হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

ইন্টারনেটে প্রশ্নোত্তর: ইসলামের কোনো নির্দিষ্ট পোশাক নেই

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্লগে উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তর

প্রশ্ন: আপনারা ইসলামের কথা বলেন কিন্তু আপনাদের পোশাক ইসলামী ভাবধারার নয় কেন?
উত্তর: ইসলামী ভাবধারার পোশাক বলতে আপনি কী বোঝেন সেটা আগে জানা আবশ্যক। ইসলামের কোনো নির্দিষ্ট পোশাক নেই। ইসলাম হচ্ছে সার্বজনীন ও শাশ্বত জীবনব্যবস্থা। আর একটি শাশ্বত ও সার্বজনীন জীবনব্যবস্থা যা সমস্ত পৃথিবীর মানবজাতির উপর প্রযোজ্য হবার হক্বদার তাতে কোনো পোশাকের বাধ্যবাধকতা থাকতে পারে না।
আল্লাহ তাঁর রসুলকে প্রেরণ করেছেন অন্য সমস্ত জীবনব্যবস্থার উপরে ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য (সুরা আল ফাতাহ ২৮, সফ ০৯, তওবা ৩৩)। সুতরাং ইসলাম হচ্ছে সমস্ত মানবজাতির প্রতি আল্লাহর মনোনীত জীবনব্যবস্থা। এ কারণে আল্লাহ রসুলাল্লাহকে রহমাতাল্লিল আলামিন উপাধিতে ভূষিত করেছেন। এক কথায় ইসলাম এসেছে সমস্ত পৃথিবীর জন্য। পৃথিবীতে বসবাসকারী সকল ভাষা, বর্ণ ও গোত্রের জন্য। খাদ্যাভ্যাস, রুচি-অভিরুচি, কৃষ্টি-কালচার ইত্যাদিতে বৈচিত্রতায় পরিপূর্ণ মানুষের জন্য আল্লাহ দীন নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন একটি, আর তা হলো ইসলাম। এখন ইসলামের যদি আবার নির্দিষ্ট একটি ভাষা থাকে, খাদ্যাভ্যাস থাকে, পোশাক আশাক থাকে তাহলে সমস্ত পৃথিবীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার অর্থ দাঁড়ায় পৃথিবীব্যাপী বিরাজিত মানুষের এই প্রাকৃতিক বৈচিত্রতা ক্ষুন্ন হওয়া। তাদের স্ব স্ব কৃষ্টি-কালচার, রুচি-অভিরুচি ও পোশাককে নিষিদ্ধ করে ফেলে তাদের উপর ভিন্ন একটি সংস্কৃতি ও পোশাক চাপিয়ে দেওয়া, যা হয়তো ওই অঞ্চলের ভৌগোলিক পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এতে সামাজিক ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে।
আল্লাহ কোনো পোশাককে হারাম করেন নি, যদি তা মানুষের ক্ষতির কারণ না হয়। কোনো পোশাক যদি সমাজে অশ্লীলতার প্রসার ঘটায় এবং সামাজিক শৃঙ্খলা ও ভারসাম্যকে হুমকির মুখে নিপতিত করে তাহলেই কেবল তা হারাম হতে পারে। রসুলাল্লাহ ও তাঁর আসহাবগণ কোনো একটি পোশাক পরতেন না বলে সে পোশাক হারাম হতে পারে না। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, একটি জাতির নেতা অবশ্যই ওই জাতিরই অংশ। তিনি তাই খাবেন, তাই পরবেন, যা ওই জাতি খায়-পরে। আল্লাহর রসুল আরবে জন্মগ্রহণ করেছেন। তাই তিনি আরবের পোশাক পরেছেন, আরবের খাবার খেয়েছেন, আরবের সংস্কৃতি লালন করেছেন। তিনি যদি বাংলাদেশ জন্মগ্রহণ করতেন তাহলে আমরা যা খাই তিনি তাই খেতেন, আমরা যে পোশাক পরিধান করি তিনি তা-ই পরিধান করতেন। এই খাওয়া-পরা, আচার-বিচার, কৃষ্টি-কালচার হচ্ছে একটি জাতির স্বতন্ত্র রুচি-অভিরুচির অংশ। রসুল আরবে না এসে যে জাতিতেই আগমন করতেন সেই জাতির অবশ্যই কোনো না কোনো জাতীয় পোশাক থাকতো, সংস্কৃতি থাকতো। কিন্তু ওটার সাথে ইসলামের সম্পর্ক নেই। রসুলাল্লাহর আগমনের আগে কি আরবরা জোব্বা পাগড়ি, লেবাস ইত্যদি পরিধান করত না? অবশ্যই করত। তার মানে এই নয় তারা মুসলিম ছিল।
পুরুষের বেলায় ইসলামের সতর হচ্ছে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত আবৃত থাকতে হবে। এখন এই সতর রক্ষা করার জন্য আমাকে শুধুমাত্র পাঞ্জাবি বা পায়জামা-ই পরতে হবে কেন? ধুতি পরলেও তো সতর রক্ষা হয়। কিন্তু ইসলামকে আরবিকরণের ফলে এখন এমন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে যে, ধুতিকে ইসলামী পোশাক বলে কল্পনা করতেও দ্বিধা আসে। একইভাবে আল্লাহ নারীদেরকে যেভাবে পর্দা করে চলতে বলেছেন তা করার জন্যও বোরখা পরতে হবে এমন কোনো কথা নেই। শাড়ীও একজন নারীর ইসলামী পোশাক পরিগণিত হতে পারে যদি তাতে অশ্লীলতার সংমিশ্রণ না থাকে। হেযবুত তওহীদের সদস্য-সদস্যারা সকল প্রকার অশ্লীলতা বর্জন করে আল্লাহর নির্দেশিত মানদণ্ড মেনে পোশাক পরিধান করে থাকে। আপনাকে ধন্যবাদ।
উত্তর প্রদান করেছেন: মোহাম্মদ আসাদ আলী, সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, হেযবুত তওহীদ।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...