হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

কে মো’মেন কে কাফের?

রাকীব আল হাসান:
মো’মেন ও কাফের, অতি পরিচিত ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দু’টি আরবি শব্দ। শব্দ দু’টির মাদ্দা, মাজদার, সিগা, বাব ইত্যাদি জটিল বৈয়াকরণীক প্যাঁচের মধ্যে না গিয়ে সরলভাবে বিশ্লেষণ করাই আমার এই লেখার উদ্দেশ্য। প্রথমে জানা যাক শব্দ দু’টির শাব্দিক অর্থ। মো’মেন শব্দের আভিধানিক অর্থ- বিশ্বাসী। মো’মেন শব্দটি ঈমান শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ বিশ্বাস। কাফের শব্দের আভিধানিক অর্থ- অবিশ্বাসী। যারা কোর’আনের বাংলা অনুবাদ পড়েন তারা নিশ্চয় লক্ষ কোরে থাকবেন যে মো’মেন ও কাফেরের বাংলা অনুবাদ এ দু’টি শব্দেই করা হোয়েছে। যদিও আরও বেশ কিছু অর্থ রয়েছে। যতটুকু বোঝা গেল শব্দ দু’টি বিপরীত অর্থবোধক। অর্থাৎ একই সাথে কেউ মো’মেন ও কাফের থাকতে পারে না এবং প্রত্যেক ব্যক্তিই হয় মো’মেন নতুবা কাফের হবেই।
এবার জানা যাক শব্দ দু’টির পারিভাষিক অর্থ। পারিভাষিক অর্থে মো’মেন হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে ইসলামের নির্দিষ্ট কিছু মৌলিক বিষয়ে বিশ্বাস রাখে। আর কাফের হোল ঐ বিষয় গুলিতে যে বিশ্বাস রাখে না।
স্বাভাবিকভাবে আমরা যেটা জানি, কাফের হবার বিশেষ কোনো প্রক্রিয়া নাই। মো’মেন না হওয়া মানেই কাফের হওয়া, সুতরাং মো’মেন হবার একটি প্রক্রিয়া থাকতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি হোল তওহীদে বা কলেমাতে (লা এলাহা এল্লাল্লাহ্- মুহাম্মাদুর রসুলাল্লাহ) মনে প্রাণে বিশ্বাস করে মুখে তার স্বীকৃতি দেওয়া এবং সেটা কাজে প্রতীয়মান করা। কেউ এই কলেমায় কৃত অঙ্গীকার থেকে সরে গেলে সে আর মো’মেন থাকলো না, মো’মেন থাকলো না মানেই কাফের হোয়ে গেল। সুতরাং এই কলেমাটিকে বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কলেমাতে দু’টি বিষয়ে আমাদের সাক্ষ্য দিতে হয়। ১. আল্লাহর উলুহিয়াত (লা এলাহা এল্লাল্লাহ্) এবং ২. মোহাম্মদ (দ:) বিন আব্দুল্লাহ’র রেসালাত (মোহাম্মাদুর রসুলাল্লাহ)। আল্লাহর উলুহিয়াত হোচ্ছে জীবনের প্রতিটা অঙ্গনে (ব্যক্তিগত, জাতীয়, আন্তর্জাতিক সকল পর্যায়ে) আল্লাহকে হুকুমদাতা হিসাবে মানা। অর্থাৎ যেখানেই আল্লাহর কোনো বক্তব্য থাকবে সেখানে আর কারো বক্তব্যের প্রাধান্য না দিয়ে আল্লাহর বক্তব্যের বাস্তবায়ন করতে পারলেই কেবল আল্লাহকে এলাহ্ হিসাবে মানা হোল। আর মোহাম্মদ (দ:) কে আল্লাহর রসুল হিসাবে বিশ্বাস করা হোল তাঁর রেসালাতে বিশ্বাস। মোহাম্মদ (দ:) কে রসুল হিসাবে বিশ্বাস কোরলে ও মেনে নিলে স্বাভাবিক ভাবেই আল্লাহ ও তাঁর রসুল (দ:) নির্দেশিত পথে চলাও অবশ্য কর্তব্য হয়ে পড়ে।
এবার মো’মেন ও কাফেরের সংজ্ঞা জেনে নেওয়া যাক। কে মো’মেন এবং কে কাফের তাঁর সংজ্ঞা দেওয়ার এখতিয়ার আল্লাহ ছাড়া আর কারও থাকতে পারে না এবং নেই। আমি এখানে শুধু আল্লাহ পাকের দেওয়া সংজ্ঞা উদ্ধৃত কোরছি। আল্লাহ পাক সুরা হুজরাতের ১৫ নং আয়াতে এরশাদ কোরেছেন, “নিশ্চয় মো’মেন শুধুমাত্র তারা যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রসুলের উপর ঈমান আনে, পরে কোনো সন্দেহ পোষণ করে না এবং সম্পদ ও জীবন দিয়ে (সত্যদীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য) আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ।” আল্লাহ এখানে মো’মেনের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন তা পরিপূর্ণ সংজ্ঞা, এর বাইরে আর কোন সংজ্ঞা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি মো’মেন শব্দটির আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ এবং মো’মেন হবার যে প্রক্রিয়া ইতোপূর্বে বর্ণনা করেছি তার সঠিকতা বিচার কোরব আল্লাহ পাকের দেওয়া সংজ্ঞার প্রেক্ষিতে।
আল্লাহ পাক প্রথমেই বোলেছেন “যারা বিশ্বাস স্থাপন করে”। আল্লাহ পাক এখানে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের উপর ঈমান আনয়ন বোলতে কলেমার স্বীকৃতি প্রদানের কথা বুঝিয়েছেন অর্থাৎ আল্লাহর উলুহিয়াত ও রসুলের রেসালাতে ঈমান আনার কথা বুঝিয়েছেন। মো’মেন হবার জন্য, ইসলামের গণ্ডিতে অন্তর্ভুক্ত থাকার জন্য এ পর্যন্তই যথেষ্ট। সুতরাং মো’মেন হবার জন্য শর্ত হোচ্ছে আল্লাহকে হুকুমদাতা এবং মোহাম্মদ (দ:) কে রসুল হিসাবে মেনে নেওয়া। কিন্তু বর্তমানে আল্লাহকে হুকুমদাতা হিসাবে কোথাও মানা হোচ্ছে না, শুধুমাত্র উপাস্য হিসাবে তাঁর উপাসনা করা হোচ্ছে। আর মো’মেন থাকার জন্য শর্ত হোচ্ছে বিশ্বাস আনয়নের পরে আর কোনো সন্দেহ পোষণ করা যাবে না এবং ঐ কলেমা (আল্লাহর উলুহিয়াত ও রসুলের রেসালাত) প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম কোরতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই সংগ্রাম কতদিন কোরতে হবে বা কবে থেকে আর সংগ্রামের প্রয়োজন হবে না? এ বিষয়ে আল্লাহ বোলেছেন, “আমি আমার রসুলকে সঠিক পথ প্রদর্শন (হেদায়াহ্) এবং সত্যদিন দিয়ে প্রেরণ কোরলাম এই জন্য যে তিনি যেন একে (এই হেদায়াহ ও সত্যদিনকে) পৃথিবীর অন্যান্য সমস্ত জীবন ব্যবস্থার উপর বিজয়ী বা প্রতিষ্ঠিত করেন”- (সুরা আল ফাতাহ্- ২৮, সুরা তওবা- ৩৩ এবং সুরা আস সাফ- ৯)। এটাই যে রসুলের আগমনের উদ্দেশ্য তার সত্যায়ন পাওয়া যায় রসুলের ঘোষণাতেই। তিনি বোলেছেন- আমি আদিষ্ট হোয়েছি মানব জাতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম (কেতাল) চালিয়ে যেতে যে পর্যন্ত না সমস্ত মানুষ আল্লাহকে একমাত্র এলাহ (হুকুম দাতা) এবং আমাকে তাঁর রসুল বোলে মেনে নেয় (হাদিস- আবদাল্লাহ বিন ওমর (রা:) থেকে- বোখারী, মেশকাত)। রসুল (দ:) তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে এতটাই সচেতন ছিলেন যে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এই সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন এবং চোলে যাবার সময় এই দায়িত্ব দিয়ে গেলেন তাঁর হাতে গড়া উম্মাহ’র উপর। তাঁর উম্মাহও দায়িত্ব পালনের জন্য তাঁদের মহান নেতার ওফাতের পরপরই সমস্ত কিছু ত্যাগ কোরে সংগ্রামে নেমেছিলেন ফলে মাত্র ৬০/৭০ বছরের মধ্যে অর্ধ পৃথিবী তাদের পায়ে লুটিয়ে পড়েছিল। এরপর দুর্ভাগ্যজনকভাবে জাতি দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম তথা জেহাদ ছেড়ে দিল, যদিও তখনও অর্ধ পৃথিবী ইসলামের ছায়াতলে আসা বাকি, অর্থাৎ রসুল (দ:) এর উপর অর্পিত দায়িত্ব পূর্ণ হয় নি। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে আল্লাহর দেয়া মো’মেনের সংজ্ঞা থেকে তারা কি বের হোয়ে গেলো না?
