হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

বর্তমান মোসলেম বিশ্বের নেতৃত্ব কোথায় নিয়ে যাচ্ছে জাতিকে? (৩য় পর্ব)

(যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী’র লেখা থেকে)

প্রশ্ন হতে পারে বস্তুতান্ত্রিক পাশ্চাত্য জগৎ ঐ কলকারখানা, ফ্যাক্টরী ইত্যাদি দিয়েই অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সফল হোল কেন, এর জবাব হোচ্ছে এই যে, পাশ্চাত্যের জাতিগুলি তাদের ভৌগলিক রাষ্ট্রে (ঘধঃরড়হ ঝঃধঃব) বিশ্বাসী এবং তাদের ঐ ভৌগোলিক রাষ্ট্রের স্বার্থকে তাদের অধিকাংশ মানুষ তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের ওপর স্থান দেয়া। তাদের শিক্ষিত লোকগুলি যদি দেখে যে কোন কাজে তার ব্যক্তিগত লাভ হবে কিন্ত রাষ্ট্রের ক্ষতি হবে এমন কাজ তাদের অধিকাংশ লোকই কোরবে না। তাদের বিদ্যালয়ে, স্কুল, কলেজে ছোট বেলা থেকেই কতগুলি বুনিয়াদী শিক্ষা এমনভাবে তাদের চরিত্রের মধ্যে গেঁথে দেওয়া হয় যে, তা থেকে কিছু সংখ্যক অপরাধী চরিত্রের লোক ছাড়া কেউ মুক্ত হোতে পারে না। ফলে দেখা যায় যে, ও সব দেশের মদখোর, মাতাল, ব্যভিচারীকে দিয়েও তাদের দেশের জাতীয় ক্ষতি হবে এমন কাজ করানো যায় না এবং মানুষের ক্ষতি হোতে পারে এমন কোন জিনিস বিক্রি করানো যায় না ইত্যাদি। পক্ষান্তরে প্রাচ্যের এই মোসলেম দেশগুলির নেতৃত্ব এখনও সেই ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রেখেছেন, যার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল একটি কেরানী শ্রেণি সৃষ্টি করা প্রভুদের শাসন যন্ত্রকে চালু রাখার জন্য। যে শিক্ষা ব্যবস্থায় লেখাপড়া ভাষা, অঙ্ক, ভুগোল, কিছু বিজ্ঞান, কিছু বিকৃত ইতিহাস শিক্ষা দেয়া হোত কিন্ত চরিত্র গঠনের কোন শিক্ষা তাতে ছিলনা এবং আজও নেই। কাজেই স¦ভাবতই পাশ্চাত্যের শিক্ষালয়গুলির ছাত্র ছাত্রীরা সুশৃঙ্খল, প্রাচ্যের ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্ছৃঙ্খল, সেখানে লেখাপড়া হয়, এখানে তথাকথিত রাজনীতি, ছুরি মারামারি, গোলাগুলী হয়। পাশ্চাত্যের শিক্ষালয়গুলি থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা একটা চরিত্র নিয়ে বের হয়। এরা অর্থাৎ প্রাচ্যদেশীয় শিক্ষিত লোকেরা যখন সরকারি, বেসরকারি চাকরিতে যোগ দেয়, রাজনৈতিক নেতৃত্ব লাভ করে তখন স্বভাবতঃই প্রাচ্য-পাশ্চাত্য কোন আদর্শ দিয়েই পরিচালিত হয় না। রাষ্ট্রের স্বার্থকে নিজের স্বার্থের ওপরে স্থান দেওয়ার পাশ্চাত্য শিক্ষা পায়নি বোলে রাষ্ট্রের ক্ষতি কোরেও নিজের স্বার্থ উদ্ধার করে। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে স্বার্থের জন্য নিজের দেশ বিক্রি কোরে দিতেও দ্বিধা করে না। এতে জনরোষের আশংকা থাকে বোলে আবার অনেক রাষ্ট্র প্রধান প্রাসাদের উপর হেলিপ্যাড তৈরি কোরে রেখেছেন যেন মওকা মত আকাশপথে পালিয়ে যেতে পারেন। অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ইসলামের শিক্ষা পায় নি শিক্ষিত শ্রেণিটি বোলে ঘুষ খায়, মিথ্যা বলে,ইসলামের যা কিছু আছে তার বিরুদ্ধাচারণ করে। কাজেই পাশ্চাত্যে যা কোরে সফল প্রাচ্যে তাই কোরতে যেয়ে ব্যর্থ। এই নেতৃত্ব মাছিমারা কেরাণির মত পূর্বপ্রভুদের এমন নিখুঁত অনুকরণ করেন যে, কোন কোন ক্ষেত্রে তা করুণ হোয়ে দাঁড়ায় এর মাত্র একটা এখানে আলোচনা কোরছি।
ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় (ভৌগোলিক রাষ্ট্র নয়) রাষ্ট্র প্রধান অর্থাৎ খলিফা রাষ্ট্র থেকে ভাতা পাবেন একজন সাধারণ মানুষের প্রয়োজন মোতাবেক, অর্থাৎ জীবনের মৌলিক প্রয়োজন, খাবার, কাপড়, বাসস্থান ইত্যাদি। কোন বিলাসিতা, আড়ম্বর, কোন জাঁক-জমকের জন্য রাষ্ট্র খরচ বহন কোরবে না। প্রকৃত ইসলামের যুগে খলিফারা এর বেশী পান নি। মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে বাসস্থানটাও তারা পান নি। কারণ খলিফা হবার আগে তাদের নিজেদের যে বাড়ি ছিলো তারা তাতেই থাকতেন এবং তা প্রায় কুঁড়েঘরের পর্যায়ের ব্যাপারে ছিলো। তারপর উম্মতে মোহম্মদী যখন তাদের নেতার (দ:) আরদ্ধ কাজ কোরতে কোরতে আটলান্টিকের সমুদ্রতট থেকে চীনের সীমান্ত পর্যন্ত এই জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করলো তখন পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি হোয়ে দাঁড়ালো এই উম্মাহ, তখনকার দিনের বিশ্ব শক্তি (ঝঁঢ়বৎ চড়বিৎ)। সামরিক ও অর্থনৈতিক এই উভয় দিক দিয়ে এই উম্মাহর সামনে দাঁড়াবার মত তখন পৃথিবীতে আর কেউ নেই। তদানিন্তন দুটো বিশ্ব শক্তিকে এই উম্মাহ, ইতমধ্যেই পরাজিত কোরে দিয়েছে। একটি বিশ্ব শক্তি এই উম্মাহর অন্তর্ভুক্তই হোয়ে গেছে (পারস্য)। কিন্তু খলিফাদের ভাতা ঐ-ই রোইলো। আলী (রা:) পর্যন্ত এই মহাশক্তির নেতারা তালি দেওয়া কাপড় পরে, অর্দ্ধাহারে থেকে, কুঁড়েঘরে বাস কোরে এই মহাশক্তির নেতৃত্ব কোরে গেছেন। কিন্তু ইউরোপের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলির দাসত্বের পর আবার যখন রাজনৈতিক স্বাধীনতা পাওয়া গেলো তখন এই জাতির নেতৃত্ব বাদরের মত বিগত পশ্চিমা প্রভুদের সব কিছু অনুকরণের সঙ্গে সঙ্গে তাদের নেতাদের অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, আইন সভার সদস্যদের মত মহা জাঁকজমক, চাকচিক্য ও বিলাসিতাও অনুকরণ কোরতে লাগলো। এই অন্ধ অনুকরণের প্রাণান্তকর প্রয়াসে এরা এটুকু ও বুঝলেন না যে যাদের অনুকরণ কোরতে চেষ্টা কোরছেন তারা বিরাট ধনী, তারা পৃথিবীটাকে কয়েক শতাব্দী ধোরে শোষণ কোরে সম্পদের পাহাড়ে বোসে আছে, তারা মহা শক্তিমান, তাদের ঐ আড়ম্বর, জাঁকজমক, বিলাসিতা সাজে, এদের সাজে না, হাস্যকর। এদের মনে রাখা উচিত এরা অভুক্ত, অর্দ্ধভুক্ত, আধমরা জাতিগুলির নেতা। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীরা না বুঝলেও তারা ক্ষান্ত হোলেন না। না বুঝলেও তারা ক্ষান্ত হোলেন না। পূর্ব প্রভুদের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা যেমন সুসজ্জিত প্রাসাদে বাস করেন এরাও তাই কোরতে লাগলেন। তাদের আইন পরিষদের সদস্যরা যে মানের জীবন-যাপন করে তাই কোরতে লাগলেন। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পাশ্চাত্যের জনগণের সঙ্গে প্রাচ্যের দেশগুলির কোন তুলনাই হয় না, কিন্ত পাশ্চাত্যের নেতৃবৃন্দের বিলাসিতার সঙ্গে প্রাচ্যের নকলবাজ নেতৃত্বের বিলাসিতার তুলনা হয়। পাশ্চাত্য দেশগুলির জনসাধারণ এই শোষিত জনগণের চেয়ে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বহু উপরে। তাদের পক্ষে তাদের সরকারের ঐ জাঁকজমক জোগান দেয়া কঠিন নয়। কিন্তু প্রাচ্যের গরীব জনসাধারণ, যাদের পরনের কাপড় নেই, পেটে খাবার নেই, তাদের পক্ষে তা অসম্ভব। কিন্তু ঐ অসম্ভবকেই তাদের সম্ভব কোরতে হোচ্ছে আরও না খেয়ে থেকে, আরও উলঙ্গ থেকে। এই বিলাসিতার ব্যয় বহন করে ঐ কুঁড়ের ঘরে বাস করে ক্ষুধার্ত মানুষ। ঔপনেবেশিক অধীনতা থেকে মুক্তি পাওয়ার সময়ের চেয়ে আজ গরীব দেশবাসি অনেক বেশী কর দিচ্ছে তাদের নিজ নিজ সরকার গুলোকে। আগে না খেয়ে টাকা যোগাত বিদেশী প্রভুদের, এখন আরও না খেয়ে থেকে কর দেয় নিজেদের নির্বাচিত সরকারকে। বিদেশী প্রভুদের যত কর দিতো, আজ নিজেদের নেতাদের জাঁকজমক, আড়ম্বর বজায় রাখতে তার চেয়ে অনেক বেশী কর দেয়। দেশী নেতাদের পাশ্চাত্যের ঠাঁট নকল করাও পাল্লা দিয়ে যেমন বাড়ছে সেই সঙ্গে গরীব জনসাধারণের উপর করের বোঝাও বাড়ছে।
আরব বিশ্বের প্রেক্ষাপট এদের থেকে কিছুটা ভিন্ন, এর কারণ তারা সরাসরি পশ্চিমা শক্তিগুলির উপনিবেশ হওয়া থেকে বেঁচে গিয়েছিল। কিছুদিন আগে পর্যন্ত তারা ছিল অতি গরীব। মাটির নিচ থেকে তেল বের হওয়ার পর থেকে হঠাৎ ধন দৌলত ও সম্পদে পৃথিবীর অন্যতম ধনী জাতিতে পরিণত হোয়েছে। এখন এদের সম্পদ রাখবার জায়গা নেই। এই সম্পদ তারা কিভাবে ব্যবহার কোরছে? এরা একটা অংশ এরা ব্যয় কোরছে পাশ্চাত্যের অনুকরণ কোরে দেশের রাস্তাঘাট, পুল, হাসপাতাল, বিদ্যালয়, বিরাট বিরাট প্রাসাদ, হোটেল, ফ্লাইওয়ে (ঋষুধিু) ইত্যাদি তৈরি কোরে। অঢেল টাকা ব্যয় কোরে এগুলো এমনভাবে তৈরি কোরছে যে, ইউরোপের, আমেরিকার মানুষরাও দেখে আশ্চর্য হোচ্ছে, হিংসা কোরছে। অগুণতি রাজকীয় প্রাসাদ, হোটেল, সমস্ত ইমারত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (অরৎ ঈড়হফরঃরড়হবফ)। শাদ্দাদ আল্লাহর সঙ্গে নাকি পাল্লা দিয়ে জান্নাত বানিয়েছিলো। সে আজ কবর থেকে উঠে এসে এদের শহর, নগর, পথ-ঘাট, হোটেল আর প্রাসাদগুলি দেখলে বোলবে- আমি আর কি বানিয়েছিলাম। সম্পদের অন্যভাগ তারা ব্যয় কোরছে অবিশ্বাস্য বিলাসিতায়, স্থূল জীবন উপভোগে, ইউরোপে, আমেরিকায়, জাপানে। দৈহিক ভোগে এরা কি পরিমাণ সম্পদ ব্যয় করে তা আমাদের মত গরীব দেশগুলির মোসলেমরা ধারণাও কোরতে পারবে না, লক্ষ লক্ষ ডলার তাদের কাছে কিছু নয়। তাদের ঐ অঢেল সম্পদের একটা মোটা ভাগ চলে যায় ঐ ইউরোপ, আমেরিকায়, জাপান ইত্যাদি দেশের কাছে, বিলাসিতার সামগ্রীর দাম হিসাবে। পৃথিবীর সবচেয়ে দামী গাড়ীগুলো কেনে এরাই। শুধু তাই নয়, রোলস রয়েস, মার্সিডিস, আলফা-রোমিও, সিট্রন, ক্যাডিলাক ইত্যাদি গাড়ী শুধু কিনেই তারা খুশী নয়, এই গাড়ীগুলির বাম্পার লাইনিং ইত্যাদি তারা খাঁটি সোনা দিয়ে মুড়ে দেয়। এদের বিলাসিতার বীভৎসতার সম্বন্ধে লিখতে গেলে একটা বই হোয়ে যাবে। কাজেই একটা ধারণা দেবার জন্য মাত্র দু’একটি ঘটনার উল্লেখ কোরছি। কিছুদিন আগে (আশির দশকের গোড়ার দিকে) তেল সমৃদ্ধ একটি দেশের বাদশাহ অবসর যাপনের জন্য কয়েক দিনের জন্য ফ্রান্সের ভূমধ্যসাগরীয় শহর ‘নীসে’ গিয়েছিলেন। এই শহরে তিনি এর আগেই একটি প্রাসাদ তৈরি কোরেছেন। এতে কামরা আছে একশতটি এবং কামরাগুলি ইউরোপের সবচেয়ে মূল্যবান আসবাব দিয়ে সজ্জিত। এই প্রাসাদ তৈরি কোরতে খরচ হোয়েছে মাত্র ছয় হাজার কোটি টাকা (আশির দশকের গোড়ার সময়ে আমাদের টাকার হিসাব)। এই বাদশাহর সোনার পাত মোড়ানো রোলস গাড়ীগুলির এক একটি দাম এক কোটি বিশ লাখ টাকা। তার নিজের ও পরিবারের ব্যবহারের জন্য যে বিমানগুলি আছে তার এক একটির দাম সাতচল্লিশ কোটি টাকা।
আরেকটি উদাহরণ- ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবল বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজন করা হয়। ঐ আসরে যারা সরাসরি স্টেডিয়ামে উপস্থিত হোয়ে খেলা দেখতে আগ্রহী এমন দর্শকদের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রের আলাদা আলাদা কোটা নির্ধারণ কোরে দেওয়া হয়। বাংলাদেশকে দেওয়া হোয়েছিল ছয় কি সাত জন দর্শকের কোটা। শুনে বিস্মিত হবেন যে, আরব দেশগুলির জন্য কোন নির্ধারিত কোটা ছিল না। বলা হোয়েছিল, আরব থেকে যত খুশি লোক খেলা দেখতে যেতে পারে তাদের কোন আপত্তি নেই। যুক্তরাষ্ট্র এই আরবদের ‘সর্বপ্রকার’ ভোগবিলাসের জন্য অসংখ্য বিলাসবহুল হোটেল সাজিয়ে রেখেছিল। কারণ যুক্তরাষ্ট্র জানে, যত আরবীয় তাদের দেশে আসবে ততই পেট্রো-ডলারে যুক্তরাষ্ট্র সমৃদ্ধ হবে। অতি সম্প্রতি সৌদি আরবের রাজপুত্র ফাইদ আল-সৌদি প্যারিসের ডিসনিল্যান্ডে তিন দিনে ২২ থেকে ২৪শে মে ২০১৩ তারিখে ১ কোটি ৫০ লক্ষ ইউরো অর্থাৎ বাংলাদেশী টাকায় ১৫২ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা খরচ করেছে বলে খবর দিয়েছে ফরাসি সংবাদ মাধ্যম। নিজের ডিগ্রী পাওয়ার আনন্দে ষাট জনের বেশী অতিথিকে নিয়ে পার্কের একটা গোটা এলাকা দখল করে উৎসব করেছে, দিনের বেলায় বিশেষ এলাকা আর রাতের বেলায় পার্ক বন্ধ হওয়া থেকে সকালে পার্ক খোলা অবধি পুরো এলাকা জুড়ে উৎসব করেছে। কী জঘন্য বিলাসিতা, শাদ্দাদ আর নমরুদও বোধ হয় লজ্জা পেত এই আরবীয়দের দেখে। এদের মধ্যে ইসলামের শিক্ষার কিছুমাত্র প্রভাবও থাকলে বা অন্য মোসলেম ভাইয়ের অভাব অনটন ও ক্ষুধার প্রতি ন্যূনতম অনুভূতি থাকলেও এরা এমন কদর্য বিলাসিতায় নিজেদের ডুবিয়ে দিতে পারতেন না।
এর ওপর অনুকরণের আরেক পরিণতি হোচ্ছে পাশ্চাত্যের ধরনের অর্থনৈতিক উন্নতির প্রচেষ্টা। ওহফঁংঃৎরধষরংঃ ব্যক্তিই হোক আর জাতিই হোক, নিজস্ব সত্তা হারিয়ে ফেলে অন্যের অন্ধ অনুকরণ যে কোরতে যায়, তার কোনটাই হয় না। এটাও হয়না ওটাও হয় না। এই ব্যাপারে এসেও তাই হোল; সেই করুণ ব্যর্থতা। কারণ বহু; একটা হোল চরিত্রের অভাব যেটা আগে বোলে এসেছি। দেশের, জাতীর স্বার্থের উপরে নিজের স্বার্থের স্থান, কাজে ফাঁকি পরিশ্রমের বিমুখতা ইত্যাদি। দ্বিতীয় হোল যে, প্রশাসন ব্যবস্থায়, অফসরহরংঃৎধঃরড়হ ংুংঃবস ঔপনিবেশিক প্রভুরা রেখে গেছেন সেটাকেও এই নেতৃত্ব ঠিক তেমনি ভাবেই বজায় রেখেছেন সেই একটা কারণে; হীনমন্যতার মানসিকতায়। অন্যান্য সব ব্যাপার যেমন নকল করায় ব্যর্থ হয়েছে এখানেও। প্রশাসনের ক্ষেত্রেও তেমনি ব্যর্থতা এসে দাঁড়িয়েছে ঐ একই কারণে, চরিত্রের অভাবে, এবং পাশ্চাত্যের প্রশাসন পদ্ধতি প্রাচ্যে প্রযোজ্য নয় বোলে। ওদেশে কোথাও কোন অপরাধ ঘটলে দু’ থেকে পাঁচ মিনিটে পুলিশ পৌঁছায় আর এসব দেশে চব্বিশ ঘণ্টায়ও পৌঁছায় না। ওদেশগুলিতে কোথাও দুর্ঘটনা হোলে কয়েক মিনিটের মধ্যে এ্যাম্বুলেন্স এসে আহতকে তীরবেগে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং এ্যাম্বুলেন্স পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার, নার্স ক্ষিপ্রতার সঙ্গে চিকিৎসা শুরু করে। আর এই জাতির দেশগুলিতে দুর্ঘটনা হোলে এ্যাম্বুলেন্স আসে অনেক চেষ্টা, ডাকাডাকির পর, যদি সেটা অচল হোয়ে পড়ে না থেকে থাকে, এবং হাসপাতালে পৌঁছার সময় অবধি যদি আহত বেঁচে থাকে তার দু’এক ঘণ্টা হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা বা পরিচর্যাহীন অবস্থায় পোড়ে থাকে। ওদেশে সরকারি অফিসে কোন ফাইল আরম্ভ হোলে, যথাসম্ভব কম সময়ে তার যা হবার তা হয়। এদেশে যদি ফাইলটি হারিয়ে না যায়, তবে রোজ যেয়ে চেষ্টা কোরতে হয় তাকে এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে নিতে এবং তা কোরতে কর্মকর্তাদের শুধু দৃষ্টি আকর্ষণ কোরতেই পকেটের পয়সা খরচ কোরতে হয় এবং তারপরও কর্মকর্তা পান চিবুতে চিবুতে বলেন, ‘আপনার কাজটা এখন হোচ্ছেনা ব্যস্ত আছি। দু’মাস পরে আসবেন।’ ওদেশে ট্রেনের আসা যাওয়া দেখে ঘড়ি মেলানো যায়। এদেশে ট্রেন ইত্যাদির সময়ের অমিল মিনিটের নয় অনেক ঘণ্টার। এ বলতে গেলে বহু হোয়ে যাবে। মোট কথা কোন তুলনাই চলে না। পাশ্চাত্যের এই অন্ধ অনুকরণের চেষ্টার ফল যা দাঁড়িয়েছে তাতে সম্মুখে অগ্রসর প্রগতি তো দূরের কথা জাতীয় ও ব্যক্তি জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে প্রাচ্যের প্রতিটি দেশ আজ শুধু পশ্চাত্যগামী নয়, অধঃগামী। উর্দ্ধগামী হোয়েছে শুধু জনসংখ্যায়, অপরাধে, খুনে, জখমে, চুরিতে, রাহাজানিতে এবং পাশ্চাত্যের কাছে ঋণের, ধারের অংকের পরিমাণে।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...