হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

কোন ইসলাম গ্রহণ করব?

মোহাম্মদ আসাদ আলী
একজন মুসলমান যুবক বিভিন্ন ধর্মের মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। তিনি মানুষের সামনে ইসলামের মহিমা, কোর’আনের অনন্যতা, ইসলামের সোনালি যুগের ইতিহাস ইত্যাদি বর্ণনা করে করে মানুষকে দাওয়াত দিতেন। তার বক্তব্যে মুগ্ধ হয়ে একজন ভিন্নধর্মাবলম্বী ইসলাম গ্রহণ করতে চাইল। ভদ্রলোকটি বললো- আমি তো ইসলাম গ্রহণ করবো কিন্তু তার আগে আমি ভালোভাবে ইসলাম সম্পর্কে জেনে নিতে চাই, মুসলমানদের সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞান অর্জন করতে চাই। কিছুদিন আমি এ বিষয় নিয়ে স্টাডি করি; তারপর আপনার কাছে আসব।
কিছুদিন পর ভদ্রলোকটি ঐ যুবকের কাছে এসে বললেন- আমি তো মুসলমান হতে চাই কিন্তু আমি আসলে শিয়া মুসলমান হবো না-কি সুন্নি মুসলমান হবো? যদি সুন্নি মুসলমান হই; তাহলে আমি কি হানাফি, হাম্বলি, মালেকি না-কি শাফেয়ি মতের অনুসারী হবো? আত্মার উন্নতির জন্য আমি কোন তরীকা অনুসরণ করবো- নক্সবন্দিয়া, মুজাদ্দেদিয়া, কাদেরিয়া, চিশতিয়া না-কি অন্য কিছু? আবার ইসলাম তো প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই প্রতিষ্ঠার জন্য কি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া গ্রহণ করব না-কি সশস্ত্র পন্থা গ্রহণ করব? রাজনৈতিক প্রক্রিয়া গ্রহণ করলে কোন দল গ্রহণ করব আর সশস্ত্র পন্থা গ্রহণ করলেই বা কোন দল গ্রহণ করব? এভাবে আরও কিছুক্ষণ ভদ্রলোক বলতে লাগলো; তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো- যদি শিয়া মুসলিম হই তাহলে সুন্নিরা আমাকে কাফের বলবে, আমার রক্তে হোলি খেলবে, আমাকে হত্যা করা ধর্মজ্ঞান করবে যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে চলছে।
একইভাবে যদি সুন্নি ইসলাম গ্রহণ করি তাহলে শিয়ারা আমাকে কাফের ফতোয়া দিয়ে হত্যা করতে আসবে। আমি যদি ইসলাম গ্রহণ করে হাজার হাজার পথের যে কোনো একটি গ্রহণ করি তাহলে বাকিদের চোখে আমি সেই কাফের-মোশরেকই থাকলাম, আমি তাদের ভাই না হয়ে শত্রুই থেকে গেলাম। এখন তো তবু পৃথিবীতে শান্তিতে থাকতে পারছি, আমার জাতি শক্তিশালী, বিত্তবান, জ্ঞান-বিজ্ঞান, তথ্য-প্রযুক্তি, শিক্ষা-দীক্ষা সমস্ত দিক থেকে এগিয়ে আছে, নিজেরা নিজেরা তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয় নিয়ে এতটা দ্ব›দ্ব-সংঘাত করে না- সার্বিকভাবে অন্তত দুনিয়ার জীবনে সুখীই আছি কিন্তু মুসলমান হলে তো সে সুখটুকুও হারাবো। সবগুলো জাতির হাতে নির্যাতিত, নিপীড়িত, লাঞ্ছিত হবো।
আমি এই কয়দিনে আপনাদের পবিত্র গ্রন্থ কোর’আন পড়েছি খুব মনোযোগ দিয়ে, বেশকিছু হাদিসগ্রন্থ পড়েছি, আপনাদের নবী (সা.) এর জীবনী গ্রন্থ পড়েছি। আপনাদের নবী (সা.) এর প্রতি এবং আপনাদের পবিত্র গ্রন্থের প্রতি আমার প্রচণ্ড শ্রদ্ধা জন্মেছে কিন্তু কেন জানি না- আপনাদের কারো মধ্যে কোর’আনের শিক্ষা বা নবীর শিক্ষা পেলাম না। আপনাদের নবী (সা.) এসে অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগের মক্কার সেই অনৈক্য, হানাহানিতে লিপ্ত বর্বর বেদুইনদেরকে কেমন সুসভ্য, সীসাগলানো প্রচীরের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ জাতিতে পরিণত করলেন। তাঁর হাতে গড়া তাঁর সঙ্গীরা প্রায় অর্ধপৃথিবীতে আপনাদের ধর্মটিকে প্রতিষ্ঠিত করলেন। আপনাদের খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) নিজের ভৃত্তকে উটের পিঠে উঠিয়ে মরুর রাস্তা পাড়ি দিলেন। সেই আদর্শ কোথায়? ঐক্যবদ্ধ জাতি এখন হাজার হাজার ভাগে বিভক্ত হয়ে গেলেন, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি হয়ে গেলেন দাস জাতি, শিক্ষকের জাতি হয়ে গেলেন শিক্ষা-দীক্ষায় পশ্চাৎপদ। আপনাকে একটা অনুরোধ করি- যদি পারেন সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে; একজাতি হয়ে জান্নাতের রাস্তা খুঁজে বের করুন। তারপর সেই রাস্তার সন্ধান নিয়ে আমার কাছে আসবেন, আমি অপেক্ষায় থাকব। এমন এক রাস্তা তৈরি করবেন যেন সেখানে শিয়া-সুন্নি, হানাফি-হাম্বলি, মুজাদ্দেদিয়া, নক্সবন্দিয়া ইত্যাদি ভাগ না থাকে, কেউ ইসলাম গ্রহণ করতে চাইলে সে যেন দ্বিধা-দ্ব›দ্ব ছাড়াই মুসলমান হতে পারে। মুসলমান হাবার পরে তার যেন একটাই পরিচয় হয়- সে একজন মুসলমান; একজন মো’মেন হয় মোহাম্মদ (সা.) এর অনুসারী তথা কোর’আনের অনুসারী।
যুবকের চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। কান্না বিজড়িত কণ্ঠে সে ভদ্রলোককে বললো- আজ আমাকে অনেক কিছু শিখালেন। এভাবে আমি কখনোই ভাবিনি। আজ আমি শপথ নিলাম- আমার জীবনের লক্ষ্য এখন একটাই, সেটা হলো- মানুষকে এক আল্লাহ, এক রসুল, এক কোর’আন আর এক কলেমার উপর ঐক্যবদ্ধ করব। যতদিন আমি বেঁচে থাকি ততদিন এ সংগ্রাম চালিয়ে যাব, আল্লাহর নিকট অন্তত বলতে পারব- হে আল্লাহ আমি তো আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি তোমার বান্দাদেরকে একজাতি করতে। সেই সাথে আপনার কাছেও একটা অনুরোধ- আসুন না, আমার এই সংগ্রামে আপনিও সামিল হোন। আমরা দু’জন অন্তত ভাই-ভাই হই। আমরা তো এক বাবা-মা আদম-হাওয়ারই সন্তান, আমরা তো একই স্রষ্টার সৃষ্টি। তাছাড়া আমি তো মনে করি আপনি আমার ধর্ম সম্পর্কে যতটা পড়েছেন এবং যে সত্য উপলব্ধি করেছেন তাতে আপনি একজন সত্যিকারের আলেম (জ্ঞানী)। এখন এই সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে মোজাহেদ হোন। ভদ্রলোক মুচকি হেসে বললো- লোকে আমাকে বলবে- “তোমার লেবাস কই? তুমি কি মাদ্রাসায় পড়েছ? তুমি ইসলামের কী বোঝ? তুমি তো মিঞা খ্রিষ্টানদের দালাল।
আমরা হেযবুত তওহীদ সেই আদর্শ পেয়ে গেছি। সমগ্র মানবজাতিকে এক আল্লাহর হুকুমের উপর ঐক্যবদ্ধ করার সংগ্রামে নেমেছি। সকল আদর্শের মানুষ, সকল ধর্মের মানুষ আমাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। মানুষের মনে আর এ প্রশ্ন থাকবে না যে, সে কোন ইসলাম গ্রহণ করবে, কারণ ইসলাম তো একটাই। প্রকৃত ইসলাম। আল্লাহ ও তাঁর রসুলের ইসলাম। এ ইসলাম আবার মানবজাতিকে সীসা গলানো প্রাচীরের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ করবে, সমাজ থেকে যাবতীয় অন্যায়, অবিচার, অশান্তি দূর করে ন্যায়, সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠত করবে। সকল মানুষ হবে ভাই-ভাই। একজনের দুঃখে অন্যজন এগিয়ে আসবে। মানুষে মানুষে আর ভেদাভেদ থাকবে না। আল্লাহ আমাদেরকে সেই প্রকৃত ইসলামের আদর্শের উপর ঐক্যবদ্ধ হবার তওফিক দান করুন, অটল থেকে জীবন-সম্পদ দিয়ে সংগ্রাম করার তওফিক দিন। আমিন।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...