হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

ইব্রাহীম (আ.) ও উপনিষদের ঋষির শিক্ষা

-রিয়াদুল হাসান

প্রতিটি কাজের মধ্যে দু’টি অংশ থাকে। একটি বাহ্যিক একটি আত্মিক। যেমন আপনি কাউকে খেতে দিলেন। এর মধ্যে আহার হচ্ছে বাহ্যিক আর আন্তরিকতা হচ্ছে আত্মিক। উভয়ের যে কোনো একটির অভাবে পুরো কাজটিই অর্থহীন হয়ে যাবে।
বৈষয়িক জীবন আর ধর্ম এভাবেই একে অপরকে অর্থপূর্ণ করে।
আমরা যাকাত দিতে দেখি, ত্রাণকার্য দেখি। আবার মানুষ মসজিদ-মন্দিরেও দান করে, ভিক্ষুককে দান করে। এগুলো সবই দান। যাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে কিছুদিন আগে সাতাশ জন মানুষ পদপিষ্ঠ হয়ে মারা গেল। দান বা ত্যাগ মানুষের আত্মাকে শুদ্ধ করার জন্য করা হয়। কিন্তু এই দানের মধ্যে কি আত্মার সংযোগ ছিল?
সনাতন ধর্মের গ্রন্থ তৈত্তিরীয় উপনিষদে বলা হয়েছে শ্রিয়া দেয়ম্। মানে বাংলায় অপভ্রংশে ছিরি অর্থাৎ দান করার মধ্যে যেন ছিরি-ছাঁদ থাকে। ফেলিয়ে-ছড়িয়ে, ছুঁড়ে ফেলে নয়। সেই দানের মধ্যে যেন সৌন্দর্য আর মর্যাদা ফুটে ওঠে।
আরো বলছে, হ্রিয়া দেয়ম্। হ্রী মানে লজ্জা। দানের মধ্যে যেন লজ্জা থাকে। অর্থাৎ দিচ্ছি বলে যেন কোনো ঔদ্ধত্য তৈরি না হয়। নিজের অহমিকা ও আত্মসচেতনতা নিজেই লাঘব করে দান করতে হবে।
তৃতীয় কথা- শ্রদ্ধয়া দেয়ম্- শ্রদ্ধার সঙ্গে দেবে। দান গ্রহণকারী ব্যক্তির প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা নিয়ে দিতে হবে। আর যদি অশ্রদ্ধা থাকে, তবে উপনিষদ পরিষ্কার নিষেধ করে দিয়েছে- অশ্রদ্ধয়া অদেয়ম্- অর্থাৎ শ্রদ্ধা না থাকলে দিও না, সেও অনেক ভালো। কিন্তু দিতে যদি হয়, তবে ঐ সৌন্দর্য, অহমিকাহীনতা এবং শ্রদ্ধা এই তিনটিই থাকা দরকার। আর এই সবগুলি মিলিয়েই হয় আন্তরিকতা যা দানের আত্মা।
দানকারীকে এটি মনে রাখতে হবে যে, তার দানকার্য থেকে সে নিজেই অধিক উপকৃত হচ্ছে, তার আত্মার পবিত্রতা ও সমৃদ্ধি অর্জিত হয়। যে দান গ্রহণ করছে সে কিছু অর্থ-সম্পদ লাভ করলেও তার আত্মিক হানি ঘটছে।
বর্তমানে ত্যাগ করা হয় ভোগের জন্য, খ্যাতির জন্য। প্রকৃত ত্যাগ তো সেটাই যে করতে মানুষের আত্মায় ব্যাথা অনুভূত হবে। যেমন বৃদ্ধ বয়সের সন্তানকে জাতির পিতা ইব্রাহীম (আ.) কোরবানি দিতে আদিষ্ট হয়েছিলেন এবং তা পূর্ণ করেছিলেন। এর মানে তিনি তাঁর মিল্লাত বা জাতির সবাইকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করে গেছেন। কারণ মানুষের জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন ও সম্পদ কোরবান করা অনিবার্য।
সবাই যদি ব্যক্তিজীবন যাপন করে তাহলে কখনোই মানবজাতির সামষ্টিক জীবনে শান্তি আসবে না। যুদ্ধ রক্তপাত বন্ধ হবে না, সমাজ থেকে অন্যায় অপরাধ হ্রাস পাবে না, কেউ নিরাপত্তায় থাকবে না। তাই মো’মেনদেরকে ব্যক্তিজীবনকে প্রাধান্য না দিয়ে সমাজের প্রতিটি দুঃখী, আর্ত, নিপীড়িত মানুষের দুঃখকে হৃদয়ে ধারণ করতে হবে এবং অন্যায়ে বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এই কাজে যদি তাকে জীবন দিতে হয় সেটাই হবে প্রকৃত কোরবানি।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...