হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

মুসলমানদের সামনে সবচাইতে বড় সঙ্কট!

হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম:
গত বৃহস্পতিবার নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার সাহেরচর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হেযবুত তওহীদের আয়োজনে একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত জনসভায় হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম এর প্রদত্ত ভাষণ পাঠকদের জন্য দুই পর্বে প্রকাশিত হবে। আজ থাকছে প্রথম পর্ব।
ধর্ম এখন নাম্বার ওয়ান ইস্যু
আজকের এই পড়ন্ত বিকেলে আমাদের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে ‘ধর্মের অপব্যবহার প্রগতির অন্তরায়’। এই একটি বিষয় ধর্ম, এ নিয়ে সমগ্র বিশ্ব বর্তমানে টালমাটাল! আপনারা জানেন ধর্ম এখন সারা বিশ্বে নাম্বার ওয়ান ইস্যু। আমেরিকা রাজনীতি করছে ধর্ম নিয়ে, ইউরোপের জার্মানি ব্রিটেন ফ্রান্সের মত দেশে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতে ধর্ম নাম্বার ওয়ান ইস্যু। মিয়ানমারে দশ লক্ষ রোহিঙ্গাকে তাড়িয়ে দেওয়া হলো ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে। মধ্যপ্রাচ্যে আগুন জ্বলছে ধর্মকে নিয়ে। কাজেই ধর্ম এখন বিশ্ব রাজনীতিতে নাম্বার ওয়ান ইস্যু। এই ধর্মকে অবজ্ঞা করার কোনো উপায় নাই। খাটো করে দেখার অবকাশ নাই। অস্বীকার করারও কোনো উপায় নাই। কারণ গত কয়েক শতাব্দী থেকে ইউরোপের বস্তুবাদী সভ্যতা, দাজ্জালীয় সভ্যতা ধর্মকে অস্বীকার করে এসেছে। ধর্মকে অযৌক্তিক গালগল্প বলে প্রচার করেছে। প্রচার করা হয়েছে যে, আল্লাহ, ভগবান, ঈশ্বর বলতে কিছু নাই। কিন্তু না, এসব প্রচারে কোনে কাজ হয় নি। কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে ধর্মবিশ্বাস দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে, তাদের মধ্যে আল্লাহর ঈশ্বরের রূহ আছে, পরমাত্মার অংশ আত্মা রয়েছে। যখন সে বিপদে পড়ে তখন সে নীরবে নিভৃতে স্রষ্টার শরণাপন্ন হয়, সাহায্য কামনা করে, আল্লাহকে ভরসা করে আশাবাদী হয়। চারদিকে তাকালে কত কিছু দেখি, গ্রহ-নক্ষত্র, বৃক্ষরাজি, তরুলতা, নদী-নালা, সাগর-মহাসাগর কতকিছু, এগুলো কে সৃষ্টি করেছেন? নিশ্চয়ই একজন স্রষ্টা আছেন। এমনি এমনি সৃষ্টি হয় নাই। কাজেই ধর্মের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট করার প্রচেষ্টা করে কোনো লাভ হয় নি। সমগ্র মানবজাতি কোনোদিন নাস্তিক্যবাদের দিকে পা বাড়াবে না।
হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, ধর্মব্যবসায়ীদের কায়েম করে রাখা ধর্মের নামে অযৌক্তিক কর্মকাণ্ড দেখে, ধর্মব্যবসা দেখে এক শ্রেণির বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষিত ব্যক্তি ধর্মকে অস্বীকার করছেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে মাথা ব্যথার সমাধান মাথা কাটা নয়। ধর্মবিশ্বাস অস্বীকার করা কোনো সমাধান নয় এবং এটা সম্ভবও নয়, যা ইতিহাস থেকে প্রমাণিত। দেখা যাচ্ছে মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে অস্বীকার করতে পারছেন না, মুছে ফেলতেও পারছেন না, এমনকি অবজ্ঞাও করতে পারছেন না, তাহলে কী করবেন? আজকে বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রনায়কগণ থেকে শুরু করে জাতিসংঘের মহাসচিব ও উন্নত-অনুন্নত-উন্নয়নশীল দেশের জ্ঞানী-গুণি-পণ্ডিতরা সবাই এখন পেরেশানীর মধ্যে পড়েছেন, কীভাবে এই সঙ্কটের মোকাবেলা হবে? আল্লাহর রহমে সেই উপায় আমাদের কাছে আছে।
