হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

ইসলামের সালাহ্ এবং মানবদেহের কঙ্কাল

রাশেদুল হাসান অন্তিক

মানুষের শরীরের প্রধান অংশ কী? এটি হলো আত্মা বা জীবন। যতক্ষণ হৃৎপিণ্ড সচল থাকে মানুষ ততক্ষণ জীবিত থাকে। তাই ইসলামের আত্মা, প্রাণ বা হৃৎপিণ্ডের তুলনা হয় তওহীদের সঙ্গে। আর রক্ত চলাচল সব সময় শরীরকে উষ্ণ রাখে, মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি কোষকে জীবিত রাখে এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গের বৃদ্ধি (Development) ঘটায়। জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ হলো ইসলামের এই রক্ত চলাচল। ইসলাম প্রসার, দীন প্রতিষ্ঠা, ইসলামের উন্নতি (Development) সব ঘটায় এই সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। সংগ্রাম বন্ধ মানেই ইসলাম শেষ ঠিক যেমন রক্ত চলাচল বন্ধ হলে মানুষ মৃত, একমুহূর্তও আর বাঁচতে পারবে না। এই দুইটা একদম অপরিহার্য, আত্মা আর রক্ত চলাচল। ইসলামেরও এই দুইটা খুব গুরুত্বপূর্ণ – তওহীদ ও সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। এই দুইটাই মুমিনের সংজ্ঞায় আল্লাহ দিয়ে দিয়েছেন- আল্লাহ ও তাঁর রসুলের প্রতি ঈমান অর্থাৎ তওহীদ এবং এ তওহীদ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। মুমিনের সংজ্ঞা ইসলামের সংজ্ঞা একই। আবার মানবদেহের মধ্যে যেমন Brain (মস্তিষ্ক ) এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। একটা মানুষ যতো শক্তিশালী হোক, স্বাস্থ্যবান হোক তার মস্তিষ্ক যদি বিকৃত হয়, সে কী কাজ করবে, কখন করবে, কিভাবে করবে, কার সঙ্গে কী ব্যবহার করবে, কিসের গুরুত্ব বেশি, কোনটা মূল্যবান, কোনটা মূল্যহীন তা বুঝবে না। একইভাবে দীনের আকিদা যদি বিকৃত হয় সবকিছু ওলটপালট হয়ে যাবে। কোন্ ইবাদত কী জন্য, ইসলামের কোন বিষয়টা কী জন্য, সালাহ কী জন্য, হজ্ব কী জন্য, যাকাত কী জন্য এটা মুসলিম জাতির ধারণায় আর থাকবে না। জাতির দিকনির্দেশনা (Direction) উল্টে যাবে। শুধু তাই না, কী জন্য, কেন আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করছেন, কেন আল্লাহ সালাহ দিয়েছেন, কেন আল্লাহ সওম দিয়েছেন, কেন হজ্ব দিয়েছেন, কেন যাকাত দিয়েছেন – এগুলো সে কিছুই বলতে পারবে না। অর্থাৎ আজকে এই জাতির যে অবস্থা ঠিক সেইটা হবে। তেমনি সালাহ হচ্ছে ইসলামের কঙ্কাল-স্বরূপ। মানুষের শরীরের মাংস, রক্ত, ধমনী, শিরা-উপশিরাগুলো (Vein, artery) ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড, মগজসহ দেহের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কলা সমস্ত কিছু অবস্থিত আছে, দাঁড়িয়ে আছে কঙ্কালের (Skeleton) উপরে। এই যে মানুষ দৌড়াদৌড়ি করছে, হাঁটাহাঁটি করছে অর্থাৎ যথাযথভাবে (Properly) যে জিনিসটা যে জায়গায় থাকা দরকার, চামড়া, মাংস, রক্তের শিরা-উপশিরা, রক্ত চলাচল, মস্তিস্ক, ফুসফুস, কিডনি, যকৃৎ (Liver), হৃৎপিণ্ড (Heart)) এইগুলো যেটা যেখানে থাকা দরকার সেইভাবে যথাযথ স্থানে রাখে এই কঙ্কাল। কঙ্কালটা যদি সরিয়ে ফেলা হয় তখন কী হবে? সব চামড়া, মাংস, শিরা, ধমনী, রক্ত স্তুপিকৃত হয়ে যাবে। কিছুই তার নিজের জায়গায় থাকবে না অর্থাৎ ধসে পড়বে, স্তুপিকৃত হয়ে পড়বে। ইসলামেরও যদি সালাহ না থাকে সব কিছু ধসে পড়বে। আকিদা নষ্ট হয়ে যাবে, রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে, সংগ্রাম থাকবে না, তওহীদ হারিয়ে যাবে। কিভাবে? একটা উদাহরণ দিচ্ছি। যেমন যতক্ষণ কঙ্কালের কাঠামোর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে ততক্ষণ রক্ত চলাচলকারী শিরা দিয়ে রক্ত চলাচল ঠিকমত হয়, এগুলি মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঠিকমত রক্ত সংবহন করে যাচ্ছে। পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে যেটা যেই জায়গায় থাকা দরকার ঠিক থাকছে। ঠিক যেমন একটা লাউ গাছ ঠিক মতো থাকে একটি মাচার উপর বা বাঁশের একটি কঞ্চির উপর। একটা শক্ত কঞ্চি বেয়ে যখন একটি লাউ গাছ বড় হয়ে ওঠে তাকে মাচার উপর রাখা হয়, তখন এতে লাউ ধরে এবং ঠিক যেমনভাবে থাকা উচিৎ সেইভাবে থাকে। এমন অবস্থায় সুদৃঢ়, শক্ত কঞ্চিটি সরিয়ে ফেললে কী হয়? পুরো গাছটি ধসে পোড়ে স্তুপিকৃত হয়ে যায়, আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। তেমনি করে মানবদেহের রক্ত সংবহনতন্ত্রগুলো দাঁড়িয়ে থাকে কঙ্কালের উপরে। কঙ্কাল সরিয়ে ফেললে সেইগুলি শিরা-ধমনীগুলি ধসে পড়বে। ইসলামের বেলায় তেমনি সংগ্রাম। সালাহ না হলে প্রথমত ‘ইসলামের সংগ্রাম’ থাকবে না কারণ সংগ্রামের যে চরিত্র দরকার সেটা তৈরি করে ‘সালাহ’। আজকে দুনিয়াময় বহু দল
আছে যারা জিহাদ বা সংগ্রাম করছে। অর্থাৎ জিহাদ কিন্তু একরকমের আছে। প্রকৃত সালাহ না থাকার কারণে যেটা হয় তা হলো সেই জিহাদ আর ‘ইসলামের জিহাদ’ থাকে না, সেটা হয়ে যায় জিহাদের নামে সন্ত্রাসবাদ, জবরদখল, অন্যের সম্পত্তি দখল লুটপাট, দেশ দখল। যে ইসলামের জন্য যেভাবেই যে কাজই করুক, তাকেই জিহাদ হিসাবে মনে করছে। কেউ আত্মার বিরুদ্ধে জিহাদ করছে আবার কেউ গণতান্ত্রিক রাজনীতির আদলে নির্বাচন করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। তারা নির্বাচনকেই জিহাদ হিসাবে আখ্যায়িত করছে। মানে জিহাদ বিষয়টি ইসলামের অন্তর্ভুক্ত থাকলেও এর রূপ পরিবর্তিত হয়ে রসুলাল্লাহ ও আসহাবগণের জিহাদে ফি সাবিলিল্লাহ, আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহর জন্য জান মাল দিয়ে দীন প্রতিষ্ঠার জিহাদ থাকে না। জিহাদ নামে একটা কিছু থাকে, সংগ্রামও চলে কিন্তু সেই সংগ্রামটা হয়ে যায় সন্ত্রাসবাদ, অন্যের অশান্তির কারণ হয়, দেশ দখল হয়, সম্পত্তি দখল হয়। অথবা হয়ে যায় আত্মার সঙ্গে জিহাদ, বা আত্মরক্ষাত্মক জিহাদ। অর্থাৎ সোজা কথা হলো এটা যথাযথভাবে জিহাদে ফি সাবিলিল্লাহ থাকে না, সেটা ধসে পড়ে। ধসে পড়ে কেন? সঠিক সালাহটা না থাকার কারণে জিহাদের জন্য যে চরিত্রটা দরকার সেটা তৈরি না হওয়ায় জিহাদ ধসে পড়ে।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...