হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

উম্মতে মোহাম্মদীর পতন যেভাবে হলো

হেলাল উদ্দিন

মহানবীর এন্তেকালের পর ৬০/৭০ বছর পর্যন্ত উম্মতে মোহাম্মদী জাতিটি জীবন উৎসর্গকারী একটি মহাজাতি ছিল।  এরপর তাদের মধ্যে দেখা দিল দুর্ভাগ্যজনক উদ্দেশ্যচ্যুতি ।  তারা ভুলে গেল কেন তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছিল।  সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনপণ সংগ্রাম ত্যাগ করে তারা অন্যান্য রাজা বাদশাহদের মতো ভোগ বিলাস ও আরাম আয়েশে মত্ত হয়ে পড়ল।  এই সময়ে জাতির মধ্যে গজিয়ে উঠল দীনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণকারী ফকীহ, আলেম ও ইমামগণ।  তারা অখণ্ড জাতিটিকে ভেঙ্গে বহু মাযহাব, ফেরকা, দল উপদলে খণ্ড বিখণ্ড করে ফেলল।  অপরদিকে ভারসাম্যহীন সুফি মতবাদের প্রভাবে জাতির মধ্যে সুফি, দরবেশ, আধ্যাত্মিক সাধক, পীর ও মুরিদের প্রকোপ শুরু হলো।  তারা জাতির বহিঃর্মুখী সংগ্রামী প্রেরণাকে উল্টিয়ে অন্তঃর্মুখী করে দিল। জাতির সংগ্রামী চরিত্র দিন দিন অদৃশ্য হয়ে যেতে লাগল। এই শুরু হলো জাতির পঁচন ক্রিয়া আর পতনের পর্ব।  একদিকে জাতি পার্থিব সর্ববিষয়ে সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে লাগল, আর অপর দিকে জাতির সংগ্রামী চরিত্র লুপ্ত হতে লাগল। আল্লাহর রসুল বলেছিলেন, ইসলাম নামক বাড়ির ছাদ হচ্ছে সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।  ছাদই বাড়ির বাসিন্দাদের রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ের হাত থেকে নিরাপত্তা দেয়।  এই ছাদ সংগ্রাম যখন পরিত্যক্ত হলো উম্মতে মোহাম্মদীর হাতে একদা পরাজিত শত্রুরা এবং আভ্যন্তরীণ শত্র“রা সক্রিয় হয়ে উঠল। কয়েকশ’ বছর শান শওকতের সঙ্গে রাজত্ব করার পর এল তাদের পতনের পালা।  আল্লাহ বলেছেন জাতি যদি সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা, সংগ্রাম ত্যাগ করে তিনি তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেবেন এবং তাদেরকে অন্যজাতির গোলামে পরিণত করে দেবেন (সুরা তওবা ৩৯)।  আল্লাহর এত কঠোর সাবধানবাণী সত্ত্বেও জাতি ফিরল না।  সুতরাং ওয়াদা মোতাবেক আল্লাহ এই জাতিকে ইউরোপিয়ান খ্রিস্টান জাতিগুলির গোলামে পরিণত করে দিলেন এবং তাদের হাতে মর্মন্তুদ শাস্তি দিলেন।

এই ইউরোপীয় প্রভুরা প্রথমেই যে কাজটি করল তা হচ্ছে, তারা মুসলিম দুনিয়ায় বিকৃতভাবে হলেও ইসলামের যে আইন-কানুন, অর্থনীতি, দণ্ডবিধি অর্থাৎ জীবনব্যবস্থা চালু ছিল সেটাকে বাদ দিল এবং নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ জীবনব্যবস্থা ও আত্মাহীন বস্তুবাদী সভ্যতা কার্যকরী করল।  তাদের জীবনব্যবস্থাটি ছিল সম্পূর্ণরূপেই মানবরচিত, সেখানে আল্লাহ অর্থাৎ ধর্মের কোনো অংশ ছিল না।  যেহেতু মানব সভ্যতার সকল ন্যায়-নীতি, আদর্শ, নৈতিকতার শিক্ষার একমাত্র উৎস হচ্ছে ধর্ম তথা স্রষ্টা আল্লাহ। যে জীবনব্যবস্থা স্রষ্টার শিক্ষাহীন তাতে কোনো ন্যায় নীতি আদর্শের লেশ থাকবে না এটা তো জানা কথা।  তাই কয়েক শতাব্দী ধরে ঔপনিবেশিক শাসনামলে এবং তৎপরবর্তী সময়ে এই ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি ব্যবস্থার চর্চার ফলে মুসলিম নামক জাতিটি হয়ে পড়েছে আত্মাহীন, নৈতিকতাহীন, অসৎ চরিত্রের অধিকারী।  বিশেষ করে সবচেয়ে দুরাবস্থা এই জাতির যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের। সমস্ত মুসলিম দুনিয়াকে ৫৫টির বেশি ভৌগোলিক রাষ্ট্রে বিভক্ত করে ফেলা হলো।  পশ্চিমা বস্তুবাদী, স্রষ্টাহীন সভ্যতা দুনিয়াকে উন্নত বিশ্ব, উন্নয়নশীল বিশ্ব ইত্যাদি ভাগে ভাগ করল। মুসলিম দুনিয়ার নেতারা বিশেষ করে আরব বিশ্বের নেতারা যে জঘন্য ও পাশবিক বিলাসিতায় জীবন অতিবাহিত করেন তা আমাদের মতো দরিদ্র মুসলিম দেশের মানুষ কল্পনাও করতে পারবে না।  আর তৃতীয় বিশ্বের নেতত্বের জন্য ষড়যন্ত্র, দাঙ্গা, মিথ্যাচার, রাষ্ট্রের সম্পদ লুণ্ঠন ইত্যাদি তো অতি সাধারণ ঘটনা। তারা সর্বক্ষণ তাদের একে অপরের বিরুদ্ধে বিবাদে এবং শত্র“তায় লিপ্ত, পরস্পরকে প্রকাশ্যে অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করতে তারা কসুর করেন না, মিথ্যা গল্প বানিয়ে সম্মানিত ব্যক্তিদের চরিত্র হনন করা তাদের একটি প্রিয় কাজ।  প্রশ্ন হলো তাদের এই দুঃশ্চরিত্রের কারণ কী?

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...