সঙ্কট উপলব্ধি করতে হবে
আজকে আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি আমাদের জাতীয় সঙ্কট নিয়ে কথা বলার জন্য। এত কষ্ট করে আপনারা এখানে এসেছেন, আপনাদেরকে ভাবতে হবে মানবজাতির পরিস্থিতি নিয়ে, সঙ্কট নিয়ে। আমি অনুরোধ করব মনোযোগ দিয়ে আমার কথাগুলো শ্রবণ করুন। আল্লাহ আমাদেরকে শ্রবণশক্তি দিয়েছেন, দৃষ্টিশক্তি দিয়েছেন, চিন্তাশক্তি দিয়েছেন, উপলব্ধির শক্তি দিয়েছেন। কাজেই দেখুন, শুনুন, চিন্তা করুন এবং হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করুন। কেউ একজন একটা কথা বলল আর সবাই হৈ হৈ রৈ রৈ করে ছুটে চললাম সওয়াবের আশায়- এটা পরিহার করতে হবে। পুরো মানবজাতি ভয়াবহ বিপদের মধ্যে পড়েছে। কীসের সঙ্কট এটা কি দেখবেন না? উপলব্ধি করবেন না? আগুন কিন্তু আমাদের পিঠেও লাগবে। ধ্বংস হয়ে গেল ইরাক, ধ্বংস হয়ে গেল আফগানিস্তান, ধ্বংস হয়ে গেল লিবিয়া, ধ্বংস হয়ে গেল ইয়েমেন, ধ্বংস হয়ে গেল একটার পর একটা মুসলিম ভূখণ্ড। আমার জন্মভূমি বাংলাদেশ, যে মাটিতে আমি সেজদা করি, ১৯৭১ সালে লাখ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে যে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, এই মাটিতেও যদি সিরিয়া-ইরাকের মত হয় তাহলে উদ্বাস্তু শিবিরে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। তখন আর রাজনীতি করা লাগবে না, ধর্মব্যবসাও করা লাগবে না। মাটিই তো থাকবে না। কাজেই মাটি রক্ষার জন্য, ধর্ম রক্ষার জন্য দিক-নির্দেশনা নিয়ে আমি দাঁড়িয়েছি। আমি প্রচলিত কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে দাঁড়ায় নি। হাততালি দিবেন, বাহবা দিয়ে চলে যাবেন, না, আমি তা চাই না। আমি চাই আপনারা আমার কথার গুরুত্বটা উপলব্ধি করুন।
পৃথিবীতে মানুষ আল্লাহর খলিফা
মানুষ হচ্ছে আল্লাহর প্রতিনিধি, মানুষকে আল্লাহ গরু-বকরির মত সৃষ্টি করেন নাই। আল্লাহর রূহ আছে মানুষের ভেতরে। আল্লাহ কোর’আনে বলেন, স্মরণ কর সেই সময়ের কথা যখন আল্লাহ মালায়েকদের বললেন- পৃথিবীতে আমি আমার খলিফা প্রেরণ করতে চাই। অর্থাৎ প্রথমত, পৃথিবীতে মানুষ হচ্ছে আল্লাহর খলিফা। দ্বিতীয়ত, মানুষের মধ্যে আল্লাহর রূহ আছে। তৃতীয়ত, অন্যান্য সৃষ্টিকে আল্লাহ বললেন ‘কুন’ অর্থাৎ ‘হও’ আর তা হয়ে গেল, কিন্তু মানুষকে আল্লাহ নিজ হাতে বানিয়েছেন। কাজেই মানুষ আল্লাহর খলিফা হিসেবে, আল্লাহর নিজের হাতের সৃষ্টি হিসেবে, সুন্দরতম অবয়বের অধিকারী হিসেবে মানুষ অন্য আর দশটা প্রাণীর মত বেঁচে থাকতে পারে না। তাকে ভাবতে হবে তার নিজেকে নিয়ে। ভাবতে হবে তার জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে। কোথা থেকে এলাম, কী আমার দায়িত্ব- এটা নিয়ে। যদি না ভাবি তাহলে পৃথিবীর জীবন ব্যর্থ হয়ে গেল। কাজেই আসুন চিন্তা করি আমি কে? আমি