হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

এ সালাহ গৃহীত হয় না

hkhakaমোহাম্মদ জাকারিয়া হাবিব:
সালাহ উম্মতে মোহাম্মদীর কুচকাওয়াজ
আল্লাহ্র দীনকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে চরিত্র দরকার সে চরিত্র অর্জনের প্রক্রিয়া হচ্ছে সালাহ। শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক, চারিত্রিক উন্নতির ব্যবস্থা থাকলেও সালাতের মুখ্য ও মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সুশৃঙ্খলভাবে নেতার আদেশ পালনে দুর্ধর্ষ অপরাজেয় যোদ্ধার চরিত্র সৃষ্টি। বর্তমানে পৃথিবীময় যে সালাহ বা নামাজ পড়া হয় এ সালাহ কি সেই চরিত্রের মানুষ তৈরি করছে? অবশ্যই নয়; বরং ঠিক উল্টোটাই করছে। বর্তমানে সালাহ যে চরিত্রের জাতি সৃষ্টি করছে তা শত্র“ দেখে ভীত, শত্র“র কাছে পরাজিত, লাঞ্ছিত, শত্র“র অবজ্ঞার পাত্র আর নিজেদের মধ্যে হিংসা, ঈর্ষা অনৈক্য আর বিভেদ ও সংঘর্ষে লিপ্ত। কিন্তু বর্তমানে সালাতের এই উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে সবাই সালাহকে ধ্যান হিসাবে গ্রহণ করেছে। কিন্তু একটু খেয়াল করলে দেখা যায় সালাতের ভেতর ধ্যান করা সম্ভব নয়। ধ্যান এবং সালাহ দু’টি বিপরীত জিনিস। ধ্যান করতে হয় নির্জনে গিয়ে কিন্তু সালাহ পোড়তে হয় জামাতের সাথে যেখানে অনেক মানুষের সমাবেশ ঘটে। আবার ধ্যান করতে হয় চোখ বন্ধ করে কিন্তু সালাতে সব সময় চোখ খোলা রাখতে হয়। পৃথিবীতে শুধু একটি বিষয়ের সাথে সালাতের মিল দেখা যায় আর তা হচ্ছে সামরিক কুচকাওয়াজ।
রসুলাল্লাহর কথা
রসুলাল্লাহ্ (দ:) বলেছেন, ইসলাম একটি ঘর। এই ঘরের থাম, খুঁটি, স্তম্ভ হচ্ছে সালাহ আর ছাদ হচ্ছে জেহাদ [হাদিস- মুয়ায (রা.) থেকে আহ্মদ, তিরমিযি, ইবনে মাজাহ্, মেশকাত]। ঘরের খাম, খুঁটি তৈরি করেও যদি উপরে ছাদ তৈরি না করা হয় তবে সেই ঘরে বসবাস করা যাবে না। আজ থাম, খুঁটি তৈরিকেই যথেষ্ট মনে করে সালাহ পড়া হচ্ছে আপ্রাণ চেষ্টা করে; উপরে ছাদ তৈরির কথা ১৩০০ বছর আগেই ভুলে যাওয়া হয়েছে। আজকের এই বিকৃত ইসলামের ঘরের বহু থাম, খুঁটি স্তম্ভ আছে, ছাদ নেই; ছাদ নেই বলেই খ্রিস্টান, ইহুদি, হিন্দু ও বৌদ্ধের হাতে পরাজয়, লাঞ্ছনা অপমানরূপে ঝড়, বৃষ্টি, প্রখর রোদ ঐ ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে একে বসবাসের একেবারে অযোগ্য করে ফেলেছে। কিন্তু মুসলিম নামধারী এই জনসংখ্যার সেই বোধ নেই। আল্লাহ্ রসুলের (দ:) হাদিস থেকে এ কথা পরিস্কার যে সালাতের উদ্দেশ্য হলো ছাদকে উপরে ধরে রাখা, জেহাদকে কার্যকরী করা কিন্তু জেহাদ, যুদ্ধ করে জয়ী হওয়ার জন্য যে চরিত্র প্রয়োজন সেই চরিত্র সৃষ্টি করা; সুতরাং সালাহ জেহাদের প্রশিক্ষণ কাজেই জেহাদ, প্রচেষ্টা, সংগ্রাম যদি বাদ দেয়া হয় তবে সালাহ অর্থহীন, অপ্রয়োজনীয়। যেমন যেকোন সামরিক বাহিনী যদি যুদ্ধ করা ছেড়ে দেয় তবে তাদের প্যারেড, কুচকাওয়াজ করা যেমন অর্থহীন যেমন ছাদ তৈরি করা না হলে খাম খুঁটি অর্থহীন।
