হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

বর্তমান মোসলেম বিশ্বের নেতৃত্ব কোথায় নিয়ে যাচ্ছে জাতিকে?

(এ যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী’র লেখা থেকে)

শেষ প্রেরিত মহানবী মোহাম্মদ (দ:) সমস্ত মানবজাতির জন্য যে শেষ জীবনব্যবস্থা স্রষ্টা আল্লাহর কাছ থেকে নিয়ে এলেন তা হোল একটি পূর্ণ নিখুত ব্যবস্থা, যেটা অনুসরণ কোরলে মানবজাতি নিজেদের মধ্যে মারামারি, রক্তারক্তি না কোরে একটা শান্তিময়, প্রগতিশীল জীবন যাপন কোরতে পারে। স্বভাবতই এমন একটি জীবনব্যবস্থার মানুষের জীবনের প্রতিটি অঙ্গনের (ঋধপবঃ) জন্য আইন (ষধ)ি বিধান ইত্যাদি নির্দিষ্ট থাকবে। মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষানীতিক, প্রশাসনিক, পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত জীবনের নির্দেশ থাকবে এবং আছে। এগুলি যথাযথভাবে পালিত হোয়েছে মহানবীর (দ:) দেহান্তরের পর ৬০ থেকে ৭০ বৎসর পর্যন্ত। এর পর মোসলেম জাতি তার লক্ষ্য অর্থাৎ পৃথিবীতে এই জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা থেকে বিচ্যুত হোল। ফলে পূর্বতম জীবনব্যবস্থাগুলির মধ্যে যে সব বিকৃতি ঢুকেছিল, এই জীবনব্যবস্থায় সে সব ঢুকতে আরম্ভ কোরল এবং ক্রমে এমন অবস্থা সৃষ্টি হোল যে, পাশ্চাত্য খ্রিস্টান শক্তিগুলো সামরিকভাবে এ জাতিকে পরাস্থ কোরে খণ্ড খণ্ড কোরে নিজেদের মধ্যে ভাগ কোরে নিয়ে তাদের শাসন ও শোষণ কোরতে লাগলো। এখানে একটা লক্ষণীয় এবং তুলনীয় বিষয় আছে। যখন উম্মতে মোহাম্মদী তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য জানত, সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তারা নিজেদের ঘর বাড়ি, জমিজমা, ব্যবসা বাণিজ্য, স্ত্রী-পুত্র, সন্তান-সন্ততি এক কথায় পার্থিব সব কিছু বিসর্জন দিয়ে সেই লক্ষ্যে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তখন তাদের বাধা দিয়ে দাঁড়িয়েছিলো তদানীন্তন পৃথিবীর দুই বিশ্ব শক্তি একটি রোমান অপরটি পারস্য এবং একে একে নয়- একযোগে। তখন উম্মতে মোহাম্মদীর মোট জনসংখ্যা ছিলো পাচঁ লাখেরও কম এবং সম্পদে (জবংড়ঁৎপব) এবং অস্ত্র শস্ত্রে এত নগণ্য যে, ঐ বিশ্ব-শক্তিগুলো অবজ্ঞাভরে তাদের এই শর্ত দিয়েছিলো যে, উম্মতে মোহম্মদী যদি নিজেদের অসহায় অবস্থা উপলব্ধি কোরে নিজেদের দেশে, মরভূমিতে ফিরে যায় তবে তারা, বিশ্ব শক্তিরা দয়া কোরে তাদের ঐ ঔদ্ধত্য ক্ষমা কোরে দেবে এবং তাদের ফিরে যেতে দেবে, ধ্বংস কোরে দেবে না।