হলাম আল্লাহর খলিফা, প্রতিনিধি। সে হিসেবে পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করাই আমার দায়িত্ব, মুখ্য কর্তব্য। এটাই আমার এবাদত। প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করবেন কী দিয়ে? অবশ্যই আল্লাহর হুকুম দিয়ে, নিজের খেয়াল-খুশিমত করলে সেটা তো প্রতিনিধিত্ব করা হয় না। আর এই আল্লাহর হুকুমের স্বীকৃতি দেওয়ার নামই হচ্ছে- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর হুকুম ছাড়া কারো হুকুম মানব না। আদম (আ.) থেকে শুরু করে শেষ নবী পর্যন্ত যত নবী-রসুল এসেছেন সবাই এই কলেমা তওহীদ নিয়ে এসেছেন।
সব মানুষের মধ্যে আল্লাহর রূহ
আপনারা শুনেছেন, আমি বলেছি আমাদের প্রত্যেককে ভাবতে হবে নিজেকে নিয়ে ও মানবজাতিকে নিয়ে। কেন ভাবতে হবে তা বলি। সমস্ত মানুষের মধ্যেই আল্লাহর রূহ আছে, আমরা সবাই এক আল্লাহর সৃষ্টি, এক পিতা-মাতা আদম-হাওয়ার সন্তান। কাজেই আজকে আমেরিকায় যে মানুষটি মারা গেল সে মানুষটি আমার ভাই, ভারতে না খেয়ে মারা গেল সেও আমার ভাই, মিয়ানমারে মারা গেলেও আমার ভাই, বাংলাদেশে আক্রান্ত হলেও আমারই ভাই আমারই বোন। ধর্ম পরিচয় পরে দিচ্ছি, আগে তো আমি মানুষ। এই কথা যদি ভুলে যাই তাহলে এক মানুষ আরেক মানুষকে হত্যা করতে দ্বিধা করব না। আর যদি এই কথা স্মরণে থাকে তাহলে আমি পঞ্চাশবার চিন্তা করব- আমি যে মানুষটাকে হত্যা করতে চাইছি সে তো আমারই ভাই, আমারই বোন।
সমস্ত মানবজাতি এক নরককুÐে বসবাস করছে
আজকে ১৬ হাজার অ্যাটম বোমা তৈরি করে রাখা হয়েছে মানুষকে মারার জন্য। সীমান্তে সীমান্তে সংঘর্ষ চলছে। যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে হাজার হাজার রণতরী। হুমকির ভাষায় কথা বলছেন রাষ্ট্রনেতারা। একজন আরেকজনকে শাসাচ্ছেন কার চেয়ে কার পরমাণু বোমা বেশি শক্তিশালী। পরমাণু বোমার সুইচ নাকি তাদের টেবিলেই থাকে, যেন ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাতে ন্যূনতমও দেরী না হয়। যে কোনো সময় সুইচ টিপতে পারেন কোনো জবাবদিহি করতে হবে না। এই মুহূর্তে সাড়ে ছয় কোটি মানুষ উদ্বাস্তু। এই মুহূর্তে ইউরোপ আমেরিকায় ভিক্ষা করছে মুসলমান। সমুদ্রে ডুবে মারা যাচ্ছে মুসলমান। কেউ কাউকে বিশ্বাস করছে না। ঘরে ঘরে দ্ব›দ্ব। পিতা পুত্রকে হত্যা করছে। স্বামী স্ত্রীকে হত্যা করছে। ভাই ভাইকে হত্যা করছে। শাসিতের উপর শাসকের যুলুম চলছে, দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার চলছে। গরীবের উপর ধনীর বঞ্চনা চলছে। সমস্ত মানবজাতি এক নরককুণ্ডে বসবাস করছে। আত্মিকভাবে নৈতিকভাবে মানুষ আজ দেউলিয়া, দিশেহারা! দামামা বাজছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অ্যাটম বোমার ক্ষত এখনও শুকোয় নাই। এবার সমস্ত পরমাণু বোমা যদি একসাথে বিস্ফোরিত হয় তাহলে অস্তিত্বই থাকবে না মানবজাতির। এটা আমার ভবিষ্যদ্বাণী নয়, কারণ আমি পীর-ফকির নই। আমি কথা বলছি বাস্তবতার নিরীখে। এই পরিণতি মানুষের দুই হাতের কামাই, তার কৃতকর্মের ফল। এই ফল তাকে ভোগ করতেই হবে। দুনিয়াময় এই অশান্তি দেখে কী করবেন? ভাববেন না? যদি করণীয় ঠিক করতে না পারেন তাহলে এই দুনিয়ায় বোমা খেয়ে না হয় পার হয়েই গেলেন, কিন্তু পরকালে তো জবাব দিতে হবে। তখন এই দুনিয়া সম্পর্কে আল্লাহ প্রশ্ন করবেন- তোমাকে আমি নিজ হাতে বানিয়েছি, নিজের রূহ ফুঁকে দিয়েছি, সমস্ত প্রকৃতি তোমার প্রয়োজন পূরণ করেছে, কী ছিল তোমার কর্তব্য? তুমি কি সেটা করেছো? কাজেই কর্তব্য নির্ধারণ করুন। এই দুনিয়ায় মুক্তি ও পরকালের সফলতার উপায় জানতে হবে। আল্লাহর শোকর, সেই মুক্তির উপায় আমরা পেয়ে গেছি।