ইসলামের ভিত্তিই আজ অদৃশ্য
আল্লাহ্ ইসলামের যে ঘরটি ১৪০০ বছর আগে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তার ভিত্তি আল্লাহ্র তওহীদ আজ নেই। আল্লাহর তওহীদ হলো তাঁর সার্বভৌমত্ব; অর্থাৎ ব্যক্তি, পরিবার, জাতি, রাষ্ট্র আইন কানুন দণ্ডবিধি, অর্থনীতি, সমাজব্যবস্থা, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প ইত্যাদি সর্ববিষয়ে আল্লাহ্র আদেশ নিষেধ ছাড়া আর কাউকে গ্রহণ না করা; এক কথায় যেকোন বিষয়ে, যেখানে আল্লাহ্র ও তাঁর রসুলের (দ:) কোন বক্তব্য আছে, নির্দেশ আছে সেখানে পৃথিবীর আর কাউকে স্বীকার না করা। এই তওহীদ আজ পৃথিবীর কোথাও নেই। মুসলিম রাষ্ট্র বলে পরিচিত কোন রাষ্ট্রেও নেই, যে তওহীদ মহান আল্লাহ্ গ্রহণ করবেন। এর নিচে যা আছে অর্থাৎ আজ মুসলিম দুনিয়ায় যা চলছে তা র্শেক ও কুফর। তারপরে সেই ঘরের ছাদ জেহাদও নেই তাহলে রইল কি? রোইল ঘরটার শুধু খাম, খুঁটি। এবং সমস্ত জাতি বিকৃত আকিদায় ঐ খাম, খুঁটিকে অর্থাৎ সালাহকে আঁকড়িয়ে ধরে আছে। যেহেতু তওহীদের দৃঢ় ভিত্তি নেই সেহেতু ঐ খাম, খুঁটিগুলিও আর খাম খুঁটি, স্তম্ভ নেই; ওগুলো ভঙ্গুর, ঠুনকো ও মৃদু আঘাতেই ওগুলো ধসে পড়ে যায়, ওগুলো আর যোদ্ধার চরিত্র সৃষ্টি করতে পারে না। আল্লাহ্র রসুলের বহুবারের দেয়া তাগিদ তোমাদের সালাতের লাইন ধনুকের ছিলার মতো সোজা কর নাহলে আল্লাহ্ তোমাদের মুখ পিছন দিকে ঘুরিয়ে দিবেন, তাঁর আদেশ তোমাদের মেরুদণ্ড, ঘাড় সোজা করে সালাতে দাঁড়াও এসমস্ত কিছুই আজ ভুলে যাওয়া হয়েছে। এসব হুকুম না মুসুল্লিদের মনে না এমামদের মনে আছে। আল্লাহ্ কোর’আনে সুরা নেসার ১৪১-১৪২ নং আয়াতে মোনাফেকদের সালাতের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, মোনাফেকরা শৈথিল্যের সাথে সালাতে দাঁড়ায়। আল্লাহ্ শব্দ ব্যবহার করেছেন ‘কুসালা’ যার অর্থ সাহস হারিয়ে ফেলা, অলসতা, ঢিলে-ঢালাভাবে। বর্তমান বিশ্বের মুসলিম নামক এ জাতির সালাতের দিকে তাকালে ‘কুসালা’ শব্দের অর্থ বুঝতে কারো কষ্ট হবে না। সমস্ত বিশ্বে বর্তমানে এই সাহসহীন সালাহই চলছে। ফলে তাদের এই সালাহ গৃহীত হচ্ছে না।
[ইসলামের প্রকৃত সালাহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর লেখা “ইসলামের প্রকৃত সালাহ” বইটি পড়ার অনুরোধ করছি।]

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...