এ কথা তারা বোলেছিল যখন এই উম্মাহ তাদের সামনে তিনটি বিকল্প প্রস্তাব পেশ কোরেছিল যথা: প্রথমতঃ আল্লাহর সার্বভৌমত্ব তওহীদ ও বিশ্বনবীকে (দ:) স্বীকার কোরে নিয়ে শেষ জীবন বিধান গ্রহণ কর। তাহোলে তোমরা আমাদের ভাই হোয়ে যাবে এবং আমাদের সঙ্গে একত্র হোয়ে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমাদের সহযোগী হোয়ে যাবে।
দ্বিতীয়তঃ তাতে যদি সম্মত না হও তবে রাষ্ট্রশক্তি ও শাসনভার আমাদের হাতে ছেড়ে দাও, আমরা শেষ জীবন ব্যবস্থা অনুযায়ী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা কোরব, তোমরা ব্যক্তিগতভাবে যে যার ধর্মে আছো তাই থাকবে। আমরা বিন্দুমাত্র হস্তক্ষেপ কোরব না, তোমাদের একজোড়া ছেঁড়া জুতোও নেবনা। কিন্তু তোমাদের মধ্যে যারা আমরা শত্র“ দ্বারা আক্রান্ত হোলে আমাদের পক্ষ হোয়ে যুদ্ধ কোরবে না (শুধু যুদ্ধক্ষম লোক) তারা মাথা পিছু একটা কর দেবে।
তৃতীয়তঃ যদি এটাও স্বীকার না কর তবে আর যুদ্ধ ছাড়া পথ নেই। কারণ এই জীবন ব্যবস্থা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা কোরতে বিশ্বনবীর (দ:) উপর স্রষ্টার অর্পিত দায়িত্ব পূর্ণ কোরে পৃথিবীতে শান্তি, সুবিচার প্রতিষ্ঠা কোরতে, ইবলিসের চ্যালেঞ্জে আল্লাহকে জয়ী করাতে আমরা পার্থিব সব কিছু বিসর্জন দিয়ে এখন প্রাণ বিসর্জন দিতে এসেছি। তবে যুদ্ধ কোরে বিজয়ী হোয়ে যদি আমাদের তোমাদের উপর এই জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা কোরতে হয় তাহোলেও তোমাদের ধর্মে হস্তক্ষেপ কোরব না, তবে তোমাদের যোদ্ধাদের বন্দী করবো।
এই শর্ত তিনটির যে কোন একটা তোমাদের বেছে নিতে হবে। যদি তিনটির মধ্যে যুদ্ধই তোমরা বেছে নাও তবে জেনে রাখো, তোমাদের সৈন্যরা মদ ও নারী যতখানি ভালোবাসে আমরা আল্লাহর রাস্তায় জীবন দেওয়াকে ততখানি ভালোবাসি।
এই উত্তরের মধ্যে নিহিত রোয়েছে ইতিহাসে উম্মতে মোহাম্মদীর অবিশ্বাস্য সামরিক বিজয়ের কারণ। প্রতিটি মোসলেম পাগল হোয়েছিলো কেমন কোরে তার প্রাণ স্রষ্টার দরবারে উপহার দেবে। প্রতিটি মোসলেম মনে রাখত, সে তার স্ত্রী পুত্র, সম্পদ, সম্পত্তি সব আল্লাহর কাছে জান্নাতের বদলে বিক্রি কোরে দিয়ে, মহানবীর (সা:) অসমাপ্ত কাজ শেষ কোরতে বেরিয়ে এসেছে। তার সুন্নাহ পালন কোরতে বের হোয়ে এসেছে। পৃথিবীর কোন শক্তির সাধ্য নেই এমন জাতির অবরোধ কোরে দাঁড়ায় কারণ স্বয়ং আল্লাহ তাদের সাথে এই জন্য পার্থিবভাবে নগণ্য জাতি দুইটি বিশ্ব শক্তিকে বিধ্বস্ত কোরে দিয়ে পৃথিবীর একটা বিরাট অংশে শেষ জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা কোরলো।
