হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

ধর্মব্যবসার পক্ষে সহানুভূতি কেন?

মোহাম্মদ আসাদ আলী
পেটের দায়ে চুরি ডাকাতি করলে সমাজ তাকে ছেড়ে কথা বলে না। ক্ষেত্রবিশেষে গণপিটুনি দিয়ে মেরেও ফেলে। কেউ প্রশ্ন করে না, ‘আরে ভাই, চোরকে মারছেন কেন? চোর যদি চুরি না করে তাহলে সে খাবে কী? তার পরিবার চলবে কী করে?’ কেউ একথা বলে না। কিন্তু পেটের দায়ে ধর্মব্যবসা করলে সমাজ তার প্রতি একটা সিমপ্যাথি বোধ করে। তখন কেউ ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে বললে পাল্টা প্রশ্ন ধেয়ে আসে- ‘তুমি যে ধর্মের কাজ করে বিনিময় নেবার বিরুদ্ধে বলছো, তো যারা নামাজ পড়ান, ওয়াজ করেন, আজান দেন, কোর’আন শিক্ষা দেন, মিলাদ পড়ান, মুর্দা দাফন করেন, বিয়ে পড়ান, কোরবানির পশু জবাই দেন- তাদেরও তো ভরণ পোষণের দরকার আছে, পরিবার-পরিজন আছে, তারা খাবে কী করে?’
এমন প্রশ্ন ওঠে। তার কারণ চুরি ডাকাতি কতবড় অপরাধ আমরা তা জানি, তাই চোর খাবে কী- এমন প্রশ্ন তোলাকে অযৌক্তিক মনে করলেও ধর্মব্যবসা কতবড় অপরাধ তা জানি না। আমরা জানি না যে, চোরকেও আল্লাহ তওহীদ গ্রহণের শর্তে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন, কিন্তু ধর্মব্যবসায়ীদের ব্যাপারে কোনো ছাড় দেননি। আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না। তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। তাদেরকে বলেছেন জাহান্নামের আগুনখাদক!
আমরা আরও জানি না যে, চুরি ডাকাতি ইত্যাদির কারণে গুটিকতক মানুষ ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। কিন্তু ধর্মব্যবসার কারণে যে ক্ষতিটা হয় তা অপরিমেয় ও অপূরণীয়। ধর্মই বিকৃত হয়ে যায়। কোটি কোটি মানুষ যুগ যুগ ধরে সেই বিকৃত ধর্মের কারণে ক্ষতির শিকার হতে থাকে। সমাজে শান্তির বদলে অশান্তি নেমে আসে। এক সময় ধর্মের প্রতি মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আল্লাহ-রসুলকে গালি দেয়। ধর্মগ্রন্থের অবমাননা করে। সেই ক্ষতি কোনোকিছু দিয়েই পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হয় না।
আমরা হেযবুত তওহীদ যখন ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে বলি, অনেকে মনে করেন আমরা বুঝি আলেমদের বিরুদ্ধে লেগেছি। একজন ইমাম সাহেব কোনো একটা অজপাড়াগাঁয়ের একটি মসজিদে নামাজ পড়ান, বিনিময়ে কয়েকশ’ টাকা তাকে দেওয়া হয়, সেটাই আমাদের সহ্য হচ্ছে না! আসলে তা নয়। আমরা কারো দুই পয়সা ক্ষতি করার জন্য নামিনি। কারো রুটি-রোজগার বন্ধ করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমাদের উদ্দেশ্য অনেক বড়, অনেক মহান।
আমরা চাই মুসলিম উম্মাহর গোড়ার গলদটি তুলে ধরতে। কেন এদের আজ এত অধঃপতন, কেন তারা বিশ্বময় নির্যাতিত হচ্ছে, কেন যেখানে যায় ঘৃণা আর লাঞ্ছনা তাদের সাথে সাথে যায়। এই অবস্থা কীভাবে সৃষ্টি হলো, কখন এই উম্মাহর পচন আরম্ভ হলো- এই সত্যগুলো আমাদেরকে বলতে হয় উম্মাহর মুক্তির জন্যই, তাদেরকে নিশ্চিত ধ্বংস থেকে রক্ষা করার জন্যই।
কেউ যদি চুরি ডাকাতির বিরুদ্ধে কথা বলে, মানুষকে সচেতন করতে চায়, তার মানে কি এই যে, সেই ব্যক্তি দুই পয়সার ছিঁচকে চোরের ভাত মারতে চাচ্ছে? কখনই না। আপনি চোরের সমব্যথী হতে পারেন, কিন্তু চুরিকে আইনসম্মত বলতে পারেন না। আপনি ধর্মব্যবসায়ীদের পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণ নিয়ে চিন্তিত হচ্ছেন হোন, আমাদের আপত্তি নেই, কিন্তু স্বীকার করুন- ধর্মব্যবসা হারাম! কোনো যুক্তিতেই, কোনো সিমপ্যাথি দেখিয়েই ধর্মব্যবসাকে হালাল করার অধিকার আপনার বা আমার কারোরই নেই।
মোহাম্মদ আসাদ আলী: কলাম লেখক। ফেসবুক: https://www.facebook.com/asadali.ht

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...