিত্রের উদ্দেশ্য হোল সংগ্রামের মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীতে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব কায়েম কোরে তাঁর সংবিধান প্রতিষ্ঠা কোরে এসলিসের চ্যালেঞ্জকে পরাজিত কোরে ঐ বিজয়ের মালা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের গলায় পরিয়ে দেওয়া।
এই আকিদার বিকৃতির ফলে শুধু যে এসলামের মূল উদ্দেশ্যই হারিয়ে গেছে তাই নয়, এর ছোটখাট উদ্দেশ্যও বিকৃত হোয়ে গেছে। একটি অতি সাধারণ ব্যাপার নিন। আল্লাহ ও তাঁর রসুল (দ:) মেয়েদের পরদা (হিজাব) কোরতে আদেশ দিয়েছেন। কেন? উদ্দেশ্য কী? উদ্দেশ্য হোচ্ছে আঁটশাট কাপড় পোরে, অর্ধনগ্ন হোয়ে যুবতী, তরুণী মেয়েরা ঘুরে বেড়ালে তাদের দিকে চোখ পড়লে মানুষের আদিম প্রবৃত্তি স্বভাবতঃই মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। তাদের মধ্যে অনেকেই হয়ত আত্মসংবরণ কোরতে পারবে না, অন্যায়ে লিপ্ত হোয়ে পড়বে, পরিণতিতে হয়ত অন্যের সঙ্গে সংঘাত হবে, হয়ত পারিবারিক অশান্তি সৃষ্টি হবে, মোট কথা নানাভাবে সমাজে অশান্তি, গোলযোগ সৃষ্টি হবে, আত্মারও অবনতি হবে। তাই ঐ পরদার, হেজাবের আদেশ। ঐটাই উদ্দেশ্য বোলে যেসব মেয়েদের বয়স বেশি হোয়েছে, যারা প্রৌঢ়া, বৃদ্ধা হোয়েছেন অর্থাৎ যাদের দেখলে কোন প্রবৃত্তি উত্তেজিত হবে না তাদের ঐ পরদা থেকে রেহাই দেয়া হোয়েছে। আজকাল পথেঘাটে দেখবেন প্রৌঢ়া, বৃদ্ধা মা, দাদীরা কিম্ভুতকিমাকার বোরকায় আপাদমস্তক ঢেকে আছেন আর তাদের সঙ্গে আধুনিক, মেকআপ করা অর্ধনগ্না মেয়ে, নাতনীরা বাজারে বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অর্থাৎ যে উদ্দেশ্যে পরদা করার আদেশ হোয়েছে তার ঠিক উল্টোটা করা হোচ্ছে। কারণ ঐ একই- উদ্দেশ্য কী, তা বোঝার শক্তির অভাব, আকিদার বিকৃতি। এসলামের প্রতিটি ব্যাপারে আজ ঐ অবস্থা। আল্লাহ-রসুল যে উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট কোরে দিয়েছিলেন আজ ঠিক তার উল্টো উদ্দেশ্যে করা হোচ্ছে, মূল ব্যাপারে উদ্দেশ্যই নেই।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...