এরপরে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভুলে যাবার পরিণামে পূর্ববর্তী জীবনব্যবস্থাগুলির মতো বিকৃত হোয়ে যাবার পর পাশ্চাত্য শক্তিগুলি যখন এই জাতিকে আক্রমণ কোরলো তখন পরিস্থিতি ঠিক উল্টো। অর্থাৎ মোসলেম দুনিয়া বিরাট তার জনবল, কোটি কোটি সম্পদে, সভ্যতায়, জ্ঞানে বিজ্ঞানে এবং সামরিক শক্তিতে তখন প্রচণ্ড, এবং অপর দিকে খ্রিস্টান শক্তি আর বিশ্ব শক্তি নেই। ইউরোপ ছোট ছোট রাষ্ট্রে বিভক্ত। কিন্ত এই উল্টো পরিস্থিতি সত্বেও ইতিহাসে পাচ্ছি যে, ছোট ছোট খ্রিস্টান শক্তিগুলি এই বিরাট মোসলেম জাহানকে সামরিকভাবে পরাস্থ কোরে, তাকে টুকরো টুকরো কোরে, নিজেদের মধ্যে ভাগ কোরে নিলো। আল্লাহ তো উম্মতে মোহাম্মদীকে সাহায্য কোরতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ (সূর রূম ৪৭)। এটা তো সম্ভব নয় যে, আল্লাহর সাহায্য সত্বেও এ জাতি যুদ্ধে হেরে গেলো কিংবা আল্লাহ তাঁর প্রতিশ্রতি ভঙ্গ কোরেছেন (নাউযুবিল্লাহ)। এর একমাত্র উত্তর হোল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ত্যাগ করার এবং পূর্ববর্তী অন্যান্য জীবনব্যবস্থার মতো আকীদা বিকৃত হোয়ে যাবার ফলে, তারা আর আল্লাহর চোখে উম্মতে মোহম্মদী ছিলো না, আজও নেই। মাসলা মাসায়েল ফেরকা মাযহাব নিয়ে নিজেদের মধ্যে মতবিরোধের ফলে ঐক্য ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হোয়ে গেল এবং বিকৃত সুফীবাদের কারণে জাতি অর্ন্তমুখী, ঘরমুখী হোল। কাজেই শত্র“র হামলা প্রতিরোধ করার মত তাদের আর শক্তি সামর্থ্য কোনটাই রইলো না।
তারপর কয়েক’শ বছর পশুর মতো দাস জীবন যাপনের পর, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ফলশ্র“তি হিসেবে যখন পাশ্চাত্য জাতিগুলো তাদের দাস খণ্ড খণ্ড তথাকথিত মোসলেম দেশগুলিকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা দিয়ে চোলে গেলো, তখন কেমন কোরে তাদের সৃষ্ট মানসিকভাবে তাদের কৃতদাস একটি শ্রেণির হাতে প্রশাসন দিয়ে গেলো তা আগে বোলে এসেছি। এই শ্রেণিটি শুধু চামড়ার রং টা বাদে সর্বদিক দিয়ে পাশ্চাত্য খ্রিস্টান জাতিগুলির মানসিক কৃতদাস, তারা পূর্বতন প্রভুদের দয়ায় ক্ষমতা হাতে পেয়ে প্রভুদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষাব্যবস্থা ইত্যাদি সমস্ত ব্যবস্থা নিজ নিজ জাতির উপর বহাল রাখলো। এই সব ব্যবস্থাকে মানুষের তৈরি, গায়রুল্লাহর তৈরি,সুতরাং শেরক এবং কুফর তা বোঝার শক্তিও তাদের নেই । অথচ এদের নাম আবদুর রহমান, আবদুল করিম। এদের মধ্যে অনেকের কপালে সালাত (নামাজ) পড়তে পড়তে দাগও হোয়েছে, এরা রোযাও রাখে, যাকাত দেয় এবং