হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

মাদকব্যবসা, অস্ত্রব্যবসা, ধর্মব্যবসা: অর্থ ও স্বার্থই একমাত্র লক্ষ্য

সাইফুর রহমান:
মাদক মানুষকে বুঁদ করে দেয়। তার দেহ ও আত্মার অবনতি ঘটায়, তার সৃজনশীলতা ধ্বংস করে ও মানবিকতার সব গুণাবলীকে ক্রমে নিশ্চিহ্ন করে তাকে এক নিকৃষ্ট পশুতে পরিণত করে দেয়। মাদকব্যবসা যে সমাজে তার থাবা বিস্তার করে সেই সমাজ সর্বপ্রকার অপরাধে পূর্ণ হয়ে যায়। একটি মাদকাসক্ত সন্তান একটি পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়, তাদের সম্মান ধূলায় মিশিয়ে দেয়। মাদকের জন্য স্বামী তার স্ত্রীকে, ভাই তার বোনকে দেহব্যবসায় বাধ্য করে এমন ঘটনাও কম নয়। নেশা করার টাকা আদায়ের জন্য সন্তান বাবা-মাকে হত্যা করে ফেলেছে এমন ভুরি ভুরি উদাহরণ আমাদের সমাজে রয়েছে। যারা এই মাদকের কারবার করে তারা মাদকের এই কুফল সম্পর্কে কি অবহিত নন? তারা খুব ভালোভাবেই অবহিত, কিন্তু তারা এসবের পরোয়া করেন না। তাদের চাই টাকা। সেই টাকা যদি ছিনতাইয়ের টাকা হয়, সেই টাকায় যদি মানুষের রক্ত লেগে থাকে তবুও মাদক ব্যবসায়ীর কিছু এসে যায় না।
একজন অস্ত্রব্যবসায়ীর লক্ষ্য থাকে তার অস্ত্রটি যে কোনো প্রকারে উচ্চতম মূল্যে বিক্রি করা। সে সব সময় একজন ক্রেতার সন্ধানে থাকে। সেই ক্রেতা যদি ভাড়াটে খুনী, সন্ত্রাসী হয় তাতেও তার কোনো আপত্তি থাকে না। যে কোনো সংঘর্ষের সময় সে তার নিরপেক্ষতা বজায় রেখে বিবদমান উভয় পক্ষের কাছেই অস্ত্র বিক্রি করে থাকে। সে ভালো করেই জানে এই অস্ত্রের প্রতিটি গুলি একেকজন মানুষের প্রাণ কেড়ে নিতে ব্যবহৃত হবে তবু এতে তার বিবেকে কোনো দংশন অনুভব করে না। তার চাই অর্থ। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্রব্যবসায়ী দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র আর অস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হচ্ছে সৌদি আরব। যুদ্ধের জন্য কোনো আত্মিক প্রেরণা না থাকায় মেরিন সৈন্যরা মধ্যপ্রাচ্যে, ইরাকে, আফগানিস্তানের রণাঙ্গন থেকে বিমুখ হয়েছে, তারা হাজারে হাজারে আত্মহত্যা করেছে যুদ্ধাক্রান্ত দুর্বিসহ জীবনের হতাশাকে সামাল দিতে না পেরে। এদিকে রাষ্ট্রগুলোও যুদ্ধের বিপুল ব্যয় বহন করতে গিয়ে নিদারুণ আর্থিক মন্দায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। ওয়াল স্ট্রিট আন্দোলনের মতো বিরাট বিক্ষোভ সৃষ্টি করেছে এই যুদ্ধমুখী অর্থনীতি। এ থেকে পরিত্রাণের পথ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র বেছে নিয়েছে এক ভয়াবহ পন্থা। তারা এই দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধকেই আশ্রয় করেছে নিজেদের অর্থনীতিক শক্তিকে পুনর্নির্মাণ করতে। তারা মুসলিমদের একটি দলকে আরেকটি দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত করে দিয়েছে, অতঃপর কৌশলে উভয় দলের কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে। এক দলের কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে সৌদি আরবের মাধ্যমে আরেক দলের কাছে নিজেরাই সরাসরি করছে। গত ১৫ বছরে ন্যূনতম ২০ লক্ষ মুসলিম প্রাণ হারিয়েছে এই যুদ্ধের তাণ্ডবে, আর অট্টহাসি হাসছে অস্ত্রব্যবসায়ী মানবদরদী পরাশক্তি।
ধর্মকেও একইভাবে পণ্যে পরিণত করে প্রতিযুগে ধর্মব্যবসা করে গেছে এবং এখনও করছে বিভিন্ন রঙের ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণি। একটি শব্দের সঠিক বানান জানার জন্য মানুষ অভিধানের দ্বারস্থ হয়, তেমনি শান্তির উপায় জানতে মানুষ দ্বারস্থ হয় ধর্মের। কিন্তু অভিধানে ভুল থাকলে কী উপায় হবে? ধর্মব্যবসায়ীরা এই কাজটিই করে। তারা ধর্মকে নিজেদের স্বার্থে বিকৃত করে ফেলে, পরিণামে সেই ধর্ম থেকে আর শান্তি লাভ হয় না। ধর্ম হয়ে যায় অধর্মের হাতিয়ার, নির্যাতনের অস্ত্র। এছাড়া মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে তারা মসজিদের ইমামতি, মুর্দা দাফন, ওয়াজ মাহফিল, ফতোয়াবাজি, পীর-মুরিদি, তারাবি, বিয়ে পড়ানো ইত্যাদি হাজার রকমের পন্থায় স্বার্থ তালাশ করছে। তারা মানুষকে পরকালমুখীতার নামে আত্মকেন্দ্রিকতার শিক্ষা দিচ্ছে ফলে মানুষের ধর্মবিশ্বাস সমাজের কোনো উন্নয়নে কাজে আসছে না, মানবতার কল্যাণে লাগছে না। তারা বিভিন্ন কাজের লক্ষ লক্ষ সওয়াব আবিষ্কার করেছেন, কিন্তু এই সওয়াবটা যে কী তার ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত তারা কেউ দেন নি। তারা মানুষকে এ কথা মোটেও শিক্ষা দেন না যে, মানুষের শান্তির জন্য কাজ না করলে কোনো সওয়াবই কাউকে জান্নাতে নিতে পারবে না। তারা কেবল সেই কাজের প্রতিই জোর দেন যেগুলোর মধ্যে তাদের স্বার্থ জড়িত থাকে, যেমন মসজিদ-মাদ্রাসার নির্মাণে দান করা ইত্যাদি। আরেক শ্রেণির ধর্মব্যবসায়ী তাদের আর্থিক ও রাজনীতিক স্বার্থে জনগণের ধর্মবিশ্বাসকে যথেচ্ছ ব্যবহার করে। কোনো ছুতানাতা পেলেই ‘ধর্ম গেল, ধর্ম গেল’ রোল তুলে দিয়ে একটি উৎকট পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। তাদের ধমীয় সুর-লহরীতে প্রভাবিত হয়ে মানুষ জঙ্গিবাদের মতো ভয়ঙ্কর পথভ্রষ্টতার দিকেও পা বাড়ায়। এভাবে ধর্মবিশ্বাসী মানুষের দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ই ধ্বংস করে দিতে তাদের বিবেকে বাধে না।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...