মুসলমানদের সঙ্কট এখন সবচাইতে বড় সঙ্কট
মুসলমানরা এখন টার্গেটে পড়েছে। সারা দুনিয়ায় সন্ত্রাসবাদী জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে যে, দেখো মুসলমানরা বর্বর, মুসলমানরা অসভ্য, মুসলমানরা কূপমণ্ডূক, মুসলমানরা কোনো সভ্য দেশে থাকতে পারে না, মুসলমানরা জঙ্গি, মুসলমানরা সাম্প্রদায়িক। এই বলে তারা একটার পর একটা মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ড ধ্বংস করছে, মুসলমানদেরকে নিধন করে চলেছে। আজকে আটলান্টিকের তীর থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত ১৫০ কোটি আমরা। আমাদের লক্ষ লক্ষ আলেম, লক্ষ লক্ষ মুফতি, লক্ষ লক্ষ মাওলানা, কিন্তু সারা দুনিয়ায় মার খাই আমরা। ইউরোপ আমেরিকায় ভিক্ষা করি আমরা। একটা ভূখণ্ড রক্ষা করতে পারি না। চোখের সামনে ইরাক ধ্বংস করে দিল, লিবিয়া লণ্ডভণ্ড করে দিল, আফগানিস্তান মাটির সাথে মিশিয়ে দিল, আমরা একটা কথা বলতে পারি নাই।
ধর্মের নামে মানুষ প্রতারিত হয়েছে
আমাদের ভয়টা হচ্ছে আমাদের এই দেশটাকে নিয়ে। এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান। তারা আল্লাহকে বিশ্বাস করেন, রসুলকে বিশ্বাস করেন, কোর’আন বিশ্বাস করেন। তাদের এই বিশ্বাসকে হাইজ্যাক করে নিয়ে কেউ অর্থোপার্জন করেছে, সাধারণ মানুষকে বুঝিয়েছে আমাদেরকে টাকা দাও, জান্নাত পেয়ে যাবে। আমি বলতে চাই- জান্নাত কি কারো বাপ-দাদার? জান্নাত আল্লাহর, কাজেই কেউ টাকার বিনিময়ে জান্নাত বিক্রি করতে পারে না। আল্লাহ জান্নাত রেখেছেন কেবল মো’মেনদের জন্য। কেউ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করছে। সাধারণ মানুষকে বলেছে- আমাদেরকে অমুক মার্কায় ভোট দাও, দিলে তুমি জান্নাতে চলে যাবে, এটা জান্নাতের টিকেট হবে। আমি জানতে চাই- কোন মার্কায় ভোট দিলে জান্নাতের টিকেট হবে? একজনে বলে আমগাছ, আরেকজনে বলে তালগাছ, আরেকজনে বলে সুপারি গাছ, আরেকজনে বলে খেজুরগাছ। কোন গাছে সিল দিলে জান্নাত যাব? বহু অপকর্ম করা হয়েছে ধর্মের নামে। মানুষ প্রতারিত হয়েছে। ধর্মের প্রতি আস্থা হারিয়েছে। মনে করেছে এটাই বুঝি ধর্মের চরিত্র! আবার কেউ মানুষের ঈমানকে হাইজ্যাক করে কোর’আন-হাদিসের অপব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে, সাধারণ মানুষের বুকে বোমা মেরেছে। আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলামে এই অন্যায় থাকতে পারে না। এমন জঘন্য কাজের পারমিশন আল্লাহ-রসুল দিতে পারেন না। অথচ ধর্মের নামে এটাই করা হচ্ছে। আমি আজ এই নরসিংদীর সাহেরচর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দাঁড়িয়ে হাজারো মানুষের সামনে ঘোষণা করতে চাই- তোমরা ধর্মব্যবসায়ীরা এতদিন ধরে ধর্মের নামে যে অধর্ম চালু করেছো, আজকে জেনে রাখো এটা আল্লাহ-রসুলের ইসলাম নয়। বজ্রকণ্ঠে এই মহাসত্যের ঘোষণা দেওয়ার জন্যই হেযবুত তওহীদের আগমন হয়েছে।
জান্নাতের পথ হবে একটা
‘ধর্মের অপব্যবহার প্রগতির অন্তরায়’ এই প্রতিপাদ্যটা বুঝতে হবে। অনেক জটিল বিষয়, অনেক কঠিন বিষয়। একেক জনের কাছে একেক ধর্ম! যেহেতু আমরা মুসলমান, কাজেই ইসলাম নিয়েই আগে কথা বলি। এখানে সম্মানিত জনপ্রতিনিধিগণ আছেন, তারা অন্য দশটা সাধারণ মানুষের মত নন। আমার সামনে যারা মুরুব্বিগণ আছেন, আমার পিতার বয়সী অনেকে আছেন, বোনেরা আছেন, আমি বিশ্বাস করি আপনারা সকলেই সুস্থ মস্তিষ্কের সচেতন মানুষ। আমার বক্তব্য বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়। দেখুন- হুকুম হচ্ছে দুইটি, আল্লাহর হুকুম ও ইবলিশের হুকুম, পক্ষও হচ্ছে দুইটি, সত্য ও মিথ্যা, ন্যায় ও অন্যায়, ধর্ম ও অধর্ম। মানবজাতির ইতিহাস এই ন্যায় অন্যায়,সত্য মিথ্যার দ্বন্দ্বের ইতিহাস। মানুষ যখন আল্লাহর হুকুম অমান্য করেছে তখন সে অনিবার্যভাবেই ইবলিসের হুকুম মেনে নিয়েছে। ফলে অশান্তিতে পড়েছে। আর যখন আল্লাহর হুকুম মেনে নিয়েছে তখন পৃথিবীতে শান্তি পেয়েছে এবং পরকালও সাফল্যমণ্ডিত হয়েছে। আমার কথা হচ্ছে, আল্লাহর হুকুম কয় ধরনের হবে? এক ধরনের। জান্নাতের পথ হবে কয়টা? অবশ্যই একটা। অথচ খেয়াল করুন- আল্লাহ এক, রসুল এক, কিতাব এক, কিন্তু আজ আমাদের মধ্যে একেকজনের কাছে একেকরকমের ইসলাম। শিয়া মানেনা সুন্নিকে। সুন্নি মানেনা শিয়াকে। ঢাকার পীর মানে না মানিকগঞ্জের পীরকে। মানিকগঞ্জের পীর মানে না ঢাকার পীরকে। সরকারি আলেমরা মানে না কওমী আলেমকে। কওমীরা মানে না সরকারি আলেমকে। তবলিগ জামাতের মত দলগুলো এতদিন যাদেরকে মানুষ মনে করত তারা মানুষের চরিত্র সংশোধনের জন্য মেহনত করেন, সেখানেও দেখা যাচ্ছে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে মানে না। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কোনো ফতোয়া দিলে অন্যরা সেটা অস্বীকার করেন। ইরাক থেকে ফতোয়া দিলে পাকিস্তানি আলেমরা মানেন না। ইন্ডিয়ার আলেমরা বললে মালয়েশিয়ার আলেমরা মানেন না। এত মত, এত পথ কেন? সবগুলাই কি ঠিক হতে পারে? তা তো হতে পারে না।
আজকে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে তাকান- শিয়াকে মারার জন্য সুন্নির অস্ত্র প্রস্তুত, সুন্নিকে মারার জন্য শিয়ার অস্ত্র প্রস্তুত। আমার জানামতে এ পর্যন্ত শিয়া ইরানের প্রত্যেকটি গুলি মুসলমানদের হত্যা করতে ব্যবহৃত হয়েছে, আবার সৌদি আরবের নেতৃত্বে সুন্নি জোটের গুলিও মুসলিমদের হত্যা করতেই ব্যবহৃত হয়েছে। আমি জানতে চাই- শিয়ারা মুসলমান নাকি সুন্নিরা মুসলমান? কে জান্নাত যাবে? আল্লাহর কসম, কেউ জান্নাত যাবে না, জান্নাত যাবে মো’মেন। এটা আমার কথা নয়, আল্লাহর কথা। ওহে মুসলমান! কেন তোমাদের এই দুর্গতি, এর কারণ বুঝতে হবে। এক মসজিদের ইমাম মানেন না আরেক মসজিদের ইমামকে, এক মাদ্রাসার হুজুর মানেন না আরেক মাদ্রাসার হুজুরকে। কে জাতিকে রক্ষা করবে? কীভাবে বাঁচব আমরা। (আগামী পর্বে সমাপ্য)
সম্পাদনা: হেযবুত তওহীদের সহকারী সাহিত্য সম্পাদক মোহাম্মদ আসাদ আলী।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...