হজ্বও করে। এগুলো করাকেই তারা তাদের বিকৃত আকীদায় মোসলেম হবার জন্য এবং হাশরের দিনে আল্লাহর সামনে দাঁড়াবার জন্য যথেষ্ট মনে করে। তাদের ঐ কথা বোঝার জ্ঞান ও শক্তি নেই যে, আল্লাহর সরাসরি (উরৎবপঃ) আদেশগুলিকে ছেড়ে ফেলে দিয়ে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, তওহীদকে বাদ দিয়ে খ্রিস্টানদের তৈরি আইন ও দণ্ডবিধি প্রয়োগ যারা করে তাদের নামাজ রোযার আধা পয়সার দামও নেই আল্লাহর কাছে। তার চোখে তারা মোশরেক ও কাফের এবং ঐ আইন ও নিয়ম ঠিক মনে কোরে যারা চলে, তারাও মোশরেক ও কাফের। এই নেতারা জনসভায় বক্তৃতা করেন যে, ইসলামই হোচ্ছে সব সমস্যার সমাধান এবং একমাত্র ইসলামই পৃথিবীতে শান্তি আনতে পারে। এবং তারপর সচিবালয় ফিরে গিয়ে শাসন পরিচালনা করেন, আদেশ নির্দেশ দেন, পাশ্চাত্য পূর্বতন প্রভুরা যে আইন ও শাসন ব্যবস্থা শিখিয়ে গেছেন সেই মোতাবেক। এতো শুধু শেরক ও কুফর তাই নয় এ মোনাফেকীও।
প্রশ্ন হোচ্ছে এই নেতা ও শাসক শ্রেণি আটলান্টিকের তীর থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত যাদের হাতে পাশ্চাত্য প্রভুরা ক্ষমতা ছেড়ে গেছেন তারা এই যে গায়রুল্লাহর শাসন তথাকথিত মোসলেম জাতিগুলির উপর চাপিয়ে রেখে এই জাতিগুলির জনসাধারণ মেনে নিচ্ছে কেন? এর কিছুটা জবাব এর আগে দিয়ে এসেছি। আরও বোললে বোলতে হয় জনসাধারণও তথাকথিত মোসলেম। এই জনসাধারণ তথাকথিত মোসলেম জাতিরই বংশধর যারা কয়েক শতাব্দী পাশ্চাত্য শক্তিগুলির অধীন দাস ছিল। তাদের সেবা কোরে কৃতার্থ হোত। এবং যেহেতু তারা পরাধীন দাস জাতি ছিল সুতরাং এরা উম্মতে মোহাম্মাদী তো নয়ই এমনকি মোসলেমও ছিল না। জনসাধারণের এই দুর্ভাগ্যজনক অজ্ঞতার প্রধান কারণ পুরোহিত শ্রেণি। এই মরা জাতির আলেম, মুফতি, মোফাসসের, ফকিহ নামের যে পুরোহিত শ্রেণীটি আছেন এরা অজ্ঞ জনসাধারণকে সেই ইসলামটাই ওয়াজে, নসিহতে, মসজিদে, মক্তবে, মাদ্রাসায়, খানকায় শিক্ষা দিচ্ছেন যে ইসলামটা তাদের খ্রিস্টান প্রভুরা বহু গবেষণা কোরে তৈরি কোরেছেন এবং প্রায় দুইশত বছর ধরে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা কোরে নিজেরা অধ্যক্ষ পদ থেকে এদের মন মগজে অস্থি মজ্জায় সেই বিকৃত ইসলামটা গেঁড়ে দিয়ে গেছে। এই ইসলামটাই এই জনসাধারণকে শেখাচ্ছেন এবং সেই ইসলামটা বিক্রি কোরে জীবন ধারণ কোরছেন। সেই জন্য জনসাধারণ ও দুর্ভাগ্যজনকভাবে একতাবদ্ধ হোয়ে আল্লাহর তওহীদ প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম কোরছে না। (চোলবে…)

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...