বর্তমানে পৃথিবীর এক ইঞ্চি জায়গাতেও আল্লাহকে এলাহ হিসাবে মানা হোচ্ছে না। অর্থাৎ আল্লাহর উলুহিয়াত (সার্বভৌমত্ব) ও মোহাম্মদ (দ:) এর আনীত কেতাব তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠিত নেই, এক কথায় ইসলাম প্রতিষ্ঠিত নেই। তাহোলে জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করা এখনও মো’মেন থাকার প্রধান একটি শর্ত। এ শর্ত পূরণ না করে আল্লাহর সংজ্ঞা মোতাবেক মো’মেন থাকার কোন সুযোগ নেই। সুতরাং বর্তমানে মো’মেন হওয়ার দাবিদার ১৬০ কোটির এই বিরাট জনসংখ্যা মোমেন নয়। আর মো’মেন না হওয়ার অর্থই কাফের হওয়া।
আল্লাহ মো’মেনদের সম্পর্কে বোলেছেন, “তোমরা যদি মো’মেন হও তবে পৃথিবীর কর্তৃত্ব তোমাদের হাতে দেব যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের দিয়েছিলাম (সুরা নূর- ৫৫)।” আবার আল্লাহ বোলেছেন, “যারা ঈমান এনেছে অর্থাৎ মো’মেন হয়েছে তাদের অভিভাবক নিশ্চয় আল্লাহ আর অবিশ্বাসীদের (কাফেরদের) কোনো অভিভাবক নেই।” (সুরা মুহাম্মাদ- ১১)। এখন যারা নিজেদেরকে মো’মেন বলে দাবি করেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, আপনাদের হাতে কি এই পৃথিবীর কর্তৃত্ব আছে? রূঢ় বাস্তবতা হোচ্ছে এই যে, পৃথিবীর কর্তৃত্ব তো দূরের কথা আপনারা পৃথিবীর সর্বত্র অন্য সব জাতি দ্বারা পরাজিত, অপমানিত, অবহেলিত, নিগৃহিত এবং প্রতিটি জাতির লাথি খাচ্ছেন, সব জাতি আপনাদেরকে ঘৃণার চোখে দেখছে, আপনাদের রাষ্ট্রগুলি আক্রমণ কোরে দখল কোরে নিচ্ছে (যদিও প্রকৃত ইসলামে ভৌগোলিক জাতিরাষ্ট্রের কোন ধারণা নেই, সুতরাং তা শেরক)। ইহুদি খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’ তথা দাজ্জালের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত্র পুরো মোসলেম নামক এই জাতি, আরব অনারব নির্বিশেষে সকলে ভয়ে তাদের পায়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। মো’মেন এর প্রতি আল্লাহর উল্লেখিত অঙ্গীকার থেকে বাস্তবতার দূরত্ব লক্ষ যোজন। সুতরাং যদি আল্লাহ সত্যি অঙ্গীকার রক্ষাকারী হোয়ে থাকেন, তাহোলে আপনারা মো’মেন হোতে পারেন না, এবং মো’মেন না হওয়ার মানেই কাফের হওয়া। আল্লাহ যদি আপনাদের অভিভাবকই হবেন তবে আপনাদের এই করুণ দুর্দশা কেন? আল্লাহ যাদের অভিভাবক নয় তারা কি মো’মেন? নিশ্চয় না।
এবার একটু সত্যিকারের মো’মেনদের সাথে অর্থাৎ রসুলাল্লাহর আসহাবদের সঙ্গে আজকের মো’মেন দাবিদারদের চরিত্র মিলিয়ে দেখি। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, সর্বোৎকৃষ্ট মো’মেন ছিলেন রসুলাল্লাহ’র আসহাবগণ। তাদের জীবন যাত্রার সাথে আমাদের জীবন যাত্রা একটু মিলিয়ে দেখি। আম্মা খাদীজা (রা:), আবু বকর (রা:), ওমর (রা:), ওসমান (রা:), আলী (রা:), বেলাল (রা:), আম্মার (রা:), আবু ওবায়দা (রা:), খালেদ বিন ওলিদ (রা:) প্রমুখ রসুলাল্লাহর সাহাবীরা তাঁদের প্রাণপ্রিয় নেতার (দ:) কাছ থেকে ইসলাম শিখে তাঁরা সেটিকে অর্থাৎ আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থাকে সমস্ত দুনিয়াময় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবজাতির সামষ্টিক জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের বাড়ি-ঘর, স্ত্রী, পুত্র, সহায় সম্পত্তি সর্বস্ব বিসর্জন দিয়ে অবশেষে নিজের প্রাণটুকু বিসর্জন দেওয়ার জন্য দুনিয়ার বুকে বহির্গত হোয়ে গিয়েছেন। এই অধিকাংশ সাহাবীর কবর হোয়েছে বিদেশের মাটিতে। তারা ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজ কোরতে গিয়ে পার্থিব বিনিময় নেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না বরং তারা অবর্ণনীয় নির্যাতন ও দুঃখ কষ্টের শিকার হোয়েছেন। তারা জান দিয়ে জাতির ঐক্য রক্ষা কোরেছেন, আল্লাহর রসুলের হুকুমের বিপরীতে কোন শক্তির কাছে মাথা নত করেন নি। তাদের এই অতুলনীয় কোরবানির বিনিময়ে আটলান্টিকের তীর থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত অর্ধ পৃথিবীতে আল্লাহ রসুলের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হোয়েছিল। কোন শক্তি দুনিয়াতে ছিল না যে এই জাতির দিকে চোখ তুলে তাকায়। জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, সামরিক শক্তিতে সকল জাতির শিক্ষকের আসনে অধিষ্ঠিত হোয়েছিলেন। আল্লাহর রসুলের ইসলাম যে জাতি গঠন কোরেছিল সে জাতির চরিত্রের সর্বপ্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল যোদ্ধার চরিত্র, তার প্রমাণ জাতির নেতা আল্লাহর রসুল (দ:) সহ সমস্ত জাতির মধ্যে এমন একটা লোকও বোধ হয় খুঁজে পাওয়া যেত না যার শরীরে অস্ত্রের আঘাত নেই। সেই মো’মেনদের অভিভাবক ছিলেন আল্লাহ্, আল্লাহ্ তাদের কাছে ওয়াদা রক্ষা কোরেছিলেন অর্থাৎ কর্তৃত্ব তাঁদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন, প্রমাণ কোরেছিলেন আল্লাহ তাঁর প্রতিশ্র“তির ব্যতিক্রম করেন না।
আমার কথাগুলো হয়তো অনেকের কাছে রূঢ় মনে হোতে পারে, কিন্তু আমি নিরূপায়, আমি যা বোলছি তা সত্যের খাতিরেই আমাকে বোলতে হোচ্ছে, নয়তো আল্লাহর কাছে আমি দায়ী থাকবো। আমি শুধু বলতে চাই আল্লাহর রসুল যে জাতি রেখে গেছেন, সে জাতির সঙ্গে বর্তমানের এই জাতিকে একটু মিলিয়ে দেখুন, তাহোলেই আমাদের আজকের এই হীনতা, এই লাঞ্ছনা, অনৈক্য পরিশেষে ইহুদি খ্রিস্টান সভ্যতার নিকৃষ্ট দাসত্বের কারণ দেখতে পাবেন।
বর্তমানের ইসলাম যে জাতি গঠন করে তার চরিত্রের সর্বপ্রধান বৈশিষ্ট্য হোচ্ছে কাপুরুষতা, ছোট বড় সমস্ত রকম সংঘর্ষ, বিপদ আপদ থেকে পলায়নপর মনোবৃত্তি। যে যতো বড় মো’মেন হবার দাবিদার সে তত বেশি কাপুরুষ; অস্ত্রের আঘাত তো দুরের কথা, এদের গায়ে সুঁচের খোঁচারও দাগ নেই। তসবীহ হাতে মসজিদে, খানকায় বোসে থাকে এবং কোন রকম বিপদের আভাষ পেলেই হাওয়ার বেগে ইঁদুরের গর্তে লুকিয়ে যায়। সম্প্রতি আমাদের দেশে একটি ঘটনা ঘোটেছে। আল্লাহ ও রসুলের অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল কোরতে গিয়ে পুলিসের ধাওয়া খেয়ে হাজার হাজার মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষক এমাম সাহেবরা এমনভাবে পালিয়েছেন যে পালাতে গিয়ে দিশেহারা হোয়ে কয়েকজন ঝাঁপ দিয়েছেন পদ্মানদীতে। এর তিনদিন পরে এক মাদ্রাসা ছাত্রের লাশ নদী থেকে উদ্ধার করা হয় (২৬ ফেব্র“য়ারি ২০১৩- দৈনিক ইত্তেফাক)। আজকে মো’মেন হবার দাবিদার এই জাতি পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট, তারা অন্য জাতি গুলির কাছে ফুটবলের মতো লাথি খাচ্ছে; লাঞ্ছনা, অপমান এদের গা সওয়া হোয়ে গেছে। আমরা এটুকু নির্দ্বিধায় বোলতে পারি যে, রসুলাল্লাহর হাতে গড়া সেই জাতি আর আজকের মো’মেনের দাবিদার এই জাতি এক তো নয়ই বরং সম্পূর্ণ বিপরীত। সুতরাং আজকের এই জাতিকে যদি আপনি মো’মেন বলেন আবশ্যই আপনাকে স্বীকার কোরতে হবে যে, রসুলাল্লাহর হাতে গড়া জাতিটি মো’মেন ছিলো না (নাউযুবিল্লাহ)।
আমি প্রথমেই বলে এসেছি যে মো’মেন ও কাফের বিপরীত শব্দ, যেমন সাদা-কালো, দিন-রাত, জান্নাতি-জাহান্নামী, সত্য-মিথ্যা ইত্যাদি। আপনি জান্নাতি না মানেই আপনি জাহান্নামী, আপনি সত্যবাদী না মানেই মিথ্যাবাদী; ঠিক একইভাবে আপনি মো’মেন না মানেই আপনি কাফের। কাফেরের আল্লাহ প্রদত্ত সংজ্ঞা হোচ্ছে- “যারা আল্লাহর নাজেল করা বিধান (কোর’আন) অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা ও শাসনকার্য পরিচালনা (হুকুম) করে না তারা কাফের।”- (সুরা মায়েদা-৪৪)
পৃথিবীর কোথায় কোর’আন অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালিত হোচ্ছে কেউ বোলতে পারেন? পৃথিবীর এক ইঞ্চি জায়গাতেও আল্লাহর সার্বভৌমত্ব অর্থাৎ আল্লাহর নিরঙ্কুশ আধিপত্য ও তাঁর নাযেলকৃত বিধান প্রতিষ্ঠিত নেই। তাহোলে আল্লাহর দেওয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী (মো’মেন, মোসলেমের দাবিদার) এ জাতি কি কাফের নয়?
কি সাংঘাতিক প্রশ্নের সামনে আপনাদের দাঁড় করালাম! এই উত্তরের মধ্যেই আপনি খুঁজে পাবেন আপনার পরিচয় আপনি মোমেন না কাফের, আপনি জান্নাতি না জাহান্নামী, আপনার নামাজ, রোজা ইত্যাদি কবুল হয় নাকি ব্যর্থ হয়, সবগুলি প্রশ্নের জবাব।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...