হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশে বিশ্বাস করো আর কিছু অংশকে প্রত্যাখ্যান করো?

রাকীব আল হাসান

ইসলামের ভিত্তি হচ্ছে তওহীদ- একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে হুকুমদাতা হিসাবে না মানা। তওহীদের বিপরীত হচ্ছে শিরক বা অংশীবাদ। আল্লাহ ছাড়া কাউকে হুকুমদাতা হিসাবে গ্রহণ করাই অংশীবাদ। এটা এমন একটি অপরাধ যার ফলে একজন মুসলিম মুশরিক হয়ে যায়। যতক্ষণ না সে শিরক থেকে মুক্ত হলো, তার সকল ইবাদত, আমল ব্যর্থ হবে। কোনো কিছুই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। তাই শিরককে কেবল একটি গোনাহ বলা ঠিক হয় না, শিরক হচ্ছে ইসলাম থেকে বহির্গত হওয়ার প্রথম পথ। আল্লাহ ওয়াদা করেছেন তিনি শিরক ক্ষমা করবেন না। এ ছাড়া অন্যান্য গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিবেন (সুরা নিসা ৪৮, ১১৬)। তাহলে আল্লাহর ঘোষণা মোতাবেক বুঝা গেল শিরক ক্ষমার অযোগ্য, এবং এর একমাত্র প্রতিফল স্থায়ী জাহান্নাম। সুতরাং মানুষের একান্ত উচিত অন্তত শিরক থেকে মুক্ত হওয়া, শিরক থেকে মুক্ত থাকলেই জান্নাত নিশ্চিত- সেটা ছোট জান্নাত হোক আর বড় জান্নাতই হোক। এখন বোঝা দরকার এই শিরক কী?
বর্তমানের বিকৃত ইসলামে- মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকায়, ওয়াজ মাহফিলে আলোচনায় সর্বত্র অন্যান্য কবীরা ও সগীরা গোনাহ যেমন মিথ্যা বলা, চুরি করা, ব্যভিচার করা, ঘুষ খাওয়া ইত্যাদি না করার জন্য ওয়াজ নসিহত করা হয়ে থাকে। কিন্তু যে গোনাহটি কোনভাবেই ক্ষমা করা হবে না অর্থাৎ শিরক এই বিষয়টি তেমন কোনই গুরুত্ব পায় না। এর একমাত্র কারণ আকিদার বিকৃতি। বর্তমান ইসলামের ধর্ম ব্যবসায়ী আলেমরা কেবল আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো কিছুর সামনে সেজদা করাকেই শিরক বলে মনে করেন, যেমন মূর্তি পূজা, মাজার পূজা, পীরকে সেজদা করা ইত্যাদি। তারা আরও প্রচার করে যে, যেহেতু মুসলিম দাবিদার কেউ মূর্তিপূজা করে না তাই তারা শিরকও করে না। মাজার ও পীরপূজার সঙ্গেও অধিকাংশ মুসলিম জনগোষ্ঠী সম্পৃক্ত নয়। তাই তাদেরকে শিরক সম্পর্কে ওয়াজ করার প্রয়োজনও পড়ে না। তাদের প্রায়ন্ধ দৃষ্টিতে ঐ ১৪০০ বছর আগেকার কাঠ পাথরের মূর্তির সামনে মাথা নোয়ানো ছাড়া আর কোনো কাজকেই শিরক হিসাবে দেখতে পান না। মূর্তিপূজা, মাজার পূজা শিরক বটে, কিন্তু প্রকৃত শিরক হচ্ছে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও হুকুম মানা অর্থাৎ অন্যকে ইলাহ হিসাবে মানা, যে শিরকে এই জাতি আকণ্ঠ ডুবে আছে। আল্লাহ বলেন, “তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশে বিশ্বাস করো এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখ্যান করো? সুতরাং তোমাদের যারা এরূপ করে তাহাদের প্রতিফল পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা, অপমান এবং কেয়ামতের দিন কঠিনতম শাস্তি (সুরা বাকারা ৮৫)” এখানে আল্লাহ পার্থিব জীবনেই যে শাস্তির কথা বলছেন, আজ মুসলিম বলে পরিচিত এই জাতির অবস্থা কি ঠিক তাই নয়? আল্লাহর দেওয়া বিধান হলো আল কোর’আন। এই কোর’আনের কিছু মানা, কিছু না মানাই হলো শিরক। এ ব্যাপারে আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শিরক করাকে ক্ষমা করেন না; এটা ছাড়া সব কিছু তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন (সুরা নিসা ৪৮, ১১৬)। আল্লাহর দেওয়া বিধান কোর’আন থেকে নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত এই কয়েকটি বিধান এ জাতি ব্যক্তিগতভাবে পালন করে, তাও বিকৃতরূপে কিন্তু জাতীয় ও সমষ্টিগত জীবনে আল্লাহর দেওয়া বিধান যেমন অর্থনীতি, রাজনীতি, বিচার ব্যবস্থা, দণ্ডবিধি, শিক্ষাব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা ইত্যাদি বাদ দিয়ে মানুষের এবং ইহুদি-খ্রিষ্টান ‘সভ্যতা’ দাজ্জালের তৈরি বিধান মেনে চলছে। এই শিরকই হচ্ছে বড় জুলুম (সুরা লোকমান ১৩)। কাজেই এখন এ জাতির জন্য বিভিন্ন গোনাহ সংক্রান্ত ওয়াজ নসিহতের চাইতে জরুরি হচ্ছে শিরক মুক্ত হওয়া আর শিরক মুক্ত হওয়ার প্রথম পদক্ষেপ হলো আল্লাহর তওহীদে আসা, এছাড়া আর কোনো পথ নেই।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...