হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

যুক্তির বিচারে ধর্মব্যবসা

রাকীব আল হাসান:
ধর্মজীবী আলেম-মোল্লা শ্রেণি ধর্মীয় কাজ করে যে বিনিময় নেন তা আসলে কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? ধর্মজীবীদের একটি বড় অংশের পেশা মসজিদের ইমামতি করা। ইমাম শব্দের অর্থ নেতা হলেও এই কথিত ইমামগণের নেতৃত্বের পরিধি নামাজের সময়ের ৮/১০ মিনিটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। প্রকৃতপক্ষে তারা মসজিদ কমিটির বেতনভুক্ত কর্মচারী মাত্র। আর তারা যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়িয়ে টাকা নেন তার যৌক্তিকতা কী? নামাজ পড়াতে ও পড়তে যা জানা আবশ্যক তা ইমাম সাহেব যেমন জানেন, মুসল্লীগণও তা-ই জানেন; ইমামের যতটুকু সময় ব্যয় হয়, মুসল্লীদেরও ততটুকু সময়ই ব্যয় হয়। মুসল্লীদের নামাজ পড়া ফরদ, ইমামেরও তাই। পার্থক্য হলো মুসল্লীদের নামাজের চাওয়া-পাওয়া আল্লাহর কাছে, পক্ষান্তরে ইমামের নামাজের চাওয়া-পাওয়া আল্লাহর কাছে নয়। তার বেতন বন্ধ হলে ইমামতিও বন্ধ!
এখানেই শেষ নয়, আল্লাহর পরিষ্কার ঘোষণা অনুযায়ী, যারা ধর্মের বিনিময় নেন, তাদের পেছনে নামাজও হয় না। আল্লাহ মুমিনদেরকে তাদের অনুসরণ করতে নিষেধ কোরে দিয়েছেন যাতে কোনোভাবেই এই দীনে কোনো পুরোহিত শ্রেণির আবির্ভাব হতে না পারে। আল্লাহ বলেন, ‘অনুসরণ ও আনুগত্য কর তাদের যারা তোমাদের নিকট থেকে কোনো মজুরি গ্রহণ করে না এবং হেদায়াত প্রাপ্ত। [সুরা ইয়াসিন-২১] সুতরাং যারা তাদের পেছনে নামাজে দাঁড়াবেন তারা আল্লাহর হুকুম অমান্য করছেন।
রসুল (দঃ) ও তাঁর সাহাবাগণ আল্লাহর দীন কায়েমের সংগ্রামে নিজেদের শেষ সম্বলটুকু ব্যয় কোরে নিঃশেষ হয়েছেন, এমন কি নিজেদের জীবনও উৎসর্গ কোরে গেছেন। পক্ষান্তরে আজকের আলেম নামধারীগণ ও পীররা সেই ইসলাম বিক্রি কোরে অর্থ সম্পদের পাহাড় গড়ছেন, এমনকি অনেকের শান-শওকত, রাজকীয় হালচাল মোগল বাদশাহদেরও হার মানায়। তাদের অনুসারী কাউকে যখন কোর’আন থেকে দেখিয়ে দেওয়া হয়, যে এই ধর্মব্যবসা অবৈধ তখন তারা প্রশ্ন করেন, তাহলে তারা খাবেন কী? প্রশ্নটি নিতান্তই বুদ্ধিহীন এবং আল্লাহর হুকুমের উপর অনধিকার চর্চা; যেহেতু হারাম করেছেন আল্লাহ, তাই তারা কী খাবেন এ প্রশ্নটিও আল্লাহকেই করা দরকার। তারা কী খাবেন আর কী খাবেন না তা কোর’আনে বর্ণিত আছে- আল্লাহ যা কিছু হালাল করেছেন তাই খাবেন। বর্তমানে তারা কী খাচ্ছেন, এর পরিণতি কী – তা’ও কোর’আনে সহজ-সরল ভাবে বলা হয়েছে যে তারা আগুন খাচ্ছেন (বাকারা ১৭৪)। আপদে-বিপদে কোনো উপায়ান্তর না থাকলে (শুধু প্রাণ বাঁচানোর জন্য যতটুকু দরকার) হারাম ঘোষিত মদ, শুকর, মৃত পশু ইত্যাদি সাময়িক ভাবে খাওয়ার সুযোগ আল্লাহ দিয়েছেন (বাকারা ১৭৩) কিন্তু ধর্ম-কর্মের বিনিময় গ্রহণের সুযোগ তিনি কোনো কালেই দেন নি; বরং যারা তা করবে তাদের বিষয়ে তিনি বলেছেন, তাদেরকে তিনি পবিত্র করবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে তিনি মর্মন্তুদ শাস্তি দিবেন। এখানে অনন্যোপায় হয়ে করলে ক্ষমা করার কোনো প্রতিশ্র“তি মহান আল্লাহ দেন নি বরং সকল মুমিনদেরকেই তিনি সালাহ শেষে মাঠে ঘাটে ছড়িয়ে পড়ে হালাল রোজগারের সন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন, মুসল্লীগণ যা কোরে থাকেন। [কোর’আন: ৬২: জুম’আ-১০] তারা কি খাবেন এ আয়াতে তারই দিক নির্দেশনা রয়েছে। এই দীনের বিনিময় সংক্রান্ত যে আয়াতগুলি উল্লেখ করলাম, এমন আরও বহু আছে, সেগুলিও তারা গোপন করেন। এই সত্যগোপন ও দীনের বিনিময় গ্রহণ প্রসঙ্গে আল্লাহর কথা হলো, ‘তারা আগুন ছাড়া কিছুই খায় না’, অর্থাৎ তারা যা-ই খায় তাই আগুন। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না, তাদের সঙ্গে কথাও বলবেন না, পবিত্রও করবেন না। পরকালে তাদের কোনো অংশ নেই। তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে। [৩: সুরা এমরান: ৭৭] এমন কঠোর সাবধানবাণী আল্লাহ আর কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে উচ্চারণ করেছেন